somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যখন হীরা পড়ে থাকে অবহেলায় আর আমরা রত্নের দামে কিনে নেই নগন্য কাঁচ

১৬ ই জুলাই, ২০১৯ দুপুর ১২:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



জীবনে অনেক বই পড়েছেন, অনেক জ্ঞান অর্জন করেছেন, মুক্ত মনের আধুনিক মানুষ হয়েছেন - তারপরেও করজোড়ে মিনতি করি জীবনে অন্তত একবার, অন্তত মৃত্যুর আগে একবার, একটি বই হলেও - মহানবী মুহাম্মাদ (সা) এর অসামান্য জীবনী টা পড়ুন, অনুধাবন করুন - যিনি শুধু মানবজাতি নয়, সমস্ত সৃষ্টিজগতের প্রতি রহমত স্বরূপ দুনিয়াতে এসেছিলেন

হাশরের ময়দানে যখন জাহান্নাম কে নিয়ে আসা হবে; তার প্রলয়ংকরী গর্জনে সমস্ত মানুষ আতংকে লুটিয়ে পড়বে মাটিতে৷ কোটি কোটি ফেরেশতা শিকল দিয়ে বেধে রাখা জাহান্নামকে যেন আটকে রাখতে পারবে না ! তীব্র লেলিহান অগ্নি শিখা, দুনিয়ার আগুন যার সত্তুর ভাগের এক ভাগ মাত্র ! সেই দোযখের ভয়ংকর রূপ দেখে হাশরের ময়দানে শুধু একটি শব্দই শ্রুতিগোচর হবে - ইয়া রব ! নাফসী ! নাফসী !

শুধু আপনার আমার মত সাধারণ পাপী মানুষেরাই নয়, সব ভুলে, সবাইকে ভুলে নবী রাসূল দের মুখেও থাকবে আতংকগ্রস্ত একটিই আর্তি ! ইয়া রব !! আমাকে বাচান ! আমাকে বাচান !! নাফসী !! নাফসী !! তখন কেউই চিনবে না কাউকে ! মা বাবা সন্তানকে, সন্তান মা বাবাকে ! কিম্বা নবী রা তাদের উম্মতদেরকে !

এইসব আতংকের আর্তির কোলাহলের মাঝে হঠাত শোনা যাবে বেদনা ভরা অশ্রুরুদ্ধ একটি কন্ঠস্বর - "আমার উম্মাত !! আমার উম্মাত !! ইয়া রব, আমার উম্মাত" !

এই কন্ঠস্বর কার, যে শেষ বিচারের এই দিনে যখন প্রতিটি প্রাণী তার কৃতকর্মের সূক্ষাতিসূক্ষ প্রতিফল দেখতে পাবে বিন্দুমাত্র অবিচার ব্যাতিত, যখন প্রতিটি প্রাণী তার নিয়তির ফয়সালার অপেক্ষায় প্রাণ হাতে নিয়ে অপেক্ষারত, যখন সূর্য থাকবে মাথার একহাত উপরে আর যখন আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের আরশের ছায়া ব্যাতিত আর কোন ছায়া থাকবেনা, যখন সামনে থাকবে চুলের চাইতে সূক্ষ আর তরবারীর চাইতেও ধারাল পুলসিরাত - তখন কার এই কন্ঠস্বর , যে নিজের নিয়তির কথা না চিন্তা করে তার উম্মতের জন্য কাদছেন?
তিনি সারা জাহানের রহমত, মানুষের জন্য আলোকবর্তিকা, প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মাদ (সা)

তিনি সেই উম্মাতের জন্য কাদছিলেন - যে উম্মত তার শরীরের রক্ত ঝরিয়েছে, যেই রক্ত শুকিয়ে তার জুতা আটকে গিয়েছিল পায়ে, সেই উম্মাতের জন্য কাদছিলেন - যে উম্মত অহংকার করে তাদের রব কে অস্বীকার করে, তার বিধান কে তুচ্ছ জ্ঞান করে আর তাকে অপবাদ দেয় মূর্খ ভন্ড বলে!

তিনি রাসূল (সা), যার নাম মহান অধিপতি আল্লাহর সিংহাসন আরশুল আযীমে লিখিত, যে নামের বদৌলতে ক্ষমা পেয়েছিলেন হযরত আদম (আ)৷ উনার জীবন এত বৈচিত্রময়, এত রঙ্গে রঙ্গীন আর এত অলৌকিক মানবিকতা সম্পন্ন যে তাকে একজন সাধারন মানুষের বেশে সুপারহিরো ছাড়া আর অন্য কোন ভাবে চিত্রিত করা যায় না৷ তার সুপার পাওয়ার ছিল তার সততা, উত্তম চরিত্র, দয়া, বিনয়, নিরহঙ্কারীতা, আল্লাহ ভীতি আর মানুষের মাঝে সন্নিবেশিত সর্বোচ্চ সদগূণাবলীর সর্বোচ্চ উপাখ্যন৷

তিনি মুহাম্মাদ - আল্লাহর সর্বোচ্চ প্রশংসাকারী
তিনি আহমাদ - আল্লাহ থেকে সর্বোচ্চ প্রশংসিত





একজন সাধারন মানুষ তার সাধারন জীবনে যা যা করতে পারে তার সবই করে দেখিয়েছেন রাসূলুল্লাহ (সা)!

আর যত দু:খ, কষ্ট, যাতনা একজন মানুষ এক জীবনে পেতে পারে, তার সবই পেয়ে গিয়েছিলেন রাহমতাল্লীল আলামিন আল্লাহর হাবীব মুহাম্মাদ (সা)! জন্মের কিছুদিন আগে পিতাকে হারিয়েছেন, জন্ম নিয়েছেন এতিম হয়ে, মা' কে হারিয়েছেন ছয় বছর বয়েসে যখন শৈশবও পার হয়নি তার৷ চোখের সামনে নিজের দুই শিশুপুত্রকে মারা যেতে দেখেছেন, কবরে শুইয়েছেন প্রাণপ্রিয় স্ত্রীকে আর তিন কণ্যাকে৷ আর ইসলাম প্রচারের জন্য যে আত্যাচার আর নির্যাতন সয়েছেন তা তো বর্ণণার অতীত৷ শেষ পর্যন্ত তার স্বজাতি তাকে তাড়িয়ে দিয়েছিল প্রিয় মাতৃভূমি থেকেই৷ দুনিয়ার সমস্ত ধন দৌলতের চাবি তার হাতে থাকা সত্বেও, সমগ্র আরব জাহানের মুকুটহীণ সম্রাট হয়েও - তিনি দারিদ্রকে ভালবেসেছিলেন৷ অনাহারে থেকেছেন, অর্ধাহারে থেকেছেন দিনের পর দিন, ক্ষুধার জ্বালায় পেটে বেধেছিলেন পাথর! আল্লাহর সর্বাপেক্ষা প্রিয় এই মানুষটি জীবনে যত কষ্ট সয়েছেন, তার সহস্র ভাগের কিয়দংশও কেউ ভোগ করেনি কখনো৷

তার জীবনী একটা পূর্নাংগ জীবন বিধান৷ তাকে অধ্যয়ন করলে তাকে ছাড়া আর অন্য কাউকে রোল মডেল ভাবতে পারা যায় না, অন্য কাউকে তারচে বেশি ভালবাসা যায় না, অন্য কাউকে তারচে বেশি আপনও মনে হয়না৷

যে কোন প্রফেশনের, যে কোন মানুষের, যে কোন সমস্যার সমাধান আল্লাহ প্রিয় রাসূলের জীবনের আর কর্মের মাধ্যমে আমাদের দিয়েছেন৷ তার রণ কৌশল ছিল অসাধারন প্রজ্ঞা আর মেধার সমন্বয়৷ আর তাকেই সর্বত ভাবে অনুসরণ করেছেন খালিদ বিন ওয়ালিদ, আমর ইবনুল আ'স, সা'দ বিন আবি ওয়াক্কাস প্রমুখের মত যুগশ্রেষ্ঠ বীর সেনাপতিরা৷

অথচ আমরা মোটিভিশন খুজি সস্তা বক্তব্যে, রণ কৌশল শিক্ষা নেই কাল্পনিক ফ্যান্টাসি মহাকাব্যে আর পথ চলি তার দেখানো পথের উল্টো দিকে৷

যেন অবাধ্যতাই আজকের স্টাইল, আজকের ফ্যাশন আর মুক্তমনা হবার গোপন সূত্র !

অথচ অবহেলায় পড়ে থাকে এই মহামানবের জীবনী, তার প্রামান্য হাদিস শরীফ ! যার একটু ছোয়ায় আমাদের জীবন বদলে যেতে পারতো৷ যে কালেমা পড়ে মুসলিম হয়েছি - তার মাহাত্ম বুঝতে পারতাম, তার মর্যাদা অনুধাবন করতে পারতাম৷

আল্লাহ আমাদের রাসূলকে ভালবাসার, তার দেখানো পথে চলবার - অদম্য ইচ্ছাশক্তি দান করুন, হেদায়েত প্রাপ্ত হবার সৌভাগ্য দান করুন, অহংকার আর অবাধ্যতার গোমরাহী থেকে হেফাজত করুন৷

আমীন৷
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই জুলাই, ২০১৯ দুপুর ১২:৫৬
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।

লিখেছেন সাইয়িদ রফিকুল হক, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:১৫



ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।
সাইয়িদ রফিকুল হক

বিএনপি ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে দেশে অনুষ্ঠিত “দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে”-এ অংশগ্রহণ করেনি। তারা এই নির্বাচনের বহু আগে থেকেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×