নিউইয়র্কের সবচেয়ে ব্যস্ততম শহর হলো ম্যানহাটান। কিন্তু রাজধানী হলো আলবেনি। দেশে থাকতে এই শহরের নামও শুনিনি।ঠিক তেমনি নাম শুনিনি ফ্লোরিডার রাজধানী তালাহাসি, ক্যালিফোর্নিয়ার রাজধানী সাক্রামেন্টো ইত্যাদি। অথচ লসএন্জেলস, মায়ামি, অরল্যান্ডো, টেম্পা, সান ফ্রান্সিসকো এগুলোই সবচেয়ে নামকরা প্রসিদ্ধ শহর।
এছাড়া, আরেকটি জিনিস খেয়াল করলাম- ব্যাংক অফ আমেরিকার হেডকোয়ার্টার হলো নর্থ ক্যারোলিনার একটি ছোট শহর শার্লটে,পৃথিবী বিখ্যাত নামকরা প্রতিষ্ঠান ওয়ালমার্টের হেডঅফিস আরকানসাসের ছোট শহর বেনটনভিলে,আরেকটি বিখ্যাত ব্যাংক ওয়েলসফার্গোর মূলকেন্দ্র সানফ্রান্সিকোতে, হোমডিপো'র মূল অফিস আটলান্টায়। ওয়ার্ড বিখ্যাত সিএনএনের মূলকেন্দ্র আটলান্টায়। বলতে গেলে পুরো আমেরিকার বিভিন্ন জায়গায় এরা বিখ্যাত কোম্পানীগুলোকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রেখেছে। শুধু ওয়াশিংটনে আর নিউইয়র্কে না। এরা অনুধাবন করতে পেরেছে- সবশহরগুলো মিলেই আমেরিকা আর সবশহরের উন্নয়ন মানে আমেরিকার উন্নয়ন।
একভাই বললেন- ওদের জায়গা বেশি। সেজন্য পেরেছে। আমাদেরতো জায়গা কম।
আমি বললাম-জায়গা কম বলেইতো সবকিছু আরো গুছিয়ে সুন্দরভাবে করতে হবে। যাতে এক জায়গার ওপর বেশী চাপ না পড়ে।
আটলান্টা শহরের ভিতর একটা বড় স্টেডিয়াম আছে। সেটা সরিয়ে নেয়ার কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। উনারা বুঝেছেন হাজারটা গাড়ী আর হাজারটা রেল নির্মাণ করে দিলেও- যানজট কমবেনা। কারণ- মানুষইতো যানজট তৈরী করে। গাড়ী হোক আর রেল হোক,প্লেন হোক আর হেলিকপ্টার হোক। মানুষগুলোকেতো মাটিতে নামতে হবে। আকাশ ওড়ে ওড়েতো আর কেউ চলবেনা। আর যখনই নামবে তখনই শুরু হবো মানুষজট। এই মানুষের মিছিলই যান চলাচল জট লাগিয়ে বসবে। যানে করবে মানুষ জট আর মানুষে তৈরী করবে যানজট।
ঢাকা শহরে প্রতিদিন কমলাপুর, সায়েদাবাদ, গাবতলী,আরিচা, সদরঘাট ইত্যাদি হয়ে পিঁপড়া মতো মানুষ ঢুকছে। কারণ- প্রতিটি কোম্পানীর-প্রতিটি সদর ভবন ঢাকা শহরে। শিক্ষাভবন, দীক্ষাভবন(সংসদ) রেলভবন, তেলভবন(সচিবালয়),সড়ক ভবন, নরক ভবন(অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের পেনশনের টাকা তোলার ভবন)সহ সবরকমের ব্যাংকের মূলভবন, ইন্সুরেন্সভবন ইতাদী সহ এমন কোনো কার্যক্রম নাই যেগুলোর মূলভবনগুলো ঢাকা শহরে নাই। এর ওপর রয়েছে ঢাকার শহরের একেবারে নাভীরওপর অবস্থিত ক্যান্টনমেন্ট।
ফ্লাইওভার আর মেট্রেোরেল, পাতাল রেল আর আকাশরেলে মানুষকেতো আর পাতালেও নিয়ে যাবেনা, আকাশেও ওড়াবেনা।মানুষকেতো মাটিতেই নামতে হবে। এই মানুষগুলো ধারণ করার ক্ষমতা ঢাকার জমিনের আছে নাকি। ঢাকা শহরের মানুষদের এমনকি কট্টর নাস্তিকদেরও প্রতিদিন দুই ওয়াক্ত খাসদিলে নামাজ পড়া দরকার। কারণ-ঢাকা শহর মাটির নীচে এতোদিন দেবে যাচ্ছেনা কেনো??
তবে,যদি একবার ভূমিকম্পে খায়। এই ঢাকা শহরকে উদ্ধার করতে ৫০ বছর, জ্বি একেবারে হিসাবে নিকাশে ৫০ বছর সময় লাগবে।
শুধু একটা রানাপ্লাজা উদ্ধারে কত সময় লাগছিলো-মনে আছে??এরচেয়ে অবাক করা কথা হলো- প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রীকে উদ্ধারের জন্যও কোনো ব্যবস্থা থাকবেনা। কারণ-বাইরে থেকে যে উদ্ধার করতে কোনো হেলিকপ্টার আসবে- ওদের ল্যান্ডিংএর জায়গাটাও ভূমিকম্পের পেটের ভিতর চলে যাবে। পুরনো ঢাকার অবস্থাতো আরো বেহাল। দুপাশ থেকে জায়গা খেতে খেতে রাস্তা, গলি এমন চিকন হয়েছে গাড়ি চলাতো দূরের কথা ভালো করে হাঁটতে গেলে মোটা দুজন মানুষের পেটে পেটে ধাক্কা লাগে।
যদি সত্যিকারভাবে ঢাকা শহরকে বাঁচাতে চান- তবে কারিনা না কারিনা,জরিনা, সখিনা,ক্যাটরিনা সহ ওদের চৌদ্দগুষ্টিকে নিয়ে আসলেও কিছু হবেনা। জনসচেতনতা জনগনের ঠিকই আছে।কিন্তু ষোলকোটি মানুষের চেতনা একজায়গা করে ধাক্কা দিলেতো কোনো ভবনের একটা ইটও নড়াতে পারবেনা। যদি কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা না নেয়।
বেকার মানুষগুলো যাবে কই। পঙ্গপালের মতো ঢাকা শহরের দিকে ছুটছে। এই চাকরীর বাজার পুরো দেশেই ছড়িয়ে দিন। বিভিন্ন কোম্পানী,সরকারী প্রতিষ্ঠানের মূলভবন অন্যান্য শহরে নিয়ে যান। ঢাকাকে যেমন উত্তর-দক্ষিণে ভাগ করেছেন-ঠিক তেমনি সচিবালয়কেও বিভিন্ণ মন্ত্রলায়ভাগে ভাগ করে যাবতীয় কার্যক্রমকে কমপক্ষে দেশের আরো ২০ টি শহরে ছড়িয়ে দিন । আর দলে দলে সচিবলায়ে মানুষের মিছিল নিয়ে ঢুকারও দরকার কি?
ডিজিটাল রাষ্ট্রের মন্ত্রণালয়ের কাজতো এখন ফোন, ফ্যাক্স, ইমেইল, স্কাইপে করার কথা।
ঢাকা শহরের ওপর কোনোদিন মাছকে সাঁতার কাটতে কিংবা দৌড়াতে দেখেছেন- পানি জমে গেলে না হয় ভিন্ন কথা। তবে মৎস্যভবন ঢাকায় কেন?
এয়ারপোর্টের দুহাত ওপরে ওঠলেই দেখা যায়- বিল্ডিং আর বিল্ডিং -গাছপালা সব বিল্ডিং এ হজম করে ফেলেছে- তবে পর্যটনভবন ঢাকায় কেন?
ঢাকার শহরে কয়টা বিল্ডিংএর ছাদের ওপরে ধান ক্ষেত আছে -তবে কৃষি উন্নয়নের অফিস মতিঝিলে কেন?
ঢাকা শহরে কোন বিল্ডিংএর ওপর থেকে কি কোনো বিল্ডিংএর ওপর সেইচতা দিয়ে পানি সেঁচ হয়-তবে সেচভবন মানিক মিয়া এভিনিউতে কেন?
এইরকম শত শত উদ্ভুট চিন্তাভাবনার ভবনে ঢাকা শহরের আজ নাভিশ্বাস ওঠছে।
এছাড়া রয়েছে অরুন সংঘ, বরুন সংঘ, ফকিরাপুল পানির ট্যাংকি সংঘ নানা রকমের বাহারি সংঘের হেড অফিস।
যট ঢাকা শহরে লাগবে না তো কি জুরিখে লাগবে???
শুধু বাইরে এসে ভ্রমণবিলাস আর সরকারের টাকা শ্রাদ্ধ করে গেলেতো হবেনা। লেখার শুরুতে বিকেণ্দ্রিকরণ কীভাবে করতে হয়-তার একটা উদাহরণ দেয়া আছে। অন্যশহর গুলোকে দিয়ে ঢাকা শহরকে বাঁচান। যে হারে মানুষ বাড়ছে আর মানুষের যে স্রোত ঢাকামুখী হচ্ছে-তাতে সামনে আরো ভয়াবহ সময় আসছে। ভয় হয়-ভূমিকম্পে ঢাকা শহরকে দাবাতে হবেনা, ঢাকা শহর মানুষের আর ভবনের চাপে এমনিই দেবে যাবে। মানুষের নিঃশ্বাসে নীচে ঢাকা শহরের প্রাণ ঢাকা পড়ছে। মনে রাখতে হবে-ঢাকাই বাংলাদেশ না। বরং বাংলাদেশের ঢাকা।