somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

''শেয়ারিং ইনফরমেশন ইম্প্রুভিং লাইভস (sharing information improving lives)'' পার্ট টু (পোংটা ভার্সন)

২৬ শে নভেম্বর, ২০১৭ সকাল ৯:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



মনিরাপু'র শেয়ারিং ইনফরমেশন ইম্প্রুভিং লাইভস (sharing information improving lives) পোষ্টখানি পড়ার সাথে সাথেই মাথায় টিং করে একটা ঘন্টি বাজলো। সামঞ্জস্যতা আছে কি নেই জানিনে তবে মন চাইলো তাই অভিজ্ঞতা শেয়ারিংকে পবিত্র জ্ঞাণে হড়বড় করে লিখেই ফেললুম অপরিপক্ক হাতে ইঁচড়েপাকার টেটনা কাহিনীঃ

আজ হতে অনেক অনেক দিন আগের কথা(আবার অত বেশি আগেরও না), মিরপুর সিদ্ধার্থ স্কুলের প্রাইমারি সেকশানে পড়ি। তখনকার মিরপুর এখনকার মতন নাগরিক বহুতল আকাশ ঢাকা জঞ্জালে গিজগিজ করতো না, চারপাশে খোলা আকাশ,খোলা মাঠ,স্কুলের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে নদী............সবুজ আর সবুজ। সে এক সত্যি সত্যি স্বপ্নপুরী...........ডাইনিপু থুড়ি শায়মাপুর স্বকপোল মিছিমিছি কল্পনার পরীর দেশের চাইতে কয়েক ট্রিলিয়ন বেশি সুন্দর বললে কমেরও কম বলা হবে। টিফিন পিরিয়ডে রাজ্যের ফেরিওয়ালা/ওয়ালীরা স্বর্গীয় সব খাবারের পসরা নিয়ে বসতো; কটকটি,চানাচুর-মুড়িভাজা,শনপাপড়ি,চালতার আচার,আমড়া,মটকার আইসক্রীম,গজা-মুতাইয়াহ মুরালিধরন আরো কত্ত কি!!! (কারণ সে সময়ে ম্যাগডোনাল্ডস,হেলভেশিয়া,কেএফসি'র বাংলা ভার্সন প্রপাইটরদের যে বয়ঃস্বন্ধি কালও হয়নি)
আবার বিক্রীরও কত কায়দা মাইরি, শনপাপড়িওয়ালী লটারি করে মাল বিক্রী করতো। ক্যাসিনো বোর্ডের মতন কাঠের গোল একটা চাকা ছিলো। সেটি ঘুরালে শলাকা যে নাম্বারে থামতো সে-ই হতো ক্রেতার ভাগ্য। অর্থাৎ, ১ এ থামলে ১গুণ,২ এ থামলে যত টাকার কিনবে তার দ্বিগুণ পাবে। একদিন স্কুলের হাজার বছরের ইতিহাসে রেকর্ড গড়ে স্রষ্টার রহমত বরকত সব আমার উপড়ে ১০০০মিমি বর্ষনে ঝরে ঝরে পড়লো। আমার ভাগ্যে উঠলো চার!!! হৈ চৈ পড়ে গেলো অভাবনিয় এ ঘটনায়। আমার চারপাশে ভীড় জমে গেলো।পুলাপানের অভিনন্দনে আমি সিক্ত এবং আপ্লুত।দু'চারটে ফাওখোর জমে গেলেও তাদের তোয়াজে শ্লাঘা বোধ করছি। হিরোয়িক সে মূহুর্ত অলিম্পিক গোল্ডমেডেল গ্রহনের চেয়ে কোন অংশেই কম না।তাড়িয়ে উপভোগ করছি সে ক্ষন।আজ আমার দিন। আজকাল আমার ঘিলু ছবি স্তরের হলেও সেই আমলে শায়মাপুর মতন মহা টেটনা ছিলুম। তদজলদি লাট্টু কেনার সিদ্ধান্ত বাতিল করে সেই টাকাটাও থোক বরাদ্দ হিসেবে টিফিন বাজেটের সাথে এ্যাড করলুম তখন তখনি। সেই বয়েসেই এ সুযোগ জীবনে আর আসবেনা সে বুঝার প্রাজ্ঞতা এ শর্মার ছিলো। নায়কোচিত ঢঙে একটাকা আর জোড়া আধূলি বাড়িয়ে বললুম দু'টাকার শনপাপড়ি দ্যাও মাসী।টানটান উত্তেজনা...............ডজন ডজন কৌতুহলি চোখ ছানাবড়া হয়ে বিস্ময়ে চেয়ে আছে সে মহার্ঘ্য বিনিময়ের মহাক্ষনের প্রতীক্ষায়। অমা একি!! শায়মাপুর মতন খনখনা গলায় ছ্যানছ্যান করে উঠলো মাসী!!!
কিয়ের দুই টেকা?
অহন কইলে কি চলবো?
হারা জীবন লৈলা আটআনার আইজ সুযোগে বাহাদুর হৈয়া গ্যাছো?
এক টেকার বেশি দ্যাওন যাইবোনা...............
মৃদু গুঞ্জন উঠলো ভীড়ের মধ্যে, ফাওখোর কেউ বলে উঠলো ক্যান দিবানা?আমার দোস্ত দুইটেকার নিতেইতো আইছে,আইজ আমগোরে তার খাওয়ানির কথা,ঐ তরা কি কছ?
সাথে সাথে বাকীরাও বলে উঠলো হ হ ঠিকিতো, ঘটনার আকস্মিকতায় ক্ষনিকের কিংকর্তব্যবিমূঢ় আমিও খেই খুঁজে পেয়ে বললুম হ মাসী দ্যাহনা আইজ টিফিনে দুই টেকা আনছি,আগে কুনুদিন দ্যাখছো এত্ত টেকা আমার পকেটে?নিজের উপস্থিত বুদ্ধিতে আমি নিজেই মুগ্ধ।
আমারে ভোদাই পাইছনি?
আমার ঝি'র ঘরের নাতিও তোমগোর থে বড়।ত্যাক্ত কৈরোনা,এক টেকার লৈলে লও নাইলে ফুটো।
রাগে-অপমানে চোখে পানি আসার জোগাড়,পাছে কেউ দেখে তাই কোনমতে চেপে উল্টা স্ট্যান্ড নিয়ে কপট রাগ ঝেড়ে বললুম
যাও,খাইলাম না তোমার শনপাপড়ি............
এবার মাসীর টাসকি খাওয়ার পালা............অবিশ্বাসি দৃষ্টিতে ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে রইলো।
আবারো মৃদু গুঞ্জন উঠলো ভীড়ের মধ্যে, (কেউবা ফিক করে হেসে উঠলো,সে কালেও গেমুর মতন হিংসুটেরা জীবিত ছিলো)।
আমার সিংহদৃঢ় ব্যক্তিত্ব দেখে বিস্ময়ে হতবাক জনতা!! আর মেয়েরা মুগ্ধ।
ফাওখোর কেউ সাবাস বলে পিঠ চাপড়ালেও কেউ আবার একটাকারই নেয়ার পরামর্শ দিতে লাগলো।
কিন্তু এই বিরোচিত মোমেন্টাম হাতছাড়া করার মতন ছবি যথা বেউকুফ আমি না।কৃত্তিম রাগে মাটিতে পা ঝেড়ে ধূলো উড়িয়ে 'ঐ চল তোরা' বলে ফাউখোরদের সাথে নিয়ে নায়কোচিত প্রস্থান করলুম। পদক গ্রহনের চাইতেও পদক বর্জন যে কত্ত মহান ও বীরত্বের তা উপলদ্ধি এবং উপভোগ দুটোই করি অনেক অনেকদিন।প্রাইমারি শিক্ষা জীবনের বীরলোকগাঁথা সমগ্রে আমি এক অনন্য দৃষ্টান্ত হয়েই ছিলুম।আমার সামনে যখন কেউ আমার এই বীরত্ব অন্যদের শুনাতো অপূর্ব এক ভালো লাগা আবেশে চোখ মুদে আসতো,তবে বন্ধ করতাম না।ভাব দেখাতুম এ যেনো আমার জন্য কোন ব্যপারই না,অতি স্বাভাবিক এক ঘটনা।আমি আসলে এমনই,বর্ন গ্রেট। আরিবাবা ভাবপ্রদর্শনতো আর শায়মাপুর পৈত্রিক সম্পত্তি না....................
পরে যে অবশ্য না পাওয়ার আফসোস হয়নি মনে তা না,তবে অর্জিত গৌরবের কাছে সে কিছুই না।

এই ছিলো আমার ব্ল্যাকফ্রাইডে(!!!) সুপারসেল শপিংএর মিসড্‌ অপরচুনিটির গল্প।দেশের বাইরে যাবো কি ভুতের গল্লি আর চাংখারপুলের বাইরের দুনিয়া আজো দ্যাখা হয়নি আমার। আদৌ এর বাইরে কিছু আছে কিনা মাঝে মাঝে সন্দেহ হয়।

মনিরাপু চাইলেন বলেই ম্যাড়ম্যাড়ে এ উপাখ্যানের নিবেদন। নইলে মিছিমিছি গালি শুনবো অত্ত বোকাও নই বাপু।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে নভেম্বর, ২০১৭ সকাল ১০:০৮
৩৮টি মন্তব্য ৩৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মানুষের জন্য নিয়ম নয়, নিয়মের জন্য মানুষ?

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৫:৪৭



কুমিল্লা থেকে বাসযোগে (রূপান্তর পরিবহণ) ঢাকায় আসছিলাম। সাইনবোর্ড এলাকায় আসার পর ট্রাফিক পুলিশ গাড়ি আটকালেন। ঘটনা কী জানতে চাইলে বললেন, আপনাদের অন্য গাড়িতে তুলে দেওয়া হবে। আপনারা নামুন।

এটা তো... ...বাকিটুকু পড়ুন

একটা গাছ কাঠ হলো, কার কী তাতে আসে গেলো!

লিখেছেন নয়ন বড়ুয়া, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:০৬



ছবিঃ একটি ফেসবুক পেইজ থেকে

একটা গাছ আমাকে যতটা আগলে রাখতে চাই, ভালো রাখতে চাই, আমি ততটা সেই গাছের জন্য কিছুই করতে পারিনা...
তাকে কেউ হত্যা করতে চাইলে বাঁধাও দিতে পারিনা...
অথচ... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। কালবৈশাখী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:২৪



গত পরশু এমনটি ঘটেছিল , আজও ঘটলো । ৩৮ / ৩৯ সে, গরমে পুড়ে বিকেলে হটাৎ কালবৈশাখী রুদ্র বেশে হানা দিল । খুশি হলাম বেদম । রূপনগর... ...বাকিটুকু পড়ুন

একজন খাঁটি ব্যবসায়ী ও তার গ্রাহক ভিক্ষুকের গল্প!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৪


ভারতের রাজস্থানী ও মাড়ওয়ার সম্প্রদায়ের লোকজনকে মূলত মাড়ওয়ারি বলে আমরা জানি। এরা মূলত ভারতবর্ষের সবচাইতে সফল ব্যবসায়িক সম্প্রদায়- মাড়ওয়ারি ব্যবসায়ীরা ঐতিহাসিকভাবে অভ্যাসগতভাবে পরিযায়ী। বাংলাদেশ-ভারত নেপাল পাকিস্তান থেকে শুরু করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×