কবি, সাংবাদিক, গল্পকার, ঔপন্যাসিক ও গদ্যকার্টুনিষ্ট আনিসুল হকের ৪৯তম জন্মদিনে শুভেচ্ছা
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
বর্তমান সময়ে ছোটপর্দার আলোচিত লেখক ও নাট্যকারদের অন্যতম কথাশিল্পী আনিসুল হক। যদিও কথাশিল্পী হিসেবেই তিনি সমাধিক পরিচিত। তবে এক দশকের বেশী সময় ধরে শুধু নাট্যকার হিসাবেই না বরং একাধারে কবি, সাংবাদিক, গল্পকার, ঔপন্যাসিক, গদ্যর্কাটুনিষ্ট হিসেবেও আলোচিত হয়েছেন আনিসুল হক। তাঁর মূল ঝোঁক লেখালেখিতে। পত্রিকায় তিনি নিয়মিত কলাম লেখেন। বুয়েটে পড়ার সময় কবিতার দিকে বেশি ঝোঁক ছিল। পরবর্তীতে এর পাশাপাশি কথাসাহিত্যেও মনোযোগী হন। উপন্যাস, বিদ্রুপ রচনা, নাটক রচনায় প্রতিভার সাক্ষর রেখেছেন। জনপ্রিয় এই লেখক বর্তমানে বাংলাদেশের দৈনিক প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক পদে কর্মরত আছেন। সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় সদর্পে বিচরণকারী এই কথা সাহিত্যকের আজ ৪৯তম জন্ম দিন। জন্মদিনে কথাশিল্পী আনিসুল হককে অনেক অনেক শুভেচ্ছা।
আনিসুল হক ১৯৬৫ সালের ৪ মার্চ রংপুরের নীলফামারীতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মো. মোফাজ্জল হক এবং মায়ের নাম মোসাম্মৎ আনোয়ারা বেগম। তাঁর স্ত্রীর নাম মেরিনা ইয়াসমিন। আনিসুল হক রংপুর জিলা স্কুল থেকে ১৯৮১ সালে এস.এস.সি. এবং রংপুর কারমাইকেল কলেজ থেকে ১৯৮৩ সালে এইচ.এস.সি. পাস করেন। উভয় পরীক্ষাতেই সম্মিলিত মেধাতালিকায় স্থান পান। এরপর বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের(বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগ থেকে স্নাতক পাস করেন।
আনিসুল হক ১৯৯৬ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস পরীক্ষা উত্তীর্ণ হয়ে বাংলাদেশ সরকারের রেলওয়ে বিভাগে যোগদান করেন। অল্প কিছুদিন চাকরির পরই তা ছেড়ে দিয়ে সাংবাদিকতায় চলে আসেন। তিনি ১৯৮৭ সালে সাপ্তাহিক দেশবন্ধু পত্রিকার সহসম্পাদক, ১৯৮৯ সালে সাপ্তাহিক পূর্বাভাস পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক, ১৯৯১ সালে সাপ্তাহিক খবরের কাগজের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক হন। ১৯৯৩ থেকে ১৯৯৮ পর্যন্ত দৈনিক ভোরের কাগজের সহকারী সম্পাদক দায়িত্ব পালন করেন। এরপর থেকে আজ পর্যন্ত দৈনিক প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক পদে কর্মরত আছেন। পত্রিকায় ‘গদ্যকার্টুন’ নামে নিয়মিত ব্যঙ্গাত্মক রচনা লেখেন। এসব লেখা নিয়ে প্রকাশিত বইগুলির মধ্যে কথাকার্টুন, গণতান্ত্রিক ফ্যান্টাসি, রাজা যায় রানি আসে, ছাগলতন্ত্র, অশ্বডিম্ব, সেই গাধা সেই পানি উল্লেখযোগ্য।
লেখক, নাট্যকার ও সাংবাদিক আনিসুল হকের মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ের সত্য ঘটনা নিয়ে লেখা সবচেয়ে বিখ্যাত ও জনপ্রিয় উপন্যাস মা (২০০৩ সালে প্রকাশিত)। বাংলা ভাষার পাশাপাশি বইটি দিল্লী থেকে ইংরেজি ভাষায় এবং ভুবনেশ্বর থেকে উড়ে ভাষায় প্রকাশিত হয়েছে । এছাড়া বীর প্রতীকের খোঁজে, নিধুয়া পাথার, আয়েশামঙ্গল, খেয়া, ফাঁদ, অন্ধকারের একশ বছর, বেকারত্বের দিনগুলিতে প্রেম, ভালোবাসা আমি তোমার জন্য কাঁদছি, ফাল্গুন রাতের আঁধারে, আমার একটা দুঃখ আছে,
যারা ভোর এনেছিল, তৃতীয় জীবন, ক্ষুধা এবং ভালোবাসার গল্প, হৃদিতা, সেঁজুতি, তোমার জন্য, আবার তোরা কিপ্টা হ,আলো-অন্ধকারে যাই,আমার একটা দু:খ আছে, আয়েশামঙ্গল, বারোটা বাজার আগে এবং ছোটদের জন্য গুড্ডু বুড়ার মজার গল্প প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।
নাট্যকার হিসেবে আনিসুল হক ভিন্ন ধাঁচের নাটক উপহার দিয়েছেন। তাঁর রচিত দর্শকনন্দিত টেলিভিশন কাহিনীচিত্রের মাঝে রয়েছেঃ নাল পিরান, করিমন বেওয়া, প্রত্যাবর্তন, সাঁকো, প্রতি চুনিয়া, চড়ুইভাতি, আয়না মহল, কানামাছি ,দৈনিকতোলপাড় ,স্পার্টাকাস’৭১, মেগা সিরিয়াল ৫১বর্তী প্রভৃতি। তাঁর বেশ কয়েকটি কাব্য গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে যথাঃ ১। খোলা চিঠি সুন্দরের কাছে (১৯৮৯), ২। আমি আছি আমার অনলে (১৯৯১), ৩। আসলে আয়ুর চেয়ে বড় সাধ তার আকাশ দেখার (১৯৯৫), ৪। জলরংপদ্য (২০০২), ৫। তোমাকে ভাবনা করি।
গল্প, কবিতা, উপন্যাসের পাশাপাশি তিনি মোস্তফা সরয়ার ফারুকী পরিচালিত ব্যাচেল'রএবং মেড ইন বাংলাদেশ সিনেমার স্ক্রিপ্ট লিখেছেন। এছাড়া তিনি থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার এবং টেলিভিশন সিনেমারও স্ক্রিপ্ট লিখেছেন।
২০১০ সালে তিনি আমেরিকার ইন্টারন্যাশনাল রাইটিং প্রোগ্রাম (আইডব্লিউপি)কর্মশালায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের লেখকদের সাথে যোগ দেন। তিনি ছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ৩৭ জন লেখক আইডব্লিউপির কর্মশালায় যোগ দেন। ১৯৬৭ সাল থেকে শুরু হওয়া এ আয়োজনে ২০১০ সাল পর্যন্ত ১৩০টি দেশের এক হাজার ২০০ লেখক অংশ নেন। কথাসাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য আনিসুল হক ২০১২ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়াও শ্রেষ্ঠ টিভি নাট্যকার হিসেবে পুরস্কার, টেনাশিনাস পদকসহ বেশ কয়েকটা পুরস্কার পেয়েছেন। সাহিত্যের জন্য পেয়েছেন খুলনা রাইটার্স ক্লাব পদক, কবি মোজাম্মেল হক ফাউন্ডেশন পুরস্কার।
কবি, সাংবাদিক, গল্পকার, ঔপন্যাসিক, ও গদ্যর্কাটুনিষ্ট আনিসুল হকের ৪৯তম জন্মদিনে আন্তরিক শুভেচ্ছা
৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম
স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন
দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ
মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন
আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!
বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন
আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।
ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন
মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )
যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন