somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ তুচ্ছ একটি ঘটনা

০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৪:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এইমাত্র হাসান একটা কাস্টমার বিদায় করল। দুসপ্তাহ পর ঈদ। এই ক বছর তার থান কাপড়ের ব্যবসা খুবই ভাল যাচ্ছে। আজকাল অবশ্য ব্যবসা করতে হয়না। কোন রকমে শুধু চলতি মার্কেটে একটা দোকান দিতে পারলেই হল। তার দোকান সে তুলনায় বেশ পুরোন বলা চলে। সে যখন ব্যবসা শুরু করে তখন তার বয়স ৪৮-৫০ হবে। এখন থেকে প্রায় ৮-১০ বছর আগের কথা। অনেক ঘাটের পানি খেয়ে শেষ বয়সে এসে এই ব্যবসায় থিতু হয়েছে হাসান। তার মনে পড়ে তার অতীত কখনই ভাল যায়নি। পড়াশোনা তেমন একটা করেনি সুযোগ থাকা সত্বেও। আর তাই জীবন কেটেছে টুক টাক ব্যবসা করে। তাও টাকার মুখ দেখেনি। এর ওর কাছ থেকে ধার করে কোন রকমে বউ বাচ্চাদের পেলেছে হাসান। কত লোক যে তার কাছে পাওনা হয়ে আছে কে জানে! শেষে বাপ মরাতে নিজের ভাগের দেশের ধানি জমি সব বিক্রী করে এই কাপড়ের দোকান দেয়। এরপর থেকে তার জীবন মোটামুটি পেরিয়ে যাচ্ছে। এখন হাসানের বয়স প্রায় ৬০ হতে চলেছে। হাসানের চেহারাতেও পরিবর্তন এসেছে। এখন তার পাকা দাঁড়ি আর পাঞ্জাবি টুপিতে বেশ একটা মুরুব্বী টাইপের চেহারা হয়েছে। অনেক সম্মানও পায় আশে পাশের মানুষের কাছ থেকে। এর জন্য অবশ্য তার কথা বলার যে ধরণ, তার একটা প্রভাব আছে বৈকি। এত বছর মানুষের সাথে বাটপারী করে কিছুটা হলেও মানুষকে বুঝতে পারে সে। আর তাই কাস্টমারদেরকে তার দোকানের কাপড় খুব কৌশলে বিক্রী করতে তার বেশি বেগ পেতে হয়না। হঠাৎ হাসানের চিন্তার গতি ভেঙ্গে যায় একটা মেয়ের কথায়। “চাচা, ওই কাপড়টা দেখি, হাল্কা নীল রঙের”। হাসান তাকিয়ে দেখে একটা ২২-২৩ বছরের মেয়ে এসেছে দোকানে। সে লক্ষ্য করেছে এখন আর এই বয়সের মেয়েরা তাকে মামা ডাকে না। দাঁড়ি রাখার পর থেকে মেয়েরা তাকে চাচা বলে ডাকে। মেয়েটিকে হাসান এরই মাঝে পা থেকে মাথা পর্যন্ত এক নজর দেখে নিয়েছে। আহা কি কচি মেয়ে। দেখলেই তো……। আগে যখন মেয়েরা মামা বলে ডাকত তখন হাসানও মেয়েদের মামা বলে ডাকত। কিন্তু এখন যেহেতু চাচা বলে ডাকে, হাসান এখন এই বয়সের মেয়েদের বাবা বলে ডাকে। এতে তার খুব সুবিধা হয়- মেয়েগুলা খুব সহজ হয়ে যায় আর কাপড় বেচতে তারও একটু সুবিধা হয়। “কোনটা বাবা, এই নীলটা?”। থান কাপড়টা বের করে হাসান কাপড় মেলে ধরে। মেয়েটি তীক্ষ্ণ চোখে কাপড় দেখতে থাকে আর হাসান দেখতে থাকে মেয়েটিকে। মেয়েটির খুব সম্ভবত কাপড়টা পছন্দ হয়নি। মেয়েটির হাতে একটা শপিং বেগ যেখানে একটা নীল ওড়না দেখা যাচ্ছে। এর মানে মেয়েটি আগেই ওড়না কিনে ফেলেছে পছন্দ হয়ে যাওয়াতে, এখন তাই থান কাপড় কিনে একটা কামিজ বানাবে। “ওইটা কি বাবা, ওড়না? একটু বাইর করেন দেখি!” মেয়েটি কিছু বুঝার আগেই হাসান থান কাপড়টা মেয়েটির এক কাঁধের উপর ধরে আরেক দিক দিয়ে ওড়নাটা ধরে রাখে। “দেখেন বাবা, কি সুন্দর মানাইছে”। হাসান এদিকে খুব কৌশলে মেয়েটির বুকে চাপ দেয়। আহা কি নরম বুক। হাসানের শরীরটা গরম হতে থাকে। মেয়েটি এবার আরো তিক্ষ্ণ দৃষ্টিতে আয়নায় নিজেকে দেখতে থাকে। হ্যাঁ, এবার কাপড়টা পছন্দ হয়েছে, আর তাই বেশি দামাদামি না করেই সে কাপড়টা কিনে ফেলে।


************


মতিন সাহেবের মেজাজটা খারাপ হয়ে আছে। এজন্যই তিনি ঢাকা আসতে চাননা। এখানকার মেয়েছেলেগুলোর পোষাকের যা অবস্থা। মাটির দিকে তাকিয়ে হাঁটতে হয়। তিনি গ্রামের মানুষ। নামায কালাম নিয়ে থাকেন। নেহায়েৎ তার দুই ছেলেই ঢাকা থাকে বলে এই ঈদে তিনি ঢাকা এসেছেন। ছেলেদের বায়না এইবার তারা গ্রামে যাবে না, বরং বাবা-মাকে শহরে এসে ঈদ করতে হবে তাদের সাথে। তাদের মা অবশ্য খুব খুশি ছেলেদের সাথে ঢাকা ঈদ করবে বলে। তিনিও মোটামুটি খুশি। কারণ, তার দুইটা ছেলেই মানুষ হয়েছে। বউ, বাচ্চা নিয়ে ঢাকা শহরে খেয়ে পড়ে চলে যাচ্ছে। কিন্তু ঢাকার মানুষগুলোকে তাঁর এদেশের মানুষ বলে মনে হয়না। আর উঠতি বয়সের ছেলে মেয়েদের আচরনে তো তিনি এতই মর্মাহত যে, তাঁর মাটিতে মিশে যেতে মন চায়। না আছে পোষাকে শালীনতা, না আছে আচরনে মাধুর্য্য। একটু আগে ছোট ছেলে, ছেলের বউ আর নাতনির সাথে তিনি এই মার্কেটে এসেছেন। তিনি আসতে চাননি। কিন্তু ছেলের বায়না তিনি কিভাবে ফেলেন? ছোট ছেলে তাকে একটা পাঞ্জাবি কিনে দিয়েছে। দামটা তাঁর কাছে মনে হয়েছে আকাশ ছোঁয়া। কিন্তু এও ভেবে ভাল লাগছে যে, যেই ছেলেকে তিনি কোলে পিঠে মানুষ করেছেন, সেই ছেলে আজ নিজের টাকায় তাকে ঈদের পাঞ্জাবি কিনে দিয়েছে। কিন্তু হাঁটতে হাঁটতে তিনি ক্লান্ত হয়ে পড়লে তাঁর ছেলে তাঁকে এই বেঞ্চটাতে বসিয়ে আরো কিছু কিনতে বউ বাচ্চাসহ একটা দোকানে ঢুকেছে। তিনি একা একা মার্কেটের বেঞ্চটাতে বসে আছেন। এমন সময় এক মেয়ে তাঁর পাশে এসে বসল। তিনি ভেবে পাননা একটা মেয়েছেলের কি রকম আক্কেল থাকলে একটা বয়স্ক লোকের পাশে এমন অনায়াসে এসে বসতে পারে। তাও আবার মোবাইলে কথা বলতে বলতে। মতিন সাহেব কখনো কল্পনাও করতে পারেন নাই যে ঢাকা শহরের মানুষ মোবাইলে এত্ত কথা বলে। আল্লাহই জানে তারা এত টাকা কোথায় পায়, কি ভাবে পায়। মতিন সাহেব যতটা সম্ভব মাথা নিচু করে আছেন যেন মেয়েটার দিকে চোখ না যায়। কিন্তু তিনি তো আর কানে হাত দিয়ে রাখতে পারেন না। তাই মেয়েটার মোবাইলে বলা কথাগুলো শুনতে না চাইলেও তাঁকে শুনতে হচ্ছে। “হ্যাঁ জান, আমি একাই মার্কেটে এসেছি। তুমি আমাকে কি মনে করেছ? আমি একা একা মার্কেটে আসতে পারিনা?” “জানো, একটা নীল ওড়না এত্ত পছন্দ হয়ে গেল যে না কিনে পারলাম না। তাই এর সাথে রঙ মিলিয়ে একটা হাল্কা নীল রঙের কাপড়ও কিনে ফেললাম”। “হুমম, তুমিই তো বল আমাকে নীল রঙ্গে সেই রকম লাগে”। “আচ্ছা তাই, যাহ ………”।মতিন সাহেব আর মাথা ঠিক রাখতে পারলেন না। তাই তিনি খুবই নরম স্বরে বলে বসলেন, “মা, যদি কিছু মনে না করেন একটা কথা বলি?” মেয়েটা যেন ভূত দেখছে এভাবে তার দিকে তাকাল। এবং খুব বিরক্ত গলায় বলল “ জী, বলেন”। তিনি বললেন, “আপনি এ কথা গুলোতো বাসায় গিয়েই আপনার স্বামীকে বলতে পারবেন, এই বাজারে সবার সামনে এভাবে বলা কি ঠিক?। আমাদের ইসলাম ধর্মে……” ।


************


রিমি মার্কেট থেকে রিক্সা নিল। বাসায় যাবে না পার্থর কাছে যাবে চিন্তা করে ঠিক করল বাসায় যাবে। মাথা কাজ করছেনা। বুড়ার এত বড় সাহস! লুইচ্চা বুড়া, মেয়ে দেখলে মাথা ঠিক থাকে না। আমাকে শিখাবে কথা কিভাবে বলতে হয়? কোথায় বলতে হয়? আসছে ধর্ম শিখাতে। খালি টুপি মাথায় দিলেই হল? অথচ একটু আগে দোকানদারটাও তো বুড়ো ছিল। কিন্তু কি সুন্দর ব্যবহার! বাবা বলে ডেকে অস্থির। এর জন্যই সে ধর্ম দুই চোখে দেখতে পারেনা।
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×