somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার চিঠি

২১ শে মার্চ, ২০১১ দুপুর ১:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



১৫-১২-২০১০ইং
রাত ১১টা

“আর কোন চাঁদ নেই
আমার আকাশ জুড়ে তুমি
আলোকিত হয় তাতে
এই সত্বা এই পটভূমি।”

শাপলা (প্রিয় বলে জানি যারে),

আমার অনেক অনেক ভালোবাসা ও শীতের মৃদু ঠাণ্ডায় উষ্ণ শুভেচ্ছা নিও। অনেক দিন পর তোমাকে লিখতে বসলাম। কেমন আছ তুমি? নিশ্চয়ই ভালো। আমিও একরকম আছি। তবে, মনটা ভালো নেই। নিঃস্বঙ্গ বিকেলটা কাটতে চাইছেনা কিছুতেই। দু'চোখ ফেঁটে কেন যে কান্নার বন্যা আসতে চাইছে তা বুঝতে পারছিনা। মনের মধ্যে জমে উঠেছে বিষাদের পাহাড়। তাই তো বার বার বলতে ইচ্ছে হচ্ছে----

“ব্যাথা বড় বাজিয়াছে প্রাণে
সন্ধ্যা তুই ধীরে ধীরে আয়,
সঙ্গিহীনা হৃদয় আমার
তোর বুকে লুকাইতে চায়।”

সূর্যের আলো ধীরে ধীরে ম্লান হয়ে যাচ্ছে। ঘনিয়ে আসছে অন্ধকার। পাখিরা ফিরে যাচ্ছে আপন নীড়ে। এই মুহূর্তে আমি বড় একা। তুমি কি করছো গো? আমার কথা মনে পড়ছে না ভুলেই গ্যাছো?

অনেক অ-নে-ক দিন হলো তোমার কোন চিঠি পাইনা। তোমার পুরনো চিঠিগুলোই মাঝে মাঝে বের করে পড়ি। চিঠির পাতায় খুঁজি তোমাকে। তোমার হাতের লেখা, তোমার আঁকা কার্ড, ছবিগুলোর মাঝে তোমার স্পর্শ পেতে চেষ্টা করি। তোমার লেখা শেষ চিঠিও বোধহয় বছর পাঁচেক আগে পেয়েছিলাম। তারপরে...মুঠোফোন এসে গেলে চিঠির বদলে কথা হতো কানে মুখে।

তারপরে কিছুদিন তাও নেই। হঠাৎ একদিন আবারো যোগাযোগ হলে শুনি বিয়ে হয়ে গেছে তোমার। সঠিক সময়ে জানতেও পারিনি। প্রতিদিন চিঠি চালাচালির সময়ে তুমি বলতে, আমরা যে যত দূরেই থাকি আমাদের বিয়ের খবর পরস্পরকে জানাবোই। কিন্তু, সময়ের পরিক্রমায় চিঠি লেখাও যেমনি হারিয়েছে, তেমনি হারিয়েছে আমাদের পরস্পরকে দেওয়া সেই প্রতিশ্রুতিও।

এতদিন তো দূরে ছিলে । কিন্তু, আজ তুমি-আমি একই শহরের বাসিন্দা হয়েও সামনাসামনি দেখা তো দূরের কথা, মুঠোফোনের বার্তাই হয় হঠাৎ বিশেষ কোন খবরে। তা'ও বেশিরভাগ সময়েই করি আমি। তুমি ব্যস্ত স্বামী-সংসার নিয়ে। আমিও কিন্তু কম ব্যস্ত নই! পড়াশুনা, ছবি আঁকাআঁকি আর জীবনের টানাপোড়েনের কোন্ ফাঁকে যে দিনগুলো চলে যাচ্ছে একের পর এক...তার হিসেব নেবার ফুরসত মেলে না এতটুকু। গানের ভাষায় বলতে গেলে...

“ব্যস্ততা আমাকে দেয়না অবসর
তাই বলে ভেবোনা আমায় স্বার্থপর...”

সে যাক, ছাত্রছাত্রীর বার্ষিক পরীক্ষা শেষ। নিজেরও পরীক্ষা শেষ হয়েছে জুলাই মাসে। রেজাল্ট ও হয়ে গেলো এই ৮ তারিখে। আমি ফার্স্ট ক্লাস পেয়েছি। কলেজের ৪৫৪ জন ছাত্রছাত্রীর মাঝে আমার অবস্থান ২৮তম। তোমাকে এসএমএসও করেছিলাম। পরিচিত সবাইকেই ফোন করে, বা কাউকে ম্যাসেজ দিয়ে নিজের শুভ সংবাদটি জানিয়েছিলাম। প্রায় সবার পক্ষ হতেই অভিনন্দন বার্তা পেলেও তোমার কাছ থেকেই কোন সাড়া শব্দ মিলছেনা। কেন গো? তুমি কি খুব রাগ করেছো?

তুমি বলেছিলে, সাহিত্যকে ছাড়তে পারবেনা কোনদিন! তুমি কি এখনো কবিতা লিখো? আগের মত ছবি আঁকো? তোমার ঢাকার বাসার ঠিকানাটা ভালোভাবে জানা নেই। এবার বেশি শীত পরে যাবার আগেই ভাবছি যাবো তোমার বাসায়। তুমি ঢাকা চলে এসেছো তবু যেতে পারিনা এটা কেমন কথা! প্রিয়জনরা দূরে চলে গেলে কতটা যে কষ্ট লাগে তা বলে বোঝানো যায়না!

আবার কবে দেখা হবে। কবে আমরা সবাই আবার এক হবো। নদীর মোহনাতে কবে আবার মিশবে তিনটি মন! আত্মহারা হবো কবে চাওয়া আর পাওয়াতে!

“একাকী রাত একাকী ভোর
কেটে যায় আমার
একাকী সারাক্ষণ ভাবি
আসবে কবে আবার।”

দু'দিনের বন্ধু হয়ে এসেছিলে তোমরা কয়েকজন। তুমি, বাবলী, মুন্নী, সুমি, সূচনা, কল্লোল আরো কে কে যেনো। সবার নাম মনে নেই ঠিকই। কিন্তু, সবার কথা মনে রয়েছে। মনের ভেতরে সবার চেহারা মাঝে মাঝেই ভেসে ওঠে। কেন এই ক্ষণিকের দেখা হয়, আবার সবাই দূরে চলে যায়?

“এ দূর আকাশের তারার সাথে মিতালী আমার অনেক দিনের,
শুধু এই পৃথিবীর কারো সাথেই আমার কোন সম্পর্ক নেই,
পরিচয় নেই,
মিতালী নেই।
মাধবী রাতের মায়াবী চাঁদ আমাকে আলোকিত করে
আলোড়িত করে।
কিন্তু-- এই ধরনীর কেউ তো আমাকে আলোর সন্ধান দেয় না
আলোকিত করে না।
নিরবতা আর নিশ্চলতায় দিন কাটে আমার
নিটোল প্রেমের ছন্দময় সুখে, কেউ তো জানায় না আমন্ত্রণ।
যত দিন যায়, যত পথ যায়, যত দূরে যাই আমি
কেউ আমাকে একটি বারও বলে না ফিরে এসো,
ফিরে এসো সোনালী দিনে,
ফিরে এসো ভালোবাসার বন্ধনে,
ফিরে এসো প্রেমিক হৃদয়ে
ফিরে এসো চাওয়া আর পাওয়াতে।”

তুমি কি কিছুতে জয়েন করেছো? চাকরি নামক সোনার হরিণের দেখা কবে মিলবে আমার জানা নেই। কয়েকটা ভাইভা দিলাম; কিন্তু, ফলাফল-জিরো। আজকাল লবিং ছাড়া কোত্থাও কিছু হয়না; আবেদনের টাকাটাই যায় গচ্চা!

আমার দৈনন্দিন রুটিন বলি তোমাকে। সকালে ফজরের নামাজ পড়ে শুয়ে উঠি অনেক বেলা করে, ১০টা-১১টা বেজে যায়; তাও মা এসে ডেকে দিলে। চা-নাশতা তৈরিই থাকে। উঠে জাস্ট খেয়ে নেই। পত্রিকাতেও চোখ বুলিয়ে নেই খানিকটা। তারপরে দুপুর কখন চলে আসে টেরই পাইনা। ওযু-গোসল-নামাজ সেরে গড়িয়ে নেই খানিকটা। এরপর, বিকালে ছাত্রছাত্রী আসে। ওদের বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হয়ে যাওয়ায় ওদের সাথে সাথে আমিও ১৫ দিনের ছুটি পেয়ে গেলাম। সামনে কিছু ইন্টারভিউ আছে। কিন্তু, পড়াশুনা করতে আর একটুও ভালো লাগেনা। আর কত ভালো লাগে বলো? ব্লগে আমার রেজাল্ট নিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেখানে তো একজন বলেই ফেললো, এসএসসি হতে মাস্টার্স তারপরে আবার বি-এড পর্যন্ত পড়েও আমার মাথা ঠিক রয়েছে কি করে? আমার নাকি পাগল হয়ে যাওয়ার কথা!! খারাপ কিছু বলেনি ভাইয়াটা।

মানুষের জীবনটা কি বিচিত্র, তাই না? জীবন নদীতে খেয়া বেয়ে ভেসে যাচ্ছি অজানায়। জানি না কোথায় আমার ঠিকানা। ইদানিং আর ভালো লাগেনা। কেন যে আরো আগেই একজন সঙ্গী জুটাইনি। বড় আফসোস হয়! আর কতকাল একা থাকবো? একটা পাত্র খুঁজে দিও তো পারলে। তোমাকে তো বলাই হয়নি, আমার গর্ব করার মত হাঁটু ছোঁয়া দীঘল কালো কেশ কর্তন করে 'লেয়ার কাট' স্টাইলে কেটে ঘাড় পর্যন্ত করেছিলাম তাও এক বছর পেরিয়েছে। প্রথম প্রথম খুব ভালো লাগলেও পরে 'বেণী বাঁধা যেত না', 'খোপা হতো না' বলে স্টাইলের মজা কেটে গিয়ে খুব আফসোস হয়েছিলো। এখন অবশ্য চুলের আকার কোমর ছাপিয়ে নেমেছে।

খুব বকবক করছি তাই না? কিন্তু, আমি জানি তুমি বিরক্ত হবেনা। আমার মাঝে মাঝে খুব ইচ্ছে করে প্রতি সপ্তাহে না হলেও প্রতি মাসে তোমাকে একটা করে চিঠি লিখি। কিন্তু, হয়ে উঠে না। আমি খুব অলস হয়েছি। দেখ তো, শুধু নিজেরটাই বলে গেলাম। তোমারটা জানা হলো না। তাই অতি সত্বর জানাবে আশা করি। আগামী দু'সপ্তাহ পরেই আসছে ইংরেজী নতুন বছর। তাই তোমাকে জানাই নতুন বছরের অগ্রীম শুভেচ্ছা।
ফেলে আসা গত বছরকে
সেই বছরের রূপ-রং-বেদনাকে মুঠোয় ভরে
তার সবটাই তুলে দিলাম তোমার হাতে।
তুমি সেই নতুন বছরে সেই পুনরাবৃত্তিকেই
নিজের মধ্যে নতুন করে তোলো।
এই নতুন বর্ষে আমার পুরনো বছরের সবটুকূ
অনুভূতি তোমাকে উজাড় করে দিলাম;
… … গ্রহণ করো।

তোমার বাবা-মাকে আমার সালাম এবং ছোট ভাইয়াটিকে আমার স্নেহ দিও। আমার বন্ধু-বরকে জানিও শুভেচ্ছা নতুন বছরের। সবাই কেমন আছে জানিও। আগামীকাল বিজয় দিবস। দিনটি কিভাবে উদযাপন করবে তাও জানিও। তোমাকে আবারো অনেক ভালোবাসা জানিয়ে শেষ করছি। খোদা হাফেজ।

ইতি_
তোমার বান্ধবী

[ এটি একুশে বইমেলা ২০১১ তে "একটি চিঠি সংকলন" বইয়ে প্রকাশিত আমার একটি লেখা।]
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে মার্চ, ২০১১ দুপুর ১:১২
১৬টি মন্তব্য ১৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।

লিখেছেন সাইয়িদ রফিকুল হক, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:১৫



ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।
সাইয়িদ রফিকুল হক

বিএনপি ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে দেশে অনুষ্ঠিত “দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে”-এ অংশগ্রহণ করেনি। তারা এই নির্বাচনের বহু আগে থেকেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×