প্রথম প্রথম সামুয় যখন আসি তখনো সামুর সোনালী অধ্যায়ের প্রায় পড়তি সময় হলেও দেশ সেরা বাঘা বাঘা হেভিওয়েট ব্লগাররা সব রাজ করছিলেন। তাদের নামের ভারেই মোটামুটি মিইয়ে থাকতাম। যেমনি লিখার ওজন তেমনি তাদের কমেন্টও মাইরি। পোষ্ট দেয়া দূরে থাক তাদের পোষ্ট পড়ে কমেন্ট করতেও গলা শুকিয়ে যেত। কমেন্ট করে ক্লিক করার আগে না হলেও সাতবার চেক করতাম বানান বা শব্দবাচন ঠিকঠাক আছে কিনা। কিছু'খন পরপর লগিন করে দেখতুম কেউ রিপ্লাই দিলো কিনা। হুমহাম ধন্যবাদ মার্কা দায়সারা রিপ্লাই পেলেও অনেক কিছু মনে হতো। বারবার ঘুরেফিরে সেই পড়তুম আর শ্লাঘা বোধ করতেম। কোন হেভিওয়েট দু'এক লাইনের কমেন্ট করলেই সেরেছে। পারলে সে বাঁধাই করে রাস্তায় দৌড়ে বেড়াই। এই ছিলো তখনকার সামুর রমরমা গৌরবজ্জ্বল হাল হাকিক্বত। আমাদের সে প্রজন্মের নয়াদের মধ্যে তখন বেশ দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন বীথি'পু, শতদ্রু, জেন রসি, উর্বি, রিকি, রাখাল, গেমু, সাহসী, চ্যাং প্রমুখরা। আর আমি স্রেফ মিঁউ মিঁউ করে বেড়াই। তবে এটুক বলতে পারি বুক ফুলিয়ে বিগত কয়েক বছরের মধ্যে আমাদের ২০১৫ ব্যাচই সেরা।
দেখো দেখি কান্ড, কথার নাম আসলেই লতা। লিখবো কি আর লিখছি কি?
ফিরে আসি প্রসঙ্গে, স্বপ্ন দেখি, ব্লগে আমার পরিচিতি হবে, আমার লিখাও হিট হবে, কমেন্টের ফুলঝুড়ি ঝরবে। আফসোস, আজতক নিরলস সে খাবই দেখে যাচ্ছি মাইরি ! হিট হতে পারিনি সত্য তবে অভাগার টুকটাক পরিচিতির বা লাই দিয়ে মাথায় তোলার পেছনে যাদের কৃতিত্ব তাদেরই অগ্রজ এক নাম ''গিয়াস উদ্দীন লিটন''।
পুরোদস্তুর একজন চোস্ত ব্লগার তিনি। এ সময়ের বাংলা ব্লগিং জগতের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। সামুর ''প্রিন্স অব রম্য''। তার প্রাঞ্জল লেখনীর ছোট রম্য গল্পগুলো স্বনামে বাংলা সাহিত্যে মূর্ত হয়ে থাকবে। অসম্ভব বিনয়ী,নিরহংকারী,বন্ধুবৎসল এ মানুষটি নিয়মিত আমার অগাবগা পোষ্টে কমেন্ট করে, সাহস এবং অনুপ্রেরনা জুগিয়ে আমার সামুর নার্ভাস স্টার্টিং ইনিংসটাকে সহজ করে তুলেছিলেন। অবশ্য এতে বাংলা ব্লগিংএরই সমুহ ক্ষতি হয়েছে। আজকাল অবলীলায় মানহীন যখন যা খুশী ব্লগে প্রসব করে যাচ্ছি। তার জন্যেও দায়ী কিন্তু সেই গিয়াস লিটন, শায়মা'পু, প্রামানিক'দা, ভৃগুদা, সোহানী'পু, সাদা মনের মানুষ, সুমন কর, মনিরা'পু, জিএস'দা গং। যেই অপরাধের জন্যে সম্ভবত কাকু তাদের কোনদিন ক্ষমা করবেন না।
যাই হোক প্রথম প্রথম খুব সাধ ছিলো আমার রম্য লেখক হবার। কিন্তু, 'কিং অব রম্য' হেনা ভাই আর 'প্রিন্স অব রম্য' লিটন ভাইয়ের রঙবাজ সব লেখনীর কারণে সেমুখো হবার সাহসই আর হয়নি। পরে কি করে যেন খেলা-মজার ছলেই প্রমিদা'র(প্রামানিক) ঘাড়ে চড়ে হয়ে গেলাম নিধিরাম ছড়াকার। ধুরু যা...........আবারো প্রসঙ্গ ছেড়ে চলে গেছি দিল্লী!!
আদতে শরীরটা খুব বেশি ভালো না। চিকিৎসার জন্যে আবারো দেশের বাইরে যেতে হবে দ্রুতই। কথা বার্তা খুব একটা বলি না কারো সাথে, আবার মুখ খুললে চলে আবোল-তাবোল অনর্গল। সে-ই করে যাচ্ছি এখন। তার'চে বাবা লোক না খেপিয়ে ভনিতা ছেড়ে এবার ঝেড়েই কাশি। না হয় কোত্থেকে আবার কৈ যাই কে জানে?
আজ সে-ই প্রিন্স অব রম্য সামুরত্ন লিটন'দার ৪৯তম জন্মবার্ষিকী। ১৯৬৯ সালের এদিনে তিনি ফেনী জেলার সোনাগাজীর এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহন করেন। তার দূরন্ত শৈশব আর কৈশরের সব অভিনব এডভেঞ্চার নিয়ে আমরা যারা তার লিখার সাথে পরিচিত তারা কমবেশ ভালোই ওয়াকিবহাল। ফেনীতেই সাফল্যের সাথে শিক্ষা জীবন শেষ করে বর্তমানে তিনি পারিবারিক ব্যবসার পাশাপাশি নিয়মিত লিখালিখির সাথে জড়িত আছেন। অন্যপ্রকাশের মতন দেশ সেরা প্রকাশনী থেকে বেড়িয়েছে তার 'প্রবাসে বাংলাদেশি গুণীজন' এবং 'ক্ষুদে বাংলাদেশী গুণীজন' নামের অসম্ভব সাড়া জাগানো দুটি গ্রন্থ। 'যায়যায়দিন' এবং 'মৌচাকে ঢিল' এর তিনি নিয়মিত লেখক। এছাড়া কত লিটল ম্যাগ, পত্রিকা এবং স্মারক সংখ্যায় তার লিখা বেড়িয়েছে সে হিসেব বোধ হয় তার কাছেও নেই। উইকিপিডিয়ারও তিনি একজন সার্টিফায়েড এডিটর। তিনি একজন ফ্রীল্যান্স সাংবাদিকও বটে। জন্মস্থানের প্রতি অকুন্ঠ ভালোবাসা থেকেই তিনি সোনাগাজীর গৌরবময় ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতির সংরক্ষন ও প্রচারে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। সোনাগাজীর সাহিত্যাঙ্গনের তিনি এক অতি পরিচিত মুখ। সোনাগাজীর স্বর্ণসন্তানদের শীর্ষসারির একজন হিসেবে ইতমধ্যেই তাকে বিবেচনা করা হয়। পারিবারিক জীবনেও তিনি একজন সুখী-সফল মানুষ। স্বগুণে গুণান্বিতা সহধর্মিনী এবং দু'পুত্রকন্যা নিয়ে তার সুখের সংসার। বাচ্চারাও মা শা আল্লাহ বাবাকে যে শীঘ্রিই ছাড়িয়ে যাবে সে-ই নমুনার ঝলক এর মধ্যেই দিয়ে যাচ্ছে। কন্যা জান্নাতুন নাজারানা রজনী এ বছর দারুন রেজাল্ট দেখিয়ে এসএসসি পাশ করে কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট কলেজে অধ্যয়ন করছে। লেখাপড়ার পাশাপাশি ফেনীর সংস্কৃতিক অঙ্গন এবং ক্রীড়াঙ্গনেও তার স্বঠমক বিচরন। হয়েছেও মায়ের মতন বিশ্ব সুন্দরী। আর পুত্র ওশানতো জেল্লায় আরো দশ কাঠি বাড়া!! প্রখর মেধাবী ওশান বরাবরই ফার্স্ট বয় হয়ে সোনাগাজী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করছে। মোটামুটি শর্টকাটে এই-ই গিয়াস উদ্দিন লিটনের ব্যক্তি ও পারিবারিক জীবন। (ফিসফিস.........তার তারুণ্যের রমনী মোহন ইমেজময় রাসলীলার গল্প অন্য কোনদিন অন্য কোথাও হবে'খন)।
আর তার রসবোধও যে কতটা সূক্ষ এবং কতটা বন্ধু বৎসল তিনি সে না মিশলে বুঝার উপায় নেই। সে গল্পও অন্য কখনো..........
কি ভাবছেন? ছড়া ছেড়ে অভাগার এই বিরক্তিকর বকবকের শানে নুযুল কি? আছে আছে, আলবাৎ আছে। আমার ছড়া মানেই কাকুর গাত্রদাহ। জ্বলুনীতে মানুষের ফোস্কা পড়ে আর আমার লিখায় কাকুর মোটামুটি গ্যাংগ্রীন শুরু হয়ে যায়।খোটায় তার জীবন দায়। ম্যাঁওপ্যাঁও বাদ দিয়ে 'গদ্যে লিখুন', 'গদ্যে লিখুন'।
একবারতো আমায় বাড্ডে পার্টির জোকারই কয়ে দিলেন!!!
দিন যায় কথা থাকে। আর তার এই কথা যেনো বাণী হয়ে গেলো মাইরি। তিনি ভুলে গেছেন মাগার ঐ কথা কয়ে কয়ে জীবন আমার অতিষ্ট করে তুলেছে ঐ সোহানী আর শায়মা নামের দুই মহাপাজী'পু উঠতে বসতে।
যাহহহহহ, অগত্যা লিখেই ফেললুম। এরপর আর কথা হলে মুঝসে বুরা অওর কোই নেহি হুগা, কসম সে।
শরীরটা আসলেই ভালোনাগো। মাথায় আর ছড়া খেলেনা আজকাল। খেললে দু'লাইন যে লিখতেম সে লিটন'দা ঠিকি জানেন।
গতবার যা লিখেছিলেম সে-ই আবার দিলেম ডেট বদলে। অধমের অপারগতা লিটনদা এবং পাঠককূল নিজগুণে ক্ষমা করবেন এই-ই প্রত্যাশা।
''শুভ জন্মদিন'' হে প্রিন্স অব রম্য গিয়াস উদ্দিন লিটন
''শুভ জন্মদিন'' প্রিয় গিয়াস উদ্দিন লিটন
দু'হাজার আঠারোর
জুলাইয়ের থার্ড ডে;
ফেবুয় এসে দেখি,একি
লিটনের বার্থ ডে !!!
ছি ছি হায় লাজে মরি
দিনখানা গেছি ভুলে;
মন চায় রাগে দুখে
ফাঁস নিয়ে যাই ঝুলে।
আরে একি যে সে লোক
লিটনদা বলে কথা;
তারে না ভজিলে ছি ছি
জীবনই যে হাফ বৃথা।
কোথা নেই নাম তার
ব্লগ,ফেবু,সোনাগাজী?
যা ধরেছে,ফলে সোনা
কবো জান ধরে বাজী।
সহজিয়া লিখনীর
সাবলীল গদ্য;
ইদানিং টুকিটাকি
ছন্দেও সদ্য।
যা লিখেন,তা-ই হিট
অতি বোধগম্য;
লিখার ভূবনে তিনি
প্রিন্স অফ রম্য।
গুরু কি মেনেছি সাধে
আমি নেড়ি পুচ্ছ?
তার ঐ মেধার কাছে
লাগে ভারি তুচ্ছ।
কিভাবে জানাই উয়িশ
কি করি কি করি?
কি করে সুধাই হায়
লাজে মরি,সরি।
কি যে লিখি,কি যে বকি
আর কত ভাববো?
অগা ঘটে লিখি শেষে
আগডুম কাব্য।
তেজস্বি থাক সদা
তোমার ঐ মসি;
লিখার গগনে থেকো
হয়ে রবি শশি।
সুখে থাকো,ভালো থাকো
এই মোর প্রার্থনা;
লিখে যাও অবিলীন
খুঁজে কভু স্বার্থ না।
কি করে প্রকাশি কও
তুমি কত প্রিয়;
আজ এই শুভ দিনে
ভালোবাসা নিও।
বাজে ঢাক,বাজে বীণ
বুকে বাজে রিনরিন;
ভালোবাসা লিটনদা
শুভ শুভ জন্মদিন।
(কৃতি দু'সন্তানের মাঝে গর্বিত পিতা)
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা জুলাই, ২০১৮ ভোর ৫:২৫