somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এরা কোন মুসলমান.??

১০ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ৯:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মুসলিমরা জেরুজালেম জয় করার পর খলিফা ওমর একটা উটে চড়ে একজন ভৃত্য নিয়ে জেরুজালেমের উদ্দেশ্যে রওনা দিলেন! পথিমধ্যে কখনো নিজে উটের রশি টানিলেন, আর ভৃত্য ( চাকর) কে উটে চড়াইলেন! এইভাবে পালাবদল করে করে গেলেন যাতে ভৃত্যটি ক্লান্ত দুর্বল না হয়ে পড়ে! অর্থাৎ খলিফা হয়েও চাকর কে একজন মানুষ হিসেবেই সমমর্যাদা দিয়েছেন!



বীজিত রাজ্যের ( জেরুজালেম বাসী) লোকেরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করার পর দেখতে পেলেন হাতেপায়ে ধুলো মলিন চেহারার এক লোক উটে বসে আছে! তাকে খলিফা ভেবে যেই না সম্বর্ধনা দেবেন, ভৃত্যটি উট থেকে নেমে সবাইকে বিস্মিত করে বললেন-- আমি তো ভৃত্য, খলিফা নয়! যিনি উটের রশি ধরে আছেন, তিনিই খলিফা!
উপস্থিত জনতার মাঝে সাড়া পড়ে গেলো! অনাড়ম্বর ঝাকঝমক হীন একজন সাধারণ মানুষ খলিফা হয় কি করে? তারা নতুন করে জানলেন-- ইহাই ইসলাম, একেই বলে মুসলিম!

কায়রো ( মিশর) বিজয় করার পরে মুসলিম সেনাপতি রা একখান মসজিদ নির্মাণের জন্য একটা যায়গা নির্দিষ্ট করলেন, কিন্তু যায়গাটি ছিলো এক বিধবা বৃদ্ধা খ্রিষ্টানের!
সেনাপতিরা তাকে অনত্র চলে যেতে আদেশ দিলেন! অসহায় বৃদ্ধা নিরুপায় হয়ে খলিফার কাছে চিঠি লিখলেন, " আমি বিধবা, বৃদ্ধা! মাথা গুজার ঠাই নাই! একমাত্র সম্বল এই বাড়িটি আছে! এটা ছেড়ে দিলে হয়ত আরেকটি বাড়ি পাবো, কিন্তু আমার স্বামী হাতে গড়া শেষ স্মৃতিচিহ্ন টুকু চিরতরে নষ্ট হয়ে যাবে! এই বয়সে আমার আর কিইবা সাধ আছে? এইটুকু দাবী রইলো-- আমার বাড়িটি ভাঙ্গবেন না!"
খলিফা সমন জারি করলেন-- বৃদ্ধার বাড়িতে গিয়ে সেনাপতি যেন ক্ষমা চেয়ে আসে, আর উনাকে নিশ্চিত করে আসে যে, কেউ উনার বাড়িতে আঁচ পর্যন্ত লাগাবে না!

এমন অনেক কাহিনী আছে, যা বললে শেষ হবে না! যেমন মোঘল সম্রাট বাবুরের পাগলা হাতির কবল থেকে মেথরের ছেলেকে বাঁচাতে ছুটে যাওয়া, খলিফা হারুনুর রশিদের গরিব দুখিদের প্রকৃত অবস্থা যাচাই করতে ছদ্মবেশে রাতবিরাতে ঘুরে বেড়ানো ইত্যাদি!
ইসলামে বড় ছোট নেই, ধনী গরিব নেই, গায়ের জোর প্রদর্শন নেই, ধনদৌলতের ঝাকঝমক নেই!
সবচেয়ে ধনি ব্যক্তিটিও সাধারণের সাথে একই কাতারে নামাজ পড়ে! কুলাকুলি করে!
নেই শ্রেণী বিন্যাস -- নেই জাত পাতের সমস্যা! বিনা অন্যায়ে কাউকে আঘাত করার ইতিহাস নেই! দাসপ্রথা বিলুপ্ত করে মুসলিম শাসকরাই, নারীদের বর্বর আরব দের কবল থেকে মুক্ত করে স্ত্রীর মর্যাদা দেয়! মদ্যপান নিষিদ্ধ করে!
তবে হ্যা কিন্তু....... এইসবই অতীতের ইসলাম, অতীতের মুসলিমদের অনুশাসন!

বর্তমানে মুসলিম শাসকরা ঠিক তার বিপরীত! অত্যন্ত ঝাকঝমকপূর্ণ ব্যয় বহুল জীবনে অভ্যস্ত! আছে চাকর বাকর! দামী গাড়ি! টাকার পাহাড়! ধনী গরিব বৈষম্য তো চরম! ----- এরা হলো শাসক শ্রেণী!
ধর্মীয় নেতাগণ বহু ভাগে বিভক্ত! শিয়া সুন্নি ওয়াহাবি সালাফি একে অন্যের পিছনে লেগেই আছে!
বিভিন্ন কট্টরপন্থী গ্রুপ নিজেদের ইসলাম রক্ষাকারী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে-- তাদের মতে বিধর্মী দের কতল করা ওয়াজিব! এমনকি এই কথা যারা মানবে না, তাদের ও কতল করা ওয়াজিব!
আজকে মরক্কো নাইজেরিয়া সোমালিয়া থেকে ধরে ইয়েমেন ইরাক সুরিয়া লিবিয়া আফগানিস্তান পাকিস্তান হয়ে ইন্দোনেশিয়া পর্যন্ত এদের প্রভাব পরিলক্ষিত!
এরা আবিষ্কার করেছে মসজিদে, জায়নামাযে, হাসপাতালে, স্কুলে, টিকাকেন্দ্রে বোমা ফোটানো জায়েজ--- যদি তারা কথা না শুনে!
অত্যন্ত উচ্চশিক্ষিত কিছু ভদ্রলোক ও এদের তালে তাল মিলিয়েছে!
আজকে দেশে বিদেশে ইসলাম এক আতংকের নাম! এক সময় আল্লাহু আকবার বলে মানুষ পবিত্র কোন কাজ শুরু করতো!
ঝড়তুফান বিপদ ভূমিকম্প দেখলা সমুচ্চারণ করতো, আল্লাহু আকবার!
আর এখন মানুষ জবাই করতে ইহা উচ্চারিত হয়! বোমা বিস্ফোরণের কালে উচ্চারিত হয়! নিরিহ মানুষের উপর গাড়ি চড়িয়ে দেয়ার কালে ইহা উচ্চারিত হয়!

এক ধরনের ইন্টারনেট হুজুর বেড় হয়েছে যারা দুনিয়ার আজগুবি কিছু তত্য এনে বলবে এটা আল্লাহর কুদরত! কিছু বিকৃত ছবি এডিটিং করে বলবে এরা আল্লাহ রাসুল কে অপমান করেছে -- তাই এমন পরিণতি!
মানুষ এইসব দেখে এখন হাসে!
দুনিয়া কোথা থেকে কোথায় চলে গেছে, এরা টানছে উলটো দিকে!
ইউরোপ আমেরিকায় গেলেও এরা সভ্য হতে পারেনা! ওইদিন ফ্রান্সে দেখলাম খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা রাস্তা ব্লক করে একদল মুসলিম নামাজ পড়ছে!
পুলিশ বাধা তারা মানছে না! পুলিশ এইখানে ডান্ডা বেড়ি লাগালে এরা সম অধিকারের ধর্ণা দিয়ে আন্দোলনে নামবে!
অথচ দুবাইয়ে রাস্তার পাশে নামাজ পড়লে ৫ হাজার টাকা জরিমানা সাথে ওয়ার্নিং!

বোরকা আবিষ্কার হয়েছিলো মূলত শরির ঢেকে রাখার জন্য, সাথে ভেইল -- ( মুখ এবং চোখ বন্ধনী) আবিষ্কার হয়েছে আরবের মরু ঝড় থেকে চোখ মুখ রক্ষা করতে!
বোরকাটা টা জরুরি বা শালিন কাপড় পড়া জরুরী! কিন্তু সম্পূর্ণ মুখ ঢাকা টা প্রাক ইসলামে বা আল কুর আনে কোথাও লেখা নাই!
আধুনিক এই যুগে মানুষ কে নেটওয়ার্ক, ফোন, সিকিউরিটি আইডি, স্মার্ট কার্ড, ইন্টারনেট ব্যাংকিং, পাসপোর্ট সহ আরো গুরুত্বপূর্ণ কিছু কাজ সাড়তে মুখের আবরণ ( ভেইল) স্পষ্টত বাধা দেয়!
তাছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে সন্ত্রাসী হামলা ব্যাপক ভাবে বেড়ে যাওয়ায় মুখ ঢেকে সমাজে মানুষের মাঝে চলাফেরা জনমনে আতংক সৃষ্টি করতে পারে! বিশেষ করে পশ্চিমা দেশে!
তাছাড়া মুখ বেধে চলাফেরা করলে একই সমাজে বাস করেও কেমন যেন ভিন্ন সমাজের লাগে!
তাই যুগের স্বার্থেই মুখাবরণ ত্যাগ করা উচিৎ!
অথচ এটা নিয়েও অনেকে পশ্চিমা দেশগুলোতে গিয়ে তাদের সরকারকে হেয় করে মামলা মোকাদ্দমা পর্যন্ত করছে!
অথচ তাদের সংবিধানে স্পষ্টত উল্লেখ আছে, রিসপেক্ট এন্ড ফলো ল এবং অর্ডার!
লন্ডনে ম্যাকডোনাল্ডস এ এমন একটা ঘটনা ঘটে, পুরো মুখ বেধে ঢুকতে যাওয়ায় তরুণী কে সিকিউরিটি বাধা দেয়, ব্যাস সে সেইখানে তা ভিডিও করে ইন্টারনেটে ছাড়ে! লোকসমাগম করে! মানহানি হয়েছে বলে মামলা ঠুকে দেয়!
মানুষ কিন্তু এইসব বাড়াবাড়ি হিসেবেই দেখে!

কথা বললে হয়তো কথা শেষ হবে না, পশ্চিমারা খোলামেলা চলতেই অভ্যস্ত! তারা আমাদের মতো ( মুসলিম ওয়ার্ল্ড) কনজারভেটিভ না!
অত্যন্ত সেনসিটিভ ইস্যু থাকলে মুসলিমদের উচিৎ যার যার দেশে তা পালন করা!
অথবা তাদের সাথে মিশে মুসলিমদের ভাল দিক গুলো তুলে ধরা!
এতে মুসলিমরাই বিজয় লাভ করবে!

বোমা ফাটিয়ে , ধমক দিয়ে, আইন ভঙ্গ করে রাস্তা ব্লক করে নামাজ পড়ে অথবা চোখমুখ বেধে সি বিচে বা রেষ্টুরেন্টে গিয়ে মুসলিম বিধায় অধিকার আদায়ের জন্য চাপ দিলে হিতে বিপরীত হবে!
ইসলাম যুগে যুগে অমুসলিমদের মন জয় করে নিয়েছে নিজেদের উদারতা, অহিংসা, সুশাসন আর বৈষম্যহীন সমাজ ব্যবস্থার মাধ্যমে!
বর্তমান জামানার এই ইন্টারনেট ইসলাম মানুষ কে করছে দ্বিধাগ্রস্ত, ভ্রান্ত, সন্ত্রাসী আর ঘৃণার পাত্র!
এমন ইসলাম হযরত মুহাম্মদ ( সা: ) চাননি! তিনি বিদায় হজ্জের ভাষণে স্পষ্ট বলে গিয়েছেন, " তোমরা ( মুসলিমরা) নিজেদের ধর্ম অন্যের উপর জোর করে চাপিয়ে দিও না! ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করো না!"

কিন্তু এখন আমরা দেখছি হচ্ছে তার উলটা! এরা কোন মুসলমান?

(লিখাটি কয়েকদিন আগে ফেসবুকে দেখেছিলাম। ভালো লাগাতে শেয়ার করলাম)
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ৯:২০
৪টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×