somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অপারেশন থান্ডারবোল্ট

১২ ই জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ১২:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জালালাবাদ,সিলেট:
রমজান মাস চলছে, ১ প্যারা কমান্ডো ব্যাটেলিয়নের সদস্যরা রাতে তারাবির নামাজে ব্যস্ত...সারাদিন ব্যাপক ধকল গেছে তাদের ওপর দিয়ে। কারন আজকে রোপ ক্লাইম্বিং এক্সারসাইজ ছিল। সকলেই ক্লান্ত,চোখ ঘুমে ঢুলে পড়ছে।


এত ক্লান্ত শরীরে তারাবিহ নামাজ !! রুকু ও সিজদার মধ্যে প্রায় ৫ -৬ মিনিট লেগে যাচ্ছে, সিজদায় গেলে যেন গা ছেড়ে দিচ্ছে ক্লান্তিতে। বহু কস্টে শেষ হল, সবার শরীর টলে পড়ছে ঘুমের কারনে ।

কিন্তু খবর আসল,ঢাকায় নাকি জঙ্গিরা কয়েকজন বিদেশীকে জিম্মি করে রেখেছে। সকলে হতবাক। গত দশ বছরে দেশে কোন গুরুতর জঙ্গি হামলা হয়নি।কিন্তু কোথায় জিম্মি করেছে ? গুলশানে। ঢাকার অন্যতম নিরাপত্তা বেষ্টিত অঞ্চল। সকলেই বলতে গেলে অবাক হয়ে গেছে। যাই হোক তাদের ধারনা,পুলিশ-RAB-SWAT পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসবে।

গুলশান ২,ঢাকা। জঙ্গিরা প্রায় ৩৩ জনকে জিম্মি করে রেখেছে। খবর পেয়ে স্থানীয়ভাবে সাধারন পুলিশ ফোর্স নিয়ে নিতান্ত অপ্রস্তুতভাবে গেলেন এক পুলিশ অফিসার। কিন্তু তিনি জানতেন না যে তিনি যতটা দূর্বল মনে করছেন ততটা দূর্বল নয়। পুলিশ সদস্যদের দিকে গ্রেনেড ছুড়ে মারতে লাগল জঙ্গিরা। স্প্রিন্টার হাত-পায়ে বিঁধে আহত হয়ে গেলেন বেশকয়েকজন পুলিশ সদস্য। ঘটনার আকস্মিকতায় সবাই বিস্মিত। সকলে বুঝে গেছে,এটা কোন যেনতেন ঘটনা নয়। এবার প্রস্তুতি গ্রহন শুরু করল পুলিশ।

জঙ্গিরা দাবী করছে,তাদের এক নেতাকে মুক্তি দিতে হবে,তাদের নিরাপদে যেতে দিতে হবে ও তাদের এ অভিজানকে স্বীকৃতি দিতে হবে।কি হাস্যকর!! তাই পুলিশের ধারণা ছিল যে জিম্মিদের কোন ক্ষতি করা হবে না। কিন্তু ভুল ভাঙল যখন নেটে তারা ২০ জনকে হত্যার ভিডিও বের করল।তারা জিম্মি করে রাখতে আসেনি,তারা এসেছে হত্যাযজ্ঞ চালাতে। নিরীহ মানুষ মারতে এসেছে তারা,তাদের দাবি পূরন হোক না হোক হত্যা করাটাই তাদের মূল লক্ষ্য।

এবং এদের ( প্রধানত বিদেশী,তবে কয়েকজন বাংলাদেশীও ছিলেন ) হত্যা করা হয় মাত্র ৩০ মিনিটের মাথায়। ভিতরে ঢুকেই হত্যাযজ্ঞ চালাতে থাকে তারা। এত কম সময়ের মধ্যে কোন অপারেশন পরিচালনা করা কোন দেশের কোন ফোর্সের পক্ষে সম্ভব নয়। কারন যা ভুল হওয়ার হয়ে গেছে,এ সম্পর্কিত কোনও আগাম তথ্য ছিল না।

যা হওয়ার হয়ে গেছে,এবার পুলিশ-RAB সকলে ব্যস্ত জীবিত থাকা জিম্মিদের ছাড়িয়ে আনতে। যেই ইসলামের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে যারা তাদের দ্বারা এই পাপ কাজ করিয়েছে,এবার তাদের সঠিক ব্যাখ্যা বুঝানো হচ্ছে। বারবার বুঝানো হচ্ছে যে নীরিহ হত্যা ইসলাম সমর্থন করে না। তোমরা বাকি জিম্মিদের ছেড়ে দাও!!

চাইলে অপারেশন করে জঙ্গিদের ঝাঝরা বানিয়ে দেওয়া যায়। কিন্তু পুলিশ ও RAB চাচ্ছে আরেকটু সময় নিতে। যাতে জঙ্গিদের বুঝিয়ে জিম্মিদের বের করে আনা যায়। কারন অপারেশন চালাতে গেলে জিম্মিরাও মারা পড়তে পারে। কারন এটা সুইসাডাল অ্যাটাক,নিজেদের বাচানোর আগে জিম্মিদের মারার চেষ্টা করবে ওরা।

বারবার জঙ্গিদের প্রতি আহবান করা হচ্ছে জিম্মিদের ফিরিয়ে দিতে। তবে জঙ্গিরা তা তেমন আমলে নিচ্ছে না। কিন্তু একটা ব্যাপার পুলিশ ও অন্যরা বুঝে গেছে যে,জঙ্গিদের যদি মুসলিমদের ছেড়ে দিতে বলা হয় তবে তারা ছেড়ে দিতে পারে। তাই এ আহবান করা হল। জিম্মিদের না ছাড়লেও সকলের বুঝা হয়ে গেছে যে,নতুন করে হয়ত হত্যাযজ্ঞ শুরু করবে না তারা।

জঙ্গিদের পরিকল্পনা ছিল,গ্যাস সিলিন্ডার এর সাথে গ্রেনেড লাগিয়ে ব্লাস্ট করে পুরো হলি আর্টিজানকে উড়িয়ে দিবে। কিন্তু বাইরের পুলিশ-RAB দের কথায় টনক নড়ল তাদের। তাহলে তো মুসলিমরাও মারা পড়বে !! নিজেরাই কনফিউসড হয়ে যাচ্ছে তারা। যারা তাদের অন্তরে বিষ ঢেলে দিয়েছিল,তারা তো এ ব্যাপারগুলো বলে নি !! সকালের পর জিম্মিদের ছেড়ে দিবে ও সম্মুখ যুদ্ধ করবে,এমনটাই সিদ্ধান্ত নিল তারা।জঙ্গিরা বাংলাদেশের সাংবাদিকদের অবস্থা দেখে হাসছিল। কারন তারা বাইরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সকল কার্যকলাপই জানতে পারছিল,কারন বলদ সাংবাদিকরা লাইভ সম্প্রচার করছিল।

এবার অপারেশনের প্রস্তুতি নিচ্ছে সকলে। পুলিশ-সোয়াট-RAB-BGB সকল বাহিনীই উপস্থিত গুলশানে। কিন্তু এত বড় ঘটনায় আতঙ্কিত প্রশাসন। আর কোনও রিস্ক নিতে চায়না তারা। তাই সিদ্ধান্ত হল,সকলের আস্থার প্রতীক ১ প্যারা কমান্ডো ব্যাটালিয়ন সদস্যদের এই অপারেশনের গুরুভার দেওয়া হবে।

মধ্যরাতে এ খবর জালালাবাদ পৌছাল। অপারেশনে নামতে হবে কমান্ডোদের। আশ্চর্য !! একটু আগে যে মানুষগুলি ক্লান্তিতে ঢুলে পড়ছিল, হঠাৎ ঐশ্বরিক উপায়ে তা সতেজ হয়ে গেল....আসলে জাত সৈনিকদের ক্লান্তি বলে কিছু নেই, এরা এক সেকেন্ডকেও ৬০ ভাগে ভাগ করতে পারে...

বিমানবাহিনীর C-130 বিমানে করে ঢাকা এসে পড়ল প্যারা কমান্ডোরা। ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট হতে এপিসি আনা হল। এবার অপারেশন এর প্ল্যান করা হবে। হলি আর্টিজানের কাছেই লেক আছে,তাই জঙ্গিরা লেকের মাধ্যমে পালাবার চেস্টা করতে পারে। লেকে সোয়াডস মোতায়েন করা হল। ডাইভিং ইউনিটকেও প্রস্তুত রাখা হল। পুরো গুলশান এলাকা পুলিশ ও অন্যান্য বাহিনী দ্বারা কয়েকস্তরের নিরাপত্তা বেস্টনী দ্বারা ঘিরে রাখা হলো,যাতে কোনমতেই কেউ পালিয়ে না যেতে পারে।

সকালবেলা জঙ্গিরা জিম্মিদের ছেড়ে দেওয়ার সাথে সাথে অপারেশন শুরু হয়ে গেল। সর্বপ্রথম এপিসি তীব্রবেগে হলি আর্টিজানে ঢুকে এর দেয়ালে আঘাত করে দেয়াল ভেঙে ফেলল। প্যারা কমান্ডোরা সতর্কভাবে এগিয়ে গেল। সর্বপ্রথমই একটি গ্রেনেড ছুড়ে মারল ভবনের ভিতরে।ভিতর হতে আর্তনাদ শোনা গেল। টেবিল ও অন্যান্য জিনিসের পিছনে লুকিয়ে গুলি করে ব্যর্থ শেষ চেষ্টা করছে জঙ্গিরা। গুলি করতে করতে এগিয়ে গেল কমান্ডোরা। উভয় পক্ষই প্রশিক্ষিত,তবে কমান্ডোদের সামনে কি আর এসব চুনোপুটি টিকে ?

১২ মিনিটেই সকল জঙ্গির লাশ ফেলে দিল কমান্ডোরা। কতই বা বয়স হবে ছেলেগুলোর ? এই ২২-২৩ বছর ? এই তরুণ বয়সেই তাদের মনে বিষ ঢেলে দিয়েছে। শান্তির ধর্মের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে এ নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালাতে প্ররোচিত করেছে তাদের। শত্রুর মুখ খুব কাছে থেকে দেখল কমান্ডোরা। ভাবছে,এই তরুণরাই হতে পারত দেশের উজ্জ্বল ভবিষ্যত,অথচ তাদের কাচা আবেগী মনকে কি ঘৃন্যভাবেই না ব্যবহার করা হয়েছে !! এদের জান্নাত তো দূর,হাবিয়া দোযখে পুড়তে হবে। নিরীহ হত্যা ক্ষমাযোগ্য নয় !!

সারাবিশ্ব যেমন জঙ্গিদের এ নারকীয় হত্যাযজ্ঞের কারনে ব্যথিত,তেমনি বাংলাদেশী কমান্ডোদের প্রশংসায় পঞ্চমুখ।মাত্র ১২ মিনিটেই অপারেশন শেষ করে অপূর্ব দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে। সারাবিশ্ব তারিফ করছে তাদের ..

( যাদের মনে খটকা লাগছে,তাদের একটা ঘটনা বলি : কদিন আগে কাশ্মীরে দুইজন জঙ্গি একটি ভবনের দখল নেয়।তাদেরকে ২ দিনেও কাবু করতে পারেনি সেইদেশী কমান্ডোরা,শেষে সেই জঙ্গিরা আত্মহত্যা করেছিল কিনা তাও শিউর না )

এটাই ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে এক কলঙ্কময় টেরর অ্যাটাক ও এর হতে মুক্তিলাভের কাহিনী। ১২ ঘন্টার এ দূর্যোগের অবসান ১২ মিনিটেই করলেন আমাদের অকুতোভয় কমান্ডোরা।..

Do or Die ( Motto of 1 Para Commando battalion - The Cheetahs )

(লিখাটা অনেকদিন আগে ফেসবুকে পড়েছিলাম। আজ হঠাৎ আবারও সামনে আসায় ব্লগে দিলাম)
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ১২:৩৫
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:১৩

ফেসবুকে বাঙালিদের মধ্যে ইদানিং নতুন এক ফতোয়া চালু হয়েছে, এবং তা হচ্ছে "দাওয়াতের নিয়্যত ছাড়া কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।"
সমস্যা হচ্ছে বাঙালি ফতোয়া শুনেই লাফাতে শুরু করে, এবং কোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×