somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফতোয়া দেয়া অবৈধ, হাইকোর্টের রায় কি বৈধ?

২৬ শে জানুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১২:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

যেখানে সংবিধানে সকল ধর্ম পালন করার কথা বলা হয়েছে। সেখানে কি করে বিচারপতিরা ফতোয়াকে অবৈধ বলে রায় দেয় বিচারপতিরা। এটা কি সংবিধানের প্রতি বুড়ো আঙ্গুল দেখানো নয় ???? বিচারপতিরাই যদি সংবিধানের প্রতি বুড়ো আঙ্গুল দেখান তাহলে আমরা সেখানে কি দেখাবো??? প্রশ্ন সকলের কাছে...

ফতোয়ার খুটি নাটি>>>>>>>>>>>>>

ফতোয়া কি

ফতোয়া বা ফাতওয়া (আরবি: فتوى‎; বহুবচন ফাতাওয়া আরবি: فتاوى‎) হলো বিধান ও সমাধান, যা কোনো ঘটনা বা অবস্থার প্রেক্ষিতে ইসলামী শরীয়তের দলীলের আলোকে মুফতি বা ইসলামী আইন-বিশেষজ্ঞ প্রদান করে থাকেন। যখন কোন ব্যক্তি সরাসরি কুরআন ও হাদিস কিংবা ফিকহের আলোকে উদ্ভূত সমস্যার সমাধান বের করতে অপারগ হন তখন তিনি মুফতীর কাছে এই বিষয়ের সমাধান চান। এটিকে ইসলামের পরিভাষায় ইসতিফতা (আরবিকে:اِسْتِفْتَاء) বলে। মুফতি তখন ইসলামী শরিআতের আলোকে সমস্যার সমাধান জানিয়ে দেন। এই সমাধান প্রদান করাকে ইসলামের পরিভাষায় ইফতা (আরবীতে:إِفْتَاء ) বলে এবং প্রদত্ত সমাধান বা বিধানটিকে ফতোয়া বলে।

ফতোয়ার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা


ফতোয়ার উল্লেখিত সংজ্ঞা দ্বারা সহজেই অনুমেয় মুসলমানদের জন্য ফতোয়া কী পরিমাণ আবশ্যকীয় বিষয়। ‎আমরা যেহেতু বিশ্বাস করি আমরা দুনিয়াতে থাকার জন্য কেউ আসিনি। আখেরাতে আমাদের ফিরে যেতে ‎হবে। মহান আল্লাহর সামনে দাঁড়াতে হবে। দুনিয়ার আমাল তথা কাজকর্মের হিসেব দিতে হবে। তাই ‎দুনিয়াতে যথা সম্ভব মহান আল্লাহর বিধানের উপর আমল করতে হবে। আর আমরা জানি! কোন বিষয় করার ‎জন্য সে ব্যাপারে সম্যক অবগতি থাকা আবশ্যক। সুতরাং একজন মুসলমান যদি ইসলামী রীতি মানতে চায়, ‎তবে তারও সে ব্যাপারে না জেনে আমল করা সম্ভব নয়, তাই বাধ্য হয়ে তিনি তা জানতে চাইবেন এ ব্যাপারে ‎একজন প্রাজ্ঞ ব্যক্তির কাছে, এটাইতো স্বাভাবিক। তারপর এ বিষয়ে প্রাজ্ঞ ব্যক্তি যেই সমাধান জানাবেন ‎ইসলামী পরিভাষায় তাই হল “ফতোয়া”।

আমরা কি বলব? কেউ এভাবে ইসলামী সমাধান জানতে চাইলে তাকে সমাধান জানানো যাবেনা?! যদি ‎তা’ই হয় তবে সাধারণ মুসলমানরা ধর্মের উপর আমল করবে কীভাবে? সকল মানুষেরা কী নিজে নিজে ‎ধর্মীয় প্রাজ্ঞ হয়ে নিজের সমাধান নিজেই দেয়া সম্ভব? সাধারণ মুসলমানদের ফতোয়া ছাড়া মুসলমান হিসেবে ‎টিকে থাকা কি সম্ভব?

ফতোয়া দেয়া আমাদের সাংবিধানিক অধিকার

আমরা মুসলমান। মুসলমান হিসেবে ইসলামী বিধান যথা সম্ভব পালন করব এটা আমাদের সাংবিধানিক ‎অধিকার, যা সংবিধানের বিভিন্ন ধারায় স্বীকৃত। এখানে আমরা একটি ধারা উল্লেখ করছি-‎

৪১(১) আইন, জনশৃংখলা ও নৈতিকতা সাপেক্ষে (ক) প্রত্যেক নাগরিকের যে কোন ধর্মাবলম্বন, পালন বা ‎প্রচারের অধিকার রহিয়াছে।

‎(খ) প্রত্যেক ধর্মীয় সম্প্রদায় ও উপ-সম্প্রদায়ের নিজস্ব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান স্থাপন, রক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার অধিকার ‎রহিয়াছে,(গণ প্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান)‎

আপনাদের কাছে আমার প্রশ্ন হল-কোন ধর্ম প্রচার কী সম্ভব তার বিধান বর্ণনা করা ছাড়া? বিধান সম্পর্কে না ‎জেনে তা কী পালন করা যায়?‎

সুতরাং সংবিধান অনুযায়ী সাধারণ মুসলমান একজন প্রাজ্ঞ মুফতীর কাছে ধর্মীয় বিষয়ে সমাধান জানার ‎অধিকার রাখে, আর প্রাজ্ঞ মুফতী তার ধর্মীয় সমাধান জানানের অধিকার রাখে। নতুবা ধর্ম প্রচার সম্ভব নয়।

যেদিন থেকে ইসলাম সেদিন থেকেই ফতোয়া মহান রাব্বুল আলামীন রাসূল সা: কে যেসব দায়িত্ব দিয়েছেন তার মধ্যে একটি হল ফতোয়া তথা ইসলামী ‎সমাধান জানানো। সুতরাং মুসলমান কী করে ফতোয়া শব্দের অপপ্রয়োগ করে বিভ্রান্তি ছড়াতে পারে?‎

ফতোয়ার পরিধি

মুসলমানদের জীবনে ফতোয়ার পরিধি খুবই ব্যাপক। একজন মুসলমানের পারিবারিক, রাষ্ট্রীয়, অর্থনৈতিক ‎সর্বক্ষেত্রে ফতোয়ার প্রয়োজন। নামায,রোযা, হজ্ব, যাকাত, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ বিবাহ-তালাক, মিরাছ সর্বত্র ‎ফতোয়াই হচ্ছে মুসলমানদের জন্য সঠিক সমাধান জানার পথ। সুতরাং ইসলামিক জীবনে ফতোয়া হল ‎আবশ্যিক একটি অনুসঙ্গ। এছাড়া একজন মুসলমান খাঁটি মুসলমান হিসেবে টিকে থাকা অসম্ভব।

ফতোয়া কারা দিবে?‎

ফতোয়া দেবার অধিকার কেবল ইসলামী আইন শাস্ত্র নিয়ে যারা পড়াশোনা করে কোন স্বীকৃত প্রতিষ্ঠান থেকে ‎কৃতীত্ব সহকারে সনদ সংগ্রহ করেছেন। তিনি যখন কুরআন-হাদিস ও ইজমা-কিয়াসের ভিত্তিতে ইসলামী ‎আইন শাস্ত্রের রীতি মেনে ফতোয়া দিবেন তখন তার ফতোয়া গ্রহণযোগ্য হবে।

বিচার ব্যবস্থা ও ফতোয়া

ইসলামী শরীয়তে বিচার ব্যবস্থা ও ফতোয়া দু’টি এক জিনিস নয়। আমাদের অজ্ঞতাবশত: দু’টিকে একসাথে ‎গুলিয়ে ফেলার কারণেই আমাদের সমাজে এই ভুল বুঝাবুঝির মুল কারণ। সমাধান জানানো মুফতির কাজ, ‎কিন্তু তা প্রয়োগ করার কোন অধিকার তার নেই। আর ইসলামী সরকার কর্তৃক নিযুক্ত বিচারক তা প্রয়োগ ‎করবেন। সুতরাং আমাদের দেশে সংঘটিত দোর্রা মারা ও পাথর নিক্ষেপ করে কাউকে হত্যা করা কী ‎ফতোয়ার দোষ? আর সত্যিকারর্থে কী সব ঘটনা সত্যিকার মুফতীর ফতোয়ার কারণে হচ্ছে? না গ্রাম্য ‎মোড়লদের সালিসি সিদ্ধান্তের কারণে? একবার শান্ত মাথায় ভাবি।



গ্রাম্য সালিসি সিদ্ধান্ত ও ফতোয়া শব্দের অপপ্রয়োগ

উপরোক্ত আলোচনা মনযোগ সহকারে পড়লে আমরা নিশ্চয় বুঝে যাব আমাদের দেশে কী পরিমাণ বিভ্রান্তি ‎ছড়ানো হচ্ছে ফতোয়ার মত পবিত্র শব্দ নিয়ে। কী কৌশলে ইসলামের এই পবিত্র শব্দকে কলুষিত করা হচ্ছে ‎গ্রাম্য মোড়লদের সালিসি দরবারী সিদ্ধান্তকে ফতোয়া বলে চালিয়ে দেয়ায়। আর এই অবৈধ মোড়লদের অবৈধ ঘটনাকে কেন্দ্র করে অবৈধ সরকারের অবৈধ বিচারপতিরা এ রায় দেয়ার অধিকার রাখে কি???

হাইকোর্টের রায়

হাইকোর্টের রায়ে বলা হয়েছে, সমাজ নয় ধর্মীয় ব্যাপারে ফতোয়া দেয়া যাবে। তবে সেটা পালন করা যাবে না এটা নিছক একটি মতামত মাত্র। আর যদি কেউ পালন করে তা যদি বাংলাদেশে আইন বিরোধী হয় তার জন্য প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এখানে আমরা যদি রায়ের একটি অংশ লক্ষ্য করি তাতে দেখা যাবে ‘সমাজ নয় ধর্মীয় ব্যাপারে ফতোয়া দেয়া যাবে’ এই অংশটিতে সমাজ এবং ধর্মীয় জীবনকে আলাদা করা হয়েছে। যা ইসলামি রীতিনীতির পরিপস্থি। আমরা জানি ইসলাম একটি পূনাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা সমাজ জীবন ও ধর্মীয় জীবন আলাদা নয়। সমাজ এবং ধর্ম অঙ্গাঅঙ্গি ভাবে জড়িত।

বিচারপতি অসঙ্গতি

মুসলিম প্রধান দেশ হওয়ায় মামলাটি ছিলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই এই গুরুত্বপূর্ণ মামলায় যে বিচারপতিরা ছিলেন তারা হলেন-বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেন (সাবেক প্রধান বিচারপতি), বিচারপতি এসকে সিনহা (বর্তমান প্রধান বিচারপতি), বিচারপতি আবদুল ওয়াহহাব মিঞা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি মো. ইমান আলী।

এখানে বিচারপতি এসকে সিনহা (বর্তমান প্রধান বিচারপতি) যিনি একজন হিন্দু। মুসলমানদের ধর্মীয় ব্যাপারে কি করে একজন হিন্দু বিচারপতি এমন রায় দিতে পারেন। তাও আবার মুসলিম প্রধান দেশে। এটা কোন মতে মেনে নেয়া যায় না।

বিশ্বে এমন নজির আছে কি যেখানে দেশের সংখ্যাগরিস্ট মানুষের ধর্মের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিধান অবৈধ ঘোষনা করা????

যে বিধানটি ইসলামের শীর্ষ স্থান দখল করে রয়েছে।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জানুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৩:৪৬
১৯টি মন্তব্য ১৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও পদ্মশ্রী পুরস্কার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৬



এ বছরের পদ্মশ্রী (ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা) পদকে ভূষিত করা হয়েছে, বাংলাদেশের রবীন্দ্র সংগীত এর কিংবদন্তি শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে।

আমরা গর্বিত বন্যাকে নিয়ে । ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×