somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মিজানের গল্প

২৪ শে মার্চ, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আজ বলব ছোট্ট এক মিজানের কথা।

এই মিজানের সাথে হুট করে একদিন আমার দেখা হয়। দেখা হওয়াটা অবশ্য ভাগ্যের পরিহাস বলা যায়। রাস্তার পাশে বড় রকমের ভীড় জমে আছে। মানুষের হা-হুতাশ "আহারে, পোলাডা মইরা গেছেগা!" দেখি, ছোট্ট এক ছেলে, বয়স কতই বা হবে! আট থেকে দশ বড়জোড়। নিথর দেহ পড়ে ছিল। প্রথম দর্শনে যে কেউ মরদেহ ভেবে ভুল করবে। পায়ের কাছে ক্ষত থেকে রক্তধারা বের হচ্ছিল। জানতে পারলাম, ঘাতক গাড়ি ছেলেটির পায়ের পাতার উপর চাকা উঠিয়ে দিয়েছে। এত মানুষ আশেপাশে কিন্তু কেউই কাছে গিয়ে দেখছে না, ছেলেটি বেঁচে আছে কিনা!
বেঁচে থাকার কথা বলছি এই কারনে, ছোট দুর্ঘটনা ঘটলেও, রক্তপাত না হলেও চারপাশে ভীড় করা আমাদের সমাজের বড় অংশ ভেবে নেয়, মরে গেছে মানুষটি, যে দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে।

আমাদের মানবতা যে সেই কবেই ভষ্ম হয়ে গিয়েছে তা অনুভব করলাম সেদিন প্রবলভাবে। তখনই ছেলেটি নড়ে উঠল এক সেকেন্ডের জন্য। কেউ একজন বলে উঠল, "বেঁচে আছে এখনও"। তারপরের সময় কিভাবে কেটেছে আমার জানা নেই। হাসপাতাল, ডাক্তার, ছুটোছুটি আরও কত কি! যখন ডাক্তার বলল, ছেলেটি ঠিক হয়ে যাবে, তখন কি এক স্বর্গীয় অনুভূতি আমায় পেয়ে বসে, তার বর্ণনা দেয়া আমার মত তুচ্ছ প্রাণীর কর্ম নয়।

আমি গভীরত্ব নিয়ে মিজানের দিকে তাকাই কোন এক সময়ে। ওর হাড় জিরজিরে শরীরে কাল চামড়ার প্রলেপ। মুখের দিকে তাকালে অপুষ্টির চিহ্নকে ছাপিয়ে এক কোমল মায়া নজর কেড়ে নেয়। সেই মুখের দিকে তাকিয়ে যে কেউ এক মুহূর্ত চুপ থাকবে। হারিয়ে যাবে মায়াময় অনুভূতির জগতে। যখন জ্ঞান ফিরল, তখন সেই মিজানের করুণ চাহনী দেখতে পেয়েছিলাম। তাতে খুশি ছিল, বেঁচে থাকার আনন্দ ছিল, ছিল স্নেহ পাওয়ার আকুতি। মিজানের কাছ থেকে জেনে ওর বাবা মাকে খবর দিয়েছিলাম। তারা এসে তাদের স্নেহের ছেলেকে দেখতে পেয়ে কান্নায় লুটিয়ে পড়ছিল। রিক্সাচালক বাবা বলছিল তার ছেলের নানা গুনের কথা। মায়ের প্রলাপবাক্য আর গালিগালাজ এ হাসপাতালের পরিবেশ হয়ে ক্ষণিকের জন্য হয়ে উঠেছিল ভারী। বলাই বাহুল্য, গালিগুলো ছিল সেই ঘাতক ড্রাইভারের উদ্দেশ্যে।

এরপর অনেকদিন মিজানকে দেখিনি। পুরান ঢাকার ওই এলাকায় আরো অনেকবার গিয়েছি। হন্যে হয়ে তন্ন তন্ন করে মিজানকে খুঁজেছি এই চোখজোড়া দিয়ে। পাইনি। সেই ছোট্ট মিজান দাগ কেটে গেছে মনের গভীরে। আফসোস হয় ভেবে, এভাবে কত মিজান হারিয়ে যায় চোখের আড়ালে। কেউ কেউ খবরের শিরোনাম হয় তো কেউ কেউ চুপিচুপি বিদায় নেয় এই চেনা পরিবেশ থেকে। তাদের মুখে থাকে কত হাহাকার আর নিশ্চুপ ভৎসনা!

আমি কোন একদিন সেই মিজানের দেখা পাওয়ার ইচ্ছে এখনো লুকিয়ে রেখেছি সযতনে। মিজানরা ভাল থাকুক সমাজের বুকে। বেড়ে উঠুক প্রাণভরা উচ্ছ্বাস নিয়ে। এগিয়ে যাক জীবনের পথে, আমাদের অবাক করে দিয়ে...




২৪ তম দিন
মার্চ- ২০১৮


সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

ছবি - নেট
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে মার্চ, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৫০
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×