somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শিশুতোষ মহাকর্ষ পাঠ -৪

২৯ শে এপ্রিল, ২০১২ রাত ২:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আইনস্টাইন যখন সাধারণ আপেক্ষিকতাতত্ত্ব নিয়ে কাজ শুরু করলেন তারও ২০ বছর আগে বিজ্ঞানীদের ধারণা ছিলো পদার্থবিজ্ঞানে নতুন কিছু আবিস্কারের সম্ভবনা নেই। বিদ্যমান সমস্যাগুলোর ভেতরে ফটো ইলেক্ট্রিক ইফেক্ট, ব্রাউনিয়ান মোশন আর মাইকেলসন মরলির পরীক্ষার গ্রহনযোগ্য ব্যাখ্যা দিয়েছেন আইনস্টাইন ১৯০৫ সালে প্রকাশিত তার তিনটি গবেষণা নিবন্ধে। গত ১০০ বছরে প্রতিটি পরীক্ষায় প্রমাণিত হয়েছে বিশেষ আপেক্ষিকতা তত্ত্বের অভ্রান্ততা।


নিউটনের মহাকর্ষীয় সূত্র-মহাকর্ষীয় ধ্রুবক গ্রহ নক্ষত্রের গতিবিধিও ব্যাখ্যা করতে পারছিলো- ইউরেনাসের গতিপথের বিচ্যুতি হিসেবে করে অন্য একটি গ্রহের উপস্থিতি এবং তার অবস্থান চিহ্নিত করতে পারাটা নিউটনের মহাকর্ষ তত্ত্বের সবচেয়ে সফল পরীক্ষাগুলোর একটি। তবে বুধের কক্ষপথের ঘুর্ণন কোনোভাবেই ব্যাখ্যা করা সম্ভব হচ্ছিলো না। অন্যান্য গ্রহের সামষ্টিক মহাকর্ষ বলের পরিমাপ নিয়েও যখন এই ঘুর্ণন ব্যাখ্যা করা সম্ভব হলো না তখন ধারণা করা হলো বুধের কক্ষপথের আশেপাশে কোনো ভারী গ্রহের উপস্থিতি আছে- কিন্তু সে ধারণাটাও ভ্রান্ত প্রমাণিত হলো।

বিদ্যুৎ এবং চৌম্বকক্ষেত্রের সফল সম্মিলন ঘটানোর পর মহাকর্ষের সাথে বিদ্যুৎ-চৌম্বকক্ষেত্রের সম্মিলন ঘটানোর প্রয়াস অব্যহত ছিলো। সেটাই উনবিংশ শতাব্দীর শেষাংশেপদার্থবিজ্ঞানীদের আগ্রহের ক্ষেত্র হয়ে উঠেছিলো। যদি মহাকর্ষ এবং তড়িৎ-চুমব্কীয় ক্ষেত্রের সম্মিলন ঘটাতে হয় তবে মহাকর্ষ ক্ষেত্রকে বিশেষ আপেক্ষিকতা তত্ত্বের সব রীতিই মেনে চলতে হবে। অর্থ্যাৎ বিশেষ আপেক্ষকতা তত্ত্বানুসারে পৃথিবীতে তথ্য সর্বোচ্চ আলোর গতিতে যেতে পারে এ নীতিটা মহাকর্ষ ক্ষেত্রের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে। দুরবর্তী কোনো স্থানে মহাকর্ষ ক্ষেত্রের যেকোনো পরিবর্তনের সংবেদ পৌঁছাতে কিছুটা সময় প্রয়োজন হবে। যদি এই মুহুর্তে সূর্য কক্ষপথ পরিবর্তন করে, তার প্রভাব পৃথিবীতে পড়বে প্রায় ৫০০ সেকেন্ড পরে, কারণ সূর্য থেকে পৃথিবীতে আলো পৌঁছাতে সে সময়টুকু প্রয়োজন হয়।

বিশেষ আপেক্ষিকতা তত্ত্ব এবং মহাকর্ষ ক্ষেত্রকে মেলানোর প্রয়াসটা বিজ্ঞানীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিলো, মিনকোওস্কি মহাকর্ষ ক্ষেত্রে এবং বিশেষ আপেক্ষিকতা তত্ত্বের সম্মিলন যে পদ্ধতিতে কল্পনা করেছিলেন সেটা কোনোভাবেই স্থিতিশীল কোনো সমাধান ছিলো না। এই সময় থেকে আইনস্টাইন, নর্ডস্ট্রম ভিন্ন ভিন্ন উপায়ে এ সমস্যার সমাধানের উদ্যোগ নিলেন।

নর্ডস্ট্রমের সমাধান বিদ্যামন সমস্যাগুলোর কোনো সমাধান দিতে পারে নি, আইনস্টাইনের সমাধান সফল ভাবেই বুধের কক্ষপথের ব্যতিক্রমী গতিপথের সমাধান দিলো, একই সাথে আইনস্টাইনের সমাধান নতুন একটি পর্যবেক্ষণযোগ্য সম্ভবনার কথাও বললো। মহাকর্ষ ক্ষেত্রে মূলত ভরের উপস্থিতিতে সে ভরের আশেপাশের স্থানের বক্রতা- অর্থ্যাৎ যেকোনো বস্তুই কোনো ভারী বস্তুর পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় বেঁকে যাবে। এই কৌণিক সরণের পরিমাণ নির্ভর করবে বস্তুর ভরের উপরে, আলোও একই কারণে ভারী কোনো বস্তুর পাশ দিয়ে আসবার সময় তার দিক পরিবর্তন করবে।

আবসল্যুট ক্যালক্যুলাস নিয়ে দীর্ঘ দিন কাজ করেছেন লেভি-সিভিটা, আইনস্টাইনের সাধারণ মহাকর্ষ তত্ত্বে তিনি টেন্সর ক্যালক্যুলাস কিংবা এবসল্যুট ক্যলক্যুলাস ব্যবহার করেছিলেন, সেখানে কিছু কিছু বিষয়ের গাণিতিক ভ্রান্তি উল্লেখ করে লেভি সিভিটা এবং আইনস্টাইনের ভেতরে বেশ দীর্ঘ পত্রবিনিময় হয়।

আইনস্টাইন ১৯১৫ সালে যখন সাধারণ মহাকর্ষ বিষয়ে তার গবেষণা নিবন্ধ প্রকাশ করলেন সে সময়ে তার গবেষণা নিবন্ধের উল্লেখযোগ্য অংশই ছিলো এবসল্যুট ক্যালক্যুলাসের প্রাথমিক ধারণা- যে গবেষণা নিবন্ধে ধাপে ধাপে এই এবসল্যুট ক্যালক্যুলাস ব্যবহার করে মহাকর্ষ ক্ষেত্রকে উপস্থাপন করা হয়েছে।

কার্ল সোয়ার্সচাইল্ড ৪০ বছর বয়েসে প্রথম মহাযুদ্ধের সৈনিক হিসেবে রাশিয়ায় যান, সেখানে তিনি আইনস্টাইনের সমীকরণের সমাধান করেন। তিনি প্রথম মহাযুদ্ধ শেষ হওয়ার আগেই মৃত্যু বরণ করেন কিন্তু তার অসুস্থতার ভেতরে তিনি আইনস্টাইনের তত্ত্বের উপরে ভিত্তি করে তিনটি গবেষণা নিবন্ধ প্রকাশ করেন।

আলেক্সান্ডার ফ্রিডম্যান রাশিয়ার হয়ে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অংশগ্রহন করেন, তিনি বিমান বাহিনীর অংশ হিসেবে বিমানযুদ্ধ করেছেন, যুদ্ধকালীন সময়ে এরোডিনামিক্স পড়িয়েছেন, পরবর্তীতে তিনি হাইড্রোডিনামিক্সের উপরে গবেষণা করেন। আলেক্সান্ডার ফ্রিডম্যানের আইনস্টাইন সমীকরণের সমাধান যখন আইনস্টাইনের কাছে প্রেরণ করা হলো তিনি প্রকাশককে লিখে পাঠালেন ফ্রিডম্যানের সমাধান তার কাছে গ্রহনযোগ্য মনে হচ্ছে না। ফ্রিডম্যান আইনস্টাইনের তত্ত্বের উপরে ভিত্তিকে সম্পূর্ণ মহাবিশ্বের উপরে মহাকর্ষ তত্ত্বের ব্যবহার করে দেখিয়েছিলেন মহাবিশ্বের বক্রতা ধনাত্মক কিংবা ঋণাত্মক হতে পারে- মহাবিশ্বের বক্রতার উপরে মহাবিশ্বের সাম্ভাব্য ভবিষ্যতও নির্ভরশীল।

আইনস্টাইন পদার্থবিজ্ঞানে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনলেও তিনি আদতে স্থির মহাবিশ্বের পক্ষপাতি ছিলেন। মহাবিশ্ব অসম্প্রসারণশীল এবং এর বক্রতা শূণ্য এ ধারণায় আঘাত করেছিলো ফ্রিডম্যানের সমাধান। ফ্রিডম্যান আইনস্টাইনের আপত্তি জেনে তাকে পাল্টা চিঠি লিখে জানালেন আমার সমাধানের যে যে অংশ আপনার বোধগম্য হয় নি সেসব আমি পুনরায় বিস্তারিত আপনাকে জানাচ্ছি-

অবশ্য ফ্রিডম্যান ১৯২৫ সালেই টাইফয়েডে মৃত্যু বরণ করেন। তারও ৮ বছর পরে রবার্টসন- ওয়াকার আইনস্টাইনের তত্ত্বের উপরে ভিত্তি করে একই রকম সমাধানে পৌঁছান। তার আগেই অবশ্য হাবল আবিস্কার করেছেন আমাদের কাছাকাছি নক্ষত্রপূঞ্জগুলো ক্রমশ আমাদের থেকে দুরে সরে যাচ্ছে- অর্থ্যাৎ মহাবিশ্ব সম্প্রসারণশীল। এই সম্প্রসারণশীল মহাবিশ্বের সম্প্রসারণ আটকাতে আইনস্টাইন সম্পূর্ণ আবেগের বশবর্তী হয়েই সম্ভবত কসমোলজিক্যাল কনস্ট্যান্ট ব্যবহার করলেন- গাণিতিক ভাবে কসমোলজিক্যাল কনস্ট্যান্টের ব্যবহারে আইনস্টাইনের সমীকরণের তেমন কোনো পরিবর্তন হলো না, বরং ধারণার দিক দিয়ে কসমোলজিক্যাল কনস্ট্যান্টের গ্রহনযোগ্যতা বিষয়টাই প্রশ্নবিদ্ধ হলো। কসমোলজিক্যাল কনস্ট্যান্টের মাণ সম্পর্কে তেমন স্পষ্ট ধারণা না দিয়ে আইনস্টাইনের ধারণা ছিলো যখন মহাবিশ্বের সম্প্রসারণের ফলে মহাবিশ্বের আকৃতি বৃদ্ধি পাবে তখন কসমোলজিক্যাল কনস্ট্যান্ট এ প্রসারণ আটকাতে সক্ষম হবে।

পরবর্তীতে আইনস্টাইন নিজেই আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল স্বীকৃতি দিয়ে কসমোলজিক্যাল কনস্ট্যান্টকে আইনস্টাইন সমীকরণ থেকে বাদ দিয়ে দেন।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে এপ্রিল, ২০১২ রাত ২:৪৬
৪টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিব নারায়ণ দাস নামটাতেই কি আমাদের অ্যালার্জি?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৫:৫৭


অভিমান কতোটা প্রকট হয় দেখেছিলাম শিবনারায়ণ দাসের কাছে গিয়ে।
.
গত বছরের জুন মাসের শুরুর দিকের কথা। এক সকালে হঠাৎ মনে হলো যদি জাতীয় পতাকার নকশাকার শিবনারায়ণ দাসের সঙ্গে দেখা করা সম্ভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতি মাসে সামু-ব্লগে ভিজিটর কত? মার্চ ২০২৪ Update

লিখেছেন জে.এস. সাব্বির, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৮

মার্চ ২০২৪ সালে আমাদের প্রিয় সামু ব্লগে ভিজিটর সংখ্যা কত ছিল? জানতে হলে চোখ রাখুন-

গত ৬ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভিউ ছিল জানুয়ারি মাসে। ওই মাসে সর্বমোট ভিজিট ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×