somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সিডাটিভ হিপ্নোটিক্স এর শাহবাগ আন্দোলন দর্শন

১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ৯:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

৫ই ফেব্রয়ারী। সকালে কফির মগ টা হাতে নিয়া ল্যাপটপের সামনে বসলাম। হালকা খুশি খুশি লাগতেছিলো। কাদের মোল্লা তো নির্ঘাৎ ফাসির দন্ড পাবে। হটাৎ চোখ আটকে গেল বড় ভাইয়ে একটা স্টাটাশে- " বালের রায়।" খোজ খবর নেয়া শুরু করলাম আর মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো। যাবৎজ্জীবন! রাজাকারের রাইফ লং ইমপ্রিজনমেন্ট! হাস্যকর! একটু পরে নেটে আসলে কাদের মোল্লার ভি ষাইন দেয়া ছবি টা। দুপুর ১টা কিংবা দেড়টা। ভাত মুখে ঢুকতেছে না। নেটে খুব খেয়াল করে চোখ রাখতেছি। হাঠাৎ দেখি একটা ইভেন্ট খুলছে "রাকিবুল বাশার রাকিব।" ইভেন্টের উদ্দেশ্য জাদুঘরের সামনে প্রতিবাদ করা হবে এই রায়ের বিরুদ্ধে। ৬-৭ জন করে গোয়িং বাটনে ক্লিক করতেছে। কোন কথা নাই, গোয়িং বাটন চেপে শুরু করলাম তার প্রচারনা। বললাম- " অনেক কি-বোর্ড চাপছেন। এইবার রাজপথে নামেন। অনেক হইছে" আলসারের সমস্যা আমার, আম্মা জোর করে এক লোকমা ভাত গেলায় দিলো। পানি খেয়ে বের হলাম রিকশা খুজতে। বাসার সামনে থেকে রিকশা নিলাম- গন্তব্য শাহবাগ জাদুঘরের গেটে। পকেটে ফোন ভাইব্রেট করা শুরু করলো, ইমরান ভাইয়ে ফোন। মেসেজ দিলাম - " ভাই, আই এম কামিং।"

খিলগাও তে রিকশা যখন, ফোন দিলাম ''মহামান্য কহেন'' রে। বললাম- " মামা, অবস্থা খারাপ। মানা যায় না এইটা। কই আপনে।" আমার মামা তো আমার থিকা আগে বাইর হইয় গেছে- " আমি বাসে মামা"

টিএসসি দিয়া যখন শাহবাগে ঢুকি, দেখি ১০-১২ জনের জটলা। তখন বিকাল ৩ টা। হাটাৎ দূর থেকে দেখি ''বাধন সপ্তকহক।" চোখ লাল, দাত দিয়ে দাত চেপে বললেন " মাথা টা খুব গরম লাগতেছে না রে ? এইটা কি হইলো...." এক আপু কে দেখলাম লিখছেন- " রাজাকারের ফাসি চাই।" হ্যা, এ্টাই প্রজন্ম চত্বরের প্রথম প্লাকার্ড,পোষ্টার। আরও অনেক ভাইয়ের পোষ্টার লিখছেন।

দেখলাম ''মাহফুজুর রহমান''( সাব-এডিটর প্রথম আলো), "ফয়সাল আদনান'' এবং তার বন্ধু দের। ''নাহোল'' কে দেখলাম। আসলেন ''তাপস সরকার।'' ''মহামান্য কহেন'' আসলেন। ''সবাক পাখি'' এবং ''ইমরান এইচ সরকার'' সিএনজি থেকে নামলেন হাতে ব্যানার কাগজ পত্র নিয়ে।
আসলেন আম্মা ("সেলিনা মাওলা"), আমার দোস্তরা আসলো -''মাজহার মিথুন'', "কাশাফাদ্দুজা নোমান'', 'আশিক। ''শশী হিমু" "মাহবুব রশীদ" কে দেখলাম। "অনিমেষ আইচ" এসে ব্যানার ধরে দাড়ালেন।
আসলেন 'মিন সাজু',

ব্যানার নিয়ে দাড়িয়ে আছি। এমন সময় হটাৎ বাধন ভাই আসলেন- " আমার এই সমাবেশে পর স্লোগান দিতে দিতে শাহবাগে দিকে চলে যাবো।" ঠিক তার পরই তিনি বোমা ফাটালেন - " দরকার বোধে আমরা শাহবাগের রাস্তা বন্ধ করে দেব।" রক্তে এড্রেনালিনের পরিমান বেড়ে গেল, উত্তেজনা ভর করলো। বাধন ভাইয়ে আবার জিজ্ঞাসা- " আপনার আমাদের সাথে আছেন ?" মুহূর্ত হাত তুললো সবাই- " হা... আছিইইইইই"

ইমরান ভাই এক ফাকে জিজ্ঞেস করলেন, অনলাইনে ইভেন্টের প্রচার টা ঠিক মত করছি কিনা। তাকে আশ্বস্ত করে বললাম- " একটা আন্দোলন একটা ভাইরাস, এটা রে আটকানো যাবে না। আমি সলতে তে আগুন ধরায় দিয়া আসছি। বাকি রা এটা রে ধারন করে নিয়ে যাবে।"

র‍্যালি তে দাড়ায় থাকা অবস্থায় আসলো ইটিভি, অমুক টিভি। সাক্ষাৎকার নিতে চায়। টিভি ক্যামেরা দেখে আমি মিথুন নোমান দিলাম দৌড়। পরে অবশ্য মনে হইতেছে, ইশ ওইদিন ফেস দেখাইতে পারলে আজকের টক শো গুলা তে আমারা যাইতে পারতাম হা হা হা।



হটাৎ ব্যানার ধরে আমরা ৬০-৭০ জন মানুষ রাওনা দিলাম শাহবাগ মোড়ের দিকে। উদ্দেশ্য শাহবাগ রোড অফ করে দেয়া। রোডে গোল হয়ে বসলাম। কোন দিন দিয়ে যাতে গাড়ি রিকশা ঢুকতে না পারে। ১০০ জন লোক মিলে শাহবাগ অফ করে দিলাম। ওই দিন হরতাল ছিলো। দাঙ্গা পুলিশ এসে গেরাও করার চিন্তা ভাবনা করলেও যখন স্লোগান শুনল- " ফাসি ফাসি ফাসি চাই, কাদের মোল্লার ফাসি চাই" তখন কনফিউজড হয়ে গেল। তার তখন দূরেই দাড়িয়ে।

স্লোগান দিচ্ছিলেন " সেলিনা মাওলা", তিনি ছিলেন সে দিনের লাকি আক্তার। হটাৎ তার সামনে এটা টিভি ক্যামেরা আসলো- " ম্যাডাম আপনার একটা ইন্টারভিউ।" আম্মার উত্তর- " দেখেন ভাই, আমার মাথা গরম আছে। আমি ইন্টারভিউ দিবো না। আম্মা হটাৎ বললেন, ও এত মানুষ পানি খাবে না ? চল পানি কিনি।" পানি কিনে সবারে দিলাম। রিকশায় মাইক আসলো। মাইকে স্লোগান শুরু হলো। বাধন ভাই. রাকিব দুই তিন কার্টন মোমবাতি কিনলো। মোমবাতি কেনার উদ্দেশ্য ছিলো শাহবাগের চতুর্দিকে একটা বাউন্ডারি দেয়া মোমবাতি দিয়ে। কারন তখন ও গাড়ি/বাইকই ঢুকে যাচ্ছিল।


আমরা লোক কম ছিলাম, তাই ফাকা ফাকা হয়ে বসে পুরো রোড ব্লক করে দিলাম। সব বসে পড়লে ঐ দিন শুয়ে পড়তাম রাস্তায়।

আমাদের ভিতর কিছু ছেলে পেলে এগিয়ে এলো। যারা পথচারি দের প্রশ্নের উত্তর দিতে থাকলো- যেমন- এখানে কি ? কি চাওয়া হচ্ছে? করলে কি লাভ এগুলা। ছেলে গুলা বুঝিয়ে বুঝিয়ে তাদের উত্তর দিচ্ছিল।


সন্ধ্যার দিকে একটা এম্বুলেন্স এসে দেখি দাড়ায় আছে। ঢাকা মেডিকেল যাবে বোধহয়। যেতে ভয় পাচ্ছে এই জনস্রোতের ভিতর। জায়গা করে দিলাম মহামান্য ভাই, আমি, সেলিনা মাওলা।'অনিমেষ রহমান' দূর থেকে হাত নাড়ালেন- ' আসুক, আমি ওই সাইড খালি করতেছি।"


ইমরান ভাইয়ে মাথায় তখন অনেক গুরু দায়িত্ব। পুরো ব্যাপার টা সংগঠিত করা। বিভিন্ন জায়গায় যোগাযোগ। হরতাল ছিলো, জামাতের অতর্কিত হামলার আশংকা।

রাত টা কেটে গেল। গিটার তবলা ঢোল নিয়ে জাগরণের গান গাইলো ভাইয়ে রা আমার। মশাল মিছিল হলো। ব্লগার আর অনলাইন একটিভিস্টে চত্বর ভরে গেল।

পরের দিন সকালে এসে আমি চোখ কচলালাম। হাজার হাজার মানুষ!!!!! মানুষ এর ভীড়ে শাহবাগের মূল চত্বরে ঢুকতে পারছি না। আমি ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করছি, এমন সময় এক ছেলে, কপালে ব্লগার কমিনিউটির ব্যাজ আমাকে বলে- " আরে ভাই আপনেরা কেন ভিতরে ঢুকেন ? আপনে কি ব্লগার? আপনেগো ভিতরে ঢুকার পারমিশন নাই। শুধু শুধু ক্যাচাল করেন। বাইরে যান তো।" আমি বললাম- " ওহ, সরি ভাই, আমি আসলে সাধারন জনতা, ভিতরে কি হইতেছে দেখতে ঢুকলাম। সরি, আমি এখনই যাইতেছি চলে।" পিছন থেকে কে জানি কাধ চেপে ধরলো- " এদিক দিয়া আয়।" বড় ভাই নিয়ে গেল মঞ্চে। তাই তো, আমি কি ব্লগার ?!! হা হা হা

অমি রহমান পিয়াল এবং রাসেল রহমানের সাথে মিলিত হতে ঢুকতে চাইতে ছিলাম। অনেক কষ্ট বড় ভাই আর মাইজ্যা ভাইয়ের কাছে গেলাম। দেখা হইলো ইমরান ভাইয়ে সাথে, এত ব্যস্ততায়ও বুকে টাইনা নিলেন। তার চোখে জ্বল জ্বল করতেছিলো।

সুব্রত শুভ, ফোরিং ক্যামেলিয়া, আনিস রায়হান, রুদ্র সাইফুল্লাহ,তন্ময় ফেরদৌস, দূর্বা জাহান দের সাথে কাটিয়ে দিলাম সময় আর স্লোগানে। তখন ভাবতাম, জামাত শিবির এর এবার রক্ষা বোধহয় নাই। নিষিদ্ধ হবেই তাদের রাজনীতি।

প্রথম ৩-৪ দিন গণজোয়ার হয়েছে। মানুষ আর মানুষ। তরুন কিশোর বৃদ্ধ সবাই। এক কথা- রাজাকারের ফাসি চাই।




কেটে গেল ১৪ দিন। প্রতিদিনই শাহবাগে গেছি। এখনও শাহবাগ যাই। কিসের যেন অভাব বোধ করি। কি যেন নাই। মানুষ কেন যেন বসে আর দড়িয়ে স্লোগান দেয় না। তারা হেটে চলে যায় অন্যদিকে। মানুষ কি হতাশ ?
কষ্ট লাগে। মাঝ খান দিয়া আয়োজক হবার প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছিলো। চারদিকে টক শো। তথাকথিক আয়োজক তকমা পাওয়ার লোভাতুর মানুষ দের এখন কিছু বলবো না। সময় আসবে। গুটিয়ে নিলাম তখন নিজেকে। নেটে আসিনি ৪-৫ দিন। তারপর শুরু শিবিরের হিটলিস্ট। তার রাজীবের মৃত্যু নিয়ে নাস্তিক আস্তিক ক্যাচাল। তারপর সকরারি নিরাপত্তা নিয়ে আরেক হইচই। শান্ত ভাইয়ে মৃত্যু। অহিংস কর্মসূচী কিংবা কয়েকটি বেলুন। আমরা কি দূরে সড়ে যাচ্ছি ৫ই ফেব্রুয়ারী তে যে বারুদ বুকে নিয়ে এসেছিলাম, তা আজ কি ভিজে গেছে হতাশার ঘামে ?

স্মৃতিকথন হলো অনেক। যদিও এই স্মৃতিই আমার সম্বল, আমাদের গর্ব। এই স্মৃতিই সাক্ষ্য দেয়, আমার ছিলাম। আমরা ছিলাম জাগরনের মঞ্চে, টক-শো'র স্টুডিও তে না। এটাই আমাদের তৃপ্তি।


তাই আজও স্বপ্ন দেখি, একটা বিপ্লবের স্বপ্ন জাগরনের স্বপ্ন। জামাত শিবিরে রাজনীতি নিষিদ্ধ করার স্বপ্ন। কঠোর কর্মসূচি দেবার আহ্বান জানাই। জাগরনের শুরু থেকে ছিলাম, আছি, থাকবো। যে কোন কঠোর পদক্ষেপ নেন, ওই দিন ৫০ জন এসেছিলাম যা লাখ মানুসে রূপান্তরিত হয়েছে। তেমনি আজ ২-৩ লাখ মানুষে রুপান্তরিত হবেই। শেষ কথা, এই যুদ্ধে সাথে থাকবেন।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৪:২০
২৬টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×