আমরা বাংলাদেশী, আমাদের একটি জাতীয় স্বকীয়তা রয়েছে, আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতি রয়েছে। যে মানুষ তার নিজ জাতিকে সম্মান দিতে জানে না সেই জাতি পৃথিবীর কোথাও সম্মান পাবে না। নিজের দেশে থেকে নিজের সংস্কৃতি নিয়ে চলা যাবে না, এটাই আশ্চর্যের ব্যাপার। আমরা সত্যিই দেশের স্বাধীনতা পেয়েছি কিন্তু দেশের স্বাধীনতাকে নিজের জাতির জন্য তৈরি করতে পারি নাই। গত দুই দিন ধরে আমি গুলশান লেক পার্কে যাচ্ছি একটু স্বাস্থ্য সচেতনতার কারনে। পার্কে গিয়ে হাটছি দৌড়াচ্ছি । আমাদের একজন মেহমান এসেছেন আমাদের গ্রামের বাড়ি থেকে বয়সে অনেক মুরব্বি আমাদের বাড়ির পাশের এক বড় ভাই। আমি আজকে হাটতে যাচ্ছিলাম তখন বললাম ভাই আপনি আমার সাথে চলেন হাটবেন অথবা পার্কের ভিতরে বসে থাকবেন। উনি্ও রাজি হয়ে আমার সাথে হাটতে চললেন। আমরা পার্কের গেইটের কাছে আসলাম আমি ভিতরে ঢুকলাম বড় ভাইকেও ভিতরে নিয়ে আসলাম, আশ্চর্য ব্যাপার তখনই ঘটল, পার্কের দারোয়ান বড় ভাইকে রাগত স্বরে বলছে ভিতরে ঢুকতে পারবে না, আমি বললাম কেন ভিতরে ঢুকতে পারবে না? প্রত্যুত্তরে দারোয়ান বলল লুঙ্গি পড়ে কেউ ভিতরে ঢুকতে পারবে না। আমি বললাম এটা কোন জায়গার আইন ভিতরে লুঙ্গি পড়ে ঢুকতে পারবে না, দারোয়ান আমাকে বলে এটা সোসাইটির আইন, আমি বললাম সোসাইটি কে? কোথায় সোসাইটি আমি তার বা তাদের সাথে কথা বলব। দারোয়ান বলে আমিই এখন সোসাইটি। আমি বললাম আপনি একজন বাংলাদেশী হয়ে বাংলাদেশের সংস্কৃতি সম্পর্কে কিছু জানেন না। বাংলাদেশের সংস্কৃতি তার জানা দরকার নাই, বাংলাদেশের সংস্কৃতি তার কিছু যায় আসে না। আমি বললাম আপনি যে আইনটা বলছেন সেই আইনটা আমাকে দেখান ত কোথায় লেখা আছে? সে আমাকে পার্কের ভিতর একটা সাইনবোর্ড দেখিয়ে বলে এইখানে লেখা আছে। আমি বললাম লেখা আছে ত? সে বলে আপনি পড়ে দেখেন। আমি পড়লাম, পড়ে দেখলাম এইখানে কোনো প্রকার লুঙ্গির কথা বলা নাই্। আমি বললাম আপনি বাংলা পড়তে পারেন, যদি পারেন তাহলে এই সাইন বোর্ডের নিয়ামবলী পড়ে আমাকে বলেন কোথায় লুঙ্গি পড়া যাবে না লেখা আছে আমাকে দেখান। আমি কথা বলতে নিলে দারোয়ান আমাকে বলে Let me say, আমিও শুরু করলাম ইংরেজীতে; বললাম বাংলাদেশে যত প্রকার আইন আছে সংবিধান আছে তা লিখিত আকারে আছে, আপনার এটা যদি আইন হয়ে থাকে তাহলে এটা লিখিতরূপে সাইনবোর্ডে লিখা থাকতে হবে । সে আমাকে বলে এ্টা লিখিত থাকার দরকার নাই। এটা অলিখিতভাবে মানা করা আছে। আমি বললাম আগে লিখিত থাকতে হবে তারপর আমি এটি মেনে নিব। সে আমাকে বলে পার্কের ভিতরে একটি দোকান আছে সেই দোকানে ডাক্তার আছে তার কাছে আপনি জিজ্ঞেস করেন। আমি বললাম সেই লোক কি ডিগ্রি নিয়ে ডাক্তার হয়েছে? সে বলল আচ্ছা ঠিক আছে সে ডাক্তার না, দোকানদার আপনি তাকে জিজ্ঞাসা করেন। আমি বললাম আমি দোকানদারকে জিজ্ঞাসা কেন করব? সে কে? সে বলল না তা্কেই আপনার জিজ্ঞাসা করতে হবে। আমি বললাম আমি জিজ্ঞেস করব না। আমার কোনো প্রয়োজন নেই। এর মাঝে একজন লোক বললেন কি হয়েছে আমি বললাম এইখানে কোনো আইন নাই যে লুঙ্গি পড়ে ভিতরে আসা যাবে না দারোয়ান আমাদেরকে অযথা বাধা দেওয়ার চেষ্ট করছে। ঐ লোকটি বলল আচ্ছা ঠিক আছে পার্কে না হাটাহাটি করুন কিন্তু পার্কে বসতে ত দেওয়া যেতে পারে, দারোয়ান বলে বসতে দেওয়া যাবে না। বসতেও দেওয়া যাবে না এটা কি ব্যাপার? ঐ লোকটি চলে গেলেন। সর্বশেষে ঐ দোকানদার অর্খাৎ ডাক্তার আসল, সে ত আমাকে আগে থেকেই চিনে সে বলল ভাই এইখানে ত লুঙ্গি পড়ে ঢুকতে দেওয়া নিষেধ, আমি বললাম এ্টা কোথায় লেখা আছে? সে বলে ভাই এটা ত লেখা থাকার ব্যাপার না, সবকিছু ত লেখা থাকে না, এটা গুলশান সোসাইটি থেকে বলে দেওয়া হয়েছে। আমি বললাম একটা নিয়ম নিয়ামাবলীর মধ্যে লেখা না থাকলে ত এটা ত আর নিয়ম হলো না। তারপর দোকানদার বলে আচ্ছা উনি আমার দোকানে বসুক। দারোয়ানের ত চোখ বড় হয়ে গেল। এরপর আমি এক রাউন্ড হেটে ঐখান থেকে বড় ভাইকে নিয়ে চলে আসলাম। আচ্ছা আপনারাই বলেন ত নিজের দেশে থেকে নিজের সংস্কৃতিকে এইভাবে অপমান করার কি কোনো অর্থ আছে? এর জন্য আমাদের দেশের মানুষকে নিজেদের মধ্যে দেশপ্রেম এবং দেশের সংস্কৃতির প্রতি ভালোবাসা বৃদ্ধি করতে হবে। আর এসব বিকৃত মানসিকতার সোসাইটির প্রতি সোচ্চার হতে হবে এর কঠিন প্রতিবাদ করা দরকার। আমি তাদেরকে বলেছি এটা ত মানবধিকার লঙ্গন করা হয়েছে আমরা এর জন্য মানবাধিকার সংস্থা জানাবো। এবং এই গুলশান সোসাইটিকেও অভিযোগ করব সাথে এই গুলশান সোসাইটিকও ওয়ার্নিং দিব দরকার হলে। আরে ভাই এই পার্ক কি গুলশান সোসাইটির বাপের এটা সরকারি সংস্থা সিটি কর্পোরেশন থেকে করা হয়েছে আপামর জনসাধারনের জন্যে, সিটি কর্পোরেশনের কোথাও কোনো আইনে কি এটা লেখা আছে যে লুঙ্গি পড়ে কেউ পার্কে ঢুকতে পারবে না। আর নিজের দেশে থেকে নিজরে সংস্কৃতি, নিজের দেশীয় পোশাক পড়ে চলাফেরা করতে পারব না এটা তাহলে কোন দেশ, নিজের দেশে থেকেও কি আমরা বিদেশী হয়ে চলব তা ত হতে পারে না। এই সব ভদ্র মুখোশধারী বিকৃত সমাজের প্রতি আমাদের সোচ্চার হওয়া উচিত। না হলে এরা দিন দিন আমাদের জাতির যে পরিচয় আমাদের সংস্কৃতির মাধ্যমে প্রকাশ পায় তাকে ধ্বংস করে দিবে। একবার ত এই লুঙ্গি নিয়ে গুলশান এলাকায় প্রবেশ নিষিদ্ধ করতে চেয়েছিল কিন্তু সচেতন দেশপ্রমী, দেশের সংস্কৃতি প্রেমী লোকেরর লুঙ্গি পড়ে গুলশানের রাস্তায় বের হয়ে সবাই এর প্রতিবাদ করেছিল, কিন্তু তারপরও এইসব ভদ্র মুখোশধারী সমাজ বা তথাকথিত ভদ্র সমাজ, টাকার অট্রালিকা বানিয়ে নিজের দেশকে এবং নিজের দেশের সংস্কৃতিকে অপমানিত করছে যা কিনা জাতির পরিচয়ের জন্য এটি একটি বড় চ্যালেঞ্চ হয়ে গিয়েছে। আমি চায়নাতে ছিলাম সাড়ে ৬ বছর আমি দেখেছি ওরা কিভাবে ওদের কালচারকে, ওদের জাতিকে সম্মান দেয় এবং এর কারনেই আজকে সারা বিশ্বে তাদের কালচার গ্রহন করা শুরু করছে এবং জাতিও উন্নতি করছে। আজকে যেকোনো জিনিস কিনা না কেন তা চায়ানা থেকে আমদানী করা এবং সেই প্রোডাক্টির গায়ে চায়নিজ ভাষায় সবকিছু লেখা থাকে। চায়নীজ পোশাক পড়লে চায়নাতে তাকে সবাই সাধুবাদ জানায়। তারা তাদের নিজেদের জাতির কালচারকে ধরে রেখেছে এবং সারা বিশ্বের কাছে একে তুলে ধরেছে, মেলে ধরেছে যার কারনে এখন অনেকে বিদেশী চায়নীজ জামা কাপড় পরিধান করে থাকে। আর আমরা কি জাতি, আল্লাহ আমাদেরকে কি বানাল আমি আজও আশ্চর্যবোধ করি। কিছু টাকা পয়সা হয়ে গিয়েছে তাই এখন আমি কি বিদেশী কালচার নিয়েই বড় হবো, তারপর আমি যাই করি না কেন, আমরা কি আমাদের জাতির প্রতি এবং জাতির সংস্কৃতির প্রতি অসম্মান দেখাব? এ কেমন জাতি?
গুলশান লেক পার্কে বেশিই সভ্যতা দেখাচ্ছে লুঙ্গি নিয়ে গুলশান সোসাইটি
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
৫টি মন্তব্য ৪টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(
আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন
আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।
ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন
মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )
যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন
কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন
একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।
এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।
ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন