রাসূল (সা) এর বৃদ্ধ বয়েসে আয়েশা (রা) এর মত একজন কচি বালিকাকে বিয়ে করা নিয়ে অনেক মু'মিন মুসলিমই অস্বস্তিতে ভূগে থাকেন। বিশেষ করে নাস্তিক সম্প্রদায় যখন প্রিয় নবীর 'পেডোফিলিয়া'র মত বিষয়ে (নাউযুবিল্লাহ) প্রশ্ন তোলে, স্বভাবতই তারা লা জওয়াব হয়ে যান। মু'মিন মুসলিমদের শায়েস্তা করার জন্য নাস্তিকেরা আরও কিছু অস্বস্তিকর প্রশ্ন তীরের মত ছুড়ে দেয়। যেমনঃ
- নিজে ১১ বিয়ে করে অনুসারীদেরকে ৪ টায় সীমাবদ্ধ করল কেন?
- স্ত্রী থাকতে দাসী নিয়ে পড়ে থাকত কেন?
আরও অনেক আছে। রুচিতে বাধছে, তাই এখানেই থেমে গেলাম। সমস্যা হচ্ছে মুমিনদের মন তারা এমনভাবে বিষিয়ে দেয়, যে তারা তারা নবীজির (সা) ইজ্জত হানির ভয়ে এই কুতর্ক আর এগিয়ে নিতে চান না। 'আল্লাহ অন্তরে মোহর মেরে দিয়েছেন' টাইপ অজুহাত দেখিয়ে তারা থেমে যান এবং যুক্তিতে পরাস্ত ভেবে নাস্তিকেরা যখন জয়ের আনন্দে নতুন শিকার খুঁজতে থাকে। গুপী গায়েন একজন পুরনো ব্লগার। তিনিও মনে হয় এই ব্যাপারগুলো নিয়ে অস্বস্তিতে ভোগেন, তাই নবীজির (স) দায় মোচনের (?) ভাগীদার হতে এই নিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছেন এবং দাবি করেছেন যে বিয়ের সময়ে আয়েশা (রা) এর বয়েস কোন মতেই ৬ বছর ছিলনা। এই দাবির পক্ষে তিনি কিছু যুক্তি ও দলিল দস্তাবেজও হাজির করেছেন।
কথা হচ্ছে, এই বিষয়গুলো কি তর্ক করার মত? রাসূল (স) যদি ৬ বছরের বালিকাকে বিয়ে করেই থাকেন, তাতে অসুবিধা কি? হ্যা, একজন পূর্ণবয়স্ক পুরুষের সাথে একটি মেয়ে শিশুর বিবাহে দুইটি সমস্যা আছেঃ
১ - শারীরিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে, যদি পুরুষটি সাবধান না হয়, তবে মেয়েটি শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
২ - সন্তান ধারণের ক্ষেত্রে, যৌবন প্রাপ্তির আগে সন্তান ধারণ করলে গর্ভকালীন ও প্রসবকালীন জটিলতা দেখা দেয়।
দ্বিতীয় সমস্যাটি যে আয়েশা (রা) এর ক্ষেত্রে হয়নি, সেটা তো আমরা জানিই। ৬৭৮ খ্রিস্টাব্দে তিনি যখন মারা যান, তখন তিনি নিঃসন্তান ছিলেন। রাসূল (সা) এর সাথে বিবাহিত জীবনেও তিনি গর্ভধারণ করেননি। তাহলে এটা পরিষ্কার যে, রাসূল (স) এর সাথে বৈবাহিক জীবনে তিনি কোন শারীরিক সমস্যার সম্মুখীন হননি।
প্রথম সমস্যার ক্ষেত্রে বলা যায়, তিনি ৯ বছর বয়েসে নবীজির (সা) সাথে সংসার জীবন শুরু করেন। এই বয়েসে একটি মেয়ে লম্বায় স্বাস্থে পরিপূর্ণ নারীর মতই হয়ে যায়। তারপরেও শারীরিক বয়োপ্রাপ্তির একটা ব্যাপার থাকে। রাসূলের (স) বিভিন্ন হাদীস থেকে আমরা দেখতে পাই, তিনি সন্তান বয়ঃপ্রাপ্তির পরেই বিবাহ দিতে বলেছেন, তার আগে নয়। আর তিনি যে কাজ না করে কথা বলেননা, তা তো আমরা চিনি খাবার ঘটনা থেকেই জানি। কাজেই মা আয়েশার শারীরিক বয়োপ্রাপ্তির আগে তিনি যে শারীরিক সম্পর্ক করেননি, সে কথাও নিঃসন্দেহে বিশ্বাসযোগ্য। শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকলে তিনি অবশ্যই আপত্তি করতেন, আবু বকর (রা) এর কন্যা হিসেবে সেই স্বাধীনতা তাঁর ছিল। কিন্তু আপাদমস্তক তাঁকে আমরা সবসময় একজন চটপটে স্মার্ট বুদ্ধিমতি তরুণী হিসেবেই পেয়েছি।
তবে ৬ বছর বয়েসি মেয়েকে তিনি কেন বিয়ে করলেন - এ প্রশ্ন তোলা যেতেই পারে। নিশ্চয়ই এরও কোন যুক্তিযুক্ত কারণ আছে। আপাতত এই প্রশ্নের জবাব আমার জানা নেই।
তবে এত অল্প বয়েসী একটি মেয়েকে বিয়ে করায় মুসলিম উম্মাহর অনেক লাভ হয়েছে। যেমনঃ
- সাহাবীরা/তাবেঈন গণ এমন একজনকে নিজেদের শিক্ষক হিসেবে পেয়েছেন, যিনি রাসূল (স) এর ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্যে ছিলেন, তার প্রতিটি কর্মকাণ্ড তিনি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করেছেন। সেসব তিনি সাহাবীদেরকে শেয়ার করেছেন।
- তিনি প্রায় আড়াই হাজারের মত হাদীস বর্ণনা করেছেন। তার বর্ণিত হাদীসগুলো এমন যে তিনি না হলে অন্য কেউ হয়ত সেগুলি বর্ণনা করতে পারত না।
- খলীফা আবু বকর (রা) ও উমর (রা) এর সময় তিনি অনেক গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে অংশগ্রহণ করেছেন, তার পরামর্শ প্রতিপালন করে এই দুই খলিফা বলতে গেলে ত্রুটিহীনভাবেই তাঁদের সময় পার করতে পেরেছেন। কিন্তু ইসলামের তৃতীয় খলিফা হযরত উসমান (রা) তার পরামর্শে খুব একটা গুরুত্ব দেননি বা দিতে পারেননি, তার পরিণতি তো সবারই জানা।
রাসূল (সা) এর ওফাতের পরে ইসলামী বিশ্বে নেতৃত্বের যে শূন্যতা তৈরি হয়েছিল, তা থেকে মুসলিম জাতিকে আলোর দিশা দেখাতে তিনি অসামান্য ভূমিকা রেখেছিলেন। কোন বিষয়ে দ্বিধা দ্বন্দে ভুগলে বা বিতর্ক সৃষ্টি হলেও মানুষ তাঁর কাছে ছুটে যেত, তিনি যা সিদ্ধান্ত দিতেন, সবাই তা বিনা বাক্য ব্যয়ে মেনে নিত।
বলা বাহুল্য, এসব কিছুই হতনা, যদি রাসূল (সা) আয়েশা (রা) কে বিবাহ না করতেন। কাজেই এই বিবাহের সামাজিক ও রাজনৈতিক যে গুরুত্ব আছে, তাকে কোনভাবেই অবহেলা করার মত নয়। তারপরেও পর্নোগ্রাফিতে অভ্যস্ত নাস্তিক ইসলাম বিদ্বেষীদের চোখে রাসূলের (স) শিশুকামিতা ও পলিগামিই মূখ্য আলোচনার বিষয় হয়ে ওঠে।
এ প্রসঙ্গে আরও একটা কথা না বললেই নয়। মহাভারতে আছে গুরু দ্রোণাচার্যের গুরুদক্ষিণা দিতে গিয়ে ভীম ও অর্জুন যখন পাঞ্চালের রাজা ধ্রুপদকে পরাজিত করে দ্রোণের নিকট নিয়ে আসে, দ্রোণ তখন তাঁকে অপমান করে ছেড়ে দেন। এই অপমানের প্রতিশোধ নেবার জন্য রাজা ধ্রুপদ যজ্ঞাহুতি দেন এবং সেখান থেকে একটি পুত্র (ধৃষ্টদ্যুম্ন) ও একটি কন্যা (দ্রৌপদী) জন্ম নেয় কোন মা ছাড়াই। পরবর্তীতে এই কন্যাকে কিন্তু অর্জুনই বান নিক্ষেপের প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হয়ে বিয়ে করে এবং অন্য ভাইদের সাথে ভাগ করে নেয়। কেউ কি বলতে পারবেন, এই বিয়ের সময় দ্রৌপদীর বয়েস কত ছিল? এক বছরও নয়। কারণ সে জন্মের সময় পূর্ণ যৌবন নিয়েই জন্মেছিল। তার মানে কি দাঁড়াল? পান্ডবেরা পাঁচ ভাই মিলে যে কন্যাকে বিয়ে করেছিল, তার বয়েস তখন এক বছরেরও কম ছিল।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যখন মৃণালিনীকে বিয়ে করেছিলেন, তখন তার বৌয়ের বয়েস কত ছিল? কন্যা প্রমীলাকে যখন বিয়ে দিয়েছিলেন, তার বয়েস তখন কত ছিল? আগেকার দিনে কত বছর বয়েসে মেয়েদের বিয়ে হত? মা ও সন্তানের বয়েসের পার্থক্য আগে কত ছিল? এগুলো ভাবুন, আর কিছু দরকার নেই।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই অক্টোবর, ২০১৮ দুপুর ১২:৪১