somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সৌর জগৎ - পৃথিবী, সূর্য, চাঁদ এবং অন্যান্য গ্রহ নক্ষত্র

২২ শে মে, ২০১৮ দুপুর ২:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


সৌরজগৎ বলতে সূর্য এবং এর সাথে মহাকর্ষীয়ভাবে আবদ্ধ সকল জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক বস্তুকে বোঝায়। এর মধ্যে আছে: আটটি গ্রহ এবং ১৭৩টি জানা প্রাকৃতিক উপগ্রহ। পাশাপাশি কোটি কোটি ক্ষুদ্র বস্তু। ক্ষুদ্র বস্তুর মধ্যে গ্রহাণু, উল্কা, ধূমকেতু এবং আন্তঃগ্রহীয় ধূলি মেঘ অন্যতম। গ্রহ সূর্যকে কেন্দ্র করে নির্দিষ্ট কক্ষপথে ঘূর্ণায়মান এমন একটি বস্তু , (ক) যার নিজেকে গোলকীয় আকারে পরিণত করার মত যথেষ্ট পরিমাণ ভর রয়েছে এবং (খ) যা তার নিকটতম প্রতিবেশে অবস্থিত সব ক্ষুদ্র বস্তুকে অপসারণ করেছে।

সূর্য থেকে দূরত্বের দিক দিয়ে গ্রহগুলো হলো- (১) বুধ- Mercury (☿), (২) শুক্র- Venus (♀), (৩) পৃথিবী-Earth (⊕), (৪) মঙ্গল- Mars (♂), (৫) বৃহস্পতি- Jupiter (♃), (৬) শনি- Saturn (♄), (৭) ইউরেনাস- Uranus (♅), এবং (৮) নেপচুন- Neptun (♆)। আটটির মধ্যে ছয়টি গ্রহের নিজস্ব প্রাকৃতিক উপগ্রহ রয়েছে। গ্যাসীয় দানবের প্রত্যেকটির চারদিকে আবার গ্রহীয় বলয় রয়েছে। প্লুটো আবিস্কৃত হয় ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে। বিজ্ঞানী ক্লাইড ডব্লিউ টমবাউ এটি আবিষ্কার করেন। প্লুটোতে প্রচুর পরিমাণে মিথেন গ্যাস রয়েছে। কয়েক বছর একে গ্রহ এর তালিকায় রাখা হলেও ২০০৯ সাল থেকে বামন গ্রহ (Dwarf planet) ধরা হয়ে থাকে।

সূর্য থেকে দূরত্ব অনুসারে পৃথিবী হলো সৌরজগতের তৃতীয় উপগ্রহ। আয়তনের দিক থেকে পৃথিবী সৌরজগতের পঞ্চম বৃহত্তম গ্রহ। পৃথিবী হচ্ছে সৌরজগতের একমাত্র উপগ্রহ যেখানে প্রাণের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। আনুমানিক ৪৫৪ কোটি বছর আগে পৃথিবী গঠিত হয়েছিল। আর প্রায় ১ বিলিয়ন বছরের মধ্যে পৃথিবীতে প্রাণীর আবির্ভাব ঘটে।

সাড়ে ৪০০ কোটি বছর আগে দু'টি গ্রহের তীব্র সংঘর্ষ হয়েছিল। সংঘর্ষের তীব্রতা এতটাই বেশি ছিল যে, এ সময় গ্রহ দু'টি জুড়ে যায়। 'পৃথিবী' নামক গ্রহের সঙ্গে চরম সংঘর্ষ হয়েছিল 'থিয়া' নামের একটি গ্রহের। সংঘর্ষের সময় পৃথিবীর বয়স ছিল ১০ কোটি বছর। সংঘর্ষের জেরে থিয়া ও পৃথিবীর এক সাথে জুড়ে যায়, তৈরি হয় নতুন একটি গ্রহের। সেই গ্রহটিতেই আমরা বাস করছি।

পৃথিবীর মোট পৃষ্ঠতলের আয়তন হলো প্রায় ৫১০ মিলিয়ন কি.মি.। যার মধ্যে ৭০.৮% বা ৩৬১.১৩ মিলিয়ন কি.মি. হলো সমুদ্র পৃষ্ঠতলের নীচে যা সমুদ্রের পানি দ্বারা আচ্ছাদিত। সমুদ্র পৃষ্ঠতলের নীচেই রয়েছে অধিকাংশ মহীসোপান, পর্বতমালা, আগ্নেয়গিরি, সামুদ্রিক খাত, ডুবো গিরিখাত, সামুদ্রিক মালভূমি, গভীর সামুদ্রিক সমতল এবং সারা পৃথিবীব্যাপী বিসৃত মধ্য-সমুদ্র রিগ সিস্টেম।


আর বাকি ২৯.২% অংশ বা ১৪৮.৯৪ মিলিয়ন কি.মি. ভূখণ্ডটি স্থানে স্থানে পরিবর্তিত। এতে রয়েছে পাহাড়, পর্বত, মরুভূমি, সমতল, মালভূমি ও অন্যান্য ভূমিরূপ। অপসারণ ও অবক্ষেপণ, বিভিন্ন আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুত্পাত, বন্যা, মৃত্তিকা আবহবিকার, হিমবাহ ক্ষয়ীভবন, প্রবালপ্রাচীরের বৃদ্ধি এবং উল্কাপিন্ডের আঘাত ইত্যাদি হলো সেই সকল ক্রিয়াশীল প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে প্রতিনিয়ত পৃথিবীর ভূপৃষ্ঠের আকার পরিবর্তন ঘটছে ভূতাত্ত্বিক পরিবর্তনের সাথে সাথে।

পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহ হলো চাঁদ। এটি সৌরজগতের পঞ্চম বৃহত্তম উপগ্রহ। পৃথিবীর কেন্দ্র থেকে চাঁদের মোঠ দূরত্ব ৩,৮৪,৪০৩ কিলোমিটার। চাঁদের আয়তন পৃথিবীর আয়তনের প্রায় ৫০ ভাগের ১ ভাগ। সূর্য চাঁদের তুলনায় প্রায় ৪০০ গুন বড়। ধারণা করা হয় ৪.৩৫ বিলিয়ন বছর আগে চাঁদ পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ শুরু করেছিল।

পৃথিবী থেকে সূর্যের গড় দূরত্ব আনুমানিক ১৪.৯৬ কোটি কি.মি.। যাকে ১ নভো-একক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তবে পৃথিবীর কক্ষপথ যেহেতু উপবৃত্তাকার সেহেতু সূর্য থেকে তার দূরত্ব পরিবর্তিত হয়। জানুয়ারি মাসে পৃথিবী সূর্যের সবচেয়ে কাছে আসে এবং জুলাইয়ে সবচেয়ে দূরে সরে যায়। গড় দূরত্বে সূর্য থেকে আলো পৃথিবীতে আসতে ৮ মিনিট ১৯ সেকেন্ড সময় নেয়। এই সূর্যালোকের শক্তি পৃথিবীর প্রায় সকল জীবকে বাঁচিয়ে রাখে। উদ্ভিদ সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় এই আলো থেকে খাদ্য উৎপাদন করে এবং প্রাণীরা খাদ্যের জন্য এসব উদ্ভিদ বা অন্য প্রাণীর উপর নির্ভর করে। পাশাপাশি জলবায়ু এবং আবহাওয়া নিয়ন্ত্রণেও সূর্যালোক প্রধান ভূমিকা রাখে।

পৃথিবীর উপর সূর্যের বিশাল প্রভাব সেই প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকেই মানুষ অনুধাবন করে আসছে। অনেক সংস্কৃতিতে সূর্যকে তাই দেবতা মনে করা হতো। তবে সূর্যের প্রকৃত কাঠামো সম্পর্কে বৈজ্ঞানিক ধারণা গড়ে উঠতে অনেক সময় লেগেছে। ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রখ্যাত বিজ্ঞানীরাও সূর্যের গাঠনিক উপাদান এবং শক্তির উৎস সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানতেন না। এখনো সূর্য নিয়ে গবেষণা চলছে কারণ তার কিছু ব্যবহর এখনও পুরোপুরি ব্যাখ্যা করা যায়নি।


পৃথিবী হতে সবচেয়ে কাছের তারা হচ্ছে সূর্য। তারা জ্বলজ্বল করার কারণ হচ্ছে, এর কেন্দ্রে নিউক্লীয় সংযোজন বিক্রিয়ার মাধ্যমে যে শক্তি উৎপন্ন হয় তা তারার পুরো অভ্যন্তরভাগ পার হয়ে বহিঃপৃষ্ঠ থেকে বিকিরিত হয়। ইউ ওয়াই স্কিউটি (UY Scuti) মহাবিশ্বের বৃহত্তম তারকা। এটি আমাদের সূর্যের চেয়ে ১,০০০ গুণের চেয়েও বেশি প্রশস্ত। এটি একটি লাল মহাদানব (Red Supergiant)।

অধিকাংশ তারার বয়স ১০০ কোটি থেকে ১০০০ কোটির মধ্যে। কিছু তারার বয়স ১৩,৭০ কোটির কাছাকাছি, যা আমাদের দৃশ্যমান মহাবিশ্বের বয়সের সমান। এখন পর্যন্ত আবিস্কৃত পুরাতন তারা HE1523-0901 এর গননাকৃত বয়স ১,৩২০ কোটি বছর। তারার আকার যত বড় হয় এর আয়ূকাল ততই কমে যায়। কেননা বৃহদকার তারার কেন্দ্রের চাপ বেশি থাকে এবং এই চাপের সমতার জন্য এর হাইড্রোজেন দ্রুত পুড়ে নিঃশেষ হয়। আধিকাংশ বৃহদকার তারার আয়ূকাল গড়ে প্রায় ১০ লক্ষ বছর হয়। আপেক্ষাকৃত কম ভরের তারার (যেমন লাল বামন নক্ষত্র) জ্বালানি ধীরে ধীরে নিঃশেষ হয় এবং এদের আয়ূকাল ১,০০০ কোটি থেকে লক্ষ কোটি বছর হয়।

ধুমকেতু (ইংরেজি: Comet কমেট্‌) হল ধুলো, বরফ ও গ্যাসের তৈরি এক ধরনের মহাজাগতিক বস্তু। ধূমকেতু একটি ক্ষুদ্র বরফাবৃত সৌরজাগতিক বস্তু যা সূর্যের খুব নিকট দিয়ে পরিভ্রমণ করার সময় দর্শনীয় কমা (একটি পাতলা, ক্ষণস্থায়ী বায়ুমন্ডল) এবং কখনও লেজও প্রদর্শন করে । ধূমকেতুর নিউক্লিয়াসের ওপর সূর্যের বিকিরণ ও সৌরবায়ুর প্রভাবের কারণে এমনটি ঘটে। ধূমকেতুর নিউক্লিয়াস বরফ, ধূলা ও ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পাথুরে কণিকার একটি দুর্বল সংকলনে গঠিত। প্রস্থে কয়েকশ মিটার থেকে দশ কি.মি. এবং লেজ দৈর্ঘ্যে কয়েকশ কোটি কি.মি. পর্যন্ত হতে পারে । মানুষ সুপ্রাচীন কাল থেকে ধূমকেতু পর্যবেক্ষণ করছে।

একটি ধূমকেতুর পর্যায়কাল কয়েক বছর থেকে শুরু করে কয়েকশ’ হাজার বছর পর্যন্ত হতে পারে। ধুমকেতু উল্কা বা গ্রহাণু থেকে পৃথক কারণ এর কমা ও লেজের উপস্থিতি। কিছু বিরল ধূমকেতু সূর্যের খুব নিকট দিয়ে বারবার পরিভ্রমণ করার কারণে উদ্বায়ী বরফ ও ধুলা হারিয়ে ছোট গ্রহাণুর মত বস্তুতে পরিণত হয়। এপ্রিল ২০১৫ এর পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী ৫৩৮৪ টি ধূমকেতু আমাদের জানা। এ সংখ্যা ক্রমবর্ধমান কারণ মোট ধূমকেতুর (যা ধারণা করা হয় শত কোটি) একটি নগণ্য অংশ। খালি চোখে দেখা যাওয়া উজ্জ্বল ধূমকেতুকে বৃহৎ ধূমকেতু বলা হয়। কিছু ধুমকেতু নির্দিষ্ট সময় পরপর একই স্থানে ফিরে আসে। যেমন হ্যালীর ধুমকেতু।।



ফটো ক্রেডিট,
গুগল।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জুলাই, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:২৩
২৬টি মন্তব্য ২৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×