somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হিন্দু না ওরা মুসলিম - কাজী নজরুল ইসলামের সেই বিখ্যাত লিখাটি পড়ার জন্য অনুরোধ রইলো

২০ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ২:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



একদিন গুরুদেব রবীন্দ্রনাথের সংগে আলোচনা হচ্ছিল আমার,হিন্দু -মুসলমান সমস্যা নিয়ে। গুরুদেব বললেন:দেখ , যে ন্যাজ বাইরের তাকে কাটা যায়, কিন্তু ভিতরের ন্যাজকে কাটবে কে?
হিন্দু মুসলমানের কথা মনে ওঠলে আমার বারে বারে গুরুদেবের এ কথাটাই মনে হয়।সংগে সংগে এ প্রশ্ন ও উদয় হয় মনে ,যে এ ন্যাজ গজালো কি করে?
এর আদি উদ্ভব কোথায়?
ঐ সংগে এটাও মনে হয়,ন্যাজ যাদেরই গজায়, তা ভিতরেই হোক আর বাইরেই হোক,তারাই হয়ে ওঠে পশু। যে সব ন্যাজওয়ালা পশুর হিংশ্রতা সরল হয়ে বেরিয়ে আসে বাইরে -শৃংগরুপে,তাদের তত ভয়ের কারন নেই,যত ভয় হয় সেই পশুদের দেখে - যাদের হিংশ্রতা ভিতরে,যাদের শিং মাথা ফুটে বেরোয়নি। শিং ওয়ালা গরু মহিষের চেয়ে শৃংগহীন ব্যাঘ্র ভাল্লুক জাতীয় পশুগুলো বেশি হিংশ্র। এ হিসাবে মানুষ ও পড়ে ঐ শৃংগহীন বাঘ ভালুকের দলে।
কিন্তু বাঘ ভালুকের তবু ন্যাজটা বাইরে ,তাই হয়তো রক্ষে।
কেননা, ন্যাজ আর শিং দুই ভিতরে থাকলে কি রকম হিংস্র হয়ে ওঠতে হয় ,তা হিন্দু মুসলমানের ছোরা মারা না দেখলে কেউ বুঝতে পারবেনা। যে প্রশ্ন করেছিলাম,এই যে ভিতরের ন্যাজ এর উদ্ভব কোথায়?আমার মনে হয় টিকিতে ও দাড়িতে।পশু সাজবার মানুষের একি "আদিম"দুরন্ত ইচ্ছা।ন্যাজ গজালো না বলে তারা টিকি দাড়ি জন্মিয়ে যেন সান্ত্বনা পেলো।
সেদিন মানব মনের পশু জগতে না জানি কী উৎসবের সাড়া পড়েছিলো , যে দিন ন্যাজের বদলে তারা দাড়ি টিকির মতো কোনো কিছু একটা আবিস্কার করলো। মানুষের চিরন্তন আত্মিয়তাকে এমনি করে বৈরিতায় পরিনত করা হলো দেওয়ালের পর দেওয়াল খাড়া করে। ধর্মের সত্যকে সওয়া যায়, কিন্তু শাস্ত্র যুগে যুগে অসহনীয় হয়ে ওঠেছে বলেই তার বিরুদ্দ্বে যুগে যুগে মানুষ ও বিদ্রোহ করেছে। হিন্দুত্ব মুসলমানত্ব দুই সওয়া যায়, কিন্তু তাদের টিকিত্ব দাড়িত্ব অসহ্য,কেননা ঐ দুটোই মারামারি বাঁধায়। টিকিত্ব হিন্দুত্ব নয়,ওটা হয়তো পন্ডিত্ব। তেমনি দাড়িও ইসলামত্ব নয়,ওটা মোল্লাত্ব। এই দু "ত্ব"মার্কা চুলের গোছা নিয়েই আজ এতো চুলোচুলি। আজ যে মারামারিটা বেঁধেছে, সেটা ও এই পন্ডিত মোল্লায় মারামারি,হিন্দু মুসলমানে মারামারি নয়। নারায়নের গদা আর আল্লাহর তলোয়ারে কোনো দিনই টুকাটুকি বাধবে না, কারন তার দুজনেই এক ,তাঁর এক হাতের অস্ত্র তাঁরই আরেক হাতের উপর পড়বেনা। তিনি সর্বনাম,সকল নাম গিয়ে মিশেছে ওঁর মধ্যে।এত মারামারির মধ্যে এই টুকুই ভরসার কথা যে,আল্লাহ ওরফে নারায়ন হিন্দুও নন, মুসলমানও নন। তাঁর টিকিও নেই, দাড়ি ও নেই।একেবারে ক্লিন।টিকি দাঁড়ির ওপর আমার এত আক্রোশ এই জন্য যে, এরা সর্বদা স্মরন করিয়ে দেয় যে ,তুই আলাদা, আমি আলাদা। মানুষকে তার চিরন্তন রক্তের সম্পর্ক ভুলিয়ে দেয় এই বাইরের চিহ্নগুলো।
অবতার -পয়গম্বর কেউ বলেননি, আমি হিন্দুর জন্য এসেছি, আমি মুসলমানের জন্য এসেছি , আমি ক্রিশ্চানের জন্য এসেছি। তাঁরা বলেছেন ,আমরা মানুষের জন্য এসেছি-আলোর মতো , সকলের জন্য। কিন্তু কৃষ্নের ভক্তরা বললে, কৃষ্ন হিন্দুর , মুহম্মদের ভক্তরা বললে,মুহম্মদ মুসলমানদের,খ্রীষ্টের শিষ্যরা বললে, খ্রিষ্ট খ্রিশ্চানদের।কৃষ্ন , মুহম্মদ ,খ্রিষ্ট হয়ে ওঠলেন জাতীয় সম্পত্তি। আর এই সমপ্তিত্ব নিয়েই যত বিপত্বি। আলো নিয়ে কখনো ঝগড়া করেনা মানুষ,কিন্তু গরু ছাগল নিয়ে করে।বেশ মনে আছে,ছেলেবেলায় আমরা সূর্য্য নিয়ে ঝগড়া করতা। এ বলতো , আমাদের পাড়ার সূর্য্য বড় , ও বলতো আমাদের পাড়ার সূর্য্য বড়।আমাদের গভীর বিশ্বাস ছিলো,প্রত্যেক পাড়ায় আলাদা আলাদা সূর্য্য ওঠে। স্রষ্টা নিয়েও ঝগড়া চলছে সেই রকম। এ বলছে আমাদের আল্লাহ, ও বলছে আমাদের হরি। স্রষ্টা যেন গরু ছাগল।আর তার বিচারের ভার পড়েছে জাস্টিস স্যার আব্দুর রহিম,পন্ডিত মদন মোহন মালব্য প্রভৃতির উপর। আর বিচারের ফল মেড্যিকাল কলেজে গেলেই দেখতে পাওয়া যায়।
নদীর পাশ দিয়ে চলতে যখন দেখি, একটা লোক ডুবে মরছে, মনের চিরন্তন মানুষটি তখন এ প্রশ্ণ করার অবকাশ দেয়না যে,লোকটা হিন্দু না মুসলমান। একজন মানুষ ডুবছে এটাই হয়ে ওঠে তার কাছে সবচেয়ে বড়।সে ঝাঁপিয়ে পড়ে নদীতে। হিন্দু যদি উদ্দার করে দেখে লোকটা মুসলমান,বা মুসলমান যদি দেখে লোকটা হিন্দু , তার জন্য তো তার আত্মপ্রাসাদ এতুটুকু ক্ষুন্ন হয়না। তার মন বলে , "আমি একজন মানুষকে বাঁচিয়েছি।"
কিন্তু আজ দেখছি কি? ছোরা খেয়ে যখন খায়রু মিয়া পড়লো, আর তাকে যখন তুলতে গেলো হালিম, তখন ভদ্র সম্প্রদায় হিন্দুরাই ছুটে আসলেন,"মশাই করেন কি?মোচলমানকে তুলছেন। ব্যাটা মরুক।তারা অজাতশ্মশ্রু হালিমকে দেখে চিনতে পারেনি যে সে মুসলমান।খায়রু মিয়ার দাঁড়ি ছিলো।
ছোরা খেয়ে যখন ভুজালি শিং পড়ল পথের উপর , তাকে তুলতে গিয়ে তুর্কিছাট দাড়ি শশধর বাবুর ও ঐ অবস্থা।

মানুষ আজ পশুতে পরিনত হয়েছে , তাদের চিরন্তন আত্মীয়তা ভুলেছে।পশুর ন্যাজ গজিয়েছে ওদের মাথার উপর,ওদের সারা মুখে।ওরা মারছে লুংগিকে, মারছে নেংগেটিকে,মারছে টিকিকে, মারছে দাড়িকে। বাইরের চিহ্ণ নিয়ে এই মুর্খদের মারামারির অবসান নেই?মানুষ কি এমনি অন্ধ হবে যে,সুনীতি বাবু হয়ে ওঠবেন হিন্দু সভার সেক্রটারী এবং মুজিবুর রহমান সাহেব হবেন তন্জিম তাবলীগের প্রেসিডেন্ট?

রাস্তায় যেতে যেতে দেখলাম, একটা বলদ যাচ্ছে, তার ন্যাজটা গেছে খসে।ওরই সাথে দেখলাম, আমার অতি বড় উদার বিলেত-ফেরত বন্ধুর মাথায় এক য়্যাব্বড় টিকি গজিয়েছে। মনে হল, পশুর ন্যাজ খসছে , আর মানুষের গজাচ্ছে।

সর্বশেষ এডিট : ২০ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ২:৫৩
৪৪টি মন্তব্য ৪১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×