পৃষ্টা ৩৫-৩৭
‘ভাবের অভাবে আমি অভাবী হয়েছি গো। ঠিকাছে, ব্যর্থ হলে ভরতা খাব।’ বলে রাহীম বাম চোখ টিপে নিশানা করে। সুফিয়া দাঁড়িয়ে দু হাত মেলে বলল, ‘দাদির গায়ে ঢিল মারলে কলিজার জোরে খতমে ইউনুস পড়তে হবে গো দেবর মশাই।’
‘তোমাকে মেরে নির্বান্ধব হতে চাই না গো ভাবী মুরগি মরলে শিকে পুড়ে খাব।’ বলে রাহীম ঢিল ছুড়ে দৌড় দেয়। বাবা হেঁকে বললেন, ‘কোথায় যাচ্ছিস?’
‘ছোট দাদি আমাকে দৌড়িয়েছিলেন।’
‘ঠিকাছে, দৌড়ে পড়াঘরে যা।’
‘জি আব্বা।’ বলে রাহীম পাগলা ঘোড়ার মত দৌড়ে পড়াঘরে প্রবেশ করলে অবাককণ্ঠে রাশিদা বলল, ‘ভাইয়া, কোথায় গিয়েছিলে? তোমাকে খোঁজার জন্য মাস্টর ভাই সারাদিন ব্যোমযানে বসে উড়েছিলেন।’
‘এই খপুষ্প চোপ। সবসময় বেশি কথা বলিছ। যা, আমার জন্য এক কাপ চা নিয়ে আয়। চিন্তা করে হাতে পায়ে ব্যাথা হয়েছে।’ বলে মাস্টার ম্যাগাজিন হাতে নিলে, আড়চোখে তাকিয়ে রাহীম বলল, ‘তুই বস আমি যাব।’
‘আকাশকুসুমকে আদেশ করার কারণ, ওকে দেখলে চাচাজানের মেজাজ ঠাণ্ডা হবে নইলে ভালমন্দের জন্য উত্তম মধ্যম হবে।’ বলে মাস্টার ম্যাগাজিন ঠিক করে। চিন্তিতকণ্ঠে রাহীম বলল, ‘এই রাশিদা, চা বানাতে পারবে তো?’
‘আমি পাকঘরে গেলে দাদি দৌড়ে যেয়ে চা বানিয়ে দেন। মাস্টর ভাই, যাব?’ বলে রাশিদা বিদ্রুপহাসে। ম্যাগাজিনের পাতা উলটিয়ে রাহীমের দিকে আড়চোখে তাকিয়ে মাস্টার বলল, ‘তুই খাবে?’
‘আমার জন্য লাগবে না শুধু মাস্টর ভাইর জন্য এক কাপ নিয়ে আয়। শোন, কাপ বেশি গরম হলে আমাকে ডাকবে।’ বলে রাহীম বাইরে তাকিয়ে বাবাকে বারান্দায় দেখে বই খাতা নিয়ে বসে। মাস্টার রাশিদাকে অনুসরণ করে বলল, ‘তুই জোরে জোরে পড়, বিশারদের সাথে আমি যাব। হাত পা পুড়ালে মুগুর মেরে আম্মাজান আমার মুণ্ডু ফাটাবেন।’
‘কথা অবশ্য মিথ্যা বলনি, দৌড়ে যাও।’ বলে রাহীম ব্যাকরণ বই খুলে কয়েক পাতা উলটিয়ে পদাশ্রিত নিদের্শক দেখে চোখ কপালে তুলে, ‘ও মাই গো মাই এটা কী?’ সভয়ে বলে ডানে বাঁয়ে তাকিয়ে বুকে থুথু দিয়ে পরের পৃষ্ঠা উলটিয়ে তার চক্ষু চড়কগাছ।
‘মায়, এ কেমন কথা গো, লিঙ্গ নাকি চার প্রকার? আচ্ছা, পড়ে জানলে মঙ্গল হবে। পুংলিঙ্গ, স্ত্রীলিঙ্গ, কীবলিঙ্গ এবং উভয়লিঙ্গ। ঠিকাছে, সেইদিন অভয়ারণ্যে যাহার সহিত সাক্ষাৎ হইয়াছিল উহার লিঙ্গ কী ছিল?’ বলে চিন্তিত হয়ে দাঁড়িয়ে মাথা দুলিয়ে পা দিয়ে চেয়ার ঠেলে কয়েক কদম হেঁটে মাস্টারের বিছানার নিচ থেকে মেগ্যাজিন বার করে দু চোখ কপালে তুলে অবাককণ্ঠে বলল, ‘ও দাদি গো, এত সুন্দর স্ত্রীলিঙ্গ বাপের জন্মে কেউ দেখিনি। ছি ছি।’
নায়িকার ছবির দিকে ভালো করে চোখ বুলিয়ে মাথা দুলিয়ে যথাস্থানে মেগ্যাজিন রাখে চেয়ার টেনে বসে বিড়বিড় করে বলল, ‘টুনি তাইলে আমার বিপরীত লিঙ্গ। তাই তো বটে হু। রূপের সাথে আলী যোগ করলে রূপালী হয় এবং কাজলীর পুংলিঙ্গ কাজল হলে পলাশী হবে পলাশের স্ত্রীলিঙ্গ। দূর ছাই, ধানাইপানাইর কারণ আঁচতে পারলে ভার্সিটিতে ভর্তি করে মাস্টর ভাই বলবেন, অবাঙাল আমি বাংলা বুঝি না রে ভাই।’
রাহীম যখন বিড়বিড় করে মাস্টার তখন চা বানায়। দাদি এবং ভাবীর সাথে রাশিদা গল্পগুজবে মত্ত। খালি হাতে গরম ডেগ ধরে মাস্টার লাফ দিয়ে উঠলে রাশিদা খিল খিল করে হেসে বলল, ‘কী হয়েছে মাস্টর ভাই?’
কথা না বলে মাস্টার হাত ঝাড়লে সুফিয়া মুখ ভেংচিয়ে বলল, ‘এঁড়ে লোক ঘরে থাকলে ক্রুদ্ধ ষাঁড়ের কী দরকার? গোয়ালে কইলা নেই।’
‘কী বললে?’ মাস্টার চমকে বললে সুফিয়া বিদ্রুপহেসে বলল, ‘বলেছিলাম, সবে জানে একরোখা লোকের কপালের রেখা আলুবোখরার বাকলের মত বঙ্কা।’
দাঁত কটমট করে হাঁটতে শুরু করে মাস্টার বলল, ‘আলুদোষে দোষী বল্কলধারি সন্ন্যাসীকে দেখলে বলীবর্দে হাম্বীর চর্চা করে এবং একগুঁয়ে নরনারীর যুক্তিহীন তর্ক শুনলে কানে তালা মারে। যতসব বেআক্কেল, আক্কেল সেলামি দিয়ে আমাকে ধনী বানাতে চায়।’
তাকে ডেকে দাদি বললেন, ‘এই সেরকশ, আজ তোর কী হয়েছে?’
‘ধনি ধনিচা ধনিয়া ধনিষ্ঠার অর্থ বিবরণের সাথে বিশ্লষণ করে বুঝিয়ে দাও।’
কথা না বলে দাদি তাড়ু হাতে তেড়ে এগুলে মাস্টার দৌড় দেয়। সুফিয়া মাথা দুলিয়ে বলল, ‘ধারয়িষ্ণু ছাগলীর ধারোষ্ণ দুগ্ধে সাকল্য চা বানিয়েছি আমি গুনে দেখি সাকুল্যে মাত্র ছয় কাপ হয়েছে।’
‘তোকেও বাক্য ব্যকারণের ভূতে জেঁতেছে লো।’ বলে দাদি কপালে আঘাতে করে যখন বসেন রাহীম তখন পণ্ডিতের মত অভিধানে চোখ বুলায়। হঠাৎ আগ্রহের সাথে তাকিয়ে কপাল কুঁচকে বলল, ‘ভিজাকে স্ত্রীলিঙ্গ বানালে চোঙা মুখে লাগি মাস্টর ভাই চিল্লিয়ে বলবেন, সময়সাময়ীক ফেলে সে এখন স্ত্রীলিঙ্গের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছে। এক সের সরিষার তেল মাথায় ঢেলে কাঁকুই দিয়ে সুন্দর করে চুল আঁচড়িয়ে কোনোক্রমে ছোট দাদি আঁচ করতে পারলে সেরেছে, ঘোল গিলাবার জন্য অদ্য আমাকে বাল্যবিবাহ করাবেন। মহা সমস্যা, এমনিতে মগজে যথেষ্ট প্যাঁচ আর কচর-মচর করলে প্যাঁচোয়া হব।’ বলে ব্যাকরণ এবং অভিধান একপাশে রেখে মুখস্থ পড়ে ক্লান্ত হলে রাতের খাবার খেয়ে শুয়ে পড়ে। পরদিন কলেজ কামাই করে টুনটুনির সাথে চড়ুইভাতি করার জন্য নন্দিবনে যায়। শিয়ালরা শোরগোল শুরু করলে তাদেরকে তাড়াবার জন্য ঢিল পাটকেল মেরে কাঁধ ঝুলিয়ে বলল, ‘সেরেছে, একচক্ষুর নাতনী কানীর পিঠে আবার ঢিল মেরেছি। টুইয়ে টুইয়ে কানী কেন যে ঢিলের সামনে আসে?’
যূথী মাটিতে বসে রেগে ফুঁসে চোখের জল মুছে কটাক্ষদৃষ্টে তাকায়। রাহীম রাগান্বিত হয়ে মাথা নেড়ে সামনে যেয়ে মুখ বিকৃত করে বলল, ‘এই কানী, দাঁড়াশের মত ঢিলের সামনে দাঁড়াস কেন?’
‘একচক্ষু টেরা টেটিয়া, আজ তোর টেরাচোখ সিধা করব। গুলতি দে।' যূথী অধরদংশে বলে এগুলে রাহীম বলল, ‘গুলতি দিয়ে কী করবে?’
‘তোর টেরা চোখ সিধা করব। ওই, আমাদের গ্রামে আবার এসেছিস কেন?’
‘টোনাটুনি দেশান্তরী হয়ে তোদের গ্রামে এসে সংসার পেতেছে। তাদেরকে দেখার জন্য আসি। তুই কেন ঢিলের সামনে দাঁড়াস? আরেকবার দাঁড়ালে টুনিকে না মেরে তোকে মারব। নে, একটা মেরে চলে যা তোর ছায়া দেখলে মগজ তাতায়।’ বলে রাহীম গুলতি এগিয়ে দেয়। যূথী দাঁত কটমট করে গুলতি হাতে নিয়ে পায়ের নিচে রেখে ভেঙে ছুড়ে দিয়ে বলল, ‘শিকার কর যেয়ে, টেরা কোথাকার।’
রাহীম রেগেমেগে তাকালে যূথী পাথর হাতে নিয়ে অধরদংশে বলল, ‘দৌড়ে যা নইলে ঢিল মেরে টেরা চোখ কানা করব।’
রাহীম গুলতির দিকে তাকিয়ে মাথা নেড়ে দাঁত কটমট করে তেড়ে বলল, ‘আজ তোকে জানে মেরে ফেলব।’
যূথীর হাঁক চিঁক শুনে তড়বড় করে সাইদা যায়। অপলকদৃষ্টে তাকিয়ে পিছু হেঁটে রাহীম বলল, ‘অলোকসুন্দরীকে দেখে চোখে ভেলকি লেগেছে। প্রিয়তমার হাত ধরে দেশান্তরী হওয়ার জন্য মন বায়না ধরেছে।’
ডানে বাঁয়ে তাকিয়ে সাইদা বলল, ‘সই, শিকারী কোথায়?’
‘পালিয়েছে, আবার আসলে আমি তাকে জানে মেরে ফেলব।’
‘কী করেছিল?’
‘আবার মাঝ পিঠে ঢিল মেরেছে।’
‘তুই কী করেছিলে?’
‘পিছন ফিরে তোকে দেখছিলাম।’
‘গলাফাটিয়ে চিঁক দিয়েছিলে কেন?’
‘ঢিল লাগলে মন বলে জান বেরিয়ে যাবে। আলাইর মুখ দেখলে সাথে সাথে ব্যথা কমে। কাউকে বলিস না।’ বলে যূথী ঠোঁটে আঙুল দিলে সাইদা বলল, ‘তোর মাথা খারাপ হয়েছে নাকি?’
‘ঢিল মারে তোর বুকে, লাগে আমার মাঝপিঠে। বিধায় ব্যথায় তোর মুখ কালা হয়।’
‘তোর মজগ বিকল হয়েছে। ত্বরে চল দেরি হলে দশটা বেতের বাড়ি হাতের তালুতে পড়বে।’
‘হ্যাঁ চল।’ বলে যূথী শিউরে ওঠে। সাইদা সামনে তাকিয়ে এক যুবককে হেঁটে আসতে দেখে যূথীর দিকে তাকিয়ে বলল, ‘ফাহিমভাই এসেছেন কেন?’
‘কোথায়?’
‘সামনে তাকিয়ে দেখে।’ বলে সাইদা ইশারা করলে চোখ কপালে তুলে যূথী বলল, ‘ওরে বাপরে, এক বছরে এতবড় ষণ্ডা হলো কেমনে?’
‘জিজ্ঞেস কর যেয়ে।’
‘এখন আর তাকে দৌড়াতে পারব না। বকা দিলে মাথার উপর তুলে আছড়া মারবে।’ নিম্নকণ্ঠে বলে যূথী ডানে বাঁয়ে তাকায়। ফাহিম তাদের সামনে যেয়ে সাইদার দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে বলল, ‘কেউ তোকে বিরক্ত করে না তো? বিরক্ত করলে আমাকে বলবে, মগজ ভরতা বানিয়ে দেব।’
‘কী বললে?’
‘তোর স্কুলে বদমাশ কয়েকটা ভর্তি হয়েছে। ঠাট্টা ইয়ারকি করলে আমাকে অথবা মেজো-ভাইকে বলবে। এখন স্কুলে যা, নাস্তা করার জন্য আমি বাজারে যাব।’ বলে ফাহিম মৃদু হেসে চলে যায়। মাথা নেড়ে সাইদা হাঁটতে শুরু করলে যূথী বলল, ‘টেরা যখন আসে টেণ্ডাই মেণ্ডাইরা তখন কোথায় থাকে?’
অপলকদৃষ্টে তাকিয়ে সাইদা বলল, ‘কেন?’
‘এভাবে তাকিচ্ছিস কেন লো?’
‘ক্লাসে চল, বেশি কথা বললে বলব তুই আমার সাথে ঠাট্টা ইয়ারকি করিস।’
আর কথা না বলে দু জন ক্লাসে চলে যায়। স্কুল ছুটি হলে বাড়ি ফিরার পথে বনফুল দেখে সাইদা বনে প্রবেশ করলে যূথী অপারগ হয়ে সাথে যায়। নেকড়ে দেখে সাইদা চিঁৎকরা করে। তেগ হাতে রাহীম আবির্ভূত হলে নেকড়ে দৌড়ে পালায়। সাইদা ডাকতে চাইলে হাত নেড়ে রাহীম দ্রুত অদৃশ্য হয়। দা বন্দুক ঝকড়া হাতে ভাই বান্ধবরা দৌড়ে যায়। সাইদা চারপাশে তাকায়। কম্পিতকণ্ঠে যূথী বলল, ‘নেকড়ে আমাদেরকে আক্রমণ করেছিল।’
এই বই দুই খন্ডে আমাজনে প্রকাশ করেছি
Poromatthio: Volume 1 (Bengali) Paperback – 21 Jun 2016
by Mohammed Abdulhaque (Author)
Product details
Paperback: 596 pages
First edition (21 Jun. 2016)
Language: Bengali
ISBN-10: 1534824596
ISBN-13: 978-1534824591
Product Dimensions: 12.7 x 3.4 x 20.3 cm
এক সাথে পড়তে চাইলে আমাজন থেকে কিনতে পারবেন
অথবা অনলাইন পড়তে চাইলে আমার সাইটে আছে
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই জুন, ২০১৭ বিকাল ৫:১৫