আন্তর্জাতিক পানিসীমায় আমেরিকার একটি যুদ্ধজাহাজে ইসরাইলি হামলার ৪৬ বছর পর আজও মার্কিন সরকার ওই ঘটনার ব্যাপারে রহস্যজনক নীরবতা পালন করে যাচ্ছে। ১৯৬৭ সালের ৮ জুন ইসরাইলি বিমান ও নৌবাহিনী মার্কিন নৌবাহিনীর গোয়েন্দা জাহাজ ‘ইউএসএস লিবার্টি’র ওপর হামলা চালায়। এতে আমেরিকার ৩৪ জন নৌসেনা নিহত এবং অপর ১৭৪ জন আহত হয়। সে সময় ইউএসএস লিবার্টি ছিল আমেরিকার সবচেয়ে উন্নত গোয়েন্দা জাহাজ এবং ইসরাইলি বাহিনীর শক্তিশালী হামলায় এটি মারাত্মকভাবে বিধ্বস্ত হয়েছিল।
হামলার বেশ কয়েক ঘণ্টা আগে ইসরাইলি গোয়েন্দা বাহিনী জাহাজটি আমেরিকার মালিকানাধীন বলে শনাক্ত করা সত্ত্বেও পরবর্তী সময়ে ইসরাইলি কর্মকর্তারা চরম মিথ্যাচারের মাধ্যমে দাবি করেন, ওটি ছিল নিছক একটি দুর্ঘটনা। আমেরিকার গণমাধ্যমকে গত ৪৬ বছর ধরে এ ঘটনার ব্যাপারে টুঁ শব্দটি উচ্চারণ করতে দেয়া হয়নি। ১৯৬৭ সালে ছয় দিনব্যাপী আরব-ইসরাইল যুদ্ধের সময় তেলআবিব মার্কিন নৌজাহাজে ওই হামলা চালিয়েছিল। ইসরাইল মধ্যপ্রাচ্যে তত্কালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের ঘনিষ্ঠ মিত্র সিরিয়ার ওপর হামলা চালাতে পারে—এ আশঙ্কার কারণে ওয়াশিংটন ইউএসএস লিবার্টিকে মধ্যপ্রাচ্যের উদ্দেশে পাঠিয়েছিল। আমেরিকার আশঙ্কা ছিল, ইসরাইল সিরিয়ায় হামলা চালালে সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি সংঘাত বেধে যেতে পারে। ৫০০ মাইল ব্যাসার্ধের মধ্যকার সব ধরনের যোগাযোগের ওপর নজরদারির ক্ষমতা ছিল মার্কিন নৌজাহাজ ইউএসএস লিবার্টির। ইসরাইল আসলেই সিরিয়ার ওপর হামলা চালাতে চায় কি-না তা জানার উদ্দেশ্যে জাহাজটিকে ভূমধ্যসাগরের উদ্দেশে পাঠিয়েছিল ওয়াশিংটন। আমেরিকার এ পরিকল্পনার কথা জানতে পেরে তত্কালীন ইসরাইলি যুদ্ধমন্ত্রী মোশে দাইয়ান মার্কিন জাহাজটির ওপর হামলা চালানোর জন্য ইসরাইলি বাহিনীকে নির্দেশ দেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সাবেক মার্কিন নৌসেনা বলেছেন, আমেরিকার নৌজাহাজ ইউএসএস লিবার্টির ওপর অন্তত ৯ ঘণ্টা চোখ রাখার পর ইসরাইলি নৌ ও বিমানবাহিনী এটির ওপর হামলা চালায়। ইউএসএস লিবার্টির সাবেক ক্রু আরও জানান, ইসরাইলি সেনারা আমাদের সঙ্গে কোনো ধরনের যোগাযোগের চেষ্টা বা কোনোরকম সতর্কবাণী উচ্চারণ ছাড়াই আমাদের জাহাজের ওপর হামলা চালায়। এতে ৩৪ জন আমেরিকান নিহত এবং অপর ১৭৪ জন আহত হয়। ওই ঘটনার পর জাহাজটিকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করে মার্কিন সরকার। ইউএসএস লিবার্টিতে ইসরাইল জেনেশুনে হামলা চালিয়েছে বলে মার্কিন প্রশাসনের সব কর্মকর্তা একমত হওয়া সত্ত্বেও তত্কালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট লিন্ডন জনসন বিষয়টি নিয়ে কোনো ধরনের উচ্চবাচ্য না করার সিদ্ধান্ত নেন। তার প্রশাসন বিষয়টিকে চেপে যাওয়ার নির্দেশ দেয়। মার্কিন প্রশাসনিক কর্মকর্তারা ব্যক্তিগতভাবে এ হামলাকে ইচ্ছাকৃত বলে উল্লেখ করলেও জনসন প্রশাসন কখনোই হামলাকারীদের শাস্তি দাবি করেনি কিংবা নিহত ব্যক্তিদের জন্য ক্ষতিপূরণ চায়নি।