somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

টিকেট মাষ্টার

১০ ই জুলাই, ২০১০ সকাল ৯:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



সকালের নাস্তা পিরিচের সমান পরোটা আর ল্যাক প্যাকা পাতলা মুগের ডাল। পরোটা ঠিক মতন ভাজা হয়নি, ময়দা কাচা কাচা রয়ে গেছে।তবে ডালটা স্বাদের ছিল। ভাজা মুগডাল মসলা কষিয়ে রাধা। তাতে খানিকটা খাসির মাংসও ছেড়েছিল বোধহয়। হাভাতেদের পিকনিক, সবার ভাগে একটুকরোও জোটার কথা না, কিন্তু জহির দুই টুকরো মাংস পেয়েছিল। ঝুনু পেলো কিনা কে জানে? খাবার সময় জহির বউকে খুজেছিল সে কথা জানতে। মাংস না পেলে আরেক দফা ডাল নিয়ে দিত সে। ডাল বিলানোর দায়িত্ব যার, সে যাত্রাবাড়ি স্টপেজের লোক। জহিরের সাথে ভালোই চিন পরিচয় আছে। চাইলে এক হাতা ডাল কি আর দিত না? তখন না হয় জহির তার মধ্যে মাংসের টুকরোটা গুজে দিত। এত চালাকি করে না দিয়ে এমনিতেও বউয়ের পাতে মাংসটা তুলে দেয়া যেত। কিন্তু জহির বউকে বেশি একটা খাতির দেয় না। নতুন নতুন বিয়ে…এখন বেশি খাতির দিলে পরে কান্ধে চড়ে নাকে দড়ি দিয়ে ঘোরাবে।দরকার কি?
ঝুনুকে আশে পাশে কোথাও দেখা যাচ্ছে না।‘হাই ফাই বাস সার্ভিস’ এের টিকেট মাষ্টার জহির চারদিকে তাকায়, সবই প্রায় পরিচিত লোকজন। বাসের ড্রাইভার, হেল্পার, টিকিট চেকার। অফিস পিকনিকে মাগানায় দুটো ভালো মন্দ খাবার সুযোগ কে ছাড়তে চায়? না থাকতে কেউ বউ বাচ্চা ফেলে আসেনি। চারপাশটা তাই মেয়ে মানুষে গিজ গিজ করছে। এত মেয়েমানুষের মধ্যে ঝুনুকে চোখে পড়ে না তার। জহির মনে মনে ঠিক করে দেখা হওয়া মাত্রই বউকে সে কষে একটা ধমক লাগাবে। এই কাজটা সে খুব ভালো পারে- ধমকা ধমকি। ধমকা ধমকির জন্য বউ তাকে মারাত্মক ডরায়। তবে কয়দিন ডরাবে সেটা অবশ্যি বলা যাচ্ছে না। জহিরের রোজগার কম। কম রোজগারওয়ালা স্বামীকে বউরা বেশিদিন ডরায় না।

মেয়েদের দঙ্গলে হাটতে হাটতে কত কি চোখে পড়ে তার! কি সব শাড়ি কাপড় যে পাওয়া যাচ্ছে আজকাল! জরি, আয়না, চুমকি লাগানো। রোদে দাড়ালে ঝিলিক মারে। ফকিন্নির মেয়েকেও নবাববাড়ির বউ বেটি বলে মনে হয়। কত দাম হবে এসব শাড়ির? ড্রাইভার হেল্পারের বউরা যখন পরছে তারমানে দামও বেশি না। জহির ভাবে, হাতে কিছু পয়সা হলে ঝুনুকে একটা কিনে দিতে হবে। মেয়েটার একটা জিনিস খুব ভালো, কখনো কিছু চায় না। সে অবশ্য বাসর রাতেই বলে দিয়েছে-‘দেখ, আমি টিকেট মাষ্টারের চাকরি করি। অল্প কয়টা ট্যাকা বেতন পাই। এই ট্যাকা দিয়াই সংসার চালাবা। কোন রং তামাশা করবা না।’ ঝুনু কিছু বলল না, কেবল লক্ষী মেয়ের মতন মাথা নেড়ে সায় দিল। জহির মনে মনে খুশি হয়। যাক, বাসর রাতের বিড়ালটা ভালোই মারা গেছে। মাঝে মধ্যে সেকথা মনে পড়লে ফিক করে হেসে ফেলে জহির। এখনও হেসে ফেলল। আর তখনই তার চোখে পড়ে মেয়েদের ভিড় থেকে একটু সরে একা একা দাড়িয়ে আছে ঝুনু। জহির সাথে সাথে মুখের হাসিটা মুছে গম্ভীর হয়ে যায়। ঝুনু অবশ্য তাকে দেখেনি, মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে। বউয়ের নাম ধরে ডাকতে গিয়ে মুখ হা করে, কিন্তু ডাকে না জহির। তার টাকরায় গন্ডগোল আছে। ‘ঝ’ কে বলে ‘জ’। আর কপালটা এমনই খারাপ, ঝেড়ে বেছে তার বউর নাম হল কিনা ঝুনু। নয় মাস হয়ে গেল বিয়ের, এখন পর্যন্ত জহির একবারও ঠিকমতন বউয়ের নাম ধরে ডাকতে পারেনি। মনের ভুলে ডেকে কয়েকবার বউয়ের সামনে লজ্জা পেয়েছে। একদিন ঝুনু হেসেও ফেলল। তারপর থেকেই জহির সাবধান। বউর নাম মুখে নেয় না।
গলা গম্ভীর করে ডাকে জহির-‘একটু শুইনা যাওতো…।’ তার গলা শুনেই ফিরে তাকায় ঝুনু । মাথার ঘোমটাটা টেনে তাড়াহুড়োয় এগিয়ে আসে। জহির মুগ্ধ চোখে দেখে। চারদিকে এত এত মেয়েমানুষ , কিন্তু তার বউটা সবার থেকে আলাদা। নাকটা কি সুন্দর খাড়া। ঘন কালো ভ্রু চোখের উপর। গায়ের রংটাও ফর্সা। লম্বাও আছে। আবার ম্যাট্রিক পাশ দেয়া মেয়ে। সে নিজে আই এ ফেল।
বিয়ে করার সময় বড় দুলাভাই কানে কানে বলেছিল -‘বড় জেতা জিতলিরে শালা, এরাম বউ সবার ভাইগ্যে হয় না…।’ জহির নিজেও কথাটার সত্যতা টের পায় এখন। কিন্তু পেটে বোম মারলেও সেকথা মুখে বলে না। কেননা জানে, বললেই বউ লাই পেয়ে যাবে। একবার লাই পেয়ে মাথায় চড়ে বসলে আর নামানো যায় না। কষ্ট হয় তবুও সে গম্ভীর গম্ভীর ভাব ধরে থাকে সব সময়।
এই যেমন এখন তার দিকে আসতে দেখে সে উল্টো ঘুরে আগে আগে হাটতে শুরু করে। মনে মনে বলে- আমি হাটবো আগে, তুমি হাটবা আমার পিছে… তাইলেই না সুখের সংসার।
খানিকটা দুর গিয়ে একটা ফাকা জায়গা দেখে দাড়ায় জহির। বউ এসে তার সামনে দাড়ায়। জহির জিজ্ঞেস করল- ‘কই ছিলা? নাস্তা খাওয়ার সময় আমারে খুইজা নিবা না?’
ঝুনু জবাব দেয়-‘ বাসে তাহের ভাইয়ের বউ বসছিল আমার পাশে, উনি আমারে টানতে টানতে নিয়া গেল…।’
জহির বলে-‘ডাইলে মাংস পাইছিলা…?’
ঝুনু অবাক হয়ে মাথা নাড়ে, না সে পায় নি। জহির গলাটা আরেক ধাপ চড়িয়ে বলে- ‘ভালো করছো। দুপুরের খাওয়াও তাহের ভাইয়ের বউর পাশে বইসা খাইও। ঘোড়ার আন্ডাডা পাইবানে পাতে।’
ঝুনু মাথা নিচু করে দাড়িয়ে থাকে। মানুষটা যে কেন এমন করে? এই যে ধমকালো, তার চোখে প্রায় পানি এসে গেছে। কিন্তু সে মানুষটাকে দেখাতে চায় না, মুখ অন্যদিকে ঘুরিয়ে রাখে। তবুও জহির টের পায়। গলা খানিকটা নরম করে বলে -
‘যাও এখন বেড়াও গিয়া। দুপুরের খাওয়ার সময় আমারে খুইজা বার কইরো।’

জহির তাহের ভাইকে খুজতে লেগে যায়। হাইফাই বাস সার্ভিসের সুপারভাইজার তাহের, জহিরের দুর সম্পর্কের বেয়াই। অফিসের পিকনিকে ‘হাইফাই বাস সার্ভিসের মালিক’ মোস্তাক সাহেব আছেন। এই আজকে সকালেই জহির বাস স্টপে বউকে নিয়ে দাড়িয়ে ছিল অন্যসবার সাথে। মোস্তাক সাহেব তাদের সামনে দিয়ে যেতে যেতে তার দিকে ফিরে হাসি মুখে মাথা ঝাকালেন-‘ কি…ভালোতো?’। জহির বিগলিত হেসে জবাব দেয়-‘জ্বি…জ্বি…ভালো।’ ঘটনাটা তাহের ভাইকে জানাতে হবে। তাহের ভাই উনার আপনা লোক। মোস্তাক সাহেবকে ধরে জহিরকে চাকরিটা তিনিই দিয়েছিলেন। যদিও টিকেট মাষ্টারের চাকরিতে আয় উন্নতি তেমন হয় না। তবুও এই চাকরিটাই তার সব। ঢাকায় তাদের দুজনের থাকা খাওয়ার খরচা। ।কষ্ট করে চলা লাগে অবশ্য। রোজগারের প্রত্যেকটা কানাকড়ির হিসেব রেখে টিপে টিপে খরচ করতে হয়। এর মধ্যে আবার বাবার চিঠি এলো- ‘বাবা জহির, আশা করি খোদার ফজলে বউমাকে নিয়া ভালো আছো। পরসমাচার এই যে, তোমার বড় ভাই ভিন্ন হইয়া গিয়াছে। সে আর আমাদের দেখিবে না…’
অর্থাত পরসমাচার হল, এখন থেকে বুড়ো বাপ মাকে দেখতে হবে। তারউপর বাপের আবার হাপানীর ব্যারাম। ওষূধের খরচা খাবারের চেয়ে বেশি। এখন জহিরের কোমর ভেঙে যাচ্ছে সংসার টানতে গিয়ে। এইসব কথা আগেই তাহের ভাইকে জানিয়েছে সে। আজকে যদি সময় সুযোগ করে তাহের ভাইকে দিয়ে তার প্রমোশনের কথাটা পাড়া যায় তাহলে খুব ভালো হয়। প্রমোশনটা পেলে সে হবে টিকিট চেকার। বেতন বাড়বে প্রায় হাজার টাকা। তবে সেটা বড় কথা নয়, বড় কথা হল টিকিট চেকার হলে আলগা টু পাইস কামানোর ধান্ধা আছে। গাড়ির ভেতরে টিকিট চেকার হল রাজা। সে যা বলে তাই আইন। প্রতি ট্রিপে টিকিট ছাড়া দু চারটা প্যাসেঞ্জার নিয়ে গেলে কারো বাবার সাধ্য নেই টু শব্দটা করে। তাছাড়া রোদে বৃষ্টিতে কাউন্টারে বসে বসে টিকিট বেচার চেয়ে চেকারের কাজ করা অনেক আরামের।
সে চারদিকে একবার চোখ বোলায়। পিকনিকের জায়গাটা আসলে বিশাল একটা ফাকা মাঠ। ঢাকা শহর থেকে কতকটা দুল বলে চারদিকে বেশ ঝোপজঙ্গল আছে। খানিকটা গ্রাম গ্রাম ভাব। এরা সকালের নাস্তা বানিয়ে এনেছিল ঢাকা থেকেই। এখন দুপুরের খাবারটা এখানেই রান্না হচ্ছে। তিনখান ইটের উপর বড় হাড়ি বসিয়ে দুই ছোকড়া বাবুর্চি রান্না করছে। বাস কোম্পানীর মাতব্বর গোছের একজন দাড়িয়ে থেকে তদারকি করছে রান্নার । তাহের ভাই আশে পাশে নেই। জহির সরে আসে। নাস্তা খাওয়া শেষ, সবাই এবার যার যার মতন আড্ডা দিচ্ছে। শুধু এক জায়গায় বেশ কজন জটলা পাকিয়ে বসে আছে। কাছে গিয়ে দেখে এরা হল সব অবিবাহিত ছোকড়া ড্রাইভার, হেল্পার। জহির তাদের দিকে এগিয়ে যায়, যদি তাহের ভাইয়ের খোজ পাওয়া যায় এই ভেবে। এক সিগারেট সবাই মিলে ভাগ করে খাচ্ছিল ওরা। এর মধ্যে একজনকে সে চেনে, ৩৯৫৬ বাসের হেল্পার দুলাল। জহিরকে দেখে একগাল হেসে ফেলে।হে হে করতে করতে বলে-‘বস আহেন, একটা টানা দিয়া যান…।’
একটা কটু গন্ধ নাকে আসে। ও…সিগারেট না, সিগারেটের খোলায় ভরে গাজা টানছে। ঢাকা থেকে বানিয়ে এনেছে মনে হয়। জহিরের মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। সে দুলালকে বলে -‘তাহের ভাইরে দেখছো দুলাল?’
নেশা চড়ে গেছে মাথায়। দুলাল হলুদ হলুদ দাত বের করে খ্যাক খ্যাক করে হাসে-‘ হি হি হি …তাহের ভাই…হি হি হি…ঐ যে…!’
জহির পেছনে তাকায়, তাহের ভাই ঠিক তার পেছনেই দাড়ানো। জহিরের বুক শুকিয়ে যায় সাথে সাথে। চারদিকে গাজার ভয়াবহ গন্ধ। সে এখানে দাড়ানো। তাহের ভাই যদি মনে করে সেও ওদের সাথে সাথে বসে…।তাহের ভাই জটলার মুখ গুলো একটু দেখে নেয়। তারপর বলে-‘জহির তোমার সাথে কথা আছে, একটু আসোতো ঐদিকে যাই।’
জহিরের মনটা খারাপ হয়ে যায়। তার কপালটাই মন্দ, কোন কিছুই আগায় না। একটা প্রমোশন যে কি দরকার!
খানিকটা হেটে একটা ঝোপ মতন পাওয়া যায়। চারদিকটা দেখে নিয়ে তাহের ভাই সেখানে হাটু মুড়ে বসে পড়ে। জহিরও বসে। তাহের ভাই কিছু বলে না। মানুষটা এমনিতে হাসি ঠাট্টা করে। কিন্তু এখন বেশ গম্ভীর। লোকটা কি পান চিবুচ্ছে নাকি? চাপাটা হালকা নড়ছে মনে হয়। পুরুৎ করে পিক ফেলল। হ্যা পান চিবুচ্ছে। জহির কি বলবে ভেবে পায় না। মানে সে যে গাজা খাচ্ছিল না, আসলে সে তাকেই খুজতে ওখানে গিয়েছিল এসব বলবে কিনা ভাবে। একবার পা চেপে ধরার কথাও মনে এলো। কি করবে জহির?
তাহের ভাই মুখ ঘুরিয়ে পানের শেষ পিকটা ফেললেন। তারপর জহিরের দিকে তাকিয়ে বললেন-‘তোমার চাকরির বয়স কত হইলো?’
জহির বলল-‘এক বছর আট মাস।‘
তাহের ভাই মুখ থেকে একটু ‘হুমম’ জাতীয় শব্দ করে চুপ হয়ে যায়। জহির আতঙ্কে থাকে। কি বলতে ডেকেছে লোকটা? কি বলবে?
-‘তোমার প্রমোশনের কথা বললাম মোস্তাক স্যাররে। উনি বললেন তোমারে যাত্রাবাড়ি রুটের টিকিট চেকার বানায়া দিতে। রুটটা বড় অবশ্য… সামলাইতে পারবা না?’
জহিরের কলজেটা লাফিয়ে ওঠে খুশিতে। চোখে মুখে দারুন আলো এসে যায়। তাহের ভাইকে মাথায় তুলে নাচতে পারলে শান্তি হত তার। কোন মতে তোতলাতে তোতলাতে জবাব দেয়-‘জ্বি…জ্বি…পা…র…বো…!’
এতবড় একটা খুশির সংবাদ দিল, অথচ তাহের ভাই তখনো গম্ভীর। গম্ভীর গলাতেই বলল-‘ ইয়ে…জহির…তবে একখান কথা আছে…।’
জহির একটু নিভে যায়। তাহের ভাই কি বলবে সেটা শুনতে উদগ্রীব বসে থাকে। তাহের ভাই বলে-‘ আসলে…তুমি আমার ছোট ভাইয়ের মতন। তোমারে যে কেমনে বলি…’
একটু সময় নেয় তাহের ভাই গলা পরিষ্কার করতে। তারপর আবার বলে-‘আমাদের মোস্তাক স্যার লোক খারাপ না, তবে একটু মাইয়া মানুষের দোষ আছে আরকি… সুন্দর মাইয়া দেখলে লোভ সামাল দিতে পারে না। কিন্তু উনিতো ভদ্রলোক, বুঝনা বাজে মেয়ে ছেলেদের কাছেতো আর সব সময় যাইতে পারে না। তাছাড়া এইবার বাস মালিক সমিতির ইলেকশনে দাড়াবে, মান সম্মানেরও একটা ব্যাপার আছে। তো সেইজন্য ভাই বেরাদারদের মধ্যেই বিষয়টা থাকাই ভালো…মানে আজকে সকালে…’
জহিরের মনে হয় কে যেন তার কানে গরম লোহা ঢেলে দিচ্ছে। কি বলছে এইসব তাহের ভাই? এইসব কি শুনছে সে? আজ সকালে দেখার পর তার বউকে নাকি মোস্তাক স্যারের মনে ধরেছে। দিনকয়েক নিজের কাছে নিয়ে রাখতে চায়। তাহের ভাই সে কথাই বলতে এসেছেন-‘ বুঝলানা…সব হইতেছে আমাগো ভিতরকার মোহাব্বতের ব্যাপার…ভাই বেরাদাররা নিজেরা নিজেরা ঠিক থাকলেই হইলো। তুমি কি বল? নিয়া আসবা নাকি আগামী সপ্তায়? আরে মিয়া দুই একদিনের ব্যাপার…দেখবা দুই সপ্তাহ বাদে ভুইলা গেছ গিয়া… প্রমোশনটা পাইলে তোমারইতো লাভ। বুঝলানা কথাডা?’
জহির থম মেরে বসে থাকে। তাহের ভাই কতক্ষন তার দিকে চেয়ে থেকে শেষে উঠতে উঠতে বলে- ‘তাইলে নিয়া আইসো আগামী সপ্তায়, স্যারের ফ্লাটতো চেনোই…।’
জহিরের জ্বর এসে যায়। কতক্ষন সে ওখানে বসেছিল মনে পড়ে না। এক সময় উঠে দাড়িয়ে ঘোরের মধ্যে এলো মেলো পা ফেলে হাটতে থাকে জহির। এখন সে করবে কি? তাহের ভাইর গলা চিপে ধরবে? মোস্তাক স্যারের গলা চিপে ধরবে? কি লাভ? চাকরিটা চলে যাবে। আর চাকরিটা গেলে তাকে বউ,বাপ,মা নিয়ে সোজা রাস্তায় নেমে আসতে হবে। ফুটপাতে ঝালমুড়ি বিক্রি করা ছাড়া আর কোন উপায় থাকবে না।
ফিরে গিয়ে দেখে রান্না বাড়া শেষ বহুক্ষন আগে, খাওয়াও প্রায় শেষ হতে চলেছে। ঝুনু একপাশে সরে চুপচাপ দাড়িয়ে আছে তার প্রতিক্ষায়। জহির ঝুনুর দিকে তাকাতে পারে না। কি করে সে বলবে ঝুনুকে এসব কথা? মুখ চোখ কালো করে গিয়ে দাড়িয়ে থাকে। ঝুনু বোধহয় টের পায় কিছু একটা হয়েছে। গলায় সামান্য ভয় নিয়েই জিজ্ঞেস করে-‘কি হইছে আপনার?’
জহির গম্ভীর গলাতেই বলে-‘কিছু হয় নাই…চল খাইতে বসি।’
আশে পাশের বেশির ভাগের খাওয়া শেষ। তারা দুজন আর অল্প কটা লোকের খাওয়া বাকি আছে। খাবার খুব ভালো হয়েছে। পরিমানেও অনেক দিয়েছে। কিন্তু খেতে বসে জহিরের হাত আর চলে না। ঝুনুও চুপচাপ খাচ্ছে। জহির তাকিয়ে তাকিয়ে ঝুনুর খাওয়া দেখে। ইসস্! কি সুন্দর ছোট ছোট নলা করে মুখে তোলে মেয়েটা! নাকের উপর মুক্তদানার মতন ছোট ছোট ঘামের ফোটা। আলো পড়ে চক চক করছে। জহিরের খুব ইচ্ছে করল রুমাল দিয়ে মুছে দিতে। দিল না। দেখতে ভালো লাগছে। বিয়ের এতমাস পরে জহির হুট করে বুঝতে পারে আজ বহুদিন হল এই সাধা সিধে, ভালো মেয়েটার প্রেমে পড়ে আছে। অথচ এতদিন মেয়েটাকে সে কেবল ধমকেই গেল। কোনদিন এই কথাগুলো বলা হল না। জহিরের মুখচোখ হঠাৎ করে কঠিন হয়ে যায়। যে করেই হোক কথাটা তাকে বলতেই হবে। জহির গম্ভীর গলায় বলে-‘শোন, তোমার সাথে একটা জরুরী কথা আছে…’

এর কয়দিন পর আমপোড়া কলামুখী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের গেটে এক নতুন ঝালমুড়িওয়ালা এলো যে কিনা ‘ঝালমুড়ি’কে বলে ‘জালমুড়ি’।



৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×