somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পুরুষের বাচ্চা

৩০ শে নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ক্লাস শেষ করে সবাই যখন কেন্টিনের দিকে যাচ্ছে সুমনা তখন রওনা দিয়েছে টিউশনি করাতে। ক্লাস শেষ হতে হতে দুপূর তিনটা। কলা ভবন থেকে কাটাবন রিকশা ভাড়া বেশি না, মাত্র বিশ টাকা। কিন্তু এই বিশ টাকাই সুমনার জন্য অনেক। মাসে যদি বাইশ দিন পড়ায় তাহলে সর্বমোট ৪৪০ টাকা বাঁচানো যায়। তাও প্রতিদিন যে বিশ টাকায় রিকশা যেতে রাজি হবে এমনও নয়। তাই সুমনা হেঁটেই টিউশনিতে যায়। মাঝে মাঝে ভার্সিটির বাস দিয়ে যায় কিন্তু তারজন্যে তাকে ৪৫ মিনিটের মত অপেক্ষা করতে হয়। তার চেয়ে হেঁটে যাওয়াই ভাল।
কলিংবেল টিপে সুমনা অপেক্ষা করে। ভিতর থেকে কাজের মেয়েটা চিৎকার দিয়ে বলে-‘কে?’
‘আমি সুমনা, রাতুলের টিচার’।
দরজা খুলে জুলেখা হাসি মুখে বলে-‘আহেন আপা, রাতুলরে পাঠাইতাছি’।
বসার ঘরে বসতে গিয়ে সুমনার মেজাজটা খারাপ হয়ে গেল। রাতুলের বাবা আজিজ সাহেব বাসাতেই আছেন। কাটাবন মোড়ে আজিজ সাহেবের দোকান। প্রায় সময়ই তিনি দুপূরে খেতে এসে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেন। দোকানে ফিরে যান বিকেল বেলায়। এই সময়টা তিনি বসে বসে পত্রিকা পড়েন। সুমনাকে দেখেই তিনি হাসি দিয়ে বললেন- ‘ভাল আছেন? আপনার ছাত্রীর কি খবর? পড়াশোনা করে ঠিক মতন?’ বলার সময় আজিজ সাহেবের চোখজোড়া সুমনার সমস্ত শরীরে ঘুরে বেড়াল।
‘জ্বী, আপনি ভাল আছেন চাচা’। ‘চাচা’ বলার সময় সুমনা একটু বেশিই জোড় দেয়। একই সাথে বুকের ওড়নাটা আরেকটু ভাল করে ঠিকঠাক করে নিয়ে সবচেয়ে দূরের সোফাটায় গিয়ে বসে।
‘আছি আর কি। আমরা বুড়া মানুষ, আছিই বা আর কয়দিন। তা রাতুলকে একটু ভাল করে পড়ালেখা দেখিয়ে দিও’। এই বলে আজিজ সাহেব পত্রিকা পড়ায় মনযোগ দেন।
রাতুলকে পড়ানোর সময় সুমনা বেশ বুঝতে পারে আজিজ সাহেব এরই মাঝে বেশ কয়েকবার তাকে চোখ দিয়ে গিলে খেয়েছেন। রাগে, ঘৃনায় সুমনার মেজাজটা আরও খারাপ হয়ে যায়।


টিউশন থেকে ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যে। সুমনাদের বাসা ভূতের গলিতে। সুতরাং কাটাবন থেকে আবার হাঁটা। এসময়টা সুমনার হাঁটতে ভালই লাগে। বিকেল বেলা ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা গলির রাস্তায় খেলাধুলা করে। দেখতে ভালই লাগে। সুমনাদের বাসাটা একটু ভিতরের দিকে হওয়ায় অলি গলি একটু বেশি। দূরে কয়েকটি ছেলে ফুটবল খেলছে, সেদিকে তাকিয়ে আনমনে সুমনা হাঁটছিল এমন সময় রোমেল ভাইয়ের সাথে দেখা।
‘আরে সুমনা, কেমন আছো?’
‘রোমেল ভাই, ভাল আছেন? মনিকা কেমন আছে?’
‘তোমার বান্ধবী ভাল আছে। তুমি আমাদের বাসায় আসনা অনেকদিন’। রোমেল মনিকার বড় ভাই। বুয়েট থেকে পাশ করে একটা ডেভেলপার কোম্পানীতে চাকরী করে। ভাল ছেলে হিসেবে পাড়ায় তার খুব সুনাম।
‘আসবো রোমেল ভাই, একদিন সময় করে আসবো’।
বলেই সুমনা আর কিছু না বলে সামনে এগিয়ে যায়। সুমনা ঠিক বুঝতে পারে রোমেলের চোখ জোড়া তার পিছনদিকে সেঁটে আছে। সুমনা ভেবে পায়না মানুষ এতটা মেকি হয় কি করে? মনিকাদের বাসায় সুমনা প্রায় এক বছর আগে শেষ গিয়েছিল। সেদিন মনিকাদের বাসা থেকে ফেরার পথে সিঁড়ি রুমে রোমেলের সাথে দেখা হয়ে যায়। অন্ধকার সিঁড়ি রুমে রোমেলকে দেখে তার মনে হয়েছিল ঠিক একটা হিংস্র হায়না। সুমনা কিছু বুঝে উঠার আগেই রোমেল সুমনাকে জড়িয়ে ধরে দেওয়ালের সাথে চেপে ধরে। ঠিক সেই সময় উপরের তলার একটি দরজা খুলে কেউ একজন নিচে নামতে থাকে। রোমেল ছেড়ে দেওয়া মাত্র সুমনা এক দৌঁড়ে বাসায় চলে আসে। তারপর সুমনা আর কোনদিন মনিকাদের বাসায় যায়নি। অথচ আজকে রোমেলকে দেখে মনে হয় এরকম কোন ঘটনাই ঘটেনি।


রোজ সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে অভি পড়তে আসে সুমনার কাছে। বাড়িওয়ালার নাতি। সেই ক্লাস সিক্স থেকেই সুমনা তাকে পড়ায়। এই বছর ক্লাস এইট-এ। চোখ বন্ধ করে জেএসসি তে এ+ পাবে।
কিন্তু ইদানিং পড়ানোর সময় অভির চোখে একটা চোর চোর ভাব দেখা যায়। সুমনা খুব মনোযোগ দিয়ে জ্যামিতির একটা উপপাদ্যের ছবি আঁকছিল খাতায়। অভিকে বুঝিয়ে দিবে। হঠ্যাৎ তার কেমন যেন অস্বস্তি হয়। অভির দিকে চাইতেই দেখে চোরা চোখে সে সুমনার বুকের দিয়ে তাকিয়ে আছে। সুমনার মনটা খারাপ হয়ে যায়। চোখের সামনে আরেকটা মানুষের বাচ্চা ‘পুরুষের বাচ্চা’য় পরিনত হতে যাচ্ছে।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:১১
২৫টি মন্তব্য ২৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×