ইমদাদুল হক সাহেব সকাল সাতটা বাজার আগেই ইস্ত্রি করা প্যান্ট-কোট, সার্ট-টাই, পলিশ করা জুতা আর চিরুনী দিয়ে সিঁথি করা চুল নিয়ে পায়চারি করছেন। বগলে ঘাম নিরোধক স্প্রে আর গলায় ও বুকে ফুটপাত থেকে কেনা বিখ্যাত 'ডিওর' ব্যান্ডের বডি স্প্রে মেখেছেন। সাথে দোকান থেকে কেনা মেড ইন চায়নার তিনশত নিরান্নব্বই টাকার 'রাডো' ঘড়ি আর দুইশো চল্লিশ টাকার আরমানীর ফ্যাশন চশমা। ঠিক সাতটায় রওয়ানা দেওয়ার কথা অথচ ড্রাইভার ছোকরাটির আসার কোন নাম নেই। মোবাইলটা পর্যন্ত বন্ধ রেখেছে! পাক্কা আড়াই ঘন্টার পথ। দশটার মধ্যেই পৌছিতে হবে। হেলিকপ্টারে লাশ আসবে ঠিক সাড়ে নয়টায়। দশটায় গার্ড অফ অনার সহ জানাজা।
হঠাৎ অপরিচিত মোবাইল বেঁজে উঠতেই রিসিভ করলেন ইমদাদ সাহেব।
-- স্যার, আমি রাকিব। গত রাত থেকে কারেন্ট ছিল না এজন্য মোবাইল বন্ধ হয়ে গেছে। আপনার ফ্ল্যাট বাড়ির দারোয়ানের নাম্বার থেকে কল দিয়েছি। গাড়ি রেডি করছি আপনি নীচে চলে আসুন।
ইমদাদ সাহেব কোন উত্তর না দিয়ে ফোনটি রেখে দিলেন। বেশি রাগ উঠলে তিনি এমনটা করেন। ঘড়িতে খেয়াল করে দেখলেন সময় সাতটা বেঁজে আঠারো মিনিট। যাক বেশি দেরী হয়নি। ওয়েট আর টেনশন মিলে সময়টা অনেক লম্বা মনে হয়েছিল।
টয়োটা করোলা ই-৯০ মডেলের মেড ইন জাপানের গাড়িটি কোন ক্রেতা প্রথম কিনেছিল কে জানে! ইমদাদ সাহেব হলেন গাড়িটির তিন নম্বর মালিক। দুই নাম্বার মালিকটি মোঠেও দুই নম্বার ছিল না। গাড়িটি সত্যিকারে ভাল সার্ভিস দেয়। বিয়ের বছরে নতুন চাকরি পাওয়ার চার মাস পরে কেনা। গত তেরো বছরে অনেক কিছু পরিবর্তন হয়েছে কিন্তু করোলা ই-৯০ হাত বদল হয়নি। গাড়িটি তার খুব প্রিয়।
-- ভাইজান কী একা যাবেন?
জানতে চাইল, ড্রাইভার রাকিব।
-- হ্যা, একাই যাব।
উত্তর শুনে পাল্টা প্রশ্ন করলো, রাকিব-
-- ম্যাডাম আর পাপ্পু কি আগেই চলে গেছে?
ইমদাদ সাহেবকে স্যার বলে সম্বোধন করে না রাকিব। প্রথম দিনই বলে দিয়েছেন স্যার-টার বলা চলবে না, ভাই ডাকলেই হবে, চাইলে ইমদাদ সাহেবও ডাকা যাবে। তবে ম্যাডামকে 'ম্যাডাম' ডাকতে হয়, না হলে বড্ড খেঁপে যান তিনি! তবে কোন কারণে ইমদাদ সাহেব রেগে আছেন বুঝতে পারলে মুখ দিয়ে ভাই-টাই আসে না রাকিবের। বিষয়টি যে ম্যানেজ করার দাওয়াই তা ইমদাদ সাহেবও বুঝেন। ছেলেটি বেশ চালাক।
-- তোর ম্যাডাম বাচ্চাসহ দশদিন আগে থেকে ঢাকায়। শ্বশুর মশাই সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা করাতে যাওয়ার ঠিক আগের দিন গেছেন। আজ লাশের সাথে আসবে।
-- মন্ত্রী স্যার অনেক বালা লোক ছিলেন।
-- মন্ত্রী না, শ্বশুর মশাই প্রতিমন্ত্রী ছিলেন।
-- ঐ হলো। নামের সাথে মন্ত্রী তো আছে।
-- বুজলে রাকিব, শ্বশুর মশাই হলেন খুব লাকি পার্সন। আমি যখন বিয়ে করি তখন তিনি তিনবারের ইউনিয়ন চেয়ারম্যান। গত ইলেকশনের আগের ইলেকশনে দল থেকে নমিনেশন পেয়েই এক চান্সে এমপি। আর গত ইলেকশনে তো অটো এমপি হয়েই আরেক লাফে প্রতিমন্ত্রী। ভেরি লাকি গাই।
-- লাকি গাই!
অবাক হয়ে জানতে চাইল রাকিব।
-- ও তুই বুজবে না। পশ্চিমা দেশগুলোতে পুরুষ মানুষকে অনেকে "গাই" বলে সম্বোধন করে। হার্ট এ্যটাকে মারা না গেলে আব্বাজান সামনের বার নির্ঘাত ফুল মন্ত্রী হতেন।
-- আমার ভাইটির চাকরির জন্য স্যারকে বলেছিলাম। তিনি আশ্বাসও দিয়েছিলেন। কিন্তু হঠাৎ................।
-- কি আর করা। সব উপর ওয়ালার খেলা।
-- হো, ঠিক কইছেন ভাইজান।
-- আনলাকি, রিয়েলি আনলাকি।
উত্তর দিলেন ইমদাদ সাহেব।
-- আচ্ছা, এখন কী ম্যাডামের আম্মা আইমিন আপনার শ্বাশুড়ি এমপি হবেন?
একটু কৌতুহলী হয়ে জানতে চাইল রাকিব।
-- কে জানে, হতেও পারেন।
সত্যি তো। ব্যাপারটি আমার মাথায় আসলো না কেন? সবকিছু একটু দেরীতে বুঝি আমি। শ্বশুর মশাইয়ের কোন ভাই ব্রাদার না থাকায় সে সম্ভাবনা আছে। তবে তিনি বেঁচে থাকতে কতবার যে শ্বাশুড়িকে অপদার্থ, আনকালচার্ড আর মূর্খ বলে গালি দিয়েছেন তার কোন হিসাব নেই। ইমদাদ সাহেব নিজের কানে তা অনেকবার শুনেছেন। তবে বর্তমানে দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ক্লাশ টেন পর্যন্ত লেখা-পড়া করা শ্বাশুড়ি আম্মার এমপি হওয়ার সম্ভাবনাই বেশী।
-- ম্যাডাম এমপি হলে উনাকেও কী লাকি গাই/গাভী ডাকা হবে?
-- চুপ কর। এটা কেমন কথা?
-- সরি, স্যার।
-- তুই পাঞ্জাবী-পায়জামা আর মাথায় গোল টুপি পরেছিস কেন?
প্রসঙ্গটা চেঞ্জ করতে জানতে চাইলেন ইমদাদ সাহেব।
-- কি যে বলেন? জানাযায় যাচ্ছি। আমার মালিকের শ্বশুরের জানাযা। তার উপর মন্ত্রী মহোদয় বলে কথা। কত নামকরা মানুষ আসবে, এমপি মন্ত্রী আসবে। এত বড় ভিআইপির জানাযায় আগে কোনোদিন শরীক হইনি। এজন্য গত রাতে পাঞ্জাবী-পায়জামা দোকান থেকে আয়রন করে এনেছি।
ইমদাদ সাহেব প্যান্টের পেছনের পকেট চেক করে দেখলেন টুপিটা আনা হয়নি। সামনের দুই পকেটেও নেই। কোট-সার্টের পকেটেও পাওয়া গেল না। ক্যাপটা আয়রন করে টেবিলে রেখেছিলেন তিনি। কিন্তু কোট-টাই পরার সময় পেছনের পকেটে ঢুকাতে ভুলে গেছেন। ভাবলেন, এত বড় মিসটেক করা ঠিক হয়নি তার।
-- স্যার কোন সমস্যা, বাসায় কিছু ফেলে এসেছেন?
সামনের লুকিং গ্লাসে লক্ষ্য করতে করতে প্রশ্ন করলো রাকিব।
-- না কিছু না। তুই ড্রাইভিংয়ে খেয়াল দেয়। আমাকে নিয়ে ভাবতে হবে না।
কৌশলে টুপি ফ্যাক্টর চেপে গেলেন ইমদাদ সাহেব।
-- গাড়িতে কী স্যাড সঙের সিডি আছে?
-- কেন স্যার?
-- এতো প্রশ্ন করিস কেন?
-- দিচ্ছি।
কিশোর কুমারের গাওয়া বিখ্যাত গানটি বেঁজে উঠলো-
"একদিন পাখি উড়ে যাবে যে আকাশে
ফিরবে না আর সেতো আর কারো আকাশে"।
গানটি ইমদাদ সাহেবের খুব প্রিয়। মন খারাপ থাকলে গাড়িতে প্রায়ই গানটি শুনেন। বিষয়টি জানা রাকিবের।
হেলিকপ্টার আসলো শিডিউল টাইমের চল্লিশ মিনিট পর। এলাকার পোলাপান থেকে শুরু করে অনেক কিশোরীও স্বচক্ষে হেলিকপ্টার দেখতে হাজির। মন্ত্রী মশাইয়ের লাশ আর নিকটাত্মীয়দের আহাজারি কোন কিছুতেই তাদের আগ্রহ নেই। অনেক বাচ্চাদের কাছে তা অষ্টম আশ্চর্যের শামিল। নিকট ভবিষ্যতে নয়নে কপ্টার দেখা হবে কিনা জানা নেই তাদের। ইচ্ছা করছে কাছে গিয়ে হাত বুলিয়ে দেখার কিন্তু কড়া সিকিউরিটি থাকায় সে সম্ভাবনা নেই। দূর থেকে চোখ বড় বড় করে নীল-সবুজের বাহনটি গিলছে সবাই। চরকিটা ঘুরছে বিকট শব্দে আপন খেয়ালে।
হেলিকপ্টারে লাশের সাথে ইমদাদ সাহেবের স্ত্রী, বড় সমন্দি আর ছোট শালিকা এসেছে। পরিবারের বাকিরা সবাই বাই রোডে আগেই গ্রামের বাড়ি এসেছেন। দু'টি বড় গরু জবাই করা হয়েছে মেহমানদারী করার জন্য। সাথে তিনটি খাসি, একশ পঞ্চাশটি মুরগী। এছাড়া সব্জী আর মুগ ডালও আছে।
একজন ফুল মন্ত্রী, দুইজন উপমন্ত্রী, পাঁচজন এমপি, মন্ত্রণালয়ের সচিব, কয়েকজন ভিআইপি শিল্পপতিও এসেছেন আলাদা দু'টি কপ্টারে।
বউয়ের দিক খেয়াল করতেই মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে গেল ইমদাদ সাহেবের। চোখ দু'টি কোটরে ঢুঁকে গেছে। মনে হয় কয়েক রাত থেকে ঘুমায়নি। খাওয়া-দাওয়াও ঠিকমতো করেনি হয়তো। কাঁদতে কাঁদতে কান্না আর অবশিষ্ট নেই তার। তবে ছোট শ্যালিকাটা তখনো ফুঁপিয়ে কাঁদছে। ইমদাদ সাহেব মনটা ভীষন খারাপ করে চেহারায় কান্না কান্ন ভাব আনার চেষ্টা করলেন। কিন্তু অনেক চেষ্টা করেও হচ্ছিল না। বারবার রিহারসেল করার পর এবার অর্ধেক হয়েছে। মোবাইলের স্ক্রীনকে আয়না বানিয়ে চোখের সামনে দাঁড় করিয়ে নিশ্চিত হলেন তিনি।
একটা জিনিস লক্ষ্য করলেন ইমদাদ সাহেব, পরিবারের ঘনিষ্ট সদস্য সহ ভিআইপিরা সবাই ধবধবে সাদা পায়জামা-পাঞ্জাবীর সাথে মাথায় টুপি পরেছেন। সাথে চামড়ার দামী স্যান্ডেল। নিজের স্যুট-টাইকে বেশ বেমানান লাগলো তার এজন্য অস্থির লাগছে। বউ, শালিকারাও সাদা ত্রিপিস পরেছে আজ। মাথায় হিজাব! একমাত্র ছোট ভায়রাও পায়জামা-পাঞ্জাবীতে মোড়ানো। আগে কোনোদিন তাকে পাঞ্জাবীতে দেখেছেন বলে মনে পড়ছে না। ভেতরে ভেতরে বেশ অস্বস্তিতে ভোগতে লাগলেন তিনি। নিজের ড্রেসআপটা পরিবেশের সাথে বেশ বেখাপ্পা লাগলো। টুপিটা থাকলে সমাজটা কিছুটা হলেও রক্ষা পেতো। মনের অস্বস্তি কমাতে লোকচক্ষুর আড়ালে গিয়ে গলা থেকে টাইটা খুলে ভাঁজ করে কোটের পকেটে রেখে দিলেন। আড়চোখে ফলো করলেন কেউ ব্যাপারটি লক্ষ্য করছে কিনা।
যথাসময়ে জানাযার নামাজ, গার্ড অফ অনার আর মাটি দেওয়ার পর্ব শেষ হলো। খাওয়ার সময় দেখা দিল বিপত্তি। পরিবারের ঘনিষ্ঠ সবাই এক টেবিলে খেতে বসেছেন। চলছে গ্রুপ ছবি তোলা ও সেলফি পর্ব। হঠাৎ ইমদাদ সাহেবের পাঁচ বছরের ছেলে বলে উঠলো-
-- আব্বু সবাই সাদা ড্রেস পরলো, তাইলে তুমি পরলে না কেন?
-- হ্যা, তাইতো। পরা উচিৎ ছিলো।
ছেলে পাপ্পুও পায়জামা-পাঞ্জাবী পরেছে। তার কথাটিতে অনেক জোর থাকায় সবাই স্পষ্ট শুনতে পেল। বউ রাগী রাগী চোখে তার দিকে তাকাচ্ছে। আজ নির্ঘাত অনেক কথা শুনতে হবে।
-- আর কবে তোমার কাণ্ড-জ্ঞান হবে শুনি? পাঁচ বছরের বাচ্চাটিও বিষয়টি বুঝতে পারলো আর তুমি ধামড়া বুড়ো হয়েও বুঝলে না!!
খাওয়া আর সেলফি পর্ব শেষে একটু একান্তে হাজবেন্ডকে পেয়েই বউয়ের পয়লা উক্তি এটি।
-- খেয়াল ছিলো না।
ভয়ে ভয়ে উত্তর দিলেন, ইমদাদ সাহেব।
-- আর কবে খেয়াল হবে তোমার, মরণ আসলে? ছোকরা ড্রাইভারটি পর্যন্ত বুঝতে পারে এসব দিনে কেমন ড্রেসাপ করতে হয় আর তুমি কিচ্চু বুঝ না? দুধের শিশু আপনি!!
মরলে তো সাদা কাফনে মোড়িয়ে কবরে শুয়ানো হবে, পাঞ্জাবী তো লাগবে না। তবে একটা দিকে মিল আছে পাঞ্জাবীও সাদা, কাফনের কাপড়ও সাদা। কথাটি আনমনে ভাবলেন ইমদাদ সাহেব। আসলে নিজেরই তো মিসটেক। ঘরে ঝকঝকে তিনটি পায়জামা-পাঞ্জাবী থাকার পরও খেয়াল হয়নি তার।
গায়ে হলুদের অনুষ্টানে বড় হওয়ার পরও সার্ট-প্যান্ট পরে যেতেন ইমদাদ সাহেব। পহেলা বৈশাখ, সুন্নতে খতনা আর ওয়াজ মাহফিলেও। তবে বিয়ের পর বউয়ের কড়া নজরদারীর জন্য এখন আয়োজন বুঝে ড্রেসাপটা ঠিকটাক থাকে। আজ বউ সাথে থাকলে নিশ্চয় এই বিপত্তি হতো না। সমাজটা রক্ষা পেতো!
ইমদাদ সাহেবের সমস্যা যে ড্রেসাপে হয় তা কিন্তু নয়। রেস্টুরেন্টে বউ-বাচ্চার চাপাচাপিতে ভাল কোন খাবার খেতে গেলে নিজে তেমন কিছুই নেন না। বন্ধু-বান্ধবের সাথে রেস্টুরেন্টে বসলেও ম্যানুর সবচেয়ে কমদামী খাবার অর্ডার করেন তিনি। কোন ঈদে নতুন জামা-কাপড় কেনা হয়না তার। তবে বউ-বাচ্চা আর আত্মীয়-স্বজনকে সাধ্যমতো কিনে দেন, খুশি করেন। কোন গান বাজনার অনুষ্ঠানে গেলেও চুপচাপ থাকেন সবার সাথে হইহুল্লড় করতে পারেন না তিনি। এসব আয়োজনে নিজেকে বড়ই বেমানান লাগে তার। যদিও ভেতর থেকে সংস্কৃতি মনা তিনি, গান বাজনা শুনতে ভালোই লাগে তার।
বিয়ের পর প্রথম প্রথম শ্বশুর বাড়িতে বেশ সমাদর পেতেন ইমদাদ সাহেব। চেয়ারম্যান শ্বশুর তাকে পাশে বসিয়ে বেশ গর্ব করে লোকজনের কাছে পরিচয় করিয়ে দিতেন-
"আমার বড় জামাই ইমদাদুল হক। বিসিএস শিক্ষা। অমুক/তমুক কলেজের রসায়নের প্রভাষক। শুনে সবাই বেশ বাহবা দিত। গর্বে শ্বশুরের মুখটি চকচক করতো। তাঁর করোলা ই-৯০ গাড়িটি দেখলে সবাই জানতো চেয়ারম্যান সাহেবের শিক্ষিত বড় জামাই এসেছে। স্ত্রী তাহেরাও হাজবেন্ড নিয়ে বেশ গর্ব করতো।"
আগের সে দিন এখন আর আর নেই। গোল্ডেন পাস্ট। যে শ্বশুরের আধপাকা দু'চালের ঘর ছিলো এখন সেখানে চকচকে সাদা দুই তলার বিশাল প্রাসাদ হয়েছে। নির্বাচনী এলাকার লোকজন বসার জন্য আছে বিশাল বড় সিটিং হল। যে শ্বশুর রিক্সা দিয়ে ইউনিয়ন পরিষদে যেতেন এখন দৌড়ান লেটেস্ট মডেলের পাজারু। ইন্টার পাশ করা সমন্দি ঢাকায় গার্মেন্টস খুলেছে। আছে নতুন একটি ব্যাংকের শেয়ার। প্রাইভেট একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালকও তিনি। আছে নিজস্ব পাজারু জীপ ও ড্রাইভার।
বউ তো সব সময় বলে ভাগ্যিস আগে বিয়ে হয়েছিল বলে মন্ত্রীর মেয়ের হাজবেন্ড হতে পেরেছ। এখন হলে তো স্বপ্নেও কল্পনায় আসার সাহস হতো না। কথাটি সে মিথ্যা বলেনি। আমার দ্বিতীয় শালীর বিয়ের সময় শ্বশুর আব্বা সিম্পল এমপি ছিলেন। তারপরও মেঝ শালিকাকে এক মন্ত্রীর পোলার সাথে বিয়ে দিয়েছেন। দুই হাতে দেদারসে টাকা উড়ায় ভায়রা ভাই। খুশিতে আর আভিজাত্যে আমার শালীর পা মাটিতে পড়ে না। একান্ত টেকায় না পড়লে দুলাভাই ডাকে না এখন। মানুষের কাছে পাপ্পুর আব্বু বলে পরিচয় দেয়। অথচ একটা সময় দুলাভাই বলতে অজ্ঞান ছিল শালীটা আমার।
টাকা পয়সার সাথে মানুষের স্ট্যাটাস বদল হয়, সামাজিক অবস্থার পরিবর্তন হয়, মানুষের মন-মানসিকতার পরিবর্তন হয়। আচরণ বদলায়। রুচি ও চাহিদার রদবদল হয়। চেনা মানুষ অচেনা হয়। অচেনা মানুষ আপন হয়। ভালবাসা আর সম্মানের জায়গায় চিড় ধরে।
অথচ এই কয়টা বছরে ইমদাদ সাহেবের তেমন পরিবর্তন হয়নি। টয়োটা করোলা ই-৯০ চেঞ্জ হয়নি। আচরণে পরিবর্তন আসেনি। রুচিতেও না। পরিবর্তনের মধ্যে শুধু প্রভাষক থেকে সহকারী অধ্যাপক হয়েছেন। কপালে ও থুঁথুনিতে একটু ভাঁজ পড়েছে। চুল দাড়ি আধ-পাকা হয়েছে। ছোটবেলা ঈদের জামা কেনার সামর্থ না থাকায় এখনো ঈদে নতুন জামা কেনার আগ্রহ হয়না। একটা সময় পাঞ্জাবী কেনার সামর্থ্য ছিল না বলে এখনো ম্যাচ করে পাঞ্জাবী পরতে ভুলে যান তিনি। ছোট বেলা রেস্টুরেন্টে ভাল খাবার খাননি বলে এখনো দামী খাবার খেলে ঠিকমতো হজম হয়না তার।
হয়তো অনেকের চেয়ে স্মৃতিশক্তি তার এখনো অনেক প্রখর আছে বলে।
ফটো ক্রেডিট,
গুগল।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১:৫৩