somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাবা তোমায় আজো খুঁজি কদম বনে

১৭ ই জুন, ২০১৮ রাত ১১:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কখনো সুপারি তলার- রাস্তার কিনারের গাছটায়, সমস্থ দিনের ক্লান্তি শেষে বসে থাকতেন, বিকেলের হাওয়া গায়ে মেখে। কখনো ক্ষেতের আল ধরে কদম বনে হেঁটে হেঁটে- যে বাতাস কলমি লতা নাচিয়ে, ধান কাটা ক্ষেতে জমে থাকা বর্ষার জলে ঢেউ তুলে আছড়ে পরড়তো কদম বনে, সেই হাওয়া গায়ে মেখে অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকতেন দক্ষিণের দিকে তাকিয়ে কিংবা দূর আকাশে দৃষ্টি রেখে তাসবিহ জপতেন অনবরত।
কখনো খেলতে বেরুলে সন্ধার আগেই ডেকে নিয়ে বাড়ি যেয়ে পড়তে বসানো, কখনো গল্প বলা, মুক্তিযুদ্ধের, পূর্বপুরুষের কিংবা নিজের জৌবনের দুরন্তপনার,সব শেষে জীবন সংগ্রামের।
সেই স্কুল জীবন শেষ হয়েছে অনেক আগেই, সাথে অপেক্ষাও, প্রতিদিন বিকেলে বাড়িও ফিরি না।
বাড়ি ফিরি মাস, ছ'মাস বছর অন্তর অন্তর। তবুও কদম বনের মাথায় দাঁড়িয়ে কেউ অপেক্ষায় থাকে না।

আজ কদম বনের ঝিঁ ঝিঁর অনবরত করুন ডাক, দক্ষিণের হাওয়া মেহগণির পাতা নাচিয়ে, কদম ফুলের গন্ধ মাকিয়ে আছড়ে পড়ছে শনের অন্ধকারে। এই খানে সমস্থ জীবনের ক্লান্তি ছাপিয়ে পৃথীবির নিস্তব্ধতা চোখে নিয়ে ঘুমিয়ে আছেন, শান্তির ঘুম, অনন্তকালেরর ঘুম।
যেদিন নিজ কাঁধে পালকি বয়ে নিজ হাতে এই মাটির ঘরে রেখে আসছিলাম। সেদিন-খুব করে নিভে যাওয়া হাওয়া পুবের জঙ্গল কাঁপিয়ে আমায় একা উদাস করে রেখে গিয়েছিলো।
আজো বহু বছর পরও আমি একা উদাস। ছোট বেলায় প্রচন্ড ঝড়ে ভয় পেতাম, যখন ঝড়ের আভাস দেখতাম বাবা ঘরে না থাকলে ব্যস্ত হয়ে পড়তাম কখন বাবা আসবে, বাবা থাকলেই যেনো কঠিন ঝড়েও কোনো ভয় নেই।
বাবা গল্প কবিতা লেখাটা পছন্দ করতো না, বলতো কবি সাহিত্যিকরা পাগল হয়ে থাকে, নজরুল শেষ বয়সে স্মৃতি হারা ছিলেন বলে।
একবার সারা উপজেলায় রচনা প্রতিযোগিতা দিয়ে প্রথম হয়েছিলাম, পুরস্কারের খামটা পকেটে নিয়ে পাড়ার সবাইকে দেখিয়েছিলেন পরম আনন্দে। এর পরে যত প্রতিযোগিতায় অংশ নিতাম বাবার উৎসাহো ছিলো আমার থেকে বেশি।বাবা তোমার ছেলেরা এতো এতো পুরস্কার পেয়েছে যে, সেগুলি দেখে তুমি কতটা আপ্লুত হতে? তুমি নাই, এই সব অর্জন যেনো কেমন ম্লান মনে হয়।
একদিন সকালে বাবা স্কুলে রওনা হচ্ছেন তখন বল্লাম একটা বাংলা ও ইংরেজী অভিধান দরকার। বাবা বল্লেন এখন তো মাসের শেষ, বেতন পেয়ে কিনে নিয়ে আসবো। আমি স্কুলে চলে গেছি, বিকেলে স্কুল থেকে ফিরে বাবাকে কদম তলা কিংবা বাড়ির সামনে সুপারি তলাতেও না দেখে ঘরেও না পেয়ে অপেক্ষায় আছি। কতক্ষন পরে দেখি বাবা ডাকছেন, হাতে দুটা অভিধান।

আমাদের তখন পুরাতন বাড়ি ছেড়ে নতুন বাড়ি বানিয়েছে রাস্তার পাশে। গাছ গাছালি নেই বাড়িতে। পাশের বাড়ির চাচার গাছের নিচ থেকে একটা আম কুড়িয়েছিলাম হাত থেকে আমটা রেখে দিয়েছিলো। এই কথা শুনে বাবা এতো আম কিনেছিলেন সাত দিনেও আম খেয়ে শেষ করতে পারিনি। বাবা! তুমি জানো, তোমার বাড়িতে এখন এতো আম হয় যে সারা পাড়ার মানুষ এই বাড়ির আম খেয়ে তৃপ্ত হয়।

বাবার খুব ইচ্ছে ছিলো বাড়ির সামনের জমিটা কিনে একটা পুকুর করবেন।বাবা থাকা অবস্থায় ছোট কাকা জমিটা বিক্রি কিংবা বদল করতে রাজি হননি, বাবা এতো করে বল্লেন তবুও না। সেই জমি বাবার পেনশনের টাকায় কিনে পুকুর দিয়েছি। বাবা তুমি বড়ো মাছেরর মাথা খেতে পছন্দ করতে। সেই পুকুরে এখন বড়ো বড়ো মাছ হয়। আজকেও অনেক বড়ো একটা মাছ পুকুর থেকে তুলেছি, কিন্তু তোমার কথা এতো বেশি আজ মনে পড়ছে, পুকুর হলো, মাছ হলো অথছো তুমি নাই।

যখন আবাসিক মাদ্রাসায় পড়তাম তখন প্রতি সপ্তাহে রিক্সা নিয়ে চলে যেতে দেখার জন্য, সপ্তাহের বাইরেও হুটহাট হাজির হতে সকালে দুপুরে কিংবা অপ্রত্যশিত রাতের বেলায়ও।
একদিন বাড়ির জন্য খুব মন খুব কান্নাকাটি করছিলো, লজিং বাড়ি থেকে এসে দেখি তুমি এসে বসে আসো আমাকে নেয়ার জন্য। খুব অভাক হয়েছিলাম তুমি কিভাবে শুনলে।

ঈদের আগে তুমি জিগ্যেস করতে আমাদের কি কি লাগবে। তোমাকে ছাড়া ১৬টা ঈদ করতে হলো কোনো ঈদে কেউ জিগাইনা যে কি কি লাগবে।
গত কালও একটা ঈদ গেলো কেউ জিগাই নাই, কেউ না।

এখন ঝরের রাতে তেমন ভয় পাই না।
আজ রাতেও ঝড় হচ্ছে, একা একা ঘরে আছি ভয় হচ্ছে কিছুটা, ভয় কাটানোর কেউ নেই।
ভাবছি তোমার কথা।

আজ এতো বছর ধরে তুমি শুয়ে আছো ঐ মাটির ঘরে। খুব জান্তে ইচ্ছে করে এতো বছর ধরে আমায় না দেখে কিভাবে আছো বাবা?
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জুন, ২০১৮ দুপুর ২:০১
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমিও যাবো একটু দূরে !!!!

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২২

আমিও যাবো একটু দূরে
যদিও নই ভবঘুরে
তবুও যাবো
একটু খানি অবসরে।
ব্যস্ততা মোর থাকবে ঠিকই
বদলাবে শুধু কর্ম প্রকৃতি
প্রয়োজনে করতে হয়
স্রষ্টা প্রেমে মগ্ন থেকে
তবেই যদি মুক্তি মেলে
সফলতা তো সবাই চায়
সফল হবার একই উপায়।
রসুলের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×