বিখ্যাত সমাজসেবক এবং দানবীর রায় বাহাদূর রণদাপ্রসাদ সাহার ৪৩তম মৃত্যুবার্ষিকীেতে শ্রদ্ধাঞ্জলি
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
বাংলাদেশের বিখ্যাত সমাজসেবক এবং দানবীর ব্যক্তিত্ব রণদাপ্রসাদ সাহা। আর. পি. সাহা নামেই তিনি সমধিক পরিচিত ছিলেন। গ্রামের এক সাধারণ বাঙালী ঘরের মানুষ রণদা নিজের চেষ্টায় ও পরিশ্রমে বিত্তশালী হয়েছিলেন। বিত্তবৈভবের সবকিছু অকাতরে দান করেছিলেন মানুষের কল্যাণে। তিনি বাংলাদেশে হাসপাতাল, একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং গরীবদের কল্যাণার্থে ট্রাস্ট গঠন করেন। মানবতাধর্মী কাজে সম্পৃক্ত থাকায় তৎকালীন বৃটিশ সরকার রণদাপ্রসাদ সাহাকে রায় বাহাদুর খেতাব প্রদান করেন। পরবর্তীতে ১৯৭৮ সালে বাংলাদেশ সরকার মানবসেবায় অসামান্য অবদান রাখায় ও তাঁর কাজের যথাযথ স্বীকৃতিস্বরূপ তাকে স্বাধীনতা পুরস্কার (মরণোত্তর) প্রদান করেন। বিশাল হৃদয়ের এই মানুষটিকে ১৯৭১ সালে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর দোসর রাজাকার-আলবদর বাহিনী কর্তৃক অপহৃত হন। পরবর্তীতে তার আর কোন খোজ পাওয়া যায় নি। ধরনা করা হয় সেই দিনই তাকে হত্যা করা হয়। সে হিসেবে আজ এই দানবীরের মৃত্যৃুবার্ষিকী। সমাজসেবক এবং দানবীর রায় বাহাদূর রণদাপ্রসাদ সাহার মৃত্যুদিনে শ্রদ্ধাঞ্জলি।
১৮৯৬ সালের ৯ নভেম্বর সাভারের কাছে কাছৈড় গ্রামের নানাবাড়িতে রণদাপ্রসাদ সাহা জন্ম গ্রহণ করেন। তার পৈত্রিক বাড়ি টাঙ্গাইল জেলার মির্জাপুরে। বাবা দেবেন্দ্রনাথ পোদ্দার ও মা কুমুদিনী দেবীর চার সন্তানের (তিন ছেলে ও এক মেয়ে) মধ্যে রণদা ছিলেন দ্বিতীয়। বাবা ছিলেন দলিল লেখক আর মা ছিলেন গৃহিণী। উনিশ শতকের গোড়ার দিকে গ্রামবাংলার আর দশজন শিশুর মতোই রণদারও হাতেখড়ি হলেও লেখা পড়া বেশীদূর আগায় নি। কারন তার ৭ বছর বয়সে সন্তান প্রসবকালে ধনুষ্টংকারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন মাতা কুমুদিনী দেবী। তাই পুঁথি ও প্রতিষ্ঠানের বিদ্যা তাঁর অর্জন করা হয়নি। তবে তিনি ছিলেন স্বশিক্ষিত; গ্রামের নদী, নিসর্গ ও মানুষ, কলকাতা শহরের নাগরিক বাস্তবতা, তত্কালীন পরিস্থিতি- এসবের কাছ থেকে ভালোই শিক্ষা পেয়েছিলেন তিনি। নিজস্ব আদর্শ ও চিন্তাধারাও তৈরি হয়েছিল সেসব শিক্ষার গুণেই। প্রথম স্ত্রী মারা যাওয়ার পর ছেলেমেয়েদের দেখাশুনার জন্য দেবেন্দ্রনাথ দ্বিতীয় বিয়ে করেন। কিন্তু সৎ মায়ের অনাদর ও নিষ্ঠুরতা রণদাকে একরোখা ও বেপরোয়া করে তোলে। অবস্থা দেখে বাবা রণদাকে পাঠিয়ে দিলেন মামাবাড়ি সাভারের শিমুলিয়ায়। মা'হারা রণদার মন বাবা ও সত্ মায়ের অনাদরে এতটাই বিষিয়ে উঠেছিল যে মামা বাড়িতেও আর তাঁর মন বসল না। সেখান থেকে তিনি পালিয়ে গেলেন কলকাতায়। অপরিচিত কলকাতায় তার কোনো আশ্রয় নেই। জীবন ধারনের জন্য তখন কুলিগিরি, রিক্সা চালানো, ফেরি করা, খবরের কাগজ বিক্রির মতো বিচিত্র কাজ করেছেন রণদা। কলকাতায় তখন কাজের সন্ধানে ছুটে আসা ভুখা মানুষের ভিড়, গ্রামের পর গ্রাম উজাড় করে দেয়া ম্যালেরিয়া- এসবই তাঁকে স্বদেশি আন্দোলনের দিকে নিয়ে যায়। মানুষের দুর্দশা লাঘবের জন্য বিপ্লবের দীক্ষা নেন তিনি। এজন্য অচিরেই তাঁকে পুলিশের মারধর ও জেল খাটতে হয়।
(প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় '১৯১৪-১৯১৮' সালে রণদাপ্রসাদ সাহা)
১৯১৪ সালে সারা বিশ্বে মহাযুদ্ধের দামামা বেজে উঠল। বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের নেতা সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় বিপ্লবীদের আহ্বান জানালেন ইংরেজদের হয়ে বিশ্বযুদ্ধে লড়ার জন্য। স্বেচ্ছাসেবী বেঙ্গল অ্যাম্বুলেন্স কোরের হয়ে যুদ্ধে নামলেন রণদাপ্রসাদ সাহা। ব্রিটিশ সেনাদের তখন দারুণ খাদ্যাভাব, নানা রোগে আক্রান্ত তারা। রণদা আহত সৈনিকদের সেবায় একেবারে ডুবে গেলেন। তিনি শত্রুদের চোখ এড়িয়ে সবার জন্য খাদ্য সংগ্রহ করতেন। ব্রিটিশ সেনাবাহিনী যখন বাগদাদে বন্দি তখন সেখানে ছিল অ্যাম্বুলেন্স কোরও। একদিন হঠাত্ সামরিক হাসপাতালে আগুন লেগে যায়। আগুনের ভয়ে সবাই জীবন নিয়ে পালিয়ে যাচ্ছিল। তখন রণদা প্রসাদ দাউদাউ করে জ্বলতে থাকা হাসপাতালের ভেতরে ঢুকে একজন রোগীকে উদ্ধার করে নিয়ে আসেন। তাঁকে দেখে আরও তিনজন উদ্ধার কাজে যোগ দিলেন। শেষ রোগীটিকে বের করে এনে অজ্ঞান হয়ে গেলেন রণদা। সুস্থ্য হয়ে দেশে ফেরার পর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও রণদাকে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন। বেঙ্গল রেজিমেন্টে ভর্তি হয়ে রণদা যখন ইরাক যান তখন তাঁর সাথে দেখা হয় লম্বা চুল, বড় বড় চোখ আর প্রাণবন্ত এক যুবকের। তিনি কাজী নজরুল ইসলাম। রণদা তখন অস্থায়ী সুবাদার মেজর। রণদাপ্রসাদ সাহা কাজী নজরুল ইসলামকে সংগীত বিভাগে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। কাজী নজরুল ইসলামও নিজের পছন্দের কাজটি পেয়ে খুশি হয়েছিলেন।
ব্রিটিশ সরকার প্রথম মহাযুদ্ধ থেকে ফিরে আসা ভারতীয়দের সবাইকে যোগ্যতা অনুসারে চাকরি দিয়েছিল। লেখাপড়া সামান্য হলেও যুদ্ধে তাঁর অবদানের কথা বিবেচনা করে রেলওয়ের কালেক্টরেটের চাকরি দেওয়া হয়েছিল রণদাপ্রসাদকে। কর্মস্থল ছিল সিরাজগঞ্জ থেকে শিলাইদহ। মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে পড়ার কারণে ১৯৩২ সালে এই চাকরিতে ইস্তফা দেন তিনি। ক্ষতিপূরণ হিসেবে যে টাকাটা পান তা দিয়ে শুরু করেন কয়লার ব্যবসা। প্রথমে বাড়ি বাড়ি কয়লা সরবরাহ, পরে বড় বড় প্রতিষ্ঠানে কয়লা সরবরাহের কাজ করেন রণদাপ্রসাদ। ময়মনসিংহের মুক্তাগাছার জমিদার সতীশ চৌধুরী্র পরামর্শ ও আর্থিক সহযোগিতায় মাত্র ছয় বছরে কলকাতার একজন প্রতিষ্ঠিত কয়লা-ব্যবসায়ী হয়ে উঠলেন রণদাপ্রসাদ। কয়লার ব্যবসার সূত্রে রণদা নৌযানের ব্যবসা শুরু করলেন। অন্য ব্যবসায়ীরা যখন ব্যবসায় ব্যর্থ হয়ে কোনোকিছু জলের দামে বেচে দিত, রণদা তা কিনে নিয়ে নতুন করে দাঁড় করাতেন। কোনো ব্যবসার সমস্যাগুলো দ্রুত খুঁজে বের করে সেটিকে আবার পুনর্জীবিত করে তুলতেন তিনি। এ সময়ে দ্য বেঙ্গল রিভার সার্ভিস কোম্পানি (The Bengal River Service Company) নামে নৌ-পরিবহন সংস্থা এবং নৌ-পরিবহন বীমা কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন। এই কোম্পানির মাধ্যমেই তিনি নিজেকে একজন সফল নৌপরিবহন ব্যবসায়ী করে তোলেন। নৌপথে মালামাল আনা-নেয়ার কাজে নিয়োজিত বেঙ্গল রিভার সার্ভিস প্রথমে যৌথ মালিকানায় থাকলেও পরে সব অংশীদারের অংশ কিনে নেন রণদা। ১৯৪২ – ১৯৪৩ সালে সরকারের খাদ্যশস্য ক্রয়ের এজেন্ট নিযুক্ত হন রণদা। ১৯৪৪ সালে নারায়ণগঞ্জে পাটের ব্যবসায় নামেন এবং জর্জ এন্ডারসনের কাছ থেকে ‘জুট প্রেসিং বিজনেস’ এবং ‘গোডাউন ফর জুট স্টোরিং’ ক্রয় করে নেন। এরপরে নারায়ণগঞ্জ, ময়মনসিংহ ও কুমিল্লায় ইংরেজদের মালিকানাধীন তিনটি পাওয়ার হাউস ক্রয় করেন। চামড়ার ব্যাবসাও শুরু করেন এই সময়। এভাবেই নিজ মেধা ও পরিশ্রমের মাধ্যমে ধনকুবেরে পরিণত হন। তবে অর্থ বিত্তে বড় হলেও অর্থভাবে মায়ের মৃত্যুকে ভুলেননি রনদা। মায়ের সেই স্মৃতি তাঁকে তাড়িয়ে ফিরেছে সব সময়। তাই পরিণত জীবনে দুস্থ মানুষের সেবা দিতে গড়ে তুলেছেন মায়ের নামে দাতব্য প্রতিষ্ঠান কুমুদিনি ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট।
(বিচারপতি আবু সাদত চৌধুরীর সাথে রণদাপ্রসাদ সাহা)
১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর রণদাপ্রসাদ বাংলাদেশে চলে আসেন। এ কারণে দুই দেশের ব্যবসা দুভাগ হয়ে যায়। ভারতে থাকা কুমুদিনী ওয়েলফেরার ট্রাস্টের টাকায় পরিচালিত হতে থাকে কলকাতা, কালিংপং ও মধুপুরের কিছু দাতব্য প্রতিষ্ঠান। এদেশে-বাংলাদেশে (তত্কালীন পূর্ব পাকিস্তান) থাকা প্রতিষ্ঠানগুলো আলাদা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পায়। এই বছরই রণদাপ্রসাদের সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান কুমুদিনী ওয়েলফেরার ট্রাস্ট অব বেঙ্গলের আওতাভুক্ত হয়। নিজের স্বার্থ নয়, মানুষের কল্যাণকে বড় করে দেখার মানসিকতা থেকেই তাঁর ব্যবসা পরিচালিত হতে থাকে। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এই ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। কোনো ফলের আশা নয়, কর্মকেই জীবনের ব্রত হিসেবে নিয়েছিলেন। নিম্নবিত্তের সন্তান হয়েও জীবনে কঠোর পরিশ্রম করে যে বিশাল সম্পদ তিনি অর্জন করেছিলেন তার সবটুকুই অকাতরে বিলিয়ে গেছেন। সম্পদ তিনি নিজের জন্য অর্জন করেননি, করেছেন মানুষের কল্যাণে ব্যয় করার জন্য। জীবনে ব্যক্তি থেকে প্রতিষ্ঠানে এবং প্রতিষ্ঠান থেকে এক নির্মোহ মহত্ মানুষে পরিণত হয়েছিলেন তিনি। গৃহী হয়েও ছিলেন সন্ন্যাসী। তিনি বলতেন 'মানুষের দুটো জাত- একটা নারী আর একটা পুরুষ আর মানুষের ধর্ম একটাই, সেটা মানবধর্ম।' তাঁর গড়ে তোলা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষার্থীদেরও তিনি এই আদর্শের শিক্ষাই দিতে চেয়েছেন। জীবনে কর্মের মন্ত্রে দীক্ষিত ছিলেন তিনি। এসব জীবনদৃষ্টিই তাঁকে এক মহামানুষে পরিণত করেছিল।
(বাঁ থেকে বড় মেয়ে বিজয়া, রণদাপ্রসাদ সাহা, ছোট মেয়ে জয়া ও ছেলে রবি)
সংস্কারমুক্ত সমাজ গঠনের স্বপ্ন দেখতেন রণদাপ্রসাদ সাহা। এ কারণেই শহর থেকে দূরে টাঙ্গাইলের মির্জাপুরকে কর্মস্থল হিসেবে বেছে নেন। অতঃপর মির্জাপুর গ্রামের প্রভাবশালী তালুকদার সতীশচন্দ্র পোদ্দারের কণ্যা কিরণবালা দেবীকে বিয়ে করে করেন। কিরণবালা দেবী ছিলেন রণদাপ্রসাদের সুযোগ্য সহধর্মিণী। মানুষের কল্যাণে নিবেদিত ছিলেন তিনিও। ১৯৩৮ সালে কুমুদিনী হাসপাতালের শোভা সুন্দরী ডিসপেন্সারির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের সময় কিরণবালা ২০০ ছাত্রীর জন্য একটি আবাসিক বালিকা বিদ্যালয় ভারতেশ্বরী হোমসের ভিত্তিপ্রস্তরও স্থাপন করেন। একটি সমাজের উন্নতির জন্য পুরুষের পাশাপাশি নারীদেরও এগিয়ে নেবার এজন্য ১৯৪৪ সালে মির্জাপুরের মতো বদ্ধগ্রামেপাশ্চাত্য ভাবধারায় গড়ে তুলেছিলেন ভারতেশ্বরী হোমসকে যা ছিলো বিরাট চ্যালেঞ্জ। যোগেন্দ্রচন্দ্র পোদ্দারের (সম্পর্কে রণদার কাকা) বাড়ির আঙিনায় শুরু হয়েছিল এ স্কুল। তারপর ধীরে ধীরে এ স্কুল আদর্শ এক বিদ্যাপীঠে পরিণত হয়েছে। প্রথা ও কুসংস্কারের জালে বন্দি নারীদের শিক্ষিত করার চ্যালেঞ্জ নিয়ে এবং সমাজপতিদের চোখরাঙানি উপেক্ষা করে টাঙ্গাইলে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন কুমুদিনী মহিলা কলেজ। এটিই দেশের প্রথম আবাসিক মহিলা ডিগ্রি কলেজ। নারী সমাজের উন্নয়নেই যে তিনি কেবল মনোযোগী ছিলেন তা নয়, নারীশিক্ষার পাশাপাশি পুরুষদের জন্য তিনি মানিকগঞ্জে তার বাবার নামে প্রতিষ্ঠ করেন দেবেন্দ্র সরকারি কলেজ।
('শাহজাহান' নাটকে অভিনয় করছেন রণদাপ্রসাদ সাহা, সঙ্গে সহশিল্পী)
রণদাপ্রসাদ অনুভব করেছিলেন শিক্ষার অভাবের মতো চিকিৎসার অভাব গ্রামের মানুষের জীবনে প্রবল। চিকিত্সার অভাবে অনেককেই মরতে দেখেছেন তিনি। মায়ের মতো অনেক নারীর অকাল মৃত্যু তাঁর মনে স্থায়ী প্রভাব ফেলেছিল। তাই গ্রামের মানুষের সুচিকিত্সার জন্য তিনি মায়ের নামে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন কুমুদিনী হাসপাতাল। তত্কালীন সময়েই এটি ছিল দেশের হাতেগোনা উন্নত চিকিত্সার সুযোগ সমৃদ্ধ হাসপাতালগুলোর একটি। মাত্র ২০ শয্যা নিয়ে ১৯৪৪ সালে যাত্রা শুরু হয় এই হাসপাতালের। পরবর্তীতে ৭৫০ শয্যার হাসপাতালে উন্নীত হয়। দেশের দূর-দূরান্তের গরিব রোগীরা চিকিত্সা পাওয়ার আশায় আসে এ হাসপাতালে। রোগীদের থাকা-খাওয়া থেকে শুরু করে সুচিকিত্সার যাবতীয় খরচ বহন করে কুমুদিনী কল্যাণ সংস্থা। কুমুদিনী হাসপাতালের চিকিত্সা ব্যবস্থায় কোনো শ্রেণীভেদ নেই। এখানে ধনী ও গরিব সবাই সমান সুযোগ ও সুচিকিত্সা পায়। এ হাসপাতালে কোনো কেবিন নেই। সবার জন্য অভিন্ন ঢালাও ব্যবস্থা। হাসপাতালের পাশেই একটি মহিলা মেডিক্যাল কলেজ প্রতিষ্ঠারও উদ্যোগ নিয়েছিলেন তিনি তবে সে স্বপ্ন তিনি সফল করে যেতে পারেননি। ব্যবসায়ী, বিদ্যুৎসাহী ও সমাজ সেবার পাশাপাশি রণদাপ্রসাদ সাহা ছিলেন সংস্কৃতিপ্রাণ একজন মানুষ। অন্যের মধ্যে শিল্প ও সংস্কৃতির গুণ দেখলে তিনি যেমন তা উস্কে দিতেন, তেমনি নিজেও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিলেন। শুরু থেকেই ভারতেশ্বরী হোমসে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করতেন তিনি। ১৯৪৮ সালে মির্জাপুরে বিপুল উত্সাহ নিয়ে গড়ে তুলেছিলেন সৌখিন নাট্যসংঘ ও মঞ্চ। এমন আধুনিক মঞ্চ তখন পূর্ববাংলার রাজধানী ঢাকায়ও ছিল না। ১৯৬৯ সালের পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ১২ ও ১৩ ডিসেম্বর দুই দিন আনন্দ নিকেতন মঞ্চে ক্ষীরদাপ্রসাদ রচিত 'আলমগীর' নাটকটি মঞ্চস্থ হয়। এই নাটকে বাদশাহ আলমগীরের ভূমিকায় রণদাপ্রসাদের অভিনয় দর্শকদের মুগ্ধ করেছিল।
১৯৭১ সালে পাকিস্তানী হানাদাররা বাঙালী নিধন শুরু করে। শুরু হয় বাঙালীর মুক্তির সংগ্রাম। সেই লড়াইয়ে অংশ নেন রণদাপ্রসাদ সাহা। স্বাধীনতা যুদ্ধের সেই দিনগুলোতে আহত মুক্তিযোদ্ধারা সাধারণ রোগীর বেশে এসে চিকিত্সা নিচ্ছিল কুমুদিনী হাসপাতালে। যুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানী কর্তৃপক্ষের সাথে রণদাপ্রসাদের ভাল সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও ১৯৭১ সালের এপ্রিল মাসে পাকহানাদার বাহিনী রণদা ও তার ২৬ বছর বয়সী সন্তান ভবানীপ্রসাদ সাহা (রবি)-কে তুলে নিয়ে যায়। এক সপ্তাহ পর তারা বাড়ী ফিরে আসলেও ৭ মে পাকিস্তানী হানাদারদের দোসর রাজাকার-আলবদররা নারায়ণগঞ্জ থেকে রণদাপ্রসাদ ও তাঁর পুত্র ভবানীপ্রসাদকে পুনরায় ধরে নিয়ে যায়। তারপর তাঁদের আর কোনো খোঁজ মেলেনি। ধরনা করা হয় সেই দিনই তাকে হত্যা করা হয়। পাক হানাদার বাহিনীর দোসররা স্বামী ও সন্তানকে ধরে নেয়ার পর থেকেই শোকে শয্যাশায়ী হন দানবীর রণদাপ্রসাদের স্ত্রী কিরণবালা দেবী। শেষ জীবনে তিনি নির্বাক হয়ে যান। দীর্ঘদিন শয্যাশায়ী থাকার পর ১৯৮৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি পরলোকগমন করেন তিনি।
আজ দানবীর রণদাপ্রসাদ সাহার ৪৩তম অন্তর্ধান/মৃত্যৃুবার্ষিকী। সমাজসেবক এবং দানবীর রায় বাহাদূর রণদাপ্রসাদ সাহার মৃত্যুবার্ষিকীতে আমাদের গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি।
৮টি মন্তব্য ৬টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
ধর্ম ও বিজ্ঞান
করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন
তালগোল
তুমি যাও চলে
আমি যাই গলে
চলে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফুরালেই দিনের আলোয় ফর্সা
ঘুরেঘুরে ফিরেতো আসে, আসেতো ফিরে
তুমি চলে যাও, তুমি চলে যাও, আমাকে ঘিরে
জড়ায়ে মোহ বাতাসে মদির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন
মা
মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।
অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন
কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।
একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন
ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে
ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন