somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

কাওসার চৌধুরী
জন্মসূত্রে মানব গোত্রভূক্ত; এজন্য প্রতিনিয়ত 'মানুষ' হওয়ার প্রচেষ্টা। 'কাকতাড়ুয়ার ভাস্কর্য', 'বায়স্কোপ', 'পুতুলনাচ' এবং অনুবাদ গল্পের 'নেকলেস' বইয়ের কারিগর।

ঘুষ ও দুর্নীতি - একটি জাতীয় সমস্যা (ফিচার)

২০ শে মে, ২০১৮ বিকাল ৩:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


''আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি'' বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা জাতীয় সংগীতে দেশকে ভালবাসার জন্য উদ্ভোধ্য করা হয়েছে। দেশকে মা হিসাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। পৃথিবীর কোন সন্তান মায়ের অবহেলা, অপমান ও কষ্ট সহ্য করতে পারে না, এজন্য প্রতিনিয়ত নিজের মাকে আগলে রাখতে চায়, খুশি রাখতে বদ্ধপরিকর। দেশটাও মায়ের মতো। দেশের প্রতি যেমন ভালবাসা থাকতে হবে, তেমনি দেশকে রক্ষা করার জন্য প্রয়োজন নিজের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করা, দেশের মানুষকে ভালবাসা, ঘুষ ও দুর্ণীতি থেকে নিজেকে মুক্ত রাখা, অসহায় ও দরিদ্র মানুষকে সহযোগিতা করা। আমরা সবাই স্কুল কলেজে পড়ার সময়, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় কোন কোন অনুষ্ঠানের সময় জাতীয় সঙ্গীতের সূরে আন্দোলিত হই, দেশের প্রতি অনুগত হওয়ার শপথ নেই। সত্যি কী আমরা এই শপথের মর্যাদা রাখতে পারি?

দেশের রাজনীতির কথায় আসি। কি দেখতে পাই? বাংলাদেশের রাজনীতি আজ ভূমি দস্যূদের দখলে, বাংলাদেশের রাজনীতি আজ চোরা কারবারীদের দখলে, বাংলাদেশের রাজনীতি আজ কালো টাকার মালিকদের দখলে, বাংলাদেশের রাজনীতি আজ খুনি ও সন্ত্রাসীদের দখলে, বাংলাদেশের রাজনীতি আজ ব্যবসায়ী ও অশিক্ষিত মানুষদের দখলে। একজন সাধারন মানুষ রাজনীতি করতে গেলে প্রাণটাও যেতে পারে। এখন রাজনীতিবিদরা অস্ত্র নিয়ে চলে, রাজনীতি করতে হলে কোমরে পিস্তল রাখতে হয়, চাপাতি রাখতে হয়, খুন করতে হয়, সন্ত্রাস করতে হয়। ছেলেদের ফেন্সিডিল আর ইয়াবার টাকা যোগাতে হয়, মোটর সাইকেলের তেলের টাকা দিতে হয়।

শুধু রাজনীতিবিদদের দোষ দিয়ে কী লাভ? বাংলাদেশের অনেক সাংবাদিক আছে মানুষকে হুমকি দিয়ে, চরিত্র হননের ভয় দেখিয়ে টাকা নেয়। ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে বখরা নেয় রিপোর্ট না করার জন্য। পুলিশ ও সরকারী অফিস থেকেও সম্মানী নেয়। টাকার বিনিময়ে মিথ্যা সংবাদ পত্রিকায় ছাপিয় মানুষকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। আবার টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন রাজনীতিবিদ, সমাজসেবী ও এমপি/মন্ত্রীকে প্রমোট করে।

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষক নিজের পদ-পদবীর উন্নতির জন্য, ডীন হওয়ার জন্য, ভিসি-প্রো ভিসি হওয়ার জন্য রাজনীতিবিদদের পেছনে ঘোরাঘুরি করেন। শ্রেণীকক্ষে পাঠদান বাদ দিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর এজেন্ডা বাস্তবায়ন করেন। নিজের পছন্দের ছাত্রকে ফাস্টক্লাস ফাস্ট বানান। আবার অনেক শিক্ষক চাকরীর মেয়াদ শেষ হওয়ার পর রাজনীতিবিদদের অনুগ্রহ নিয়ে রাষ্ট্রদূত হওয়ার জন্য, বিভিন্ন লোভনীয় পদে বসার জন্য চাটুকারীতা করেন। স্কুল কলেজের শিক্ষকরা ক্লাসে না পড়িয়ে বাসায় কোচিং করেন, ছাত্রদের প্রাইভেট পড়তে বাধ্য করেন।


অনেক নামকরা আধুনিক কবি রাজনৈতিক ব্যক্তিদের নামে কবিতা লেখেন, রাজার বন্দনা করেন তাদের শুভ দৃষ্টি পাবার আশায়। অনেক সাহিত্যিক মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস নিয়ে গবেষনাধর্মী লেখা বাদ দিয়ে সস্তা বুদ্ধীজীবী হওয়ার চেষ্টা করেন। তাদেরকে তোষামোদ করে প্রবন্ধ লেখেন, বিভিন্ন উপাধী দেন। পরিণামে জুটে রাজনীতিবিদদের কাছ থেকে সস্তা বুদ্ধিজীবীর খেতাব। সরকারের বিভিন্ন শিক্ষা সংক্রান্ত কমিটিতে অংশ গ্রহণের সুযোগ। বাংলা একাডেমি ও শিশু একাডেমির মতো জাতীয় প্রতিষ্ঠানে পরিচালক হওয়ার সুযোগ।

গরীব দুঃখী ও মেহনতি মানুষের কষ্টার্জিত টাকায় ডাক্তারী পড়ে অনেকে ডাক্তার হন। বিনিময়ে বেশিরভাগ সময় আমরা ডাক্তার নামধারী একজন নীতিহীন ও স্বার্থপর পাই। তাকে যখন বলা হয় অন্তত তিনটি বছর গ্রামে থেকে সাধারন মানুষের সেবা করতে, সেই ডাক্তারকে দেখি উপজেলা স্বাস্থ্য কম্প্লেক্সে বছরে পাঁচ ছয়বার গিয়ে সিগনেচার করে বাকি সময়টা শহরে বসে প্রাইভেট প্রেক্টিস করতে। অনেকে সরকারী হাপাতালে চিকিৎসা না করে প্রাইভেট মেডিকেলে রোগী দেখেন। নামে বেনামে টেস্ট দেন, প্রেসক্রিপশনে অপ্রয়োজনীয় ঔষধের নাম লেখে দেন শুধুমাত্র কমিশনের নেশায়।

বাংলাদেশের অনেক মেধাবী ইঞ্জিনিয়ার নামকরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হয়ে সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ডের বিভিন্ন ফান্ডের টাকা নয়-ছয় করে। প্রতিদিন তার ড্রয়ারে কলো টাকার স্তুপ জমে। কোটি কোটি টাকা লুট করেন। নিজের ও পরিবারের নামে সম্পদের পাহাড় গড়েন।

ইউনিয়ন ভূমি অফিস থেকে শুরু করে সচিবালয় পর্যন্ত, সরকারী অফিসের ঝাড়ুদার থেকে বিগ বস পর্যন্ত কোথায় নেই দুর্নীতি? প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা সেবার বদলে প্রভুর মানসিকতা নিয়ে সম্পদের পাহাড় গড়েন। কোন কোন অফিসের পিয়নেরও ঢাকা সহ দেশের অনেক শহরে তিন চারটা অট্টালিকা আছে। সরকারী চাকরি নয় যেন আলাদীনের চেরাগ। অনেকেই সরকরী গাড়ি অফিসের কাজে ব্যবহার না করে নিজের বউ বাচ্চার বিলাসিতার জন্য ব্যবহার করেন।

আর এক পক্ষ হল ধর্ম ব্যাবসায়ী, এরা ধর্মের নামে বিভিন্নভাবে সাধারন মানুষকে ভয় ভীতি দেখিয়ে নিজের আখের গোছায়। এদের অনেকেরই না আছে চরিত্র, না আছে ধর্মীয় জ্ঞান। না আছে সামাজিক মূল্যবোধ, না আছে বিবেক। এরা সাধারন ধর্মভীরু মানুষের সম্পদ লুটে পুটে খায়। মানুষকে বিভ্রান্ত করে সম্পদের পাহাড় জমায়।


কথায় আছে, মাছের রাজা ইলিশ আর দেশের রাজা পুলিশ। বাংলাদেশে পুলিশ দেখে ভয় পায় না এমন মানুষ বিরল। আইনকে পুঁজি করে এমন কোন জগণ্য কাজ নেই যা তারা করতে পারে না। মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা, হত্যা-গুম করতে সহযোগিতা করা, মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে অপরাধীকে খালাস দেওয়া। আর মানুষকে আইনের ভয় দেখিয়ে টাকা হাতিয়ে নেওয়ায় এরা সিদ্ধ হস্ত।

আরেক পক্ষ হলো এনজিও (NGO) ব্যবসায়ী। এরা বিভিন্ন সেবামূলক কাজের কথা বলে দেশ বিদেশের বিভিন্ন দাতা সংস্থার কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা আনে। নাম মাত্র টাকা সেবামূলক কাজে খরছ করে বাকিটা নিজেদের ভোগ বিলাসে ব্যয় করেন। একদিন এক এনজিও কর্মীর কাছে শুনেছি সুইডেনের একটি দাতা সংস্থা থেকে বাহাত্তরটি টিউবওয়েল এসেছিল, এনজিও টির চেয়ারম্যান মাত্র সাতটি টিউবওয়েল বিভিন্ন দরিদ্র মানুষের মধ্যে বিতরন করেন। কিন্তু বাহাত্তরটি নাম্বারের নেম প্লেট একটি টিউবওয়েলের নীচে লাগিয়ে প্রমাণ হিসাবে ছবি তোলেন, যাতে দাতারা বুঝতে পারে সবকয়টি টিউবওয়েল মানুষের মধ্যে বিতরন করা হয়েছে!

রাজনীতিবিদ রাজনীতি করতে হলে, মন্ত্রী/এমপি হতে হলে, এমনকি দলের ছোট একটি পদ পেতে হলেও টাকা ঢালতে হয়।কোন অনুষ্টানে গেলে চাঁদা দিতে হয়। আপনি জমি দখল করলেও পক্ষে থাকতে হয়। খুন/ছিনতাই করলেও পক্ষে থাকতে হয়। না হলে পরবর্তী নির্বাচনে আপনাকে অন্য প্রার্থীর পক্ষে জান মাল বাজী রেখে লড়তে দেখতে হয়।

শুনেছি একজন প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে ইদানিং কমপক্ষে পাঁচ লক্ষ টাকা লাগে, পুলিশের কন্সটেবল নিয়োগেও সমপরিমাণ টাকা দিতে হয়। এই দু'টি চাকরিতে গ্রামের বেশিরভাগ পরিবারের গরীব ছেলে মেয়েদের নিয়োগ হয়। কিন্তু এখানেও সীমাহীন দুর্ণীতি। কিছুদিন আগে একজন মন্ত্রী স্বীকার করেছেন তিনি নিজেও চোর, মন্ত্রী/এমপি সবাই চোর, সরকারী কর্মকর্তা/কর্মচারী সবাই চোর। আসলে ঘুষ দুর্ণীতি নিয়ে নিজের ক্ষোভ প্রকাশ করতে তিনি এমনটি বলেছেন। তবে যতদূর জানি তিনি নিজে দুর্ণীতিগ্রস্ত নয়।।



ফটো ক্রেডিট,
গুগল।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে মে, ২০১৮ সকাল ৭:২২
২২টি মন্তব্য ২২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আপনি কি পথখাবার খান? তাহলে এই লেখাটি আপনার জন্য

লিখেছেন মিশু মিলন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩৪

আগে যখন মাঝে মাঝে বিকেল-সন্ধ্যায় বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতাম, তখন খাবার নিয়ে আমার জন্য ওরা বেশ বিড়ম্বনায় পড়ত। আমি পথখাবার খাই না। ফলে সোরওয়ার্দী উদ্যানে আড্ডা দিতে দিতে ক্ষিধে পেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×