তারানা হালিমঃদেশের মানুষের জীবনরক্ষার চেষ্টা করার জন্য আমি ক্ষমাপ্রার্থী
মন্তব্যঃ একজন মন্ত্রী হয়েও আপনার এ ক্ষমাপ্রার্থণা প্রমাণ করে জাতি হিসাবে আমরা আসলেই ভদ্র এবং বিনয়ী।
তাহাঃ প্রতিমন্ত্রীর জায়গা থেকে লিখছি না”, লিখছি এ দেশের একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে- যে দেশকে ও দেশের মানুষকে ভালোবাসে।-
মন্তব্যঃ আপনার এই ভালোবাসার চিঠিখানা-ফেসবুকের মাধ্যমেই পেয়েছি- মাননীয় মন্ত্রী। দেখুন-এই ফেসবুক আপনাকে আমাদের কত কাছে নিয়ে এসেছে। না হলে-আমি ছলিমউদ্দীন এই ইহজনমেও একজন মন্ত্রীর ভালোবাসার এতো নিকটে যেতে পারতাম না।
তাহাঃসামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করেই কিন্তু- চাঁদে কারো মুখ দেখার গুজবে প্রাণ হারিয়েছে বহু মানুষ।
মন্তব্যঃ কথাটি আদৌ সত্য না। এই গুজব ছড়িয়েছে মানুষ মুঠোফোনে আর মাইকিংএ। সংযুক্তি- বাংলাদেশের একটা দ্বীপ মহেশখালীকে মাননীয় মন্ত্রী পলক সিঙ্গাপুরের মতো গড়ে তোলার পরিকল্পনা করেছেন। এই খবর উনি উনার ছবি সহ প্রচার করেছেন। ফেসবুকের মাধ্যমেই উনার ছবিসহ খবরটি পড়েছি। লাইক দিয়েছি, শেয়ার করেছি। মাইকের আওয়াজ এতোদূর পৌঁছাবেনা।কিন্তু ফেসবুক সেই খবর মুহুর্তেই চাট্টাহোচি নদীর পাড় পর্যন্ত নিয়ে এসেছে।
তাহাঃ বহু দেশ আজকের দিন পর্যন্ত সে দেশগুলোর মানুষের নিরাপত্তার জন্য “ইন্টারনেট” পর্যন্তও সাময়িক বন্ধ রেখেছে।
মন্তব্যঃ উঃ কোরিয়া আর সামরিক জান্তা বরমা- বন্ধ রেখেছে। সূচি'র দল নির্বাচনে জিতে ওয়াদা করেছেন- জনগণের বাকস্বাধীনতাকে সম্পূর্ণভাবে মুক্ত করে দিবেন। বাকবন্দী মুখ আর কারাগার বন্দী দেহের মাঝে কোনো ফারাক নাই।নর্থ আমেরিকা- ইউরোপের সবকটি দেশে এক সেকেন্ডের জন্যও বন্ধ হয়নি। হবেও না। এখন, আমরা কি নর্থ কোরিয়া আর সামরিকজান্তার বর্মা হবো-নাকি মুক্ত বাকস্বাধীনতার দেশগুলোর কাতারে সামিল হবো - মাননীয় মন্ত্রী????
তাহাঃসামাজিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো দূর্ঘটনা ঘটার আগে “সাময়িক বন্ধ” রাখলে এই মানুষগুলোর জীবন (FRANCE এর) বাঁচানো যেত ।
মন্তব্যঃ না এটা উনারা বলেননি। গোয়েন্দারা সঠিক খবর জানাতে ব্যর্থ হয়েছে এবং সেটাকেই দায়ী করা হয়েছে । ফেসবুককে নয়।সংযুক্তি-- আলকায়েদা, আইসিসির টুইটার/ফেবু একাউন্ট সার্বক্ষণিক চালু আছে। সদিচ্ছা থাকলে উনারা এই একাউন্ট গুলোই বন্ধ করে দিতে পারতেন। কিন্তু তা করেন নি। কেন করছেন না -সেটা অন্য আলোচনা।
বাংলাদেশে একসাথে ৬৪ জেলায় বোমার সময় ফেসবুক ব্যবহৃত হয়নি, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা সহ আরো নানা ঘটনাগুলোর সাথে ফেসবুকের সম্পৃক্ততা নেই। এইফেসবুক বন্ধকালীন যে শিয়ামসজিদে হামলা হলো- কই বন্ধ ফেসবুক খুন বন্ধ করতে পারেনি।
ফেসবুক বন্ধ করলেই যদি জনগণের নিরাপত্তা পাওয়া যায়- তবে কসম করে বলছি- জীবনেও ফেসবুক ব্যবহার করবোনা। আমাদের এককোটি স্ট্যটাস , লাইক, ফলোয়ারের চেয়ে একজন মানুষের জীবনের নিরাপত্তা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। বন্ধফেসবুক মানুষের জীবনের নিরপত্তা দিতে পারেনা। নিরাপত্তা দিতে পারে, আইনের সঠিক ব্যবহার, জনগণের মন থেকে অস্থিরতা দূর, আইন শৃঙ্খলার উন্নতি- ইত্যাদি।
তাহাঃ পুলিৎজার পুরস্কার পাওয়া এক চিত্রগ্রাহক একটি ছবি তুললেন ক্ষুধার্ত এক শিশু এবং তার মুখোমুখি একটি শকুনের-পরে শিশুটি মারা গেলো- ফটোগ্রাফার আত্মহত্যা করলেন।
মন্তব্যঃ এটা ভুল খবর। শিশুটি মারা যায়নি। ফটোগ্রাফার আত্মহত্যা করেননি। আর এই উদাহরণের সাথে খুন খারাবি- জননিরাপত্তার সম্পর্কটা কোথায়???
তাহাঃ এ জন্যই হয়ত মানুষের জায়গায় আসছে রোবট। রোবট হবার পথ থেকে খুব দূরে কি আমরা?
মন্তব্যঃ মানুষকে নিয়ন্ত্রিত করাটাই হলোতো রোবট তৈরি করা। মানুষ যেমন যন্ত্র নিয়ন্ত্রণ করে। বাক স্বাধীনতা মুক্ত করে দেয়া-রোবট তৈরী করা নয়।
তাহাঃ সিম/রিম নিবন্ধন, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের কার্যক্রম জোরদার করা, ব্যান্ডউইথের দাম কমানো, টেলিটককে সক্ষম করা, বায়োমেট্রিক্স চালু করা, ডাক বিভাগের জন্য E-Cash transfer সম্প্রসারণ ও ১১৮টি যানবাহন ক্রয় প্রক্রিয়া, এমএনপি চালুর জন্য প্রক্রিয়া শুরুসহ দায়িত্ব পাবার ৩ দিনের মাথায় “প্রযুক্তি দিয়ে প্রযুক্তিকে মোকাবিলা” করার জন্যও কাজ শুরু করেছি।
মন্তব্যঃ হৃদয়ের গভীর থেকে একাজগুলোর জন্য ধন্যবাদ মাননীয় মন্ত্রী। ইন্টারনেট আগে শম্বুক গতির ছিলো, এখন কচ্ছপ গতিতে চলছে। আশাকরি- সামনে চন্চলা হরিণীর গতিতে দেখতে পাবো।
তাহাঃ সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক আমাদের সকলের দায়িত্ব জননিরাপত্তা নিশ্চিত করা। এই কাজটি সততা ও নিষ্ঠার সাথে করার জন্য যারা আমাকে প্রবল তিরস্কার করেছেন তা আমি নতমস্তকে গ্রহণ করলাম -
মন্তব্যঃ আপনার এই বিনয় আমাদের আলোর পথ দেখায়। এতো বিনয় এখনো আছে- বাহ! ভাবতেই মনটা ভরে যায়। আশাকরছি- অন্য যারা শুধু মুখ দিয়ে চ্যাটাং চ্যাটাং কথা বলেন- আপনার এই বিনয় থেকে উনারা শিক্ষা নিবেন।
পরিশেষে, ধন্যবাদ আপনাকে অন্ততঃ একটা ব্যাখ্যা দিয়ে নিজের দায়বদ্ধতা জনসম্মুখে পরিষ্কার করার জন্য। আর ফেসবুককেও ধন্যবাদ আপনার চিঠিটি আমাদের মনিটর পর্যন্ত পৌঁছে দেয়ার জন্য।
ও আরেকটা জরুরি কথা বলতে ভুলে গেছি- বাংলাদেশের বেশকিছু জনপ্রিয় পত্রিকা, বিখ্যাত গুণিজন- ছুটিয়ে কিন্তু পোস্ট দিয়েছেন। উনারা এটা কীভাবে করলেন? আইনকি মানলেন, নাকি লঙ্ঘন করলেন নাকি উনারা অসাধারণ হিসাবে আলাদা সুবিধা পেলেন।
মাননীয় মন্ত্রী বিদেশী বন্ধুরা যখন বলে- তোমাদের দেশে হচ্ছেটা কি? ফেসবুক, ভাইবার সহ অন্যান্য সামাজিক মাধ্যমগুলো বন্ধ কেন? তখন নিজেকে কেমন যেন- কোরিয়া, বর্মা,আফগানের রুক্ষ,কঠোর, বর্রব, একগুয়ে জিম্মি , কারাবন্দী মানুষগুলোর মতো মনে হয়। পাকিস্তানী আর ভারতীয়রা হাসি তামাশা করে। তখন বুক উঁচিয়ে বলি-
বাংলাদেশ পুরো পৃথিবীতে এমন একটি দেশ- যে দেশ অন্য কোনো দেশের সীমান্ত চুরি করেনি, অন্য কোনো দেশকে দমন করার চেষ্টা করেনি,অন্য কোনো দেশের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করেনি। তাই, আশাকরছি- একজন জনপ্রতিনিধি হয়ে আপনারাও মুক্তচিন্তাকে বন্ধ করে রাখবেন না। স্বাধীন দেশের মানুষ স্বাধীন থাকুক। মুক্ত চিন্তার বিশ্ব জয় হোক।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে নভেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:২০