somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় - সাদা আর নীল বিষের আঁধার (শিক্ষক রাজনীতি, শিক্ষার পরিবেশ, গবেষণা ও নিয়োগ)

০১ লা আগস্ট, ২০১৮ রাত ১২:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ছোট বেলায় কালার (রঙ) চিনতে অনেক ঝামেলায় পড়তাম। এখনো পড়ি। তবে মেয়ে মানুষ না হওয়ায় বড়সড় প্রবলেম হয় না, পুরুষ বলে রক্ষা! মেয়েদের সবচেয়ে প্রিয় কালারগুলোর বেশিরভাগই আমি চিনতে পারি না। এটা কালার ব্লাইন্ডনেস কিনা জানি না। শুনেছি মানুষ কালার ব্লাইন্ড হলে লাল, সবুজ অথবা নীল রঙ চিহ্নিত করতে সমস্যা হয়; এমনকি যেসব রঙে অন্য রঙের সংমিশ্রণ আছে সেগুলো কালার ব্লাইন্ডরা দেখতে পায় না। তবে স্ট্রেইট কালারগুলো (সাদা, কালো, লাল, নীল, গোলাপী, বেগুণী, হলুদ ইত্যাদি) চিনতে সমস্যা হয় না। শুনেছি বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সহ পৃথিবী বিখ্যাত অনেক মানুষ কালার ব্লাইন্ড ছিলেন।

কালার নিয়ে আবার কিছু বিশেষ কথা প্রচলিত আছে।
যেমন- নীল দংশন, সাদা বক ও গোলাপী এখন ট্রেনে ইত্যাদি।

আজ আমি সাদা X(; নীল X(; গোলাপী X(; নিয়ে লেখবো।

সাদা, নীল আর গোলাপী- এগুলো শুধু রঙের প্রতীকই নয়; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক বিভাজনের প্রতীকও বটে। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাদা আর নীল প্রতীকটা যতটুকু দৃশ্যমান গোলাপী সে হিসাবে তেমন পরিচিত নয়। এই বিভাজন, এই দলবাজি, এই নীতিহীন কর্মকাণ্ড রাজনৈতিক দলগুলোর লেজুড়েেবৃত্তি আর সামান্য ব্যক্তি স্বার্থের কারণে। শিক্ষকদের এ অনৈতিক রাজনীতিতে কোন্দল, উপদল, বিরোধী দলও আছে X(। শিক্ষক সমিতির নির্বাচন, ডিন, সিনেট ও সিন্ডকেট নির্বাচনে এ দলাদলি স্পষ্ট ফুটে উঠে। দলাদলি আর রাজনৈতিক খুঁটির জোরে শিক্ষকদের মধ্যে পরস্পরে কিল-ঘুসি; চড়-থাপ্পড় এবং কলার ধরে টানাটানির ম্যারাথনে অংশ নিতেও দেখা যায়।

হায়রে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড X(

১৯৭৩ সালের বিশ্ববিদ্যালয় এ্যক্ট অনুসারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান; এজন্য দেশের যে কোন বিষয়ে শিক্ষকদের স্বাধীন মতামত দেওয়ার অধিকার আছে। কিন্তু তাই বলে রাজনীতি; পলিটিক্যাল দলগুলোর লেজুড়বৃত্তি X(? আশির দশকের প্রথম দিকে নীল আর গোলাপীর অস্তিত্ব থাকলেও এরশাদের আমল থেকে সাদা দলের আবির্ভাব ঘটে। প্রথম দিকে সাদা দলটি কিছুটা নিরপেক্ষ অবস্থান ধরে রাখতে পারলেও এখন দলীয় রাজনীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। তবে গোলাপীরা এখন কোনঠাশা, ট্রেনটি এক্কেবারে থেমে না গেলেও যাত্রীর অভাবে জং ধরেছে। এখন শুধু সাদা আর নীলের রাজত্ব!

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দেশের প্রধান পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। একটা সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে রাজনীতি সচেতনতা, গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রাম, ইতিহাস-ঐতিহ্য, সাংস্কৃতিক চর্চা এবং উচ্চমানের শিক্ষা ও গবেষণার ঐতিহ্য ছিল। ফলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে এক সময় বিদেশীরাও সম্মানের চোখে দেখতো; প্রাচ্যের অক্সফোর্ডও বলা হতো। যে বিশ্ববিদ্যালয় ছিল জাতির বুদ্ধিবৃত্তিক দিকনির্দেশনার অন্যতম কেন্দ্র; সেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে এখন রাজনৈতিক দলের লেজুড়ভিত্তি চলে প্রকাশ্যে X(

উপদল ও কোন্দলের স্বর্গভূমি।

শুধু কি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়?

শিক্ষা, গবেষণা, পাঠদান, বুদ্ধিবৃত্তিক ও সাংস্কৃতিক চর্চার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় হিসাবে আরো উৎকর্ষ সাধনের পথ ছেড়ে রাজনৈতিক দলগুলোর লেজুড়বৃত্তি এবং ব্যক্তিগত পদ-পদবী আর দলাদলির স্বার্থে শিক্ষকরা দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে ধ্বংসের পথে নিয়ে যাচ্ছেন। এজন্য পৃথিবীর সেরা দুই হাজার বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঝে বাংলাদেশের একটিও নেই। ভবিষ্যতে যে তালিকায় আসবে তার কোন লক্ষণ দেখছি না। রাজনীতি বাদ দিয়ে শিক্ষকরা গবেষণায় মনযোগ না দিলে সে সম্ভাবনা নেই।


গত নয় বছরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সংখ্যা বেড়ে দ্বিগুণের কাছাকাছি হয়েছে। নিয়োগ পেয়েছেন ৯০০ জনের অধিক শিক্ষক! এ নিয়োগটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় হলে খুশি হতাম; কেননা শিক্ষক নিয়োগে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণার পরিবেশ ও মান উন্নীত হয়। কিন্তু বিভিন্ন উৎস থেকে শুনা যায়, এসময় প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে অনেক নতুন বিভাগ খোলা হয়েছে শুধু রাজনৈতিক বিবেচনায় শিক্ষক নিয়োগের জন্য। এই সংখ্যাটা সম্ভবত গিনজ বুকে স্থান পেতে পারে। দল ভারী করার জন্য যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ হয় তখন শিক্ষকদের পাঠদান ও গবেষণার যোগ্যতার চেয়ে রাজনৈতিক পরিচয়টা মূখ্য হয়ে উঠে। এতে লাভের চেয়ে ক্ষতি অনেক বেশি। এমনও অভিযোগ আছে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী ছাড়াই কোন কোন ছাত্রকে শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

সত্যি বেদনাদায়ক।

এমন নিয়োগ প্রক্রিয়া প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্যের সাথে চরম বেমানান, বিব্রতকর। শিক্ষকরাই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মেরুদণ্ড। আর শিক্ষকের প্রধান যোগ্যতা হলো তাদের অর্জিত জ্ঞান এবং গবেষণার ফলাফল; রাজনৈতিক পরিচয় কোন অবস্থাতেই একজন শিক্ষকের যোগ্যতা হিসাবে বিবেচ্য হতে পারে না। এ ধারা শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নয়, দেশের সবকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান। একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতকরা ৭০ ভাগ শিক্ষক প্রত্যক্ষভাবে দলীয় রাজনীতির সাথে জড়িত। এটা দুর্ভাগ্যজনক। তরুণ শিক্ষকরা রাজনীতি করেন অপেক্ষাকৃত ভাল বাসস্থান, স্কলারশীপ ও সিন্ডিকেট সদস্য হওয়ার আশায়। আর বয়োজ্যেষ্ঠ রাজনীতিবিদ শিক্ষদের লক্ষ্য থাকে প্রক্টর, প্রভোস্ট, ডিন, উপ-উপাচার্য, উপাচার্য এবং বিভিন্ন সংস্থা বা কমিশনের চেয়ারম্যান হওয়ার।

বাংলাদেশের প্রায় সবকয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ হয় রাজনৈতিক বিবেচনায় ও সুপারিশে। যে দলীয় সরকার যখন ক্ষমতায় থাকে তাদের মতাদর্শের আলোকে শিক্ষক নিয়োগ হয়। এছাড়া ক্লাসে ফাস্টক্লাস ফাস্ট হতে আছে অনেক স্বজনপ্রীতি। কোন কোন শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ছাত্রীদের যৌন হয়রানির অভিযোগও মাঝে মাঝে শুনা যায়। রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগ পাওয়ায় বেশিরভাগ শিক্ষক রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি নতজানু থাকে। শিক্ষক রাজনীতির আড়ালে লাল দল, নীল দল নামে রাজনৈতিক দলগুলোর এজেন্ডা বাস্তবায়ন করেন। এখানে ভাল শিক্ষক হওয়ার প্রচেষ্টার চেয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে খুশি রাখার প্রতিযোগিতা বেশি হয়।

একটা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পদায়ন ও মর্যাদা যখন রাজনৈতিক বিবেচনায় হয় তখন সেখানে গবেষণা ও সুষ্ঠু পাঠদান মুখ্য বিষয় থাকে না। আর এটাই হচ্ছে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ধ্বংসের সবচেয়ে সহজ পথ। এতে ভাল মানের শিক্ষকরা গবেষণায় আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। ফলশ্রতিতে আমরা পাই আন্তঃসার শুণ্য একদল শিক্ষক, গলাবাজ অধ্যাপক, মেরুদণ্ডহীন জাতির বিবেক। শুনা যায় অনেক শিক্ষক অন্যের গবেষণা কর্ম শতভাগ নকল করে ধরা পড়েছেন। রাজনীতি যেখানে মান মর্যাদা আর রুটি রুজির প্রধান হাতিয়ার সেখানে অন্য শিক্ষকের গবেষণাকর্ম চুরি হবে এটাই স্বাভাবিক। এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। রাজনীতিটাই তো বেশিরভাগ শিক্ষকের গবেষণার মূল বিষয়বস্তু।

বিষয়ভিত্তিক গবেষণার সময় কই!

এজন্য সব সময় ছাত্র রাজনীতির বিরুদ্ধে আমার কঠোর অবস্থান। ছাত্ররা যখন নিজেদের অধিকার আদায়ের রাজনীতি বাদ দিয়ে রাজনৈতি দলগুলোর লেজুড়বৃত্তি করে তখন এ রাজনীতি ছাত্রদের কোন কল্যাণে আসে না, জাতির কোন ভাল কাজে আসে না। তাদের মনে অসুস্থ প্রতিযোগিতা ও প্রতিহিংসা সংক্রমিত হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সহ দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হলো রাজনৈতিক দলগুলোর ছাত্র রাজনীতির প্রধান আখড়া। আর এসব রাজনৈতিক কর্মীদের অনেকেই কোন মতে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সার্টিফিকেট নিয়ে হয়ে যান বিশববিদ্যালয়ের শিক্ষক; এখানে নিয়োগে শিক্ষা ও গবেষণায় কৃতিত্বের কোন দরকার নেই। থাকতে হয় খুঁটির জোর আর রাজনৈতিক দলের পরিচয়।

ছাত্ররা যখন রাজনীতি, প্রতিহিংসা, টেন্ডারবাজি আর হল দখল/বাণিজ্য নিয়ে ব্যস্ত থাকে তখন গবেষণার মতো কঠিন কাজ একান্ত মনে করতে পারে না। আর এসব ছাত্ররা যখন শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ পান তখন নিজেকে রাজনীতি থেকে আলাদা করতে পারেন না। পরীক্ষার খাতা মূল্যায়ন ও পাঠদানে নিজের অজান্তেই ছাত্রদের রাজনৈতিক পরিচয় মূখ্য হয়ে উঠে তার কাছে। অথচ এমনটি হওয়ার কথা নয়। একজন শিক্ষকের কাছে একজন ছাত্রের পরিচয় শুধুমাত্র 'ছাত্র' হবে। অন্যকোন পরিচয় থাকতে পারে না।

ফলশ্রুতিতে........
(..........ছাত্র.........শিক্ষক.........রাজনীতি..........)
একটি চক্রে আবর্তিত হতে থাকে।

যদিও তা হওয়ার কথা ছিল...........
..........ছাত্র..........শিক্ষক..........পাঠদান..........গবেষণা..........।


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে ১৩টি অনুষদ, ৮২টি বিভাগ, ১১টি ইন্সটিটিউট এবং ৩৯ টি গবেষণাকেন্দ্র রয়েছে। পৃথিবীর বেশিরভাগ নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়েও এতো বিভাগ নেই। এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার রেজাল্টে যেমন হাজার হাজার এ+ দেখা যায় তেমনি, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নতুন নতুন বিভাগ খোলে সংখ্যার হিসাবে বিশ্বের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে পেছনে ফেলে দিয়েছে। এটাও কিন্তু কম না! আর ৩৯টি গবেষণা ইন্সটিটিউটে কী গবেষণা হয় জানা নেই। সংখ্যার দিক দিয়ে এটাও কিন্তু নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে ডিঙিয়ে গেছে!

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শত শত শিক্ষক পৃথিবীর নামকরা অনেক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি সহ অনেক উন্নত প্রশিক্ষণ নিয়ে এসেছেন। সেসব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ কেমন? ছাত্রদের সাথে শিক্ষকদের সম্পর্ক কেমন? গবেষণা ও পাঠদানের ধরণও নিশ্চয় তারা জানেন। তাহলে দেশে ফিরে বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করার পর এগুলো কী ভুলে যান? যতদূর জানি গবেষকদের স্মৃতিশক্তি ও বিবেক অনেক প্রখর থাকে। যদি নিজেকে পরিবর্তনই না করা যায় তাহলে শুধু শুধু বিদেশে গিয়ে গবেষণাকর্ম করে তো কোন লাভ নেই, তাই না?

নাকি দেশে ফিরেই উনারা আগের মতো "ছাত্র-শিক্ষক-রাজনীতি" এর দুষ্ট চক্রে পড়ে যান?

লন্ডনের ব্লুমসবারিতে অবস্থিত পৃথিবী বিখ্যত "ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন" (UCL)-এর ক্যাম্পাস। ২০১৭/১৮ সালের QS ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি রেঙ্কিংয়ে পৃথিবীর সপ্তম সেরা বিশ্ববিদ্যালয় (অক্সফোর্ড ও ক্যামব্রিজের সম মানের)। ক্যাম্পাসের ভেতরে তিন মাস চাকরি করার পর জানতে পারি এটি একটি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। কোনদিন দশজন ছাত্রকেও এক সাথে হই হুল্লোড় করতে দেখিনি। কে শিক্ষক কে ছাত্র চেনার কোন উপায় নেই। শিক্ষকরা সার্বক্ষণিক পাঠদান ও গবেষণা নিয়ে ব্যস্ত। ছাত্ররাও তাই।

লন্ডনে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়তে গিয়ে দেখেছি কে ভিসি, কে ডিন, কে প্রক্টর কেউ চেনে না। আর চেনার প্রয়োজনও নেই। শিক্ষকদের এত এত পদ-পদবীও নাই। থাকলে গবেষণা বাদ দিয়ে শিক্ষকরা এসব পদ নেবেন না বলে আমার বিশ্বাস। নেই রাজনীতির কোন চর্চা। নেই প্রতিহিংসা, পদ-পদবীর দৌড়ঝাপ। সেখানে ছাত্র-শিক্ষকের মাঝে খুব বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক হলেও কেউ এর অপব্যবহার করে না। ছাত্রীরা নিরাপত্তার অভাববোধ করে না!

বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক তরুণ শিক্ষক বিদেশ থেকে উচ্চশিক্ষা নিয়ে দেশে ফিরে আসেন না নোংরা রাজনীতির ভয়ে। ফিরলেও পর্যাপ্ত গবেষণার সুযোগ পান না। আর ভাল কিছু করলে রাজনৈতিক পরিচয় না থাকলে সেভাবে মূল্যায়িত হন না। এতে তারা মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েন, হতাশ হন। উৎসাহ হারিয়ে ফেলেন।

অনেক শিক্ষক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছুটি নিয়ে উচ্চশিক্ষার নামে বছরের পর বছর বিদেশে থাকেন; কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেতন-ভাতা সহ যাবতীয় সুযোগ-সুবিধাও নেন। এদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ আর দেশমুখী হন না; বেতন ভাতার টাকাও ফেরৎ দেন না। এটা দুঃখজনক।

বিশ্ববিদ্যালয় হল গবেষণার জায়গা। সারা পৃথিবীর নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে তাই করা হয়। সেসব দেশে শিক্ষকদের রাজনৈতিক পরিচয় নেই। স্বজনপ্রীতি নেই। তাদের শিক্ষকতার মান ও গবেষণার উপর নির্ভর করে তাদের মর্যাদা ও পদোন্নতি। আর আমাদের দেশের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক গবেষণা বাদ দিয়ে অন্যের লেখা কপি করে নিজের নামে চালিয়ে দেন। সাম্প্রতিক সময়ে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এমন কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। স্বনামধন্য কিছু শিক্ষক অন্যের গবেষণাপত্র হুবহু নকল করে ধরা পড়েছেন। এটা সত্যি জাতি হিসাবে আমাদের লজ্জিত করেছে।

এখন তো প্রাইমারি স্কুলের বেশিরভাগ শিক্ষক মাস্টার্স ডিগ্রিধারী; তাহলে একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের সাথে প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষকদের পার্থক্য কোথায়? নিশ্চয় প্রাইমারি স্কুলের ছাত্র পড়ানো আর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের পড়ানো এক বিষয় নয়; অথবা পড়ানোর পদ্ধতি এক নয়। তাহলে একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হতে হলে বাড়তি কি কি যোগ্যতা থাকা আবশ্যিক? উত্তর হলো, (১) একাডেমিক ভাল ফলাফল; (২) অন্য কোন প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা; (৩) ট্রেনিং; (৪) বিষয়ভিত্তিক গবেষণা; (৫) পিএইচডি (এটা আবশ্যিক নয়, তবে থাকলে ভাল)।


এজন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ফাস্টক্লাস ফাস্ট হওয়া মানে ভাল শিক্ষক হওয়ার গ্যারান্টি বুঝায় না, এটা নিয়োগ দাতাদের বোঝা প্রয়োজন।এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় কোন রাজনৈতিক দল নয় যে বাছ বিচার না করে কর্মী হিসাবে নিয়োগ দেবেন। লন্ডনে দেখেছি যদি কোন ছেলে/মেয়ে শিক্ষকতাকে পেশা হিসাবে নিতে চায় তবে ছাত্র জীবনে অত্যন্ত সতর্ক থাকে, যাতে কোন অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত বা সামাজিক বিশৃংখলার কোন রেকর্ড না থাকে। আমার এক ব্রিটিশ বন্ধু তার বান্ধবীকে সামান্য শারিরিক নির্যাতনের রেকর্ড থাকায় সেকেন্ডারী স্কুলের শিক্ষক হওয়ার জন্য অযোগ্য বিবেচিত হয়েছিল। আর আমাদের এখানে চান্দাবাজ ছাত্র, রাজনৈতিক গুন্ডা, অস্ত্রবাজ ছাত্র, মামা-চাচার প্রভাব, মন্ত্রী/এমপিদের সুপারিশ ইত্যাদি হল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার অন্যতম প্রধান যোগ্যতা।

একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষককে অবশ্যই ভদ্র, বিনয়ী, ধৈর্যশীল, গবেষক, পরিশ্রমী হতে হবে। থাকতে হবে সুন্দর ও সাবলীল উচ্চারণ, আকর্ষনীয় বাচনভঙ্গী ও ব্যাক্তিত্ব। হতে হবে রাজনৈতিক দলের পরিচয়মুক্ত কিন্তু রাজনীতি সচেতন। ছাত্র/ছাত্রীদের শ্রদ্ধা অর্জন করার যোগ্যতা। সিলেবাসের বাইরে গিয়েও সমাজ ব্যবস্থা, অর্থনীতি, রাষ্ট্র ব্যবস্থা ও দৈনন্দিন ঘটে যাওয়া বিষয়গুলোর উপর নজর রাখা এবং এসব বিষয়ে ছাত্র/ছাত্রীদের জ্ঞানদান করা। অসাম্প্রদায়িক মনোভাব পোষন করা, সঠিক সময়জ্ঞান থাকা, চরিত্রবান হওয়া। পরিষ্কার-পরিচ্চন্ন পোষাক পরিচ্ছদ পরিধান করাও একজন শিক্ষকের ভাল শিক্ষক হওয়ার অন্যতম যোগ্যতা।

সবচেয়ে অবাকের বিষয় বিশ্বের নামকরা অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের দেশের অসংখ্য প্রফেসর, রিসার্চার আছেন। এরা এই নোংরা রাজনীতি ও স্বজনপ্রীতির জন্য দেশে ফিরে আসে না। এভাবে প্রতি বছর মেধা পাচার হয়। আর এই সুযোগে গলাবাজ আর সুযোগ সন্ধানীরা শুণ্যস্থান পূরণ করে। পৃথিবীর নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ গবেষক বিদেশী। সেসব দেশ জানে কিভাবে গুণীর মর্যাদা দিতে হয়। এজন্য এই গুণীরাই তাদের আবিষ্কার ও দর্শন দিয়ে নিজ দেশের পরিবর্তে সেসব দেশের উন্নয়নে অবদান রাখেন। আমরা করি মেধাবীদের দেশ ছাড়া, আর ওরা মেধাবীদের বিভন্ন দেশ থেকে জড়ো করে দেয় নাগরিকত্ব! পাশাপাশি পর্যাপ্ত গবেষণার সুযোগ করে দেয়। এজন্যই তারা আমাদের চেয়ে দুইশত বছর এগিয়ে। তারা জানে কিভাবে গভীর সমুদ্র থেকে মুক্তা আহরণ করতে হয়।

দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অনেক উচুমানের শিক্ষক ও গবেষক আছেন। যাদের একমাত্র ধ্যান-জ্ঞান থাকে শিক্ষা ও গবেষণায় নিজেকে নিয়োজিত রাখা। এমন অসংখ্য শিক্ষকের সান্নিধ্য আমি পেয়েছি। উনাদের চেহারা চোখের সামনে ভাসলে একটা বাড়তি অনুপ্রেরণা পাই। দেখলে শ্রদ্ধায় মাথা অটোমেটিক অবনত হয়। তাদের জ্ঞানগর্ব কথাগুলো আমাদের জীবন চলার খোরাক যোগায়, গবেষণায় আগ্রহ যোগায়, দেশপ্রেমে উদ্ভোধ্য করে, বিশ্বমঞ্চে দেশের প্রতিনিধিত্ব করতে সাহস যোগায়। আমার এ লেখাটি এসব খাঁটি মানুষ গড়ার কারিগরদের বেলায় প্রযোজ্য নয়।

একটি কথা না বল্লেই নয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের (রঙ ধারী) একটি অংশ স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি হিসাবে নিজেদের পরিচয় দেন। তাহলে অপর পক্ষ কী স্বাধীনতার বিরোধী? যতটুকু জানি স্বাধীনতার বিপক্ষে দেশের কোন মানুষ স্পষ্ট অবস্থান নিলে তা দেশদ্রোহীতার শামিল। তাহলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকশো শিক্ষক রাজাকার? হায়রে প্রতিহিংসা আর বিভাজনের রাজনীতি! দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠও এখন বিভাজন আর প্রতিহিংসার চরণ ভূমিতে পরিণত হয়েছে।

একটি শিশুর হাতে বিপজ্জনক আগ্নেয়াস্ত্র তুলে দেয়া আর শিক্ষকদের মাথায় রাজনীতির প্যাচ ঢুকিয়ে দেওয়ার মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। উভয়ই ধ্বংস ডেকে আনে, সৃষ্টি নয়। একজন শিক্ষককে আমরা রাজনীতিবিদ নয়, শুধুমাত্র শিক্ষক ও গবেষক হিসাবে দেখতে চাই। শিক্ষকদের রাজনীতি নয়, শিক্ষানীতির মধ্যে থাকতে হবে। যে বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা বাদ দিয়ে রাজনীতি/দলাদলি আর প্রতিহিংসার বীজ রোপন করা হয়, সে প্রতিষ্ঠানের নামের সাথে 'বিশ্ব' শব্দটি জুড়ে দেওয়া বেমানান। শুধু 'বিদ্যালয়' লেখলেও স্কুলটির জন্য অপমানের।

শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড; আর এই মেরুদণ্ডের কারিগরেরা যখন মেরুদণ্ডহীন হন; তখন জাতির মেরুদণ্ডে ঘুণে ধরে, পঁচন ধরে। কারণ, এসব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হওয়া ছাত্ররা দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সেক্টরে কাজ করে; সচিব, ডিসি, এসপি, জেনারেল, এমপি, মিনিস্টার হয়। শিক্ষকদের নীতি ও আদর্শে গাফলতি থাকলে তা অটোমেটিকভাবে ছাত্রদের জীবনকে প্রভাবিত কর। ফলস্বরুপ আমরা পাই একদল ঘোষখোর, নীতিহীন, বিবেকহীন, দায়িত্বজ্ঞানহীন আমলা ও রাজনীতিবিদ।

তবে, সত্যিকারের শিক্ষকরা ভাল যা দেখে তা থেকেই তাঁরা নিংড়ে নেয় প্রকৃত শিক্ষা; শিক্ষকতা ও গবেষণা তাদের একমাত্র ধ্যান-জ্ঞান। "মনে প্রাণে যারা শিক্ষক, বিবেক তাঁদের সদাই জাগ্রত।"



ফটো ক্রেডিট,
গুগল।

চাইলে পড়তে পারেন-
আমার সবচেয়ে পঠিত, লাইক ও কমেন্ট প্রাপ্ত পোস্ট।
গল্প লেখার সহজ পাঠ
সবচেয়ে পঠিত প্রবন্ধ।
আধুনিক কবিতার পাঠ (সমালোচনা)
আলোচিত ফিচার 'দি লাঞ্চিয়ন'।
ব্রিটেনের প্রবাস জীবন- স্মৃতিকথা।
সবচেয়ে পঠিত গল্প।
সবচেয়ে লাইকপ্রাপ্ত গল্প।
ছবি ব্লগ (লন্ডনের ডায়েরি-১)।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা আগস্ট, ২০১৮ ভোর ৪:৪১
৪১টি মন্তব্য ৪১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হালহকিকত

লিখেছেন স্প্যানকড, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:১২

ছবি নেট ।

মগজে বাস করে অস্পষ্ট কিছু শব্দ
কুয়াসায় ঢাকা ভোর
মাফলারে চায়ের সদ্য লেগে থাকা লালচে দাগ
দু:খ একদম কাছের
অনেকটা রক্তের সম্পর্কের আত্মীয় ।

প্রেম... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×