somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

কাওসার চৌধুরী
জন্মসূত্রে মানব গোত্রভূক্ত; এজন্য প্রতিনিয়ত 'মানুষ' হওয়ার প্রচেষ্টা। 'কাকতাড়ুয়ার ভাস্কর্য', 'বায়স্কোপ', 'পুতুলনাচ' এবং অনুবাদ গল্পের 'নেকলেস' বইয়ের কারিগর।

ওয়াজ/তাফসির মাহফিল - একটি পর্যালোচনা (ফিচার)

০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১২:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


যখন খুব ছোট ছিলাম বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হলে অপেক্ষা করতাম কখন আমাদের মাদ্রাসায় ওয়াজ মাহফিল হবে। সারা বছর এক-দুই টাকা করে মাটির ব্যাংকে জমিয়ে রাখতাম ওয়াজের বাজারে কেনাকাটা করার জন্য। মনে আছে সকালের দিকে একবার ওয়াজের বাজারে যেতাম, বিকাল হলে সারা রাত সেখানে কাঁটানোর জন্য চুপি চুপি প্রস্তুতি নিতাম। যদিও ঠাণ্ডার মধ্যে সারা রাত না থাকার জন্য বাবা-মায়ের বারণ ছিল। কিন্তু কে শুনে এসব বারণ? রাতে বাড়িতে চলে আসব মাকে এই নিশ্চয়তা দিয়ে বাড়ি থেকে বের হতাম, কিন্তু ঘরে ফিরতাম ঠিকই পরদিন ভোরবেলা! সারা রাত বন্ধুদের নিয়ে শুধু ঘোরাঘোরি আর খাওয়া-দাওয়া। পাশে নানা বাড়ি হওয়ায় সেখানেও যেতাম। তখন ওয়াজ মানেই বুঝতাম ওয়াজের বাজার ও কেনাকাটা করা, মাহফিল নয়। তবে মাঝে মাঝে মাহফিলে বিভিন্ন বক্তার ওয়াজও শুনতাম। বাড়ির কাছাকাছি হওয়ায় ফুলতলি, হাড়িকান্দি ও লামারগ্রামের মাহফিল গুলোতে বেশি যাওয়া হত।

আমার বাবা ছিলেন স্বল্পশিক্ষিত ধর্মপ্রাণ মানুষ। একাডেমিক শিক্ষা কম থাকায় নিজে থেকে তাঁর কোরআন ও হাদিসের চর্চার তেমন সুযোগ ছিল না। এলাকার বেশিরভাগ মাহফিলে বাবা শত ব্যস্থতার মাঝেও আগ্রহ নিয়ে শরিক হতেন ইসলামি রীতি-নীতি ও কোরআন-হাদিসের নিরিখে জীবন-যাপনের বিধান জানতে ও এর উপর আমল করতে। এসব মাহফিলের বক্তব্যগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনতেন এবং খুব বিশ্বাস করতেন। বাড়িতে এসে নিজে আমল করার চেষ্টা করতেন এবং আমাদেরকেও আমল করতে তাগিদ দিতেন। এসব ইসলামী জলসা ছিল বাবার ধর্মীয় জ্ঞান অর্জন করা এবং তার উপর আমল করার অন্যতম প্রধান মাধ্যম। কোন বক্তব্য শুদ্ধ, ভূল না ত্রুটিপূর্ণ তা যাচাই করা তাঁর পক্ষে সম্ভব ছিল না।

বয়স বাড়ার সাথে সাথে ওয়াজ মাহফিলের গুরুত্ব বুঝতে পারি। এজন্য মাঝে মাঝে বিভিন্ন নামকরা ব্যক্তিবর্গের বক্তব্য শুনতে আগ্রহ নিয়ে মাহফিলে যেতাম। তবে এখন আর তেমন যাওয়া হয় না, বলতে পারেন যাই না বা যেতে ইচ্ছা করে না। আগে বড় বড় মাদ্রাসা ও মসজিদে ওয়াজ বা তাফসির মাহফিল হত, কিন্তু এখন তো পাড়ায় পাড়ায় শুধু মাহফিল আর মাহফিল। ফলে মানুষের কাছে ইসলামী মাহফিলগুলোর গুরুত্ব কমে গেছে। এসব মাহফিলের নামেও এসেছে অনেক পরিবর্তন। অনেকেই এখন এসব মাহফিলকে ইসালে সওয়াব মাহফিল, তাফসিরুল কোরআন মাহফিল, সুন্নি সম্মেলন ইত্যাদি বলতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। এছাড়া আছে বিশ্ব ইজতেমা। আগে শুধু টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে ইজতেমার আয়োজন হলেও, ইদানিং তা জেলায় জেলায় অনুষ্ঠিত হয়। এতে ইসলামের কতটুকু উপকার হয়, কতটুকু ধর্মীয় জ্ঞান অর্জন করা যায় তা ইস্তেমায় অংশগ্রহণ করা মুসল্লিরা ভাল বলতে পারবেন।

এবার আসি মূল প্রসঙ্গে। আমি গত কয়েক বছর থেকে গভীর মনযোগে এসব মাহফিল পর্যবেক্ষণ করে অনেক হতাশ হয়েছি। এখন আর কোরআন ও হাদিসের আলোকে জীবন যাপনের তাগিদ দেওয়া বক্তাদের প্রধান আলোচ্য বিষয় নয়। আলোচ্য বিষয় হল অন্য আলীমদের গীবত করা, যাদের সাথে বক্তার আক্বীদার মিল নেই তাদের তীব্র ভাষায় আক্রমন করা। যিনি পীর বিশ্বাস করেন তার পীর সাহেবের গুণ কীর্তন করা। কে ওহাবী, কে সুন্নি এসব বিষয় নিয়ে বিতর্ক করা। মীলাদুন্নবী ও সীরাতুন্নবী নিয়ে ডিবেট করা। নবীজী মৃত না জীবীত তা নিয়ে ঝগড়া করা। মাযহাবী ও লা'মাযহাবী নিয়ে একে অন্যকে তিরষ্কার করা। আহলে হাদিসদের গালিগালাজ করা। জাকির নায়েক কোন মাদ্রাসায় না পড়ে এবং টাই পরে কেন ইসলাম নিয়ে বক্তব্য দেন এবং বিভিন্ন ইসলামী সেমিনার করেন এজন্য তাকে ওহাবী বলা, তিরস্কার করা। অন্য ধর্মের মানুষকে গালি দেওয়া, ছোট করা। সবচেয়ে বেশি বক্তার বাজার দর বাড়াতে নিজের ঢোল নিজে পেটানো ইত্যাদি।


এখন অনেক হুজুর ঘন্টায় পঞ্চাশ-ষাট হাজার টাকা কন্টাক্ট করে মাহফিলে যান। এদের টাকার রিসিটও আছে। কেউ কেউ আবার হেলিকপ্টার হুজুর! উনারা এত ব্যস্ত যে, হেলিকপ্টার/বিমানে মাহফিলে গিয়েও কুলাতে পারেন না। মাহফিলে পশ্চিমাদের ইহুদি, নাসারা বলে গালি দিলেও এদের অনেকের বাড়িতে ইউরোপ-আমেরিকান এনজিও আছে। এদের বেশিরভাগের নামের আগে/পরে এত টাইটেল লাগানো থাকে যে, কোনটা তার নিজের নাম বুঝার উপায় থাকে না। অনেকটা বড় বড় ডাক্তারদের নামের সাথে লাগানো বিভিন্ন ডিগ্রীর মত। যে ডাক্তারের নামের সাথে যত বেশি ডিগ্রী সে ডাক্তারকে আমরা তত অভিজ্ঞ মনে করি। বেশিরভাগ ইসলামী বক্তা নিজেদের বাজার দর বাড়াতে এসব অনর্থক টাইটেল ব্যবহার করেন। পৃথিবীর কোন বিজ্ঞানীর নামের সাথে টাইটেল থাকে না। এমনকি অনেকের নামের সাথে বিজ্ঞানী জুড়ে দিলে তাঁদের অস্বস্তি লাগে। তারা প্রচারে নয়, কাজে বিশ্বাসী। আর উনারা নামের সাথে এতো টাইটেল লাগান তারপরও বিখ্যাত হতে পারেন না, মানব কল্যাণের জন্য কিছু আবিষ্কার করতে পারেন না। খালি কলসি যতক্ষণ বাজাবে ততক্ষণ কলসির আওয়ায়জ পাওয়া যায়, বাজানো বন্ধ হলে কলসি ও তার আওয়াজকারীকে সবাই ভুলে যায়। নাম মানুষকে বড় করে না, মানুষ নামকে বড় করে।

ইউটিউবে দেখলাম একজন মুফতি গানের সুরে জিকির করছেন আর নাচতেছেন, অন্যরাও তার নাচানাচিতে উদ্ভুদ্ধ হয়ে তাল মেলাচ্ছেন। কণ্ঠটা দারুণ সুন্দর, তরুণীদের নয়ণের মণি হওয়ার জন্য যথেষ্ট। এটা নাকি আধুনিক জিকির! আরেক পক্ষ আছেন জিকিরের জোশে ভরা মাহফিলে অনুসারীরা পীরকে জড়িয়ে ধরেন, মাহফিলে ডিগবাজি দেন, খুঁটি বেঁয়ে উপরে উঠে নাচানাচি করেন। এক কথায় সার্কাস পার্টি। এরা নাকি হক্কানী পীর। একটি ভিডিওতে দেখলাম এক পীর বক্ত তার পীর সাহেবকে বড় করে বুঝাতে বলেছেন, পীর সাহেব মারা যাওয়ার পর মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) তার জানাজা পড়তে সুদূর মদীনা থেকে এসেছেন! এগুলো কী সত্যি? ইসলামিক গবেষকরা নিশ্চয় এর উত্তর দিতে পারবেন। এগুলো প্রচারে সমস্যা হলো, যে কেউ দাবি করতে পারেন উনার নিকটাত্মীয় কারো জানাযায় রাসুল (সাঃ) হাজির হয়েছিলেন। তখন পরিস্থিতি কী হতে পারে ভাবেন? এতে হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) কে নিয়ে চরম বিতর্ক হবে। নিশ্চয় এমনটা হোক তা আমরা চাই না।

ঠিক তেমনি কোন পীর সাহেব হযরত শাহজালাল (রহঃ) এর সাথে মুসাফা করেছেন বলে প্রচার করাও ঠিক না। কাউকে চাঁদে দেখা গেছে তাও প্রচার করা অন্যায়। এতে মানুষের ধর্ম বিশ্বাসে আঘাত করে। অনেকের মতে, হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) কবরেও জীবিত। উম্মতরা মিলাদ পড়লে রাসুল (সাঃ) সামনে এসে দাঁড়ান, সালামের জবাব দেন। উনাদের যুক্তি হল রাসুল (সাঃ) হাজির নাজির। তবে এ মতবাদের বিপক্ষে জোরালো যুক্তি আছে।

প্রশ্ন হল, শাহজালাল (রহঃ) তো নবী বা রাসুল এমন কেউ ছিলেন না; তাহলে মৃত্যুর এত বছর পরও তিনি কিভাবে পীর সাহেবের সাথে মোলাকাত করলেন? তাহলে কি তিনিও কবরে জীবিত? ইচ্ছা করলেই বের হয়ে আসতে পারেন? জিয়ারত করতে গেলে ভক্তদের দেখতে পান!

নাকি পীর সাহেবও কবরে জীবিত আছেন তা পরোক্ষভাবে মানুষকে জানিয়ে দেওয়া? পীর সাহেবের কবরের পাশে গেলে তিনি ভক্তদের দেখতে পান, তাদের কথাগুলো শুনেন এটা প্রচার করা। কারণ হাদিসে স্পষ্ট আছে, মৃত ব্যক্তি কাউকে কোন সহযোগিতা করতে পারে না, তাই কবরের পাশে গিয়ে তাকে উসিলা করে কিছু চাওয়া যাবে না। আর কারো উসিলা করে আল্লার কাছে কিছু চাইলে এই দোয়া আল্লাহর দরবারে কবুল হয়না। তাই সুকৌশলে কী পীর সাহেবকে মৃত্যুর পরও বাঁচিয়ে রাখা হয় কোন বিশেষ উদ্দেশ্যে? এদের অনেকেই এটাও বলেন বড় পীর আব্দুল কাদির জিলানী (রহঃ) মায়ের পেটে থাকা অবস্থায় কোরআন শরীফের আঠারো পারা মুখস্ত করেছিলেন! যদিও হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)কেও মহান আল্লাহ্ তায়ালা এমন ক্ষমতা দেননি। নব্যুয়ত পেতে তাঁকে চল্লিশ বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছিল।

এখন আসি তাফসির/ওয়াজ মাহফিল আয়োজন প্রসঙ্গে। অনেক সময় দেখা যায় এলাকায় যারা গান-বাজনা, উরুস ও মেলার আয়োজন করে তারাই আবার মহা ধুমধামে ওয়াজ মাহফিলেরও আয়োজন করে (তবে ব্যতিক্রমও আছে)। এলাকায় চলে বেশী টাকা দিয়ে নামকরা বক্তা হায়ার করার প্রতিযোগিতা। যাদের বিভিন্ন দেশের সাথে কানেকশন আছে তারা ইসালে সওয়াবের নামে দেশ-বিদেশ থেকে প্রচুর টাকা চাঁদা তুলেন, অনেক সময় এসব টাকার একটা অংশ মাহফিলে খরছ করে বাকি টাকা নিজেদের ভোগ বিলাসের জন্য রেখে দেন। আরেক পক্ষ আছেন যারা শীতের মওসুমে ওয়াজের নামে লিফলেটও রশিদ বই তৈরী করে বাসা বাড়ি থেকে চাঁদা কালেকশন করেন, এদের অনেকেই ভূয়া/ধান্দাবাজ বলে অভিযোগ আছে।


এবার আসি মিলাদুন্নবী ও সীরাতুন্নবী প্রসঙ্গে। মিলাদ অর্থ হল জন্মদিন, আর মীলাদুন্নবী হল হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) এর জন্মদিন। আবার সীরাতুন্নবী অর্থ হল হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) এর জীবন ব্যবস্থা। এখন প্রশ্ন হলো কোনটি পালন করা যুক্তিযুক্ত? আল্লাহর নবীর জন্মদিন পালন করা না তাঁর জীবনীর উপর আলোচনা করা। একটু গভীর মনযোগে বিষয়টি নিয়ে ভাবলে উত্তর পেয়ে যাবেন। আমি মনে করি হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) এর জীবনী অর্থাৎ তাঁর হাদিসের উপর আলোকপাত করা অধিক যুক্তিসঙ্গত, জন্মদিন নয়। এছাড়া ইসলামে জন্মদিন পালন করতে বিধি-নিষেধ আছে।

মাযহাব অর্থ মত, পথ বা পাঠশালা। হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) এর ইন্তেকালের প্রায় ১৫০ বছর পর মাযহাব গঠন করা হয়েছিল। কারণ তখন পর্যন্ত হাদিস সংকলন হয়নি। মূলত ইসলামের অপব্যাখ্যা ও সমাজের বিচ্যুতি ঠেকাতে তখন মাযহাব গঠন করা হয়েছিল। খুলাফায়ে রাশেদীন, সাহাবী, তাবেঈ ও তবে তাবেঈদের আমলে মাযহাব ছিল না। হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) বিদায় হজ্জ্বের ভাষণে বলে গেছেন, "আমি তোমাদের জীবন ধারণের জন্য দু"টি জিনিস রেখে যাচ্ছি, একটি হল পবিত্র কোরআন আর অপরটি হল আমার জীবনী অর্থাৎ হাদীস"। এজন্য হাদিসের সংকলনের পর মাযহাবের কার্যকারিতা মূলত শেষ হয়ে যায়। ফলে মাযহাব মানা, না মানার সাথে কোরআন ও হাদিসের কোন সম্পর্ক নেই। ইসলামের মূল নীতি নির্ভর করে কোরআন ও হাদীসের দিক নির্দেশনার উপর। আর মাযহাব যদি আবশ্যক হয় তাহলে বাংলাদেশী হানাফিদের মধ্যে এত মতবিরোধ কেন? সবার তো একমত হওয়ার কথা, তাই না?

বিদ'আত নিয়েও কম জলগুলা হয় না। সাধারণত সমাজে এমন কিছু প্রথা আছে যা কোরআন ও হাদীসে নেই কিন্ত আমাদের সমাজে প্রচলিত আছে। যেমন-তাবিজ করা, মিলাদ পড়া, জিকির করা, কুলখানি করা, পীর ধরা, মাজারে টাকা দেওয়া, উরস করা ইত্যাদি। একটি পক্ষের যুক্তি হলো এসব বিধান কোরআন-হাদীস দ্বারা প্রমাণিত নয়, তাই এগুলো পালন করা বিদ'আত। অপর পক্ষের বক্তব্য হলো, বর্তমান সময়ে আধুনিক অনেক ব্যবহার্য জিনিস আছে যা কোরআন ও হাদিস কোথাও নেই। যেমন- মসজিদে মাইক ব্যবহার করা, এসি ও ফ্যান লাগানো, গাড়ি ও বিমানে চড়া, কম্পিউটার ও মোবাইল ফোন ব্যবহার করা ইত্যাদি। তাহলে সবকিছু কোরআন-হাদিসে থাকতে হবে কেন?

আসুন বিষয়টি বুঝতে একটু গভীরে যাই। এসব আধুনিক সুবিধাদি ব্যবহার করলে ইসলামের কি কোন লাভ বা ক্ষতি হয়? উত্তর হলো, না। এগুলো আধুনিক ও আরামদায়ক জীবন যাপনের উপসর্গ মাত্র। যতদিন পৃথিবী টিকে থাকবে ততদিন পর্যন্ত এসব আধুনিক ব্যবহার্য জিনিস আবিষ্কার হতে থাকবে। আর এগুলো ব্যবহার করা, না করায় ইসলামের মূল নীতি বাঁধাগ্রস্থ হয়না। কিন্তু ইসলামের বিধানের বাইরে বাড়তি কোন ইবাদত যোগ করলে ধর্মের মূলনীতি নিয়ে বিতর্ক হয়। একটা সময় ছিল যখন মানুষের ব্যস্ততা তেমন ছিল না, তখন পর্যাপ্ত সময় ছিল। এখন মানুষের ব্যস্ততা এত বেড়ে গেছে যে প্রয়োজনীয় এবাদতগুলো সময়মত সম্পাদন করা মানুষের জন্য অনেক কঠিন হয়ে গেছে। এছাড়া সৎ ভাবে জীবিকা নির্বাহ করা, নিজের কাজ নিজে করাও তো এক প্রকার এবাদত। তাই বাড়তি এবাদত যোগ করার কোন যৌক্তিকতা আছে বলে আমি মনে করি না।

আমরা জানি ইসলাম হচ্ছে পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা। ধর্মীয় এসব মাহফিলে বেশিরভাগ সময় দুনিয়ার ইবাদত ও আখেরাতের বিধান নিয়ে আলোচনা করা হয়। কিন্তু মানুষের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে আলোকপাত করা হয় না। একজন মানুষ পরিপূর্ণ ভাবে আল্লাহর ইবাদত করতে হলে প্রয়োজন আর্থিক সচ্চলতা, সুস্থ শরীর ও প্রফুল্ল মন। অপরদিকে পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অঙ্গ। তাই এসব জন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মাহফিলগুলোতে আলোচনা করাও প্রয়োজন। এছাড়া জীবন ধারনের জন্য প্রয়োজন টাকা-পয়সা উপার্জন করা; ডাক্তারী, প্রকৌশলী, রাজনীতি, দর্শন ইত্যাদি বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করা; ছেলে-মেয়েদের উপযুক্ত শিক্ষা দিয়ে সুনাগরিক হিসাবে গড়ে তোলা। কিন্তু এসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় কখনো আলোচনায় উঠে আসে না। যদিও ধর্মীয় বিষয়ের মত এসব বিষয়ে জানা ও দিক নির্দেশনা পাওয়া কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। যার ফলে এসব মাহফিল ফলপ্রসু হয় না।


ইসলামের বিভিন্ন আলীমদের মধ্যে অনেক মতবাদের ফলে সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ইসলাম। শুধু মতভেদ থাকলে এতো আপত্তি ছিল না, রীতিমত চলে অশ্রাব্য ভাষায় গালি-গালাজ আর তিরস্কার! এরা সাধারন মানুষদের মধ্যে ইসলামকে বিতর্কিত করছেন। আপনি কী জানেন? এসব অযথা বিতর্ক মুসলিমদের মধ্যে পারস্পরিক ভ্রতৃত্বের পরিবর্তে ঘৃণা ও অবিশ্বাস ছড়িয়ে দিচ্ছন? পবিত্র হাদিসকে মানুষের মাঝে বিতর্কিত করছেন নিজের অজান্তেই। আর পবিত্র হাদিস নিয়ে বিতর্ক হওয়া মানে হযরত মোহাম্মদ (সঃ) এর জীবনকে নিয়ে বিতর্ক করা। প্লীজ, এসব স্পর্শকাতর বিষয়ে বক্তব্য দেওয়ার আগে অন্তত একবার ভাবুন। ইসলামের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রকাশ্যে যত মতবিরোধ দেখা যায় পৃথিবীর অন্য কোন ধর্মে তা দেখা যায় না। এটা বন্ধ হওয়া উচিৎ।

একটা বিষয় লক্ষ্য করলে দেখবেন, যারা ওয়াজ মাহফিল আয়োজন করেন এদের বেশীরভাগের ইসলামী জ্ঞান নেই বা অতি সীমিত। এজন্য এরা প্রকৃত জ্ঞানী ও ভদ্র আলীমদের পরিবর্তে গলাবাজ, অল্প শিক্ষিত ও সুন্দর বেশভূষ ওয়ালা বক্তাদের দাওয়াত করেন। এতে এলাকায় উনার সুনাম বাড়ে। রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থাকলে তা হাসিল হয়। ঝাঁকে ঝাঁকে মানুষ এসব বক্তার ওয়াজ শুনতে আসে। এই সুযোগে তিনিও বানিয়ে বানিয়ে রঙ-চঙা ওয়াজ শুরু করেন মানুষকে মাতিয়ে রাখার জন্য। এসব মাহফিলগুলোতে পবিত্র কোরআন ও হাদীস নিয়ে তেমন আলোচনা হয় না। যারা এসব মাফিলে বাহবা দেয় এরা মেলায় গিয়েও হাততালি দেয়ে, গানের মাহফিলে গিয়েও হাততালি দেয়, নাচানাচি করে। প্রকৃত আলীমরা নয়, এখন ইসলামের প্রতিনিধিত্ব করছে এসব ইসলামী বক্তা নামধারী ক্যানভেচার।

একজন ক্যানভেচারের ইসলামী বক্তা হওয়া আর ইসলামিক স্কলারের মাহফিলের বক্তা হওয়ার মধ্যে আকাশ-পাতাল পার্থক্য। কারণ ক্যানবেচার অতি নিম্নমানের মলমটি রঙিন মোড়কে ফুটপাতে বিক্রি করে চড়া দামে। এজন্য মলমটি ব্যবহার করার পর শরীরের পঁচা-ঘা কমার পরিবর্তে বাড়ে, পাশাপাশি নতুন নতুন রোগ-জীবাণু দেহের মধ্যে সংক্রমিত হয়। এটা অনেকটা ক্যানসার আক্রান্ত রোগীকে বিশেষজ্ঞ সার্জনের পরিবর্তে হাতুড়ে ডাক্তার দিয়ে চিকিৎসা করানোর মতো।

আমাদের মতো ডালাও ভাবে ওয়াজ মাহফিল পৃথিবীর কোথাও হয় না। অন্যান্য মুসলিম দেশগুলোতে সবচেয়ে জ্ঞানী-গুণী, ভদ্র ও সম্মানিত ইসলামী স্কলাররা ধর্মীয় মাহফিলগুলোতে আমন্ত্রিত হন। উনারা ধীরে সুস্থে, পবিত্র কোরআন ও হাদিসের আলোকে জ্ঞানগর্ভ আলোচনা করেন। মানুষকে সুন্দর করে বুঝিয়ে বলেন। টাকা-পয়সা, বাড়ি-গাড়ি, প্রভাব-প্রতিপত্তি নিয়ে উনাদের মধ্যে কোন লোভ-লালসা নেই। অতি সাধারন জীবন-যাপন করতে তারা অভ্যস্ত। এরা নিজেরাও বিতর্কিত হতে চান না, আর নিজের আচরণ দিয়ে ইসলামকেও বিতর্কিত করেন না। আর আমাদের দেশে প্রকৃত আলীমদের কেউ ডাকে না, মূল্যায়ন করে না। গলাবাজ নয় বলে মাহফিল গুলোতে তেমন ডাক পড়ে না তাদের। কারণ তারা ধর্মের নামে উগ্রতা প্রচার করেন না, অন্য আলীমদের নিয়ে গীবত করেন না, সমাজে হিংসা-বিদ্বেষ ছড়ান না, সাম্প্রদায়িক উস্কানি দেন না।


শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে জ্ঞান অর্জন করা। তাহলে জ্ঞান অর্জন মানে কী? পরীক্ষায় ভাল ফলাফল করা! বড় বড় বই না বুঝে মুখস্ত করা!! আসুন বিষয়টি নিয়ে একটু আলোকপাত করি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হলো জ্ঞান অর্জনের একটা ধাপ অথবা দিকনির্দেশক দরজা। বাকি পথটুকু নিজে নিজে অতিক্রম করতে হয়। পাঠ্য বইয়ের পাশাপাশি বিশ্ব সাহিত্য, দর্শন, সমাজ-সংস্কৃতি, ইতিহাস, বিজ্ঞান, মানব জাতির বিবর্তন, বিশ্বের সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিবর্তন, যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলার কৌশল, ভীন্ন মত ও বিশ্বাসের মানুষের সাথে চলন ও শান্তিপূর্ণ সামাজিক সহাবস্তানের গুরুত্ব ইত্যাদি জানতে হয়। ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে পৃথিবীর সবচেয়ে জ্ঞানী মানুষদের দর্শন, আবিষ্কার ও সাহিত্য পড়তে হয়, গবেষণা করতে হয়। শুধু একমুখী জ্ঞান অর্জন করলে প্রকৃত জ্ঞানী হওয়া যায় না। আর প্রকৃত জ্ঞানী না হলে ধীরস্থির, সহনশীল, ভদ্র, সুবক্তা আর সু-মানুষ হওয়া সম্ভব নয়। আমাদের দেশের অনেক শিক্ষিত মানুষ আছেন যারা বেশিরভাগ জ্ঞানী মানুষের ভদ্র ও জ্ঞানগর্ভ বক্তব্য/আলোচনা শুনে না। ভাল মানের সাহিত্যিকদের বই পড়ে না। কারণ তাদের দৃষ্টিতে এদের কেউ নাস্তিক, কেউ মুশরিক, কেউ সুদখোর আর কেউ কমিনিস্ট। ভাল কথা না শুনলে, ভাল লেখা না পড়লে ভাল স্পিকার হওয়া যায় না। প্রকৃত জ্ঞানী না হলে সারা জীবন নীতিকথা মুখস্ত করে কোন কাজে আসবে না। কারণ নীতিগুলো বুঝে নিজেদের মধ্যে ধারণ করতে হয়। আর তা না হলে বিবেক সৃষ্টি হয় না; পরিপক্ব বিবেকের জন্য দরকার প্রকৃত জ্ঞান।

এখন ইসলাম যতটুকু না আদর্শ ধারণ ও প্রচারের বিষয় তার চেয়ে বেশি টাকা-পয়সা ও প্রভাব-প্রতিপত্তি বাড়ানোর জায়গা। কেউ কেউ তা বংশ পরম্পরায় করে আসছেন। ইসলামকে যত দ্রুত সম্ভব এসব লোভী ও ধান্দাবাজদের খপ্পর থেকে বের করে আনতে হবে। আর এখনই এ পদক্ষেপ না নিলে আগামী দিনগুলোতে ইসলাম ভয়াবহ ক্ষতির সম্মুখিন হবে। কারণ, এখন পৃথিবীকে চালাচ্ছে হাজার হাজার ইন্টেলেকচুয়াল মানুষ। বাংলাদেশও তার ব্যতিক্রম নয়। এসব মেধাবী মানুষজনের কাছে ইসলামের সত্য বাণী পৌছে দেওয়ার জন্য প্রয়োজন শত শত ভদ্র কোরআন ও হাদিস বিশারদ। যারা শান্তিপূর্ণভাবে ইসলামের দাওয়াত প্রচার করবেন। যোগ্য মানুষের হাতে পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র ও বিশ্বের নেতৃত্ব না থাকলে এসব প্রতিষ্ঠান ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়; সমাজ হিংসা-বিদ্বেষ, বিভক্তি ও অন্যায়-অবিচারে ভরে যায়। ঠিক তেমনি কোন ধর্মের নেতৃত্ব মূর্খ, সাম্প্রদায়িক আর অভদ্র মানুষের হাতে থাকলে ধর্মটিও ভীষণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, সমাজ বিষাক্ত হয়।


হাজার হাজার মাদ্রাসা শিক্ষিত ছাত্র পড়াশুনা শেষ করে যখন কর্মজীবনে প্রবেশ করেন, তখন চাকরির ক্ষেত্রে অনেক বৈষম্যের স্বীকার হয়। অনেক নিয়োগদাতা যোগ্যতা থাকার পরও মাদ্রাসা শিক্ষিতদের চাকরি দেন না। এছাড়া ধর্মীয় কিছু বিধিনিষেধের ফলে এরা সব কাজে যোগদান করতে পারে না। বেশিরভাগের কায়িক পরিশ্রম ও ব্যবসা করতে অনীহা থাকে। ফলে কর্মজীবনে বেশ হিমশিম খেতে হয়। যার ফলশ্রতিতে অনেকে ধর্মকে ভিত্তি করে পরিবার পরিজন নিয়ে বসবাস করেন। এজন্য সমাজে অনেক কম জানা লোককেও ইসলামী বক্তা হতে দেখা যায়। এসব ওয়াজ মাহফিলের বেশিরভাগই যতটুকু না ধর্ম প্রচার তার চেয়ে বেশী বক্তার রুটিরুজির ফিকির। ধর্মীয় স্পীচগুলো লাভজনক হওয়ায় অনেক অযোগ্য লোকও ইসলামের লেবাসদারী হয়ে এসব মাহফিলে দাপিয়ে বেড়ায়। এজন্য ইসলমাকে ভিত্তি করে কোন পেশাদার শ্রেণী গড়ে উঠলে ধর্মের অনেক ক্ষতি হয়।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে যেমন হাজার হাজার নীতিহীন মুখোশধারী দুর্ণীতিবাজ মানুষ আছে; এরা সুন্দর পোষাক পরে গোছানো বক্তব্য দেয়, সুশীল সাজে, রাষ্ট্রীয় চেতনার কথা বলে, উন্নয়নের কথা বলে মানুষকে ঠকায়। রাষ্ট্রের ক্ষতি করে নিজেদের সম্পদের পাহাড় বানায়, বিদেশে টাকা পাচার করে। ঠিক তেমনি ধর্মীয় লেবাস সর্বস্ব মুখোশধারীরা ধর্মকে বিক্রি করে, মানুষকে বিভ্রান্ত করে, পারষ্পরিক দ্বন্দ্ব সংঘাত লাগিয়ে রাখে। নিজের বাজার দর বাড়াতে অন্যকে অপমান-অপদস্ত করে আখের গোছায়। বাংলাদেশে রাজনীতির মতো ধর্ম ব্যবসাটা বেশ লাভ জনক। এখানে কোন পুঁজি খাটাতে হয় না। শুধু লাগে কুট কৌশল, গলার জোর আর মুখোশের আড়ালে মানুষকে আকৃষ্ট করার ক্ষমতা। এখানে ধর্মের বড় ক্ষতি হলেও বক্তার তাতে কিছু যায় আসে না। টাকা কামানোই আসল।

ইউটিউবে একজন তরুণ ইমামকে বলতে শুনলাম, একজন মুশরিককে মুশরিক বলতে হবে; একজন কাফেরকে অবশ্যই কাফের বলতে হবে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একজন কাফের; তাকেও কাফের বলতে হবে। বক্তব্যটি শুনে নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। একজন ইমাম মসজিদে বসে এমন ওয়াজ করতে পারেন! অযথা কেন এ প্রসঙ্গ টেনে আনলেন আমার বোধগম্য হলো না। বলার সময় উনার চোখে মুখে প্রচন্ড ঘৃণা ছিল। এভাবেই আমরা প্রয়োজনে অপ্রয়জনে সাম্প্রদায়িক বিষ সমাজে ঢেলে দিচ্ছি। একজন জ্ঞানী মানুষের একমাত্র পরিচয় তার জ্ঞানে, ধর্মে নয়। একজন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে মূল্যায়ন করতে যে যোগ্যতা লাগে তা উনার আগে অর্জন করা উচিৎ ছিল। এই ইমামকে শুধু শুধু দোষ দিয়ে কী লাভ? যুগের পর যুগ থেকে আমরা বঙ্গবাসীরা জ্ঞানী-গুণীদের তিরস্কার করি, অমর্যাদা করি। আর মূর্খদের কথায় বাহবা দেই, মূল্যায়ন করি।

আবার আসি আমার বাবার প্রসঙ্গে। শহরের শিক্ষিত মানুষের মধ্যে বেশিরভাগ মুসলিম ধর্মীয় বিষয়ে পড়াশুণা করলেও গ্রামে এখনো অনেক ধর্মপ্রাণ মুসলমান আছেন যারা শুনে শুনে ধর্মের উপর আমল করেন। এসব মানুষ যখন বিভিন্ন মাহফিলে একই বিষয়ে ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য শুনেন, তখন তারা বিভ্রান্ত হন। কোনটি সঠিক বুঝতে পারেন না। এছাড়া বেশিরভাগ মাহফিলে একে অন্যের প্রতি ঘৃণা ছড়ানো হয়, অন্য মতের আলীমদের গালিগালাজ করা হয়। এতে হিতে বিপরীত হয়। এদের একটা পক্ষ নিজেদের প্রভাব-প্রতিপত্তি ঠিক রাখতে, তাদের মতাদর্শের মানুষজন বাড়াতে কৌশলে অন্য পক্ষের সাথে বিরোধে জড়িয়ে পড়েন। কঠিন গালি দেন আর ধর্মের নামে গীবত করেন, সমাজকে বিভক্ত করে রাখেন। উদ্দেশ্য প্রণোধিত হয়ে সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঘৃণা আর অবিশ্বাসের বীজ বপন করেন। সাধারন ধর্মপ্রাণ মানুষ এদের চতুরতা বুঝতে পারে না।

সত্যি বলতে কি বেশিরভাগ মাহফিলে গীবত গাওয়া, অন্য মুসলিমদের গালি দেওয়া, উগ্রতার প্রদর্শনী, লাফালাফি, চিৎকার-চেঁচামেচি, সাম্প্রদায়িক উস্কানি, পীর সাহেবের মিথ্যা কেরামতির প্রচার, বক্তা ও আয়োজকদের টাকার খেলা আর কোরআন হাদিস বাদ দিয়ে বানিয়ে বানিয়ে ওয়াজ করা দেখে কষ্টে বুকটা ভেঙ্গে যায়। এসব ওয়াজ শুনে কেউ হেদায়েত হয় না। বরং পারস্পরিক সম্পর্ক নষ্ট হয়, সমাজে চরম ঘৃণা ছড়ায় আর সাধারন ধর্ম প্রাণ মানুষ বিভ্রান্ত হয়। এতে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে নতুন প্রজন্ম। একুশ শতকে এসে বেশিরভাগ বক্তা ইসলামকে একটা উগ্র, হিংসুক, সাম্প্রদায়িক ও লোভী ধর্ম হিসাবে বিশ্ববাসীর কাছে উপস্থাপন করছেন। এতে আমাদের মহানবী হযরত মোহাম্মাদ (সঃ) এর জীবন ও আদর্শ পৃথিবীর কাছে অত্যন্ত খারাপ ভাবে উপস্থাপিত হচ্ছে। এটা চরম দুর্ভাগ্যজনক।

ইদানিং তো দেখি অনেক বক্তা মাওলানা দেলোয়ার হোসেন সাঈদিকে হুবহু নকল করছেন। কেউবা উকিলদের মত বড় বড় ইউনিফর্ম পরেন, লম্বা টুপি ও মাথায় আরবদের মত রুমাল ব্যবহার করেন। আরবীর পাশাপাশি বাংলা শব্দকেও রাবারের মত টেনে টেনে বিকৃতভাবে উচ্চারণ করেন। বেশিরভাগ বক্তা শুদ্ধ বাংলা পর্যন্ত বলতে পারেন না। এছাড়া মানুষকে তুই তুকারী করা, তুচ্ছ তাচ্ছিল্ল করা, বেয়াদবের মত কথা বলা তো আছেই। বক্তব্যের সময় এমন উগ্র ও আক্রমনাত্মক ভাষা ব্যবহার করেন শুনলে মনে হবে দুই পক্ষের মধ্যে তুমুল ঝগড়া শুরু হয়েছে। যদিও ইসলাম শান্তির ধর্ম, কিন্তু বেশিরভাগ বক্তাদের কথা শুনলে মনে হবে তাদের অন্তরে শুধু ঘৃণা ও অশান্তির আগুণ জ্বলছে। মনে রাখবেন ইসলামের সবচেয়ে বড় ক্ষতি করছে এসব আদর্শহীন মূর্খ, গলাবাজ, অসহনশীল, উস্কানিদাতা, সাম্প্রদায়িক আর প্রচন্ড বদমেজাজি ক্যানভেসার। হ্যা, ইসলামের নৌকা এরাই ডুবাবে আর কাউকে লাগবে না।।



ফটো ক্রেডিট,
গুগল।

চাইলে পড়তে পারেন-
আমার সবচেয়ে পঠিত পোস্ট।
অনুবাদ গল্প-(দি নেকলেস)
দি গিফট অফ দ্যা ম্যাজাই
গল্প লেখার সহজ পাঠ
সবচেয়ে পঠিত প্রবন্ধ।
আধুনিক কবিতার পাঠ (সমালোচনা)
আলোচিত ফিচার 'দি লাঞ্চিয়ন'।
ব্রিটেনের প্রবাস জীবন- স্মৃতিকথা।
সবচেয়ে পঠিত গল্প।
সবচেয়ে লাইকপ্রাপ্ত গল্প।
ছবি ব্লগ (লন্ডনের ডায়েরি-১)।



সর্বশেষ এডিট : ০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ভোর ৪:২৫
৪০টি মন্তব্য ৪০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও পদ্মশ্রী পুরস্কার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৬



এ বছরের পদ্মশ্রী (ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা) পদকে ভূষিত করা হয়েছে, বাংলাদেশের রবীন্দ্র সংগীত এর কিংবদন্তি শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে।

আমরা গর্বিত বন্যাকে নিয়ে । ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×