somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যারা নোবেল পুরুষ্কার ফিরিয়ে দিয়েছিলেন : জঁ-পল সাত্রে এবং লে ডাক থো

১৮ ই এপ্রিল, ২০১২ রাত ১০:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আপানাকে নোবেল দেয়া হল, কিন্তু পুরুষ্কার টি আপনি ফিরিয়ে দিলেন কারন তা আপনার চিন্তা চেতনার সাথে সংঘর্ষিক।
মনে মনে যা তা বলতে পারেন, কারন নোবেল ফিরিয়ে দেয়ার মত ভাবনা ভাবা টাও অবাস্তব । কিন্তু এই অবাস্তব কাজ ও করে গেছেন অনেকে ।
পৃথিবীর সবচেয়ে সম্মানজনক এবং পাণ্ডিত্যপূর্ণ পুরস্কার হিসেবে নোবেল পুরুষ্কার বিবেচিত হয় । নোবেলবিজয়ী আইনস্টাইন, রবীন্দ্রনাথের পাশে নিজের নাম টা যে কেউ লেখার স্বপ্ন দেখতেই পারে ।

তবে এর বিপরীত যে নেই তা না । কিছু ভিন্ন মানুষের পৃথিবী তে আগমন ঘটে যারা গতানুগতিক পথে হাটেন না । প্রচারবিমুখ এই মানুষেরা নিজেদের কাজের জন্য কোন পুরুষ্কারের আশা করেন ।

নোবেল পুরুষ্কারের ইতিহাসে দুজন মানুষ এ পর্যন্ত স্বেচ্ছায় নোবেল পুরুষ্কার প্রত্যাখ্যান করেছেন ।

জঁ-পল সাত্রে


জঁ-পল সাত্রে


সার্ত্রে কে বিংশ শতাব্দীর অন্যতম বিখ্যাত দার্শনিক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তাঁর দার্শনিক প্রতিফলন, সাহিত্যিক সৃজনশীলতা ,অক্লান্ত সাধনা এবং সক্রিয় রাজনৈতিক অঙ্গীকার অর্জন তাকে বিশ্বব্যাপী খ্যাতি এনে দেয় । অস্তিত্ববাদ দর্শনের জনক হিসেবে ধরা হয় তাকে ।

সামাজিক প্রথাবিরোধী এই মানুষ টি জন্মেছিলেন ফ্রান্সে । শৈশবে বাবা হারান এবং পরবর্তী তে দূরত্ব তৈরী হয় মা’র দ্বিতীয় বিয়ের কারনে । কৈশর থেকেই দর্শনের প্রতি আকৃষ্ট হতে শুরু করেন তিনি । ফলস্বরূপ পরবর্তী তে দর্শনে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন ।
ফরাসী লেখক ও দার্শনিক সিমোন দ্য বোভোয়ার এর সাথে তার সম্পর্ক জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত ছিল । স্পষ্টবাদী হিসেবে পরিচিত সাত্রে সত্য বলতে কখনও পিছু হটতেন না । অংশ নিয়েছিলেন ২য় বিশ্বযুদ্ধে। ধরা পড়েছিলেন নাৎসী দের হাতেও । মুক্ত হয়ে দেশে ফিরে এসে যোগ দেন হিটলার বিরোধী আন্দোলনে ।



অন্যায়ের বিরুদ্ধের আন্দোলনের সাথে যুক্ত থাকতেন, জনতার সাথে রাজপথেও নেমেছেন বহুবার । ১৯৬৮ সালে তিনি গ্রেফতার হন একটি আন্দোলন রত অবস্থায় । এর পর পর স্বয়ং ফরাসী প্রেসিডেন্ট চার্লস ডি গল তাকে ছেড়ে দেবার আদেশ দেন এবং বলেন “ তোমরা ভলতেয়ার কে গ্রেফতার করতে পারো না”


১৯৬৪ সালে তাকে নোবেল পুরুষ্কার দেয়া হয় এবং তিনি তা প্রত্যাখান করেন । ইতিহাসে তিনিই প্রথম ব্যাক্তি যিনি এ কাজ করেন । শুধু নোবেল বলেই না, ১৯৪৫ সালে নেপোলিয়ন বোনাপার্ট কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত ফরাসি সরকারের সর্বোচ্চ সম্মাননা লেজিওঁ দনর ও প্রত্যাখান করেন ।
১৯৬৪ সালের ২২ অক্টোবর নোবেল পুরুষ্কার বিজয়ী দের নাম ঘোষনা করা হয় । যদিও ১৪ অক্টোবর নোবেল কমিটি বরাবর সাত্রে একটি চিঠি লেখেন যেন তার নাম মনোনয়নের তালিকা থেকে বাদ দেয়া হয় । তিনি চিঠি তে নোবেল কমিটি কে সতর্ক করে দেন এই বলে – যদি তাকে পুরুষ্কার দেয়াও হয় তা তিনি গ্রহন করবেন না ।
তার চিঠি টা কেউ পড়ে নি ।
তার এই প্রত্যাখান এর পর পরই এ নিয়ে আলোচনার ঝড় ওঠে। সাত্রে তার অবস্থান স্পষ্ট করতে ২৩ অক্টোবর , অর্থ্যাৎ বিজয়ী দের নাম প্রকাশের একদিন পর ফরাসী একটি পত্রিকায় তার বক্তব্য তুলে ধরেন। তিনি বলেন তিনি কোন পুরুষ্কারে রূপান্তরিত হতে চান না । আরও বলেন ব্যাপার টা দূ:খজনক যে তার এই স্বীদ্ধান্ত অনেকে বিরূপ ভাবে গ্রহন করছেন। সাত্রে তার কাজের জন্য স্বরনীয় হতে চেয়েছিলেন, কোন পুরুষ্কারের জন্য নয় । পূর্ব এবং পশ্চিমা সাংস্কৃতির একটি প্রতিদন্দ্বীতার ভেতরে তিনি কোন পক্ষ নিতে চান নি এই পুরুষ্কার গ্রহন করে । এছাড়া তার ভয় ছিল এই পুরুষ্কার তার লেখনী শক্তি কে স্তিমিত করবে






যদিও কোন সমাজতান্ত্রিক দলের সাথে যুক্ত ছিলেন না, তারপরও তার চিন্তা চেতনায় এর ছাপ দেখা যেত ।


চে গুয়েভরার সাথে সাত্রে এবং সিমন দ্য বোভেয়ার।

চে গুয়েভরার সমর্থক ছিলেন এবং চে কে বলেছিলেন “ শতাব্দীর পূর্নাঙ্গ মানুষ” .

প্রচন্ড ধূমপায়ী এবং এমফেটামিন আসক্ত সাত্রে জীবনের শেষ ভাগে প্রায় অন্ধ হয়ে যান । ১৯৮০ সালে এই মহান দার্শনিক মৃত্যুবরন করেন ।






লে ডাক থো




লে ডাক থো


একজন ভিয়েতনামী বিপ্লবী, রাজনীতিবিদ এবং কূটনীতিক । তরুন কমিউনিস্ট হিসেবে লে ডাক থো’র দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা ছিল লড়াই করার । তিনি কয়েক বার কারাবরন ও করেন । জাপান ২য় বিশ্বযুদ্ধের সময় ভিয়েতনাম দখল করলে তিনি কমুনিস্ট পার্টির নেতা হিসেবে মনোনিত হন এবং দল কে দিক নির্দেশনা প্রদান করেন ।
২য় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের পরাজয়ের পর হো চিন মিন ভিয়েতনামের স্বাধীনতা ঘোষনা করেন । কিন্তু ফরাসী সরকার কতৃক তারা আবার পরাধীন হয় এবং লো ডাক থো অন্যতম সামরিক নেতা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন ।
ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময় লে ডাক থো এবং ইউএস নিরপত্তা উপদেষ্টা হেনরী কিসিঞ্জার প্যারিসে শান্তি আলোচনার নিমিত্তে বহুবার আলোচনায় বসেন । ১৯৭৩ সালের ২৩শে জানুয়ারী উভয়পক্ষ যুদ্ধবিরতি তে সম্মত হয় । কিন্তু রিচার্ড নিক্সনের আদেশক্রমে হ্যানয়ে ভয়ংকর ভাবে বোমাবর্ষন করা হয় যা বিভিন্ন সংবাদপত্রে পাথর যুগের বর্বরতা এবং গনহত্যা হিসেবে বনর্না করা হয় ।
এরকম ক্রান্তিকালীন সময়ে আবার লে ডাক থো এবং হেনরী কিসিঞ্জার আলোচনায় বসেন এবং স্থায়ী যুদ্ধবিরতি তে সম্মত হন ।



শান্তি আলোচনায় এই দুজনের ভূমিকার কথা চিন্তা করে নোবেল কমিটি ১৯৭৩ সালে লে ডাক থো এবং হেনরী কিসিঞ্জার কে শান্তি তে নোবেল পুরুষ্কারে ভূষিত করে । হেনরী কিসিঞ্জার নোবেল গ্রহন করলেও লে ডাক থো এ পুরুষ্কার প্রত্যাখ্যান করেন । কারন হিসেবে তিনি বলেন, ভিয়েতনামে এখনও শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয় নি, কিভাবে আমি নোবেল নেবো ?
১৯৯০ সালে এ মহান বিপ্লবী মৃত্যুবরন করেন


হেনরী কিসিঞ্জার এর শান্তি তে নোবেল পুরুষ্কার অনেক টা হাস্যকর । ১৯৭১ এ পাকিস্তানের প্রতি ঢালাও সমর্থন পক্ষান্তরে পাকিস্তানের গনহত্যা কে সমর্থনই বলা চলে । স্বাধীন বাংলাদেশ কে “বটমলেস বাস্কেট” এবং ইন্দিরা গান্ধী সম্বন্ধে বিরূপ মন্তব্য তাকে বিশেষ(!) ভাবে পরিচিত করেছে।


নোবেল নিয়ে বিতর্ক এর প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই । ডিনামাইট আবিষ্কারকের বিপুল অর্থ কিভাবে শান্তি তে সম্মাননা দিতে পারে তা নিয়ে প্রশ্ন এসেছে । গনিতের মত বিশাল ক্ষেত্রে কেন এখনও নোবেল দেয়া হয় না তাও অনেকের কাছে আজও ধোয়াশে ।
তবুও নিজ নিজ নীতি তে অটল থেকে সাত্রে এবং লে ডো থাক নোবেল নিতে অপারগতা প্রকাশ করে নিজেদের অন্য একটি উচ্চতায় নিয়ে গেছেন ।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই এপ্রিল, ২০১২ রাত ১০:০৪
১৯টি মন্তব্য ১৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×