গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারির চেয়েও বড় ধরনের হামলার ছক আঁটছে জঙ্গিরা। ভিন্ন কৌশলে আত্মঘাতী হামলা চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে ধর্মীয় উগ্রবাদী সংগঠন নিউ জেএমবি।
তবে এসব হামলায় বোমা অথবা আগ্নেয়াস্ত্রের পরিবর্তে অয়েল ট্যাংকার অথবা কনটেইনার ও অক্সিজেনবাহী ভারি যানবাহন ব্যবহারের পরিকল্পনা করেছে সংগঠনটি। বেশিসংখ্যক প্রাণহানি হয়- এমন লক্ষ্যেই জনসমাগমস্থলে এসব লরি ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জঙ্গিরা। এছাড়া বিভিন্ন শপিংমলে পরিকল্পিতভাবে আগুন দিয়ে প্রাণহানির সংখ্যাও বাড়াতে চাইছে তারা।
সম্প্রতি গ্রেফতার হওয়া নিউ জেএমবির কয়েকজন সদস্য পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে এসব ভয়ংকর পরিকল্পনার কথা ফাঁস করে দিয়েছে। প্রায় একই ধরনের তথ্য দিয়ে বাংলাদেশের উগ্রবাদীদের উদ্দেশে সম্প্রতি বার্তা দিয়েছে ইসলামিক স্টেট অব ইরাক অ্যান্ড সিরিয়ার (আইএসআইএস) নয়া মুখপাত্র রুমিয়া। এই বার্তাটি রয়েছে রুমিয়ার অনলাইন সংস্করণের পঞ্চম সংখ্যায়।
এসব তথ্য পাওয়ার পর সতর্কাবস্থায় রয়েছে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। পাশাপাশি শনিবার অনুষ্ঠিত ডিএমপির (ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ) মাসিক অপরাধ বিষয়ক সভায় এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া।
ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ পাওয়ার পরপরই অয়েল ট্যাংকারসহ ভারি যানবাহনের চালকদের ওপর নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। পাশাপাশি সংগ্রহ করা হচ্ছে চালকদের ব্যক্তিগত তথ্য। এছাড়া এ ধরনের যানবাহনের নতুন চালকদের লাইসেন্স দেয়ার ক্ষেত্রে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে।
জানতে চাইলে জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণে গঠিত কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি) প্রধান ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মো. মনিরুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, নিউ জেএমবির উল্লিখিত পরিকল্পনার বিষয়টি আমরা অবহিত। সম্প্রতি নিউ জেএমবির কয়েক সদস্যকে গ্রেফতারের পর তাদের জিজ্ঞাসাবাদে ভয়ংকর এসব তথ্য পাওয়া গেছে। এসব তথ্য যাচাই-বাছাই শেষে সারা দেশের পুলিশ সতর্ক রয়েছে।
বিশেষ করে কনটেইনার, অক্সিজেন ও তেলবাহী লং ভেহিক্যাল ও এর চালকদের ওপর পুলিশ কঠোর নজরদারি করছে। আইএসআইএসের মুখপাত্র রুমিয়ার অনলাইন সংস্করণে এমন বার্তার বিষয়টি সম্পর্কেও তিনি অবগত রয়েছেন বলেও জানান।
মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন আইএসের মুখপাত্র রুবিয়ায় এমন বড় ধরনের হামলার বিষয়ে হুমকি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা এ ব্যাপারে সতর্ক রয়েছি। জঙ্গিদের আপাতত এ ধরনের হামলা চালানোর সামর্থ্য না থাকলেও তাদের প্রতিটি কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণের মধ্যে রয়েছে।
এদিকে কঠোর নজরদারির মধ্যেই ৩ ফেব্রুয়ারি পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ির পর্যটন স্পট আলুটিলায় নিয়ন্ত্রণহীন একটি ট্রাকচাপায় ৮ পুণ্যার্থীর মর্মান্তিক মৃত্যু ঘটে। এতে আহত হন অন্তত ১২ জন। এ ঘটনাটিও পরিকল্পিত বলে মনে করছেন গোয়েন্দারা।
ঘটনার পর ট্রাকচালক সুমনকে আটক করেছে পুলিশ। তাকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ প্রয়াত চন্দ্রমনি মহাস্থবিরের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া উপলক্ষে সেদিন তারা ওদিন ধাতুচৈতা বৌদ্ধ বিহার প্রাঙ্গণে পুণ্যার্থীরা জড়ো হয়েছিলেন।
সিটিটিসি প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার মো. মনিরুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেছেন, তারা কোনো ঘটনাকে ছোট করে দেখছেন না। খাগড়াছড়ির ঘটনাটিও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
সিটিটিসি প্রধান মো. মনিরুল ইসলাম আরও জানান, এ ধরনের হামলার মাস্টারমাইন্ডদের বেশির ভাগই আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যদের হাতে গ্রেফতার হয়েছে। অভিযান পরিচালনার সময় অনেকেই বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে। এখনও বেশ কয়েকজন ভয়ংকর জঙ্গি ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে। এদের মধ্যে ভারতের বর্ধমানে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় জড়িত সোহেল মাহফুজ ওরফে নসরুল্লাহ অন্যতম।
এছাড়া এক সময় জেএমবির অন্যতম সদস্য রাজশাহীর বাগামারার মঈনুল ইসলাম ওরফে মুসা এবং বন্দুকযুদ্ধে নিহত মাস্টারমাইন্ড মারজানের ভগ্নিপতি সাগর অন্যতম। গ্রেফতার এড়িয়ে পলাতক ভয়ংকর এসব জঙ্গি নতুন করে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে।
প্রসঙ্গত, গত বছরের ২০ ডিসেম্বর জার্মানির রাজধানী বার্লিনে লরি হামলায় ১২ জন নিহত হন। ওই হামলার কথা তাৎক্ষণিকভাবে স্বীকার করে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট। এ ঘটনার পর তিউনিসীয় নাগরিক ওই লরিটির চালক আনিসকে খুঁজছে পুলিশ।
এছাড়া ইসরাইলে গত বছর বেশ কয়েকটি লরি হামলার ঘটনায় ২১৫ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এছাড়া ইউরোপেও গত কয়েক বছরে গাড়িচাপা দিয়ে মানুষ হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে তিনবার। এর মধ্যে দুটি ঘটেছে যুক্তরাজ্যে, আরেকটি কানাডায়। কানাডার ঘটনায় এক সেনা সদস্য নিহত হন। এখন উগ্র ধর্মীয় সংগঠন নিউ জেএমবির সদস্যদের বাংলাদেশে একই কৌশল প্রয়োগ করার পরামর্শ দিচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন আইএস।------(যুগান্তর)
এরই মধ্যে মাথাচাড়া দেওয়ার চেষ্টা করছে আরেক নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হিজবুত তাহরীর। গত কাল মিরপুর থেকে ছেড়ে আসা একটি বাসে হঠাৎই উঠে পড়ে সংগঠনটির দুই সদস্য। তারা নিজেরদের হিযবুত তাহরীর সদস্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হিসেবে পরিচয় দেয়। তারপর প্রকাশ্যে তাদের সংগঠনে যোগ দেওয়র জন্য বিভিন্ন ধরণের কাথা বলতে থাকে। এসময় তাদের কিছূ সহকর্মীদের বাহিরে সতর্ক অবস্থানে দেখা যায়। ভেতরে থাকা একটি বেসরকারী টিভি সাংবাদিক পুরো ঘটনাটি গোপন ক্যামেরায় ভিডিও করে টেলিভিশনে প্রচার করলে এই জঙ্গি সংগঠনটির মাথা চাড়া দেওয়ার বিষয়টিও ভালোভাবেই প্রকাশ পায় এখন দেখার বিষয় আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কত দ্রুত এই জঙ্গিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে..।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৩:০১