somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলা সাহিত্যের চিরস্মরণীয় ও অমর প্রতিভা ঔপন্যাসিক ও সাংবাদিক অদ্বৈত মল্লবর্মণের ৬৩তম মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি।

১৬ ই এপ্রিল, ২০১৪ সকাল ১০:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বাংলা সাহিত্যের চিরস্মরণীয় ও অমর প্রতিভা, কালজয়ী বাঙালি ঔপন্যাসিক ও সাংবাদিক অদ্বৈত মল্লবর্মণ। কবিতা ভালোবেসে সাহিত্যের প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠেন তিনি। সাহিত্যচর্চা শুরু পঞ্চম শ্রেণীতে অধ্যয়নকালে। ছাত্রজীবনে কবিতা লিখতেন বেশি। পরবর্তী সময় খ্যাতি-প্রতিপত্তি লাভ করেন ঔপন্যাসিক হিসেবে। তাঁকে বলা হয় কালজয়ী ঔপন্যাসিক। তিতাস একটি নদীর নাম শিরোনামের একটিমাত্র উপন্যাস লিখে তিনি বাংলা সাহিত্যের চিরস্মরণীয় ও অমর প্রতিভা হিসেবে সবিশেষ স্বীকৃতি লাভ করেন। প্রতিকূল সংঘাতে ক্রমশ মুছে-আসা মৎস্যজীবী যে মানুষদের কাহিনী এই উপন্যাসে বর্ণিত হয়েছে তিনি সেই 'মালো' সম্প্রদায়েরই লোক ছিলেন। উপন্যাসটিতে তিনি তাঁর ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ও সুগভীর অন্তঃদৃষ্টিতে ধীবর সমাজের নিষ্ঠুর জীবনসংগ্রামের সাধারণ কাহিনীকে দিয়েছেন অবিনশ্বর ও অসাধারণ ব্যঞ্জনা। তাই উপন্যাসটি তার অমর কীর্তি হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। কলকাতায় বিভিন্ন সময়ে তিনি নবশক্তি, দেশ, বিশ্বভারতী, মাসিক মোহাম্মদী, নবযুগ, আজাদ, ইত্যাদি অনেক পত্রিকায় সহকারী সম্পাদক হিসেবে কাজ করেন। ১৯৫১ সালের আজকের দিনে মৃত্যুবরণ করেন এই কৃতী ঔপন্যাসিক ও সাংবাদিক অদ্বৈত মল্লবর্মণ। মহান সাহিত্যিক অদ্বৈত মল্লবর্মণের আজ ৬৩তম মৃত্যুৃবার্ষিকী। বাংলা সাহিত্যের চিরস্মরণীয় ও অমর প্রতিভা অদ্বৈত মল্লবর্মণের মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি।


অদ্বৈত মল্লবর্মণ ১৯১৪ সালের ১ জানুয়ারি ব্রাহ্মণবাড়ীয়ার গোকর্ণঘাটে এক দরিদ্র ধীবর পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম অধরচন্দ্র। শৈশবেই পিতৃ-মাতৃহীন হন তিনি। গ্রামের মালোদের চাঁদার টাকায় তাঁর লেখাপড়ার খরচ নির্বাহ হতো। ১৯৩৩ সালে বর্তমান ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলা সদরে অবস্থিত অন্নদা উচ্চ ইংরেজী বিদ্যালয় থেকে ১ম বিভাগে ম্যাট্রিকুলেশন ডিগ্রী অর্জন করেন। এরপর কুমিল্লা জেলার ভিক্টোরিয়া কলেজে কিছুদিন আই,এ ক্লাসে অধ্যয়ন করেন। কিন্তু মেধাবী ছাত্র হওয়া সত্ত্বেও আর্থিক সঙ্কটের কারণে তাঁর পড়ালেখা শেষ হয়ে যায়।


১৯৩৪ সালে কলেজের পড়া ছেড়ে দিয়ে শুধুমাত্র অর্থ উপার্জন ও জীবিকা নির্বাহের উদ্দেশ্যে কুমিল্লার বিশিষ্ট চিকিৎসক ও সমাজসেবক ক্যাপ্টেন নরেন্দ্র দত্তের সঙ্গে কলকাতা চলে যান। সেখানে মাসিক 'ত্রিপুরা' পত্রিকার সাংবাদিক হিসেবে শুরু করেন কর্মজীবন। এরপর ১৯৩৬ সালে ক্যাপ্টেন নরেন দত্ত পরিচালিত 'নবশক্তি' পত্রিকায় যোগ দেন তিনি। পত্রিকাটির সম্পাদক কবি প্রেমেন্দ্র মিত্রের সহকারী হিসেবে সহ-সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালন করেন। নবশক্তি'র প্রকাশনা বন্ধ হয়ে গেলে তিনি মওলানা মোহাম্মদ আকরম খাঁ'র "মাসিক মোহাম্মদী" পত্রিকার সম্পাদকের সহকারী হিসেবে যোগদান করেন। তিন বছর একাধিক্রমে এ পদে দায়িত্ব পালন করেন অদ্বৈত। ১৯৩৪ সালে তিনি ভারতের মাসিক ত্রিপুরা পত্রিকার মাধ্যমে সাংবাদিকতা শুরু করেছিলেন এবং ১৯৩৪ থেকে ১৯৫০ সাল পর্যন্ত ১৬ বছর তার সাংবাদিক জীবনে যুগপৎ সাহিত্য ও সাংবাদিকতার অসাধারণ সাফল্য অর্জন করতে সক্ষম হন। এ সময়ে একই সঙ্গে দৈনিক আজাদ পত্রিকায় সাংবাদিকতা করেছিলেন তিনি। এছাড়াও, নবযুগ, কৃষক ও যুগান্তর পত্রিকায় সহকারী সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। আমৃত্যু তিনি এ পদে বহাল ছিলেন। আয় বৃদ্ধির জন্য বিশ্বভারতীর প্রকাশনা শাখায় খণ্ডকালীন চাকুরীও গ্রহণ করেন তিনি।


স্বল্পকালীন জীবনে অদ্বৈত মল্লবর্মণ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ রচনা করে গেছেন। তাঁর রচিত গ্রন্থসমূহ হচ্ছেঃ ১। তিতাস একটি নদীর নাম (উপন্যাস), ২। এক পয়সায় একটি (গ্রন্থ), ৩। সাদা হাওয়া (উপন্যাস), ৪। সাগরতীর্থে, ৫। নাটকীয় কাহিনী, ৬। দল বেঁধে (গল্পগ্রন্থ), ৭। রাঙামাটি। এ ছাড়া ভিনসেন্ট ভ্যান গঘের জীবন নিয়ে আরভিং স্টোনের মর্মস্পর্শী গ্রন্থ 'লাস্ট ফর লাইফ'-এর অনুবাদ করেছিলেন 'জীবনতৃষা' নামে৷ ঔপন্যাসিক অদ্বৈত মল্লবর্মন তাঁর অমর সৃষ্টিকর্ম ‘তিতাস একটি নদীর নাম' নামক কালজয়ী উপন্যাসের জন্য বাংলা সাহিত্যে অনন্য হয়ে আছেন। উপন্যাসটির শিল্পগুণ ও জীবন চিত্রায়ণের গভীরতর বোধের কারণেই কালজয়িতা অর্জন করেছেন। উপন্যাসটি একাধিক ভাষায় অনূদিত হয়েছে এবং দুই বাংলার যৌথ উদ্যোগে উপন্যাসটি চলচ্চিত্রায়িত হয়েছে। চলচ্চিত্রটি পরিচালনা করেন ঋতি্বক ঘটক। এছাড়াও তিনি বহু শিশুপাঠ্য কবিতাও রচনা করেছেন। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় তাঁর লেখা বেরোলেও চল্লিশের দশকে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমূখের পাশাপাশি বুদ্ধদেব বসু সম্পাদিত 'এক পয়সায় একটি' গ্রন্থ সিরিজ আকারে লিখে তিনি বিশেষভাবে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।


(২০১২ সালে নির্মিত অদ্বৈত মল্লবর্মণের পূর্ণাঙ্গ আবক্ষ মূর্তি)
চীরকুমার এবং নিঃসঙ্গ অথচ অকৃতদার অদ্বৈত মল্লবর্মণ বহু কৃচ্ছ্রসাধন ও উদয়াস্ত হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে যতটুকু আয়-উপার্জন করতেন তার অধিকাংশই ব্যয় করতেন দুঃস্থ পরিচিতজনদের মধ্যে। তাঁর গ্রন্থপ্রীতি ছিল অসাধারণ। নিদারুণ অর্থকষ্টের মধ্যেও যথাসম্ভব বই কিনেছেন তিনি। আর্থিক সঙ্গতি কম থাকা স্বত্ত্বেও কলকাতার মালোপাড়ার শিশু-কিশোরদের ঘরোয়া বিদ্যালয় পরিচালনায় নিয়োজিত উপেন্দ্রবাবুর স্বল্পশিক্ষিত বিধবা প্রফুল্লকে নিয়মিতভাবে আর্থিক সাহায্য করতেন। ২০১২ ইং সালের ১ জানুয়ারি তার ৯৮তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে ব্রাহ্মণবাড়ীয়ার জেলা প্রশাসকের উদ্যোগে এবং জেলা পরিষদের অর্থায়নে ব্রাহ্মণবাড়ীয়ার গোকর্ণঘাটে অদ্বৈত মল্লবর্মণের পৈতৃক বাড়ীতে তার আবক্ষ মূর্তি নির্মাণ করা হয়েছে।


১৯৫১ সালের ১৬ এপ্রিল মাত্র ৩৭ বছর বয়সে যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত হয়ে কলকাতার নারকেলডাঙ্গার ষষ্ঠীপাড়ার নিজ বাড়ীতে মৃত্যুবরণ করেন এই কৃতী ঔপন্যাসিক ও সাংবাদিক। নিম্নবর্গের জীবন নিয়ে সাহিত্য রচনায় অন্যতম অদ্বৈত মল্লবর্মণের আজ ৬৩তম মৃত্যুৃবার্ষিকী। বাংলা সাহিত্যের চিরস্মরণীয় ও অমর প্রতিভা অদ্বৈত মল্লবর্মণের মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি।
৩টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×