somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যেভাবে আজকের পরীক্ষা দিলাম...

১৮ ই নভেম্বর, ২০১১ রাত ১২:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

(ভাল ছাত্ররা ১০০ হাত দূরে থেকে পড়বে...)

ফিলিপ কোটলারের কূটনৈতিক সব দুর্বোধ্য সংজ্ঞার কারনে মার্কেটিং বিষয়টা বরাবরি আমার কাছে একটু ‘তিতা’ স্বাদের ! মার্কেটিং পরীক্ষা ছিল আজ । তবে এবার ২৬ দিন সময় পেয়েছিলাম এই পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য। ফিলিপ কোটলার সাহেবকে মোকাবেলা করার জন্য গ্রহন করেছিলাম মহাকরিল্পনা । আমার সেই পরিকল্পনা ও তার বাস্তবায়নের রুপগুলো দেখে নিতে পারেন একটু কষ্ট করে...

প্রাথমিক পরিকল্পনাঃ হাতে সময় ২৬ দিন । অধ্যায় ১৩ টা (টীকা সহ) । এর মানে প্রতি ২ দিনে একটা করে অধ্যায় শেষ করতে হবে । প্রতিদিন দুই-আড়াই ঘন্টা পড়লেই চলবে । মনে মনে ঠিক করলাম ৮০ এর উপরে মার্কস রাখতেই হবে... যে করেই হোক ।

বাস্তবে যা ঘটলোঃ অনেক চিন্তা ভাবনা করে দেখলাম টানা ২৬ দিন পড়ালেখা করলে মানসিক ভাবে অনেক চাপ পরবে । তাই মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রনে রাখতে পড়াশোনা শুরু করার আগে ‘পরীক্ষা কালীন অবকাশ’ গ্রহনের সিদ্ধান্ত নিলাম । পকেটে টাকা মোটেও নেই , তাই অবকাশযাপন কেন্দ্র আপাতত নিজের ঘর !! প্রথম দিকে এই অবকাশের সময় ৩ দিন ধার্য থাকলেও পরে নিজের মনের জোরাজুরিতে সেটা ৫ দিন পর্যন্ত বারিয়ে নিলাম । অবকাশ শেষ হওয়ার পর একদিন সম্পূর্ণরূপে বেডরেস্টও নিলাম । চলে গেল ৬ টা মূল্যবান দিন...
-------------------------------------------------------------------
পুনঃপরিকল্পনাঃ সময় বাকী আছে ২০ দিন । প্রতিদিন ৩ ঘন্টা পড়তে হবে। ৮০ তুলতে না পারলেও ৭০-৭৫ মার্কস তো তুলতে পারব ? সেইটাই বা খারাপ কি ??

বাস্তবে যা ঘটলোঃ বর্তমানে আর্থিক অবস্থা দারিদ্র সীমার অনেক নিচে থাকায় সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম পরীক্ষা শেষ হওয়ার আগে ইন্টারনেট প্যাকেজ চালু করব না । তবে বিশ্ব জুরে তীব্র অর্থনৈতিক মন্দার মাঝেও হটাৎ করেই কিছু টাকা হাতে চলে এল ।
বহির্বিশ্বের সাথে নতুন করে যোগাযোগ পুনস্থাপনের স্বার্থে ইন্টারনেট প্যাকেজ চালু করে ফেললাম । হাতের কাছে ইন্টারনেট থাকলে কি আর কম্পিউটার থেকে উঠতে ইচ্ছা করে ? ফেসবুকে টুকটাক গল্প স্বল্প , দু একটা ব্লগ লেখা , কমেন্টের উত্তর দেওয়া , সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া আলোচিতো ভিডিও গুলো দেখা , কোন হট টপিক নিয়ে লেখা নোটে কমেন্ট করে বিশ্ববাসীর কাছে নিজের অবস্থান তুলে ধরা চাট্টিখানি কথা না । চলে গেল আরও ৫ টা দিন । ভাবলাম, অনেক হয়েছে... এবার পরীক্ষার দিকে মনযোগী হতে হবে...
-------------------------------------------------------------------

চূড়ান্ত পরিকল্পনাঃ ফাইজলামি করে অনেক সময় নস্ট করেছি। হাতে এখনো সময় আছে ১৪-১৫ দিন । ভাল রেজাল্ট করতে হলে এই মুহূর্তে দৈনিক ৩/৪ ঘন্টা পড়ার বিকল্প নেই । ৭০-৭৫ না উঠুক ৬০ এর উপরে মার্কস থাকলেই তো ফার্স্ট ক্লাস । কয়জনে পায় ফার্স্ট ক্লাসের মার্ক ??

বাস্তবে যা ঘটলোঃ দেখতে দেখতে ঈদ চলে এল । কোরবানির ঈদ । এবার ঈদে গরুর দাম কেমন , কোন হাটে বেশি ভাল গরু পাওয়া যাচ্ছে । প্রতিবেশীদের কে কত টাকা দিয়ে গরু কিনেছে , সেই গরুর সাইজ কেমন , চোখ কেমন , হাটে কেমন , ডাকে কেমন । এই কয়টা দিনে এসকল বিষয় নিয়ে আলোচনা করা আমাদের একটা নৈতিক দায়িত্বের মধ্যে পড়ে । যাই হোক আমি সেই দায়িত্ব বেশ ভাল ভাবেই পালন করলাম ।
ঈদ সংখ্যার রস+আলোতে একটা লেখাও এল । শুভাকাঙ্ক্ষীদের শুভ কামনা ও সমালোচকদের সমালোচনার জবাব দিতে দিতেও সময়টা পার হয়ে গেল (সমালোচকদের সংখ্যাই অবশ্য বেশি ছিল) । এত কিছুর মধ্যে পড়ালেখা করার সময় বের করা কঠিন । তবে ... ভুলে গেলে চলবে না পড়ালেখার কোন বিকল্প নেই... ভাল রেজাল্ট আমাকে করতেই হবে ।
--------------------------------------------------------------------

সংশোধিত পরিকল্পনাঃ হাতে ১০ দিনের মত সময় আছে । ও... সামনে তো আবার ঈদ । এর মধ্যে পড়ালেখা করাটা কি ঠিক হবে ? মনে হয় ঠিক হবেনা । এর চেয়ে ঈদের পড়ে ৬-৭ দিন সময় পাওয়া যাবে । প্রতিদিন ৫ ঘন্টা করে পড়লে এই সময়টাই যথেষ্ট । কোন ভাবে ৬০ মার্কস তুলতে পারলেই আমার হয় !

বাস্তবে যা ঘটলোঃ ব্যাপক উতসাহ উদ্দীপনা নিয়ে ঈদ উদযাপন করলাম এবং পরবর্তী সময়ে ঈদ পুনর্মিলনী ও টেলিভিশনের বিরক্তিকর সব অনুস্থান দেখে দেখে ব্যাস্ত কয়েকটা দিন পার করলাম । তবে এত কিছুর মাঝে আমি ভুলে যাইনি পড়ালেখার কোন বিকল্প...
--------------------------------------------------------------------

পুনঃসংশোধিত পরিকল্পনাঃ হাতে সময় কম । মাত্র ৪ দিন । প্রতিদিন ৬ ঘন্টা পড়তেই হবে । এইগুলা ব্যাপারই না... ভাল ফলাফলের জন্য একটু কষ্ট তো করতেই হয় । সবচেয়ে বড় কথা ৫০ এর উপরে মার্কস রাখাটা আবশ্যকর্তব্য ।

বাস্তবে যা ঘটলোঃ রসালো তে ‘পদ্মা নদীর মাঝি’ এসেছে । ফেসবুকে সেই আনন্দ প্রকাশ করতে হল । পাঠকদের শুভ কামনা গ্রহন করতে হল । যারা এখনো বিষয়টা জানেনা তাদেরকে বিষয়টা জানাতে হল (চান্সে একটু আপনাদেরও জানিয়ে দিলাম আরকি  ) । এক কথায় ব্যাস্ত সময় । এত কিছুর ধকল কি একদিনে কাটিয়ে উঠা যায় ? তাই পরের দিন বিশ্রাম নিলাম । সামনে পরীক্ষা , মানসিক ও শারীরিকভাবে ভাবে নিজেকে চাঙ্গা রাখতে হবে । ভুলে গেলে চলবে না পড়ালেখার কোন বিকল্প...

-------------------------------------------------------------------

চূড়ান্ত সংশোধিত পরিকল্পনাঃ ইয়াল্লা ! হাতে সময় ২ দিন , এখনও বই হাতেই নেই নাই !! েই মুহূর্তে দিনে ৮ ঘন্টা পড়া ছাড়া কোন উপায় নাই । সকালে ২ ঘণ্টা...দুপুরে ২ ঘন্টা ...আর সন্ধ্যার পড়ে ৪ ঘন্ট...। ৪৫ এর উপরে মার্কস না পেলে ইজ্জত থাকবে ???

বাস্তবে যা ঘটলোঃ ইদানীং শীতের খুব আমেজ । সকাল বেলা এই আরামের ঘুম ভাঙ্গানোটা খুব কস্টের । একটু বেলা করে উঠার পর আবার দুপুরের দিকে পড়ালেখা করতে ভাল লাগে না । তবে সন্ধ্যার পড়ে ঠিকি প্রথমবারের মত বই খুলে ১ টা অধ্যায় পড়ে শেষ করে ফেললাম । লক্ষ্য করলাম বাসার সবাই আমার দিকে একটু অন্যরকম করে তাকাচ্ছে । একটু একটু লজ্জা লাগছিল অবশ্য ! প্রচণ্ড ঘুমের কারনে বেশিক্ষন পড়তে পারলাম না...

-------------------------------------------------------------------

পুনঃসংশোধিত চূড়ান্ত মহা-পরিকল্পনাঃ আজকে শেষ দিন । আজকে সারাদিন পড়তে হবে । একবারো টেলিভিশন ছাড়ব না । কম্পিউটার ও না... আজকে শুধুই পড়ালেখা। যে ভাবেই হোক ৪০ এর উপরে মার্কস রাখতে হবে ... যে ভাবেই হোক ।


বাস্তবে যা ঘটলোঃ
আজকেও ঘুম থেকে উঠতে একটু দেরী হয়ে গেল । দুপুরে ডিসকভারিতে একটা ভুতের প্রোগ্রাম না দেখে পারলাম না । একটু ফেসবুকে ঢুকে সবার খবর নিলাম । দু তিনটা ব্লগ পরলাম আর বিকালের দিকে একটু বিশ্রাম নিলাম । কালকে আবার পরীক্ষা তো... অনেক পড়ালেখা করতে হবে ।

আর মাথার মধ্যে ঘুরছিল রবি ঠাকুরের লেখা দু লাইন -

‘আমার সকল নিয়ে বসে আছি
সর্বনাশের আশায়’ !!!

--------------------------------------------------------------------


পরীক্ষা দেওয়ার পরের অংশ


হুম ! পরীক্ষা ভাল হয়েছে ( যদিও বেশির ভাগ প্রশ্নগুলো কোথাও দেখেছি বলে মনে হচ্ছিল) ।এতদিনের পরিশ্রম সম্পূর্ণ সার্থক । এই কয়দিনে শরীরে উপর দিয়ে অনেক ধকল গেল , এবার সময় একটা দীর্ঘ বিশ্রামের... 
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই নভেম্বর, ২০১১ রাত ১২:৪৫
২২টি মন্তব্য ১৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

×