১৯৭১!ভুলে গেছ কি বাঙালি? ভাবতেই অবাক হই।তখন আমি ঢাকা মেডিকেলের ছাত্র,কারনটা ছিল শুধুই বাবার স্বপ্নপূরন।সেই মার্চ থেকে শুরু, একে একে কাটিয়েছি অমানিশার কালো রাত,নিষ্ঠুর বুটের শব্দে এই বুকটা ধড়ফড় করে উঠেছে। একে একে বাংলার মাটিতে লাশের স্তূপ গড়ে উঠেছে,নির্বাক চোখে তাকিয়ে দেখেছি, শুনেছি আমার কতশত মা-বোনের আর্তনাদ,সন্তানহারা মায়ের বুকফাটা কান্নার জবাব দিতে পারিনি সেদিন।অভাগা এই চোখ দুটি দেখেছে নদীর পাড়ে পরে থাকা কিশোরীর নিথর দেহ,সেই শরীরে শকুনের দলও ঠোকর দিতে এসে ফিরে যায়,ফেরেনি ওরা,ওরা যে নরপিশাচ,ওরা যে রাক্ষসের জাতি।আমি দেখেছি সেদিন ঐ কিশোরীর চোখের কোনে একফোঁটা জল তখনও শুকায়নি...আর নয়!আর সহ্য করতে পারিনি।সেবার নিয়েছিলাম শফথ, "এবার শুধু যুদ্ধ, প্রতিরোধ, প্রতিশোধ।হাতে আর স্টেথোস্কোপ নয় তুলে নিয়েছিলাম অস্ত্র,চোখ জুড়ে ছিল সেদিন স্বাধীন বাংলার স্বপ্ন। অস্ত্র ভালো চালাতে জানতাম না,তবে জানতাম আমি যোদ্ধা, মুক্তিযোদ্ধা। হায়েনাদের মরনকামড়ের ভয় ছিলনা সেদিন, নেশা ছিল মরনকামড় দেবার।জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেছি,এই আমারি কোলে কত যোদ্ধা রেখেছে শেষ নিঃশ্বাস, শুন্য হয়েছে কত মায়ের কোল,ওদের চোখজুড়ে ছিল শত্রু হননের তৃষা, স্বাধীনতার লাল-সবুজ পতাকা।১০ই নভেম্বর,আমার শেষ রাত...বুক পেতে মৃত্যুকে বরন করেছি সেদিন, হয়নি আমার বেচে থাকা, হয়নি বাবার স্বপ্নপূরন। তবু সার্থক আমার জন্ম বেচে আছে আমার স্বপ্ন,আমার মাতৃভূমি।
হে বাঙালী.........
তোমাদের দিয়েছি স্বাধীনতা,
একটাই তো জীবন, একবারই দেয়া যায়।
আর কি আছে দেবার বলো,
আরও একবার সুযোগ পেলে আরও একবার জীবন দেব.....
এখন আমি নীল আকাশের কোনে একটা ছোট্ট তারা হয়ে ঘুরে বেড়াই
ভুলে যেও আমায়
তবু গড়ে দিও আমার অনেক সাধের সোনার বাংলা...