somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এক যে ছিল টাগ

১১ ই জুলাই, ২০১২ বিকাল ৫:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এক বনে ছিল এক টাগ । টাগ খুবই আধুনিক আর ভয়ংকর প্রাণী । এ জন্যই লোকে বলে ‘বাঘের উপর টাগ’ । বাঘের সাথে টাগের প্রধান পার্থক্য হচ্ছে বাঘ কথা বলতে পারেনা কিন্তু টাগ মানুষের মতই কথা বলতে পারে, গান পারে (বিভিন্ন
টেলিভিশন চ্যানেলের গানের প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণও করে ), কবিতা আবৃত্তি করতে পারে ।

এক দিন সেই বনের পথে হাঁটছিল এক কাঠুরিয়া । এমন সময় তার সামনে পড়ল ভয়ংকর সেই টাগ । ভয়ে কাঠুরিয়ার প্রান যায় যায় দশা ।

টাগঃ ঠালুম*
(*বাঘ যেমন ‘হালুম’ বলে হুংকার ছাড়ে তেমনি টাগ হুংকার ছাড়ে ‘ঠালুম বলে)
কাঠুরিয়াঃ (ভয়ে ঢোঁক গিলতে গিলতে) তুমি কে ? কি চাও ?
টাগঃ এটা কি ধরনের প্রশ্ন হল ? এমন ভাবে বলছিস যেন আমি একটা ছিঁচকে
ছিনতাইকারী । তুই আমাকে চিনতে পারিস নি ? আমি টাগ , তোকে আমি খাব ।
কাঠুরিয়াঃ তুমি আমাকে কেন খাবে ?
টাগঃ (একটু রাগস্বরে) আবার মুখে মুখে প্রশ্ন করিস ? তোরা যখন হাস –মুরগী কেটে খাস তখন কি তাদের অনুমুতি নিস ?
কাঠুরিয়াঃ তা নেইনা ঠিক , কিন্তু আমাকে খেলে তো আমার বউ-বাচ্চা না খেয়ে থাকবে ,
টাগঃ (বিস্ময়ে চোখ কপালে তুলে) কি বলিস ? তোকে তোর বউ বাচ্চাও খাবে নাকি ?
কাঠুরিয়াঃ আরে নাহ , আমি না থাকলে কাঠ কাটবে কে ? কাঠ না কাটলে তারা খাবে কি ?
টাগঃ (ছোটখাট একটা হাই তুলতে তুলতে) ও, বুঝতে পেরেছি , তোরা তাহলে ইদানিং কাঠ খাওয়া শুরু করেছিস...
কাঠুরিয়াঃ ধুত্তুরি , আমরা কাঠ খেতে যাব কেন ? কাঠ কেটে সেগুলো বাজারে বিক্রি করি , তারপর সেই টাকা দিয়ে কিছু কিনে খাই ।

কাঠুরিয়ার কথা শুনে যেন একটু উদাস হয়ে গেল টাগ । আকাশের দিকে আনমনে কিছু একটা ভাবল । এরপর দার্শনিকের মত মাথা ঝাকিয়ে বলল ‘বুঝিরে সবি বুঝি ,
পৃথিবীতে টাকাটাই আসল , নো মানি , নো হানি। আজ যদি আমার টাকা থাকতো তাহলে কি আর তোকে খেতে হত ? আচ্ছা, তোর লাইফ ইনস্যুরেন্স করা নেই ? থাকলে তো তোকে আরাম করে খাওয়া যেত ।’

কাঠুরিয়াঃ না নেই । (মনে মনে কাঠুরিয়া বলল, থাকলেও কি আর তোকে জানাতাম ?)
টাগঃ (আকাশের দিকে চেয়ে উদাসী হওয়ার সুরে) পৃথিবী বড় কঠিন জায়গারে , টু হার্ড । এইযে তোকে খেতে খুব ইচ্ছে করছে, কিন্তু তোর অবস্থার কথা চিন্তা করে খেতে পারছিনা । আমরা তো আর মানুষের মত অমানুষ না ...

সত্যি বলতে এতক্ষন একটু ভয়ে ভয়ে ছিল কাঠুরিয়া । টাগের এই কথায় ভয়টা একটু কমলো । টাগ তার কোন ক্ষতি করবেনা বলেই মনে হয় ।

কাঠুরিয়াঃ আমি তাহলে যাই এবার ?
টাগঃ যাবি ? আচ্ছা, তোর ফোনে কি ইন্টারনেট আছে ? থাকলে দিয়ে যা একটু ফেসবুকিং করি ।
কাঠুরিয়াঃ থাকবেনা ? ইন্টারনেট ছাড়া কি আর এখন একদিনও চলে ?

হাত বাড়িয়ে কাঠুরিয়ার মোবাইল হাতে নিল টাগ । কি মনে করে যেন একবার ফোনের
ব্যালেন্স দেখে নিল ।

টাগঃ তোর ফোনে দেখি অনেক টাকা রে , দাড়া বাবাকে একটা ফোন দিই ।
কাঠুরিয়াঃ তোমার বাবাও আছে নাকি ?
টাগঃ কি আজেবাজে বলিস ?
কাঠুরিয়াঃ না মানে জীবিত আছেন নাকি জানতে চাইলাম ।
টাগঃ হুম আছেন । আমাকে দেখে কি তোর বুড়া বলে মনে হয় ? দেখিস না আমার স্কিন এখনও কেমন টানটানে...
কাঠুরিয়াঃ (টাগের গায়ে একবার চোখ বুলিয়ে) হুমম অনেক দামী জিনিষ ।
টাগঃ ঠিক ধরেছিস , একেবারে ‘এক্সপরোর্ট কোয়ালিটি’ । আমাদের চামড়ার কাছে বাঘের চামড়া পাত্তাই পায়না । (আঙ্গুল মুখে দিয়ে চুপ থাকার ইশারা দিয়ে)
কথা বলিস না , ওপাশে রিং হচ্ছে...
(সামান্য নীরবতা) হ্যালো বাজান... (মুচকি হাসি)... কথা তো সব মুইছে গেছে বাজান...।
ফোনের লাইন কেটে দিয়ে মুখ চেপে হাসতে লাগলো টাগ

কাঠুরিয়াঃ কি হয়েছে ? কথা ভুলে আবার হাসছো কেন ?
টাগঃ আরে কথা ভুলিনি , ইচ্ছে করে এমন করেছি , তোদের যে কলরেট , কথা না ভুলে উপায় আছে ?
কাঠুরিয়াঃতাহলে কথা বলতে গেলে কেন ?

টাগকে দেখে মনে হল কাঠুরিয়ার কথায় একটু কস্ট পেয়েছে । চাপা সুরে বলল ‘ আরে বুঝিস না, কথা না বললে তো একটা ‘কমিউনিকেশন গ্যাপ’ হয়ে যাবে’

(আবারো কিছুক্ষনের জন্য নীরবতা)

টাগঃ তোদের একটা কবিতা আছেনা... অই যে , ক্ষুদার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়... কবিতাটা খুব মনে পড়ছে রে, দু দিন ধরে কিচ্ছু খাইনা ।
কাঠুরিয়াঃ কেন ? জঙ্গলে কি খাবারে অভাব আছে নাকি ? কত ধরনের জীব জানোয়ার ।
টাগঃ সে তো জানি । কিন্তু সামনে আবার বনে ইলেকশন তো তাই কাউকে খেতে পারছিনা । নির্বাচনের আগে ‘ইমেজ’ বলে একটা কথা আছেনা ?

এমন সময় টাগের দিকে তাকিয়ে কাঠুরিয়ার মাথায় একটা বুদ্ধি খেলে গেল । আমতা আমতা করে সে বলল ‘ইয়ে তুমি যদি আমার সাথে আমাদের গ্রামে চল তাহলে হয়তো তোমার খাবারের একটা ব্যাবস্থা করা যাবে । আমাদের গ্রামে চাইনিজ , থাই , ইন্ডিয়ান সব ধরনের মানুষ আছে । যেটা খুশি ধরে খেতে পারবে ।

সব শুনে চকচক করে উঠল টাগের চোখ । অবিশ্বাসের সুরে জানতে চাইল ‘সত্যি বলছিস তো?’

কাঠুরিয়াঃ সত্যি
টাগঃ তাহলে চল...

টাগ আর কাঠুরিয়া রওনা হল গ্রামের দিকে । টাগকে সাথে করে নিয়ে আসার খবরটা টাগ মোবাইল ফোনের মাধ্যমে পৌঁছে দিল গ্রামের সবার কাছে । গ্রামে ঢোকা মাত্র গ্রামের মানুষ লাঠি হাতে টাগকে ঘিরে ধরল । কাঁদোকাঁদো চোখে টাগ বলল
‘তুই আমার সাথে এমন করতে পারলি ?’
কাঠুরিয়া তার হাতের মোবাইল দেখিয়ে বলল ‘সেই দিন কি আর আছে ? এখন দিন বদলাইছে না ?

এরপর সবাই মিলে পিটিয়ে টাগকে মেরে ফেলল । আর টাগকে সাথে করে নিয়ে আসার জন্য টাগের চামড়া বিক্রির একটা বড় অংশ কাঠুরিয়াকে দেওয়া হল । তবে কাঠুরিয়া কাঠ কাটা বন্ধ করলনা । টাগের চামড়া থেকে পাওয়া টাকা গুলোকে সে
সাইড ইনকাম হিসেবেই ধরে নিল ।

মূলবাক্যঃ টাগ হয়ে মানুষের সাথে বেশি কথা বলা মোটেও উচিত না ।

নাসিফ চৌধুরী
১৭টি মন্তব্য ১৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×