somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পে গল্পে সুরাহ্ আল আহযাব- ৫

০৪ ঠা অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ৭:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নবী করিম (সাঃ) যুদ্ধলব্ধ সম্পদ মুুুমিনদের মধ্যে ভাগ করে দেয়ার পর নিজের জন্য খুব সামান্যই রাখতেন যা তাঁর স্ত্রীরা পছন্দ করতেন না। আহযাব যুদ্ধে জয়লাভের পর একদিন হযরত অবু বকর (রাঃ) ও হযরত উমর (রাঃ) নবী (সাঃ) এর ঘরে বেড়াতে এসে তাঁকে তাঁর স্ত্রীদের দ্বারা পরিবেষ্টিত অবস্থায় দেখতে পেলেন। তখন নবী (সাঃ) কে বেশ গম্ভীর অবস্থায় দেখতে পেয়ে উমর (রাঃ) তাঁকে হাসাতে চাইলেন। বললেন, “হে আল্লাহর রাসুল (সাঃ)! যদি আপনি দেখতেন যে আজ আমার স্ত্রী আমার কাছে টাকা চাইল, আমার কাছে তখন টাকা ছিল না। তবু সে কঠিনভাবে জিদ করছিল। তখন আমি উঠে গিয়ে তার গর্দান মাপলাম।” এ কথা শুনেই রাসুল (সাঃ) হেসে উঠলেন এবং বললেন, “এখানেও এ ব্যাপারই ঘটেছে। এরা সবাই আমার কাছে ধন-সম্পত্তি চাইছে।”এ কথা শুনে আবু বকর (রাঃ) তার মেয়ে হযরত আয়েশা (রাঃ) এর দিকে এবং হযরত উমর (রাঃ) তার মেয়ে হযরত হাফসা (রাঃ) এর দিকে ছুটে গেলেন এবং বললেন, “খুব পরিতাপের বিষয় যে তোমরা রাসুল (সাঃ) এর কাছে এমন কিছু চাচ্ছ যা তার কাছে নেই।”
নবী করিম (সাঃ) এ ব্যাপারটি নিয়ে চিন্তাগ্রস্ত ছিলেন। তখন তার চার স্ত্রী। তারা সবাই যদি এভাবে ধন সম্পদ চাইতে থাকে এবং নবী (সাঃ) কে যদি তাদের আবদার পূরণে ব্যস্ত থাকতে হয় তবে তো তাঁর আগমনের উদ্দেশ্যের পথে এ বিরাট অন্তরায় হয়ে দাঁড়াবে। নবী (সাঃ)কে এ পারিবারিক চিন্তা ভাবনা থেকে মুক্তি দিতে আয়াত নাযিল হল,

২৮. হে নবী (সাঃ)! তুমি তোমার স্ত্রীদের বল, তোমরা যদি পার্থিব জীবন ও তার ভূষণ চাও, তবে এসো, আমি তোমাদের ভোগ-সামগ্রীর ব্যবস্থা করে দেই এবং সৌজন্যের সাথে তোমাদের বিদায় দেই।
২৯. আর যদি তোমরা আল্লাহ, তার রাসুল (সাঃ) ও আখিরাত কামনা কর তবে তোমাদের মধ্যে যারা সৎ কর্মশীল আল্লাহ তাদের জন্য মহা প্রতিদান প্রস্তুত রেখেছেন।

এ আয়াত অবতীর্ণ হবার পর নবী (সাঃ) সর্বপ্রথম হযরত আয়েশা (রাঃ) এর কাছে যান এবং তাকে বলেন, “ আমি তোমাকে একটি কথা বলতে চাই। তুমি তাড়াতাড়ি উত্তর দেয়ার চেষ্টা কর না। বরং তোমার বাব-মার সাথে পরামর্শ করে উত্তর দাও।” তারপর তিনি হযরত আয়েশা (রাঃ) কে আয়াতটি পড়ে শুনান। হয়রত আয়েশা উত্তর দিলেন, “এ ব্যাপারে আমার পিতামাতার সাথে আলোচনা করার কিছু নেই। আমার আল্লাহ কাম্য, তার রাসূল (সাঃ) কাম্য এবং আখিরাতের সুখ শান্তিই কাম্য।" নবী (সাঃ) হযরত আয়েশার জবাব শুনে খুব খুশী হলেন এবং একে একে অন্য স্ত্রীদেরও একই প্রশ্ন করলেন। তাদের সবাই আয়েশা (রাঃ) এর মতো করেই উত্তর দিলেন। হযরত মুহম্মদ (সাঃ) নিশ্চিন্ত হলেন, চিন্তামুক্ত হলেন। আরো আয়াত নাযিল হল:

৩০. হে নবী পত্নীরা, যে কাজ স্পষ্টত অশ্লীল, তোমাদের কেউ তা করলে তাকে দ্বিগুণ শাস্তি দেয়া হবে। এবং এটা আল্লাহর জন্য সহজ।
৩১. আর তোমাদের মধ্য থেকে যে কেউ আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আনুগত্য করবে এবং সৎকাজ করবে তাকে আমি দুবার প্রতিদান দেবো এবং আমি তার জন্য সম্মানজনক রিযিকের ব্যবস্থা করে রেখেছি।
৩২.হে নবী পত্নীরা! তোমরা অন্য নারীদের মতো নও। যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় কর তবে পর পুরুষের সাথে কোমল কণ্ঠে এমনভাবে কথা বলো না, যাতে অন্তরে যার ব্যাধি আছে সে প্রলুদ্ধ হয় এবং তোমরা ন্যায় সঙ্গত কথা বলবে।
৩৩. এবং তোমরা স্বগৃহে অবস্থান করবে, প্রাচীন জাহিলি যুগের মতো নিজেদেরকে প্রদর্শন কওর বেড়াবে না। তোমরা নামায কায়েম করবে ও যাকাত প্রদান করবে এবং আল্লাহ ও তার রাসুলের অনুগত থাকবে; হে নবী পরিবার। আল্লাহ তো শুধু চান তোমাদের মধ্য থেকে অপবিত্রতা দূর করতে এবং তোমাদের সম্পূর্ণরূপে পবিত্র করতে।
৩৪. আল্লাহর আয়াত ও জ্ঞানের কথা যা তোমাদের গৃহে পঠিত হয়, তা তোমরা স্মরণ রাখবে; আল্লাহ অতি সূক্ষ্মদর্শী, সর্ববিষয়ে অবহিত।
৩৫. একথা সুনিশ্চিত যে, যে পুরুষ ও নারী মুসলিম, মুমিন, হুকুমের অনুগত, সত্যবাদী, সবরকারী, আল্লাহর সামনে বিনত, সাদকাদানকারী, রোযা পালনকারী, নিজেদের লজ্জাস্থানের হেফাজতকারী এবং আল্লাহকে বেশী বেশী স্মরণকারী, আল্লাহ তাদের জন্য মাগফিরাত এবং প্রতিদানের ব্যবস্থা করে রেখেছেন। (চলবে..)
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ৭:২৮
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইরান ইসরাইলের আক্রমণ-প্রতি আক্রমণ আর আমাদের সুন্নী-শিয়া মুমিন, অ-মুমিন কড়চা।

লিখেছেন আফলাতুন হায়দার চৌধুরী, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩০

(ছবি: © আল জাযীরা মিডিয়া নেটওয়ার্ক)

শ্রদ্ধেয় ব্লগার সামিউল ইসলাম বাবু'র স্বাগতম ইরান পোষ্টটিতে কয়েকটি কমেন্ট দেখে এই পোষ্ট টি লিখতে বাধ্য হলাম।
আমি গরীব মানুষ, লেখতে পারিনা। তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:৩৯




আমরা পৃথিবীর একমাত্র জাতী যারা নিজেদের স্বাধীনতার জন্য, নিজস্ব ভাষায় কথা বলার জন্য প্রাণ দিয়েছি। এখানে মুসলিম হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান চাকমা মারমা তথা উপজাতীরা সুখে শান্তিতে বসবাস করে। উপমহাদেশের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্যা লাস্ট ডিফেন্ডারস অফ পলিগ্যামি

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০


পুরুষদের ক্ষেত্রে পলিগ্যামি স্বাভাবিক এবং পুরুষরা একাধিক যৌনসঙ্গী ডিজার্ভ করে, এই মতবাদের পক্ষে ইদানিং বেশ শোর উঠেছে। খুবই ভালো একটা প্রস্তাব। পুরুষের না কি ৫০ এও ভরা যৌবন থাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার প্রিয় কাকুর দেশে (ছবি ব্লগ) :#gt

লিখেছেন জুন, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৩



অনেক অনেক দিন পর ব্লগ লিখতে বসলাম। গতকাল আমার প্রিয় কাকুর দেশে এসে পৌছালাম। এখন আছি নিউইয়র্কে। এরপরের গন্তব্য ন্যাশভিল তারপর টরেন্টো তারপর সাস্কাচুয়ান, তারপর ইনশাআল্লাহ ঢাকা। এত লম্বা... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেরত

লিখেছেন রাসেল রুশো, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:০৬

এবারও তো হবে ইদ তোমাদের ছাড়া
অথচ আমার কানে বাজছে না নসিহত
কীভাবে কোন পথে গেলে নমাজ হবে পরিপাটি
কোন পায়ে বের হলে ফেরেশতা করবে সালাম
আমার নামতার খাতায় লিখে রেখেছি পুরোনো তালিম
দেখে দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×