somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মঙ্গলের মিছিল- ছোটগল্প

১৪ ই এপ্রিল, ২০১৫ সকাল ১০:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



সালাম, আব্দুল আর মফিজ। পথের ছেলে। ওদের ভালো নাগরিক পরিচয় হলো টোকাই। মফিজের গায়ে জামা নেই। উদোম। এটা আজ সালামের গায়ে। কারণ এই একটি জামা মফিজ আর সালামের মাঝে সাপ্তাহিক পালাবদল হয়। আব্দুল একটু ছোট। তাই ওর জামার একচ্ছত্র মালিক ও নিজেই। ব্যাপারটা সে নিজে খুব উপভোগ করে।

তিনজনে একটা ভাতের হোটেলে কাজ করতো।কাজ বলতে রান্নাঘরে খাবার প্লেট, ডেকসি,থালাবাটি ইত্যাদি ধোঁয়া মোছা করা। কিন্তু গতমাসে হোটেলের মালিক হাজ্বি আব্দুল মতিন রান্নাঘরে গিয়ে দেখেন আব্দুল ভাতের হাড়ির ভিতর পুরো হাত ঢুকিয়ে দিয়েছে। কিন্তু সে হাত আর ভাতের লোকমা নিয়ে মুখ পর্যন্ত আনতে পারে নাই।

চুরি করা শুধু গুণাহই না। যে ব্যবসায় চোর আছে সে ব্যবসায় লাল বাত্তি জ্বলেছে। হাজ্বি আব্দুল মতিন সাহেবকে তাই দয়াবানই বলতে হবে- তিনি লাঠি দিয়ে পিটাতে পারতেন। কিন্তু তা না করে কয়েকট চড় থাপ্পড় আর গালমন্দ দিয়েই বিদায় করেছেন। এই বয়সেই চুরি। তারওপর ভাত। অন্নপাপ তো মহাপাপ। বড় হলে এই গুলাতো নিশ্চিত ডাকাত হবে।

এরপর তিনজনে মিলে একটা রিকসার গ্যারেজে কাজ নিলো। আসলে তিনজন বলতে - সালামই কাজ করে। বাকি দুজনের কাজ হলো গ্যারেজের আশেপাশে ঘোরাফিরা করা। যেটা মালিকের একবারেই পছন্দ না। এখন একজনের কামাইয়ে তিনজনের পেট চলে। গ্যারেজ মালিক যেদিন সালামের ওপর চড়াও হয়, সেদিন সালামও আব্দুল আর মফিজের ওপরে চড়াও হয়।গালমন্দ করে। বলে তোদের কামাই তোরা করে খা।


কিছুদিন আগে প্রথম আলো পত্রিকায় বড় করে "জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদ"এর ওপর একটা বিস্তারীত ফিচার ছাপা হয়। এরফলে মানুষের মাঝে সচেতনতা বাড়ে। সেই সচেতনতার সরাসরি শিকার হয় সালাম। বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া একদল কর্মি এসে বলে- শিশুদের কোনো কায়িক শ্রমে খাটানো যাবেনা। এটা সরাসরি শিশু আইনের লঙঘন।

সালাম, আব্দুল আর মফিজ- হা করে ওদের দিকে চেয়ে থাকে। ওরা " শিশু আইনের লঙঘন" এই তিনটা শব্দের একটাও বুঝেনা। শিশু কি? আইন কি? লঙঘন কি?

কাজ করুম, টাকা পামু, কিনে খাবার খামু। এইতো সব। এর বাইরে আর কি? তবে "শিশুপার্ক" নামে জায়গাটা দেখেছে।কিন্তু সেটার ভিতরে কি হয়। কারা শিশু, কারা যায়। তা ঠিকমতো বুঝে ওঠতে পারেনি।

তিনজনে মিলে কিছুদিন একটা স্কুলে আসা যাওয়া করে। আসলে এটাকে স্কুল বলা যাবে কিনা কে জানে? একটা ভাঙ্গা দালানের পরিত্যক্ত অংশ। সেখানেই কয়েকজন এসে ওদের কয়েকদিন পড়ালিখা শিখায়।

প্রথমে ওরা শিখলো "অ" "আ" "ক" "খ"। তারপর বানান করে পড়তে শিখা। এরপর সুন্দর সুন্দর কয়েকটি লাইন। শিশুরা সুন্দর, ফুল সুন্দর, পাখী সুন্দর। জীবন সুন্দর।"মঙ্গলময় হোক সবার জীবন" ইত্যাদী।

কিন্তু পেটে ভাত না পড়লে মগজে কি আর বিদ্যা ঢুকে। কিছুদিন হয়ে গেলো সেই স্যারও আর আসেন না।ওদের দলেরও কেউ না। কয়েকদিন এদিক ওদিক ঘুরতে ঘুরতে ওরা দেয়ালে একটা পোস্টার দেখে। রক্তমাখা দেহ। চেহারাটা চেনা চেনা মনে হয়। আরে ইনি যে ওদেরই স্যার। যিনি ভাঙ্গা দালানে ওদের পড়াতেন। পাশের একজনকে জিগ্গাসা করে বুঝতে পারলো- বিশ্ববিদ্যালয়ে গুলাগুলির মাঝে পড়ে মেধাবী ছাত্র আবুবকর মারা গেছে। তারপর ওদের স্কুলেও কেউ আর পড়াতে আসেনি। কেউ খবরও নেয়নি। ওরাও আগের মতো পথে নেমে এসেছে।

গত কয়েকদিন থেকে কোনো কাজই জুটাতে পারেনি। কোনো খাবারই পায়নি। গত দুদিন আগে জুমাবারে মাজারের পাশে ভিক্ষার থালা নিয়ে বসার চেষ্টা করেছিলো। কিন্তু কয়েকজন এসে বসতে না বসতেই ধমক দিয়ে তাড়িয়ে দেয়।

অনেক কষ্টে আজ এক থালা খাবার যোগাড় হয়েছে। আজ নাকি বছরের প্রথম দিন। খুব সুন্দর একটা মিছিল বের হয়েছে। মিছিলের সামনে বিশাল একটা ব্যানার। ব্যানারের লিখাটা সালাম পড়ে আর স্যারের রক্তমাখা শার্ট ওর চোখে ভাসে। বানান করে করে ও পড়ে-
"শুভ নববর্ষ মঙ্গলময় হোক সবার জীবন"।

লিখাটা পড়ে তিনজনেই ফিক করে হেসে ফেলে। বাহঃ কী সুন্দর ভাবে কথাগুলো মিলে গেছে। গত কয়েকদিন ধরে কোনো খাবারই পেটে পড়েনি। আজ কি সৌভাগ্য ওদের ।পুরো এক প্লেট খাবার জুটে গেলো। কী মজার সাদা ভাত। আসলেইতো আজ একটা মঙ্গলময় দিন।

মফিজ বলে, সালাম তুই জামাটা জলদি জলদি খোল।মনে আছে আজ কি বার? মঙ্গলবার না?সাতদিনতো হয়ে গেলো। আর ল, তাড়াতাড়ি খা। মিছিলে যোগ দিতে হবে। "মঙ্গলের মিছিল" যে শুরু হয়ে গেলো।
১৪টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হালহকিকত

লিখেছেন স্প্যানকড, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:১২

ছবি নেট ।

মগজে বাস করে অস্পষ্ট কিছু শব্দ
কুয়াসায় ঢাকা ভোর
মাফলারে চায়ের সদ্য লেগে থাকা লালচে দাগ
দু:খ একদম কাছের
অনেকটা রক্তের সম্পর্কের আত্মীয় ।

প্রেম... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×