somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

কাওসার চৌধুরী
জন্মসূত্রে মানব গোত্রভূক্ত; এজন্য প্রতিনিয়ত 'মানুষ' হওয়ার প্রচেষ্টা। 'কাকতাড়ুয়ার ভাস্কর্য', 'বায়স্কোপ', 'পুতুলনাচ' এবং অনুবাদ গল্পের 'নেকলেস' বইয়ের কারিগর।

টগরের হোমওয়ার্ক (গল্প)

২২ শে জুন, ২০১৮ বিকাল ৪:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


লন্ডন ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের ছাত্র টগর। এর আগে আরো তিনটা ক্লাস পাশ করে রীতিমতো নিজের যোগ্যতার প্রমাণ দিয়ে ক্লাস টুতে প্রমোশন পেয়েছে সে। বয়স ৭ বছর ৪ মাস ২৩ দিন। প্রতিদিনের মতো আজও বাবার সাথে ডাইনিং চেয়ার-টেবিলে বসে স্কুলের পড়া মুখস্ত করছে। সাইজে পিচ্চি হওয়ায় মা টগরের চেয়ারের উপর একটি ছোট টুল যুক্ত করে দিয়েছেন। বাবা মারুফ কামাল পাশের চেয়ারে বসে কঠিন হেডমাস্টারের মেজাজ নিয়ে ছেলের পড়া-লেখার দায়িত্বে নিয়োজিত।
-- কিরে টগর, পড়ায় তো দেখি মোটেও খেয়াল নেই।
-- বাবা, আমার হোমওয়ার্ক শেষ।
-- দেখি....... দেখি............... !!
বাবা মারুফ কামাল স্কুলের ডায়েরিতে লেখে দেওয়া হোমওয়ার্ক দেখে একটা একটা করে পড়া ধরা শুরু করলেন।
-- ম্যাথের হোমওয়ার্কটা দেখাও তো ?
-- বাসায় ফিরে কোন অঙ্ক করি নাই, বাবা।
-- মানে?
-- পারি না, তাই করিনি। তবে স্কুলে করছি। এই দেখো.......
কথাটি বলেই স্কুলে কষা অঙ্কগুলো বাবাকে দেখালো।
-- স্কুলের ক্লাসওয়ার্ক তো দেখতে চাইনি।
-- তাহলে আর নেই, বাবা।
এভাবে বাংলা......, ইংরেজি....., সাইন্স....., হিস্ট্র....., জিওগ্রাফী.....!! না, টগর আজ কোন বিষয়ের হোমওয়ার্ক করে নাই।
-- এত বড় মিথ্যা কথা!! বিকালে পড়তে বসনি কেন?

এখানে একটি কথা বলে রাখা ভাল, টগর প্রতিদিন বিকালে বাবা অফিস থেকে আসার আগে হোমওয়ার্ক করে রেখে দেয়। সন্ধ্যার পর বাবার প্রথম কাজ হলো ছেলের হোমওয়ার্ক টিকমতো হয়েছে কি না যাচাই করা।

-- আমার একা একা পড়তে ভাল লাগে না। মাকে বলেছিলাম আমার কাছে বসতে; টিভি দেখা বাদ দিয়ে মা আমার কাছে আসেনি। আমাকেও কার্টুন দেখতে দেয়নি। বিকালে পড়তে আমার ভাল লাগে না; খেলতে ভাল লাগে।
-- তাহলে হোমওয়ার্ক শেষ বল্লে কেন?
-- হ্যা শেষ তো; সত্যি বলছি বাবা।
-- সত্যটা তাহলে কী?
-- স্কুল থেকে এসে শাওয়ার করেছি; মাম্মির কথামতো ভেজিটেবল দিয়ে ভাত খেয়েছি; আজ এক গ্লাস দুধ খেয়ছি, একদম দুষ্টুমি করিনি। মাম্মী নিষেধ করায় টিভি দেখিনি, চিল্লাচিল্লি করিনি। অপরাহ্ণে ইচ্ছা না থাকলেও ঘুমাইছি; বিকাল তিনটায় ঘুম থেকে উঠে আবার পড়তে বসেছি। সন্ধ্যার পর..............
-- তোকে এতো পাকনামি করতে তো বলি নাই। সোজাসুজি উত্তর দেয়, হোমওয়ার্ক করলি না কেন?
-- বাবা, আমি যা করেছি এগুলো কী হোমওয়ার্ক নয়? হোমওয়ার্ক মানে তো "বাড়ির কাজ"। এখানে বাড়ির পড়া তো বলা হয়নি।
-- এতদিন তো ঠিকই পড়া শিখে রাখতে।
-- আসলে না বুঝে করেছি, বাবা। আজ হোমওয়ার্কের মিনিং বুঝতে গিয়ে ভুলটা ধরা পড়লো।
-- তাহলে হোমওয়ার্ক মানে, বাড়ির কাজ?
-- হ্যা, বাবা।
-- আজ তোর একদিন কি আমার একদিন। হারামজাদা............

একটা প্রমাণ সাইজ থাপ্পড় টগরের গালে দিতে গিয়ে কষ্ট করে রাগ সংবরণ করলেন তিনি। তবে আঙুল নাচিয়ে রাজ্যর সব বড় বড় উপদেশে বিলি করলেন। টগর এসব ভারী কথার থোড়াই কেয়ার করে। বাবার কঠিন কঠিন উপদেশের কিছুই মাথার নেটওয়ার্কে ধরে না তার।

-- আজ রাত দশটা পর্যন্ত একটানা পড়তে হবে। মাঝে কোন বিরতি নেই।

মারুফ সাহেব বাংলা খাতা বের করে বললেন-
-- "লন্ডন ইন্টারন্যাশনাল স্কুল" টানা দশ পৃষ্ঠা লেখতে হবে। শুরু কর জলদি। এটা তোর পাকনামির শাস্তি।
-- স্কুলের নাম তো কোনদিন বাংলায় লেখিনি। স্কুলেও আমাকে শেখায়নি। শুধু শুধু ইংরেজিতে শিখেছি। আমি পারবো না, বাবা।
-- শুধু ইংরেজি বানান শিখলে হবে না, বাংলায়ও শিখতে হবে। শুরু কর জলদি। কোন কথা নেই। একদম চুপ।

অনিচ্ছা সত্বেও টগর বাড়তি কোন প্রতিবাদ না করে ভয়ে ভয়ে লেখতে শুরু করলো। যুক্তবর্ণ লেখতে বেশ কষ্ট হচ্ছে তার। এজন্য রাবার দিয়ে এইচবি পেন্সিলের লেখা বার বার মুছতেছে আবার নতুন করে চেষ্টা করছে। কখনো পেন্সিল ভেঙ্গে গেলে শার্পনার দিয়ে আবার ঠিকটাক করছে। তবে কিছুতেই লেখা সুন্দর করতে পারছে না। বিষয়টি মনযোগ দিয়ে পর্যবেক্ষণ করছেন মারুফ সাহেব কিন্তু এবার ছেলেকে হুমকি ধমকি কিছুই দিচ্ছেন না।
-- বাবা হচ্ছে না, কঠিন লাগে।
-- চেষ্টা করতে থাকো।
হবে।

একটা জিনিস হঠাৎ খেয়াল হলো মারুফ সাহেবের। টগর যতবার লেখাগুলো মুছে আবার নতুন করে চেষ্টা করছে ততবার লেখা আগের বারের চেয়ে ভাল হচ্ছে। ব্যাপারটি বেশ মনে ধরেছে তার। একটা বাচ্চা একেকটা অক্ষর, একেকটা সংখ্যা অনেক পরিশ্রম করে শত বার চেষ্টায় সুন্দর করে লেখার অভ্যাস করে। এক-দুই বারের চেষ্টায় কোন বাচ্চা কখনো তা পারে না। এজন্য বর্ণমালা শেখার সময়টাতে বাচ্চাদের বেশি করে যত্ন নিতে হয়। আদর করে হাতে কলমে বারবার শেখাতে হয়। দীর্ঘ দিনের চর্চার ফলে অক্ষর ও সংখ্যাগুলো ধীরে ধীরে জীবন্ত হয়ে উঠে।

এভাবে পর্যায়ক্রমে শব্দ.............. বাক্য............... বানান............যুক্তবর্ণ.............সব শিখতে হয়।

মানুষের জীবনও অনেটাই তেমন। শুরুতে ঠিকমতো কেয়ার না পেলে, গাইড লাইন না পেলে, যত্ন না পেলে, ঘষামাজা না করলে ভিত্তিটা নড়বড়ে হয়ে যায়। বড় হওয়ার পর যতই চেষ্টা করা হোক না কেন জীবনের ভিত্তি আর মজবুত হয় না। একটা সময় আসে গাছের গোড়ার চেয়ে মাথার বোঝাটা ভারী হয়ে যায়। সামান্য ঝড় তুফানে জীবন নামক বৃক্ষটি তাল সামলাতে না পেরে মাথা ভেঙে পড়ে যায়।

আরেকটি বিষয়ও মারুফ সাহেবকে ভাবালো। ছোটবেলা যখন শিশুদের অক্ষর/সংখ্যা লেখতে হাতেখড়ি হয় তখন অভিবাবক থেকে শুরু করে স্কুলের শিক্ষক পর্যন্ত সবাই তাদেরকে বকাঝকা দেয়, সুন্দর না হলে তিরস্কার করে। অনেক সময় শাস্তিও দেয়। অথচ কিছুদিন পর এই ছেলেটি যখন সুন্দর করে লেখতে শিখে তখন সবাই খুব প্রশংসা করে। মানুষের জীবনের ভীত্তিটাও ঠিক তেমন। প্রতিষ্ঠা পাওয়ার প্রাথমিক পর্যায়ে বোশিরভাগ সময় সমাজ থেকে স্বীকৃতি পাওয়া যায় না। অনেক সময় মানুষ হাসাহসি করে। কখনো কখনো বাধা বিপত্তি, এমনকি তিরস্কারও জোটে। অথচ মানুষটি পরিশ্রম করে শেষ পর্যন্ত সফল হলে সবাই বাহবা দেয়।

-- বাবা, একটা প্রশ্ন করবো?
-- করো।
-- লন্ডন মানেটা কী?
-- লন্ডন ইংল্যান্ডের রাজধানী। পৃথিবীর অন্যতম বড়, সুন্দর আর প্রাচীন শহর।
-- এটি তো আমাদের দেশের কোথাও না।
-- না।
-- তাহলে স্কুলের নাম লন্ডন রাখছে কেন?
-- হ্যা, তাইতো। কাজটা করা তাদের একদম ঠিক হয় নাই।
-- আরেকটি প্রশ্ন আছে?
-- কী?
-- ইন্টারন্যাশনাল মানে কী?
-- আন্তর্জাতিক।
-- আন্তর্জাতিক মানে কী?
-- যেখানে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের প্রচুর মানুষ বসবাস করে; বিভিন্ন দেশের সাথে ব্যবসা-বাণিজ্য করে; সেখানে বিভিন্ন দেশের বড় বড় কোম্পানীর অফিস আছে; বিভিন্ন দেশের সংস্কৃতির চর্চা আছে; সবার বাক স্বাধীনতা আছে; নিরাপত্তা ও ভাল যোগাযোগ ব্যবস্থা আছে।
-- আমাদের স্কুলের নামের সাথে আন্তর্জাতিক লাগানো হয়েছে কেন?
-- কোন স্কুলে বিভিন্ন দেশের ছাত্র/ছাত্রী থাকলে আন্তর্জাতিক নাম দিতে পারে।
-- আমাদের ক্লাসে তো বিদেশি কোন ছাত্র নেই; টিচারাও তো সবাই দেশি।
-- ওহ! তাহলে কেন নামটি দিল বুঝতেছি না।
-- বাবা তাহলে তুমি জেনে শুনে একটা ভূয়া, একটা পঁচা স্কুলে আমাকে ভর্তি করলে কেন? এরা মিথ্যা মিথ্যা নাম দিয়েছে।

সাত বছরের ছেলেকে কী উত্তর দেবেন ভেবে পাচ্ছেন না মারুফ সাহেব। ছেলের পাকনামি তো রীতিমতো বাবাকে হারিয়ে দিয়েছে। উত্তরটি ভাবতে লাগলেন। হঠাৎ কলিংবেলের শব্দ শুনতেই তড়িঘড়ি করে এগিয়ে গিয়ে দরজা খুলতেই দেখলেন মতিন সাহেব।


তিন বছর হলো ফুড ইন্সপেক্টরের চাকরী থেকে রিটায়ার্ড করেছেন তিনি; থাকেন পাশের মহল্লায়। মারুফ সাহেবের পাশের ফ্ল্যাটে উনার মেয়ে থাকেন। হাজবেন্ড-ওয়াইফ দুজনই ডাক্তার। দশ বছরের নাতনি রুম্পা আর সাড়ে চার বছরের পাপনকে সকালে স্কুলে নিয়ে যাওয়া, আবার স্কুল থেকে বাসায় নিয়ে আসার দায়িত্ব নানার উপর পড়েছে। সন্ধ্যায় টিচার আসলে চা নাস্তা এগিয়ে দেওয়া, প্রয়োজনে মেয়ের জন্য বাজার সদাইও করেন তিনি।

-- আরে, কেমন আছেন মতিন সাহেব?
-- গুড, বেরি গুড। বিরক্ত করতে আসলাম।
-- বিরক্ত বলছেন কেন?
-- মেয়েটি আজ আর্লি চেম্বার শেষ করে চলে এসেছে সো আমার ছুটি। তবে জামাই এখনো আসে নাই, শুনেছি নাইট ডিউটি আছে তার।
-- বসুন। আপনার সাথে আলাপ করতে ভালই লাগে আমার।
-- বুঝলেন,বাসায় একা একা থাকতে ভাল লাগে না। গত বছর গিন্নি মারা যাওয়ার পর থেকে বাসাটা একদম ফাঁকা, কথা বলার কেউ নেই।
-- যখন ইচ্ছা আসবেন। কথা বলবেন।
-- না না, সব সময় আসবো না। মুখে যতই বলুন আসবেন, ভেতরে ভেতরে ঠিকই খারাপ পাচ্ছেন। রিটায়ার্ড মানুষকে কেউ পছন্দ করে না। তবে অনুমতি দিলে সপ্তাহে মাত্র দুইদিন একটু বিরক্ত করবো।
-- আপনার ছেলে কোন দেশে যেন থাকেন?
-- আগে সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় ছিল, তবে গত মাস থেকে নিউইয়র্ক আছে। দেশে আসতে বলেছিলাম। বউ বাচ্চারা নাকি দেশে ফিরতে চায় না।
-- মেয়ে তো একজনই?
-- হ্যা। তবে আরেকটা মেয়ে ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সময় রোড এক্সিডেন্টে মারা যায়। মেয়ের মৃত্যর পর থেকে আমার গিন্নি অসুস্থ হয়ে পড়েন। মাথায় গন্ডগোল দেখা দেয়। অবশেষে গত বছর................।
-- জানি আমি, আরেকদিন বলেছেন। মন খারাপ করবেন না। সব নিয়তি।
-- শি ওয়াজ এ কেয়ারিং লেডি। নাউ আই এ্যাম হাফ ম্যাড; অলসে কেয়ারলেস ওল্ড রটেন হিউম্যান বিঙ।

অন্যদিন মতিন সাহেব আসলে যদিও বেশ হাসি মুখে তাকে ওয়েলকাম করেন তবে ভেতরে ভেতরে বেশ বিরক্ত হন মারুফ সাহেব। লোকটি বিনা ব্রেকে একটানা ঘন্টার পর ঘন্টা কথা বলতে পারে। সারাদিন অফিস করে বাসায় ফিরে একতরফা কারো অপ্রয়োজনীয় কথা শুনার আগ্রহ বা ধৈর্য কোনটিই মারুফ সাহেবের থাকে না। তিনি অনেকটা চুপচাপ স্বভাবের মানুষ, এজন্য সারাক্ষণ বিরতিহীনভাবে হ্যা, না বলে যাওয়াটা ভাল লাগে না তার। এরকম মানুষদের কেউ পছন্দ করে না। তাছাড়া কোন কারণ ছাড়া শতকরা পঞ্চাশ পারসেন্ট কথা ইংরেজিতে বলেন তিনি।

তবে আজকে কেন যেন মনে হচ্ছে একটু সময় নিয়ে আলাপ করবেন উনার সাথে। ভেতরের ঘরে গিয়ে টগরের পড়াশুনার তদারকি করে, স্ত্রীকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে মতিন সাহেবের মুখোমুখি বসলেন তিনি।
-- আপনার নাতি/নাতনি কোন স্কুলে পড়ে?
-- টোকিও-সিডনি ইংলিশ স্কুলে।
-- আর ডাক্তার মেয়ে-জামাই?
-- মেয়ে ব্যাংকক হসপিটেলে জব করে; আর জামাই সিঙ্গাপুর মেডিক্যাল কলেজ এন্ড হসপিটেলে।
-- একটা বিষয় খেয়াল করেছেন?
-- কী?
-- স্কুলের নামটি টোকিও-সিডনি কেন দিয়েছে উদ্যোক্তারা জানেন?
-- নো, আই নেভার থিংক এবাউট ইট।
-- ব্যবসা, বুঝলেন ব্যবসা। আমরা বিদেশি দামী জিনিসের নাম শুনলেই বেহুশ হয়ে যাই। টোকিও-সিডনি পৃথিবীর উন্নত দু'টি শহর। শিক্ষা-দীক্ষা, ব্যাবসা-বাণিজ্য এবং জ্ঞান-বিজ্ঞানে পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ নগরী। আমাদের দেশের পাবলিক এসব নামগুলো আগ্রহ নিয়ে গিলে এজন্য এমন নামকরণ। নামটা যদি "বরিশাল-রংপুর বাংলা বিদ্যালয়" হতো তাহলে পাবলিক তা পছন্দ করতো না। টাকা ওয়ালারা সস্তা নামের স্কুলে বাচ্চা ভর্তি করতো না; এতে ধনীদের প্রেস্টিজ পাংচার হতো। স্কুলের ব্যবসাও লাটে উঠতো। এমন নাম হলে আপনি কী নাতি-নাতনিকে ভর্তি করতেন?
-- ইন্টারেস্টিং! কোয়াইট ইন্টারেস্টিং!!
-- বিষ্ময় এখানেই শেষ নয় মতিন সাহেব। আছে ক্যামব্রিজ স্কুল, অক্সফোর্ড স্কুল, হার্ভার্ড স্কুল।
আরো আছে.......................।
-- কোথায় ক্যামব্রিজ, অক্সফোর্ড আর হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি আর কোথায় এসব স্কুল?
-- এটা লজ্জা। সত্যি লজ্জার। শিক্ষা নিয়ে নির্লজ্জ ব্যবসা। দেখার যেন কেউ নেই। সবাই চোখ বুজে নাকে তেল দিয়ে ঘুমিয়ে আছেন।
-- ব্যাংকক হসপিটাল, সিঙ্গাপুর মেডিক্যালের নামকরণেও একই উদ্দেশ্য কাজ করেছে। যত রঙ-চঙা নাম, ব্যবসার মুনাফা ততো বেশী। অথচ শিক্ষা ও স্বাস্থ্য হলো সেবা খাত। সরকারকে এসব খাতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বরাদ্দ দিতে হয়, তদারকি রাখতে হয়। কিন্তু আমাদের দেশে এ দু'টি খাতে সবচেয়ে রমরমা ব্যবসা হয়। অল্প পুঁজিতে অধিক মুনাফার সহজ বিনিয়োগ হলো এসব খাত।
-- সেবা খাতগুলো পুরোপুরি সরকারি হওয়া উচিৎ ছিল। সেবা খাতে পাবলিক বিনিয়োগ করলে ব্যবসার ধান্দা তো হবেই।
-- আমরা শিক্ষিতরাও এসব ধোঁকাবাজির শিকার হচ্ছি প্রতিনিয়ত। সাধারণ পাবলিকের তো আরো খারাপ অবস্থা।
-- সেদিন বিশিষ্ট কথা সাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদ সম্বন্ধে একটি কথা শুনে আমি বিস্মিত হয়েছি।
-- কথাটা কী?
-- তিনি নাকি ক্লাস এইট পর্যন্ত লেখাপড়ায় মোটেও সিরিয়াস ছিলেন না। যদিও ছোটবেলা থেকে খুব মেধাবী ছিলেন তিনি। তবে ক্লাসের পড়া ভাল লাগতো না তাঁর। সারাক্ষণ গল্পের বই পড়তেন। হাতের কাছে যা পেতেন তাই পড়তেন। ক্লাস এইটের বার্ষিক পরীক্ষায় ফেল করার পর তাঁর বাবা প্রমোশনের জন্য স্কুলে রিকোয়েস্ট করতে গেলে স্কুল কর্তৃপক্ষ উনাকে অপমান করে বিদায় করে। বিষয়টি হুমায়ুন আহমদের কানে আসলে তিনি ভীষণ লজ্জা পান। বাবার এ অপমানটা তাঁকে আঘাত করেছিল। আর সেদিন থেকেই পড়ালেখায় সিরিয়াস হন তিনি। তারপরের ইতিহাস তো সবার জানা।
-- বিষয়টি তো জানতাম না। আধুনিক যুগের বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ লেখক যদি ক্লাস এইট পর্যন্ত সিরিয়াসলি পড়াশুনা না করেও পৃথিবী বিখ্যাত সাহিত্যিক হতে পারেন, তাহলে অন্য ছেলেমেয়েরা পারবে না কেন?
-- আমরা বাচ্চাদের প্রাইমারি লেভেলে সবচেয়ে প্রেসারে রাখি। অথচ এ সময়টাতে তাদের হেসে খেলে আনন্দের সাথে শিক্ষা অর্জন করার কথা। আমরা চাপিয়ে দিয়ে তাদের আগ্রহটা অঙ্কুরেই বিনাশ করে দেই। প্রকৃত শিক্ষা অর্জন করতে হয় স্ব স্ব ইচ্ছায়। চাপিয়ে দেওয়া শিক্ষা প্রকৃত শিক্ষা নয়। এসব শিক্ষা মুখস্ত নির্ভর, যা পরবর্তী সময়ে কোন কাজে আসে না।
-- সহমত।।



ফটো ক্রেডিট,
গুগল।

চাইলে পড়তে পারেন-
আমার সবচেয়ে পঠিত, লাইক ও কমেন্ট প্রাপ্ত পোস্ট।
সবচেয়ে পঠিত প্রবন্ধ।
সবচেয়ে পঠিত গল্প।
সবচেয়ে লাইকপ্রাপ্ত গল্প।
ছবি ব্লগ (লন্ডনের ডায়েরি-১)।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে জুন, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৩৪
২০টি মন্তব্য ২০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিশ্বাসীকে লজিকের কথা বলার দরকার কি?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৮ ই মার্চ, ২০২৪ দুপুর ২:১৭




হনুমান দেবতা এবং বোরাকে কি লজিক আছে? ধর্ম প্রচারক বলেছেন, বিশ্বাসী বিশ্বাস করেছেন ঘটনা এ পর্যন্ত। তাহলে সবাই অবিশ্বাসী হচ্ছে না কেন? কারণ অবিশ্বাসী বিশ্বাস করার মত কিছু... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের শাহেদ জামাল- ৭১

লিখেছেন রাজীব নুর, ১৮ ই মার্চ, ২০২৪ দুপুর ২:৫৪



শাহেদ জামাল আমার বন্ধু।
খুব ভালো বন্ধু। কাছের বন্ধু। আমরা একসাথেই স্কুল আর কলেজে লেখাপড়া করেছি। ঢাকা শহরে শাহেদের মতো সহজ সরল ভালো ছেলে আর একটা খুজে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভাবছিলাম ২ লক্ষ ব্লগ হিট উপলক্ষে ব্লগে একটু ফান করব আড্ডা দিব, কিন্তু এক কুৎসিত অপব্লগার সেটা হতে দিলোনা।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:০৫



এটি ব্লগে আমার ২৬০ তম পোস্ট। এবং আজকে আমার ব্লগের মোট হিট ২০০০০০ পূর্ণ হয়েছে। আমি আনন্দিত।এই ছোট ছোট বিষয় গুলো সেলিব্রেট করা হয়তো ছেলে মানুষী। কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শয়তান বন্দি থাকলে শয়তানি করে কে?

লিখেছেন সাখাওয়াত হোসেন বাবন, ১৮ ই মার্চ, ২০২৪ রাত ১০:২০



রমজানে নাকি শয়তানকে বেধে রাখা হয়,তাহলে শয়তানি করে কে?

বহুদিন পর পর ব্লগে আসি এটা এখন অভ্যাসে পরিনত হয়েছে। বেশ কিছু বয়স্ক, মুরুব্বি, সম বয়সি,অল্প বয়সি একটিভ কিছু ব্লগার... ...বাকিটুকু পড়ুন

বয়কট বাঙালি

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৯ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:২৪



কদিন পরপরই আমাদের দেশে বয়কটের ঢল নামে । অবশ্য তাতে খুব একটা কাজ হয় না । বাঙালির জোশ বেশি দিন থাকে না । কোন কিছু নিয়েই বাঙালি কখনই একমত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×