বাঙাল-বাঙালি বিতর্ক দুই বঙ্গের মানুষের বহুদিনের চর্চিত বিষয়। ইদানিং আবার শুরু হয়েছে বাঙালি-বাংলাদেশি বিতর্ক। বিতর্ক ভালো জিনিস, এতে মস্তিষ্কের ব্যায়াম হয়, মুক্ত বুদ্ধির চর্চা হয়। কিন্তু যৌক্তিক বিতর্ককে বিতর্কিত করার প্রয়াস থেকে যে বিতর্ক হয় তাতে হিংসা আর সামাজিক অসহিষ্ণুতা বাড়ে, ইতিবাচক কোন ফল আসে না। বাঙালি-বাংলাদেশি চর্চা থাক; বনেদি বাঙাল-ঘটি নিয়েই আপাতত কথা চলুক।
আপনি বাঙাল না ঘটি? বাঙালিদের কাছে প্রশ্নটি অতি পরিচিত, হয়তো অনুমিতও বটে! বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গে বসবাসরত বাংলা ভাষাভাষীদের কাছে। তবে বাংলাদেশের বর্তমান প্রজন্মের অধিকাংশ মানুষ বাঙাল-ঘটি (বাঙাল ও বাঙালি) বিতর্ক নিয়ে তেমন কিছু জানে না। এই ক'বছর আগেও পশ্চিমবঙ্গে বিয়েসাদী, খেলাধূলা, আত্মীয়তা, সামাজিক আচার-অনুষ্টান রান্নাবান্না ও খাবারের বেলায় ঘটি-বাঙাল চর্চা একটা বড় ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়াতো। এখন এ বিতর্ক কিছুটা কমলেও বলা যায় চ--ল--ছে-- বেশ জোর কদমে। নিকট ভবিষ্যতে চিরতরে এই বিতর্ক ঘুচবে সে সম্ভাবনা ক্ষীণ।
ঘটি-বাঙাল দ্বন্দ্ব বুঝাতে অনেকে 'বাঙ্গাল-ঘটি ফাটাফাটি' কথাটি বলে থাকেন।
সাতচল্লিশে দেশভাগের সময় পূর্ববঙ্গ, ত্রিপুরা ও আসামের যেসব বাংলা ভাষাভাষী মানুষ পশ্চিমবঙ্গে গিয়ে বসতি স্থাপন করে তারাই মূলতঃ বাঙাল হিসেবে পরিচিত। তখন পূর্ববঙ্গ তথা বর্তমান বাংলাদেশে বসবাসকারী লোকজন 'বাঙাল' নামে পরিচিত ছিল; তবে এই নাম কিংবা বিভাজন পূর্ববঙ্গের মানুষ নিজেরা করেনি। কলকাতার তথাকথিত উচ্চশিক্ষিত, প্রগতিশীল এবং ধনীক শ্রেণীর মানুষ পূর্ববঙ্গের মানুষকে তাচ্ছিল্যের সূরে এই নাম ডাকতো। এই বিভাজনে এক রকম পৈশাচিক আনন্দ হতো। পশ্চিমবঙ্গের মানুষ এখনো বাংলাদেশীদের 'বাঙাল' বলে ডাকে, তবে তাচ্ছিল্যের মানসিকতা এখনো অবশিষ্ট নেই, কিংবা সেই সুযোগ সময়ের স্রোতে ফুরিয়ে গেছে।
যারা দীর্ঘদদিন থেকে পশ্চিমবঙ্গে বসবাস করে তারা 'ঘটি' হিসাবে পরিচিত।। এছাড়া ভারতের ঊড়িষ্যা, ঝাড়খন্ড ও বিহার রাজ্যের মানুষদের মধ্যে যাদের মাতৃভাষা বাংলা তারাও ঘটি। কলকাতার বনেদী বাঙালিদের স্বভাবে প্রভাবিত হয়ে একটা সময় আমাদের ঢাকার স্থানীয় মানুষজন গ্রামে বসবাসরত লোকজনকে তাচ্ছিল্য করে 'বাঙাল' বলে ডাকতো। দেশের উচ্চবিত্ত-উচ্চশিক্ষিত লোকজনের একটা বড় অংশ এখনো গ্রামের শ্রমিক, জেলে ও কৃষকদের তুচ্ছার্থে 'বাঙাল' বলে ডাকেন।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর- বাঙাল না ঘটি? ঠাকুর পরিবারের বংশপরম্পরা ঘাটলে দেখা যায় তাদের আদি নিবাস ছিল বাংলাদেশের যশোরে। পলাশী যুদ্ধের পর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পূর্ব পুরুষেরা যশোর ছেড়ে কলকাতায় পাড়ি জমান। ঠাকুর পরিবারের আসল পদবি ছিল কুশারি। তাদের পরিবারিক জমিদারির বড় অংশই ছিল পূর্ববঙ্গের শিলাইদহে। জমিদারির কাজে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে প্রায়ই সেখানে যেতে হত; এজন্য তাঁর লেখা গল্প, উপন্যাস এবং প্রবন্ধে আমরা পূর্ববঙ্গের বিভিন্ন স্থানের বর্ণনার ছড়াছড়ি দেখতে পাই। তবে কবিগুরিুর জন্ম কলকাতায়। মা সারদাসুন্দরী দেবী ছিলেন যশোরের মেয়ে। তাঁর স্ত্রী মৃণালিনী দেবীর বাপ-দাদাদের আদি নিবাস ছিল খুলনায়। বলা যায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জন্মসূত্রে 'খাঁটি কলকাত্তাইয়া' ঘটি হলেও ঐতিহাসিকভাবে তাঁর পূর্ব পূরুষরা বাঙাল ছিলেন।
একটা সময় কলকাতা ছিল বাঙালি উচ্চবিত্ত ও শিক্ষিত মানুষদের বসবাসের সবচেয়ে কাঙ্খিত নগরী। বিশেষ করে বনেদী জমিদার শ্রেণীর। স্কুল-কলেজ, হাট-বাজার, মার্কেট-রেস্তোরা, রাস্তা-ঘাট সর্বত্র পূর্ববঙ্গের বাঙলা ভাষাভাষীদের তারা তাচ্ছিল্যের চোখে দেখতো। আড়ালে আবডালে মূর্খ, চাষা ও বাঙাল বলে অপমান করতো। আবার কখনো রিফিউজি, কখনো উদ্বাস্তু, কখনো শরণার্থী বলে অপমান করতো। এগুলো তখন খুব কমন আচরণ ছিল। দেশভাগের পর প্রথম দিকের সময়গুলোতে পূর্ববঙ্গ থেকে পশ্চিমবঙ্গে যাওয়া বাঙালদের বাড়িভাড়া পেতেও অনেক সমস্যা হত। স্থানীয় ঘটিরা বাঙাল ভাড়াটিয়ে দেখলে মুখের উপর না করে দিত। যা ছিল দেশহীন, আশ্রয়হীন, বানভাসী মানুষগুলোর জন্য চরম অসম্মানের।
১৮৫৭ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হওয়ার পর শিক্ষা, সংস্কৃতি ও অর্থনৈতিকভাবে কলকাতার মানুষের মাঝে অন্যান্য বাংলা ভাষাভাষী এলাকা থেকে বেশি উন্নতির ছোয়া লাগে। কলকাতা হয়ে উঠে শিক্ষিত ও সমাজের উচু শ্রেণীর বাঙালিদের আবাসভূমি। বাংলা ভাষার উচ্চারণেও কলকাতার সাথে ঢাকাসহ অন্যান্য এলাকার মোটাদাগে বেশ পার্থক্য পরিলক্ষিত হতো। কলকাতার মতো অন্যান্য অঞ্চলের বাংলা ভাষা মার্জিত ছিল না। মানুষজনের কথায় গ্রাম্য ও আঞ্চলিকতার টান ছিল স্পষ্ট। এখনো পূর্ববঙ্গ ও পশ্চিমবঙ্গের মানুষের ভাষাগত কিছু পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। মাতৃভাষা মায়ের ভাষায় উচ্চারিত হয়। এটাই নিজেদের ভাষা। এজন্য মায়ের ভাষার চেয়ে শুদ্ধ ভাষা পৃথিবীতে দ্বিতীয়টি নেই। যদিও বইয়ে কিংবা রাষ্ট্রের দাপ্তরিক কাজে একটি নির্দিষ্ট ভাষা এবং উচ্চারণকে বেছে নিতে হয়। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় পশ্চিমবঙ্গে হওয়ায় এবং বাঙলা সাহিত্যের তখনকার সিংহভাগ লেখক পশ্চিমবঙ্গের প্রমিত ভাষায় সাহিত্য চর্চা করতেন বলে সেখানকার একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলের ভাষাকে একাডেমিক ও দাপ্তরিক ভাষা হিসাবে বেছে নেওয়া হয়েছিল।
দেশভাগের আগে অবিভক্ত বাংলায় দু'টি বিশ্ববিদ্যালয় ছিল ঢাকা ও কলকাতায়। নেপাল, শ্রীলঙ্কা ও বার্মা ছিল কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে। তারপরও পশ্চিমবঙ্গের জনভিত্তিক পড়াশুনার মান খুব একটা ভাল ছিল না। পশ্চিমবঙ্গের জমিদাররা নিজেদের স্বার্থের জন্য সাধারন মানুষের শিক্ষা-দীক্ষার ব্যাপারে উদাসীন ছিলেন। এজন্য গ্রামে-গঞ্জে স্কুল কলেজ তেমন প্রতিষ্ঠা হয়নি। ঘটিদের খাওয়া-দাওয়া বলতে ছিল তেলে ভাজা মিষ্টি কুমড়ার ছক্কা আর রুটি। বাঙালিদের রসনা-বিলাস বলতে যা বুঝায় তার পুরোটা ছিল পূর্ববঙ্গে।
আমাদের এ অঞ্চল থেকে বাঙালরা পশ্চিমবঙ্গে যাওয়ার পর থেকেই মূলত সেখানে উচ্চশিক্ষার প্রসার ঘটতে শুরু করে। বর্তমানে অর্থনীতি, রাজনীতি, শিক্ষা ও সংস্কৃতিতে বাঙালরা পশ্চিমবঙ্গে ঘটিদের চেয়ে অনেক অনেক এগিয়ে। পশ্চিমবঙ্গের বাম রাজনীতির প্রসারে বাঙালদের ভূমিকা ব্যাপক। পূর্ববঙ্গ থেকে পশ্চিমবঙ্গে যাওয়া বাঙালরা যখন সামাজিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্যের শিকার হতো তখন বাম রাজনৈতিক দলগুলো বাঙালদের পক্ষে ব্যাপক ভূমিকা পালন করতো। তাদের এই উদার মানসিকতা বাঙালদের আশাবাদী করতো, রাজনীতিতে সক্রিয় হতে সাহস জোগাতো।
সাতচল্লিশের পর থেকে এখন পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গে দায়িত্ব পালন করা আটজন মুখ্যমন্ত্রীর মধ্যে ছয় জন বাঙাল ছিলেন। দু'জন মাত্র ঘটি। বাঙাল মুখ্যমন্ত্রীরা হলেন কুমিল্লার ড: প্রফুল্ল ঘোষ, সাতক্ষীরার খ্যাতনামা চিকিৎসক বিধান রায়, খুলনার প্রফুল্ল সেন ও সিদ্বার্থ শঙ্কর রায় এবং ফরিদপুরের বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। এছাড়া ঢাকার জ্যোতিবসু তো একটানা ২৪ বছর মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। ঘটি মুখ্যমন্ত্রীরা হলেন মেদিনীপুরের অজয় মুখার্জি এবং বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
পশ্চিমবঙ্গে জন্মগ্রহণ করেছিলেন রাজা রাম মোহন রায়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, বিবেকানন্দ ও শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের মত গুণীজনেরা। স্ব স্ব ক্ষেত্রে তারা দিকপাল হলেও গ্রামাঞ্চলে তাদের প্রভাব খুব একটা পড়েনি। একমাত্র রাজা রামমোহন রায়ের সতীদাহ প্রথা বিলোপ এবং বিদ্যাসাগরের বিধবা বিবাহ প্রবর্তন ভাল সাড়া ফেলেছিল। বাকিদের জীবন যাপন প্রণালী একটি চক্রের মধ্যে আবর্তীত হতো। অনেকটা শহরকেন্দ্রিক জীবন ছিল তাদের।
ঘটিদের অভিযোগ হলো বাঙালরা গলা ফাটিয়ে চিৎকার করতে ওস্তাদ; তা সে কথা বলা হোক অথবা ঝগড়া করা হোক। ঘটিরা স্বভাবত আস্তে আস্তে কথা বলে, ঝগড়া করতে খুব একটা দেখা যায় না তাদের। রাগ মেটাতে ঝোপ বুঝে কোপ মারতেই নাকি বেশি স্বাচ্ছন্দবোধ করেন ঘটিরা। মামলা-মোকদ্দমা ঘটিদের নিত্য সঙ্গী হলেও বাঙালদের মধ্যে এ প্রবণতা অনেকটা কম। মাঝে মাঝে ঘটি-বাঙাল ঝগড়া অশ্লীল, কুৎসিত ও হিংস্র হয়ে পড়ে ঠিকই তবে এ দুষ্টু-মিষ্টি ঝগড়া আমাদের বঙ্গীয় সংস্কৃতির অংশ হয়ে আছে বহু বছর থেকে। মজা হিসেবে নিলে এ ঝগড়া বেশ উপভোগ করা যায়।
বাঙালদের ব্যবসাপাতির প্রতি মনোযোগ বেশি হলেও ঘটিদের মাস মাইনের প্রতি আগ্রহটা বেশি। এখনো সারা পৃথিবীতে বসবাসরত বাঙালিদের মধ্যে এ বিভাজন স্পষ্ট। ইউরোপ-আমেরিকায় ঘটিরা চাকরি-বাকরি করতে বেশি উদ্যোগী হলেও বাঙালরা, বিশেষ করে বাংলাদেশি বাঙালিরা আনাজ-তরকারি বিক্রি করা থেকে শুরু করে মোদি দোকান, টেক্সি ড্রাইভিং, পেইন্টিং, বিল্ডারিং, রেস্টুরেন্ট পরিচালনা সহ এমন কোন কাজ নেই যা তারা পারে না অথবা করতে চায় না। সব কাজেই বাঙালরা সিদ্ধহস্ত। বাঙালরা ঘটিদের চেয়ে কায়িক পরিশ্রমে বেশি এগিয়ে। এজন্য মাঠে-ঘাটে, খেতে-খামারে বাঙালদের আধিপত্য স্পষ্ট। বাঙালরা প্রাণখোলা স্বভাবের ও বন্ধুভাবাপন্ন হলেও ঘটিরা নিরিবিলি, একটু অন্তর্মূখী স্বভাবের।
রান্নাঘরে সেরা কে- বাঙাল না ঘটি? এ দ্বন্দ্ব বাঙালির জীবনে চিরন্তন। প্রচলিত আছে কোন জিনিস মাত্রাতিরিক্ত করা ঘটিদের একদম না পছন্দ। খাওয়া-দাওয়া, কেনাকাটা করা, বিলাস-ভ্রমণ সে যাই হোক না কেন। তাই খরচাপাতি হোক বা রান্নাবান্না, সব কিছু বেশ মেপে মেপে করে ঘটিরা। এদিকে বাঙালরা আবার ঠিক উল্টো। বাঙালরা খুব অতিথি পরায়ন; ভুড়িভোজ ও মেহমানদারিতে তাদের জুড়ি নেই। হাতে টাকা পয়সা থাকলে এরা দেদারসে খরছ করে। এজন্য ঘটিদের অতি হিসেবি স্বভাবের জন্য বাঙালরা তাদেরকে কিপ্টে বলে অপবাদ দেয়। আবার বাঙালদের আলসেমি স্বভাবের জন্য ঘটিরা তাদের কুঁড়ে বলে খেপায়।
খাওয়া-দাওয়ায় ঘটিরা উত্তর মেরু হলে বাঙালরা দক্ষিণ মেরু। যেমন- ঘটিদের প্রিয় মাছ চিংড়ি মাছের মালাইকারি কিন্তু বাঙালদের পছন্দ ইলিশ মাছের রকমারি পদ। রান্নাঘরে আজ চিংড়ি নাকি ইলিশ? এবারের ডার্বিতে ইস্টবেঙ্গল নাকি মোহনবাগান জিতবে কে এই নিয়ে বাঙালির আবেগ চিরকালীন। আর ঝগড়া? বাঙালদের দাবি ঘটিরা মিষ্টি ছাড়া খেতেই পারে না। আর ঘটিরা বলে বাঙালরা ওই মানকচু পোড়া থেকে আলুর খোসা বাটা এর বাইরে আর কিছুই খেতে শিখল না! ঘটি বউয়ের বাঙাল শ্বশুরবাড়ি হলে এখনও কম খোঁটা শুনতে হয় না। উল্টোটাও আছে।
ঘটিরা বলে বাঙালরা নাকি চারবেলাই ভাত খেতে পারে! এদিকে ঘটিরা ভাতের বদলে লুচি ও আলুরদম বেশি পছন্দ করে। আর পোস্তের প্রতি ঘটিদের একটি সফ্ট কর্ণার আছে। তাই আলু পোস্ত হোক বা পোস্ত বড়া, পোস্ত দিয়ে তৈরি কোন না কোন আইটেম তাদের প্রতিদিনের ম্যনুতে থাকা চাই। বাঙালদের রান্নায় সরিষা, জিরা, ধনিয়া, পেয়াজ, এলাচ ও মরিচ প্রাধান্য পায়। অপরদিকে সব রান্নায় ঘটিদের চিনি/মিষ্টি অবশ্যই চাই। ঝাঁল খাবার ঘটিদের একেবারে না পছন্দ।
খেলাধূলায়ও বাঙাল-ঘটি কম যায় না। পশ্চিমবঙ্গে ফুটবলে 'মোহনবাগান' ঘটিদের পছন্দের টিম। আর 'ইস্টবেঙ্গল' বাঙালদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত ক্লাব। তাই বাঙালদের ইস্টবেঙ্গল ঘটিদের জাত শত্রুু। এমনও শোনা যায় ঘটিদের সমর্থক কোন নামকরা শিল্পী কখনো ইস্টবেঙ্গলের কোন অনুষ্টানে যায় না। মোহনবাগানের বেলায়ও ঠিক তাই। কলকাতা লীগে অথবা আই লীগের খেলায় ইস্টবেঙ্গল ও মোহনবাগানের মুখোমুখি হলে দুই শিবিরে সাঁজ সাঁজ রব পড়ে। কেই কাউকে এক চুলও ছাড় দিতে নারাজ। অনেকটা বার্সেলনা-রিয়েল মাদ্রিদের দ্বৈরতের মতো।
একটা সময় পশ্চিমবঙ্গের বাঙালদের অর্থাৎ যাদের পূর্বপুরুষদের আদি নিবাস ছিল বাংলাদেশে তাদের এ দেশে বেড়াতে আসার অন্যতম কারণ ছিল নিজের শেকড়কে কাছে থেকে দেখে আসা। পর্যটন শিল্পের পরিভাষায় যাকে বলে "ডাউন মেমরি লেন ট্যুর"। অনেকটা রথ দেখা কলা বেঁচার মতো। তবে কিছুদিন আগে পত্রিকায় একটি পরিসংখ্যান দেখে অবাক হলাম। ইদানিং নাকি বাঙালদের চেয়ে ঘটিরাই বেশি বাংলাদেশে আসছে! ঘটিদের পছন্দের শীর্ষে বাগেরহাটের ষাট গম্বুজ মসজিদ, দিনাজপুরের কান্তজিউ মন্দির, রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদ, কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত এবং কুষ্টিয়ার লালন ফকিরের মাজার অন্যতম।
আশার কথা যত দিন যাচ্ছে বাঙাল-ঘটির দূরত্ব কমছে। এখন তো কোন বড় ঝামেলা ছাড়াই সচরাচর বাঙাল-ঘটি বিয়ে সাদী হচ্ছে। তবে খাবারের বেলায় এখনো দা-কুমড়ো সম্পর্ক। আমরা চাই ঘটি-বাঙাল বিতর্কের অবসান হোক। বাঙলা ভাষাভাষী সবাই বাঙালি। এটাই হোক বিশ্বব্যাপী আমাদের একমাত্র পরিচয়। এতে জাতি হিসাবে বিশ্বের দরবারে আমাদের মর্যাদা বাড়বে। আমাদের বসবাসের ব্যাপ্তিও অনেক বড় হবে। একে-অন্যে সহযোগিতা বাড়বে, আন্তরিকতা বাড়বে, সামাজিক ব্যবধান ঘুঁচবে। যত তাড়াতাড়ি এ দূরত্ব কমবে ততোই আমাদের মঙ্গল।।
তথ্যসূত্র-
আনন্দবাজার পত্রিকা,
সুখরঞ্জন দাশগুপ্ত,
বাংলা ট্রিবিউন,
হ্যাংলা হেসেল ও
বেঙ্গল টাইমস্।
ফটো ক্রেডিট,
গুগল।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে মে, ২০২০ রাত ৯:৫৮