somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভারতীয় সাহিত্যিক বিভূতিভূষণ মুখোপাধ্যায়ের ২৭তম মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি

৩০ শে জুলাই, ২০১৪ দুপুর ২:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বাংলা সাহিত্যে ভারতীয় জনপ্রিয় ঔপন্যাসিক ও ছোট গল্পকার বিভূতিভূষণ মুখোপাধ্যায়।
সাহিত্যের বিভিন্ন ধারার উপন্যাস ও গল্পগ্রন্থের রচয়িতা। এযুগের পাঠক গণশা ঘোঁতনার রচয়িতা হিসেবে বিভূতিভূষণকে চিনলেও আজ থেকে প্রায় ৭২ বছর আগে (বাংলা ১৩৪৯ সালে) প্রকাশিত তার জনপ্রিয়তম উপন্যাস ছিল নীলাঙ্গুরীয়। বিভূতিভূষণ মুখোপাধ্যায়ের রসরচনায়ও রয়েছে অসামান্য দক্ষতা। তিনি অনেক কৌতুক ও রঙ্গরসের গল্পও লিখেছেন। বিভূতিভূষণ মুখোপাধ্যায়ের কর্মক্ষেত্র ছিল বৈচিত্র ময়। কর্মজীবনের প্রথম দিকে তিনি ইন্ডিয়ান নেশন পত্রিকার কার্যাধ্যক্যের পদে আসিন ছিলেন। পরে বিহারের দ্বার ভাঙ্গায় মহারাজের সচীব হিসাবেও কাজ করেন। আবার পরবর্তি কালে কিছুকাল শিক্ষাকতাও করেছেন। শিক্ষাকতা চলা কালিন তিনি নিজেকে লেখার কাজে নিয়োজিত করেন। আজ ৩০ জুলাই লেখক বিভূতিভূষণ মুখোপাধ্যােয়ের ২৭তম মৃত্যুবার্ষিকী। সাহিত্যিক বিভূতিভূষণ মুখোপাধ্যােেয়ের মৃত্যুবার্ষিকীতে গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি।


বিভূতিভূষণ মুখোপাধ্যায় ১৮৯৪ সালের ২৪ অক্টোবর বিহারের দ্বারভাঙ্গা জেলার পান্ডুল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম বিপিন বিহারী মুখোপাধ্যায়। তার আদি নিবাস হুগলী জেলার চাতরা। বিভূতিভূষণ মুখোপাধ্যায়ের আদি নিবাস হুগলী জেলার চাতরা হলেও তার তিন পুরুষের বাস বিহারের দ্বারভাঙ্গায়। বিভূতিভূষণ মুখোপাধ্যায় দারভাঙ্গা রাজ স্কুল থেকে ম্যাট্রিক, রিপন কলেজ থেকে আই এ এবং পাটনা বি এন কলেজ থেকে বি এ পাশ করেন। ১৯১৬ থেকে ১৯৪২ পর্যন্ত কর্মজীবনে বিভূতিভূষণ মুখোপাধ্যায় বিভিন্ন স্কুলে শিক্ষকতা, ধনী পরিবারে গৃহ-শিক্ষকতা, দ্বারভাঙ্গা-মহারাজের একান্ত সচিব, রাজপ্রেসের ও 'ইন্ডিয়ান নেশন' পত্রিকার ম্যানেজার পদে নিয়োজিত ছিলেন।


বিভূতিভূষণ মুখোপাধ্যায়ের কৌতুক গল্পের বই 'বরযাত্রী'র ছয় বন্ধু গণশা, ঘোঁতনা, ত্রিলোচন, গোরাচাঁদ, রাজেন আর কে. গুপ্তের সঙ্গে পরিচয় নেই বাংলা সাহিত্যের এমন পাঠক বোধহয় কমই আছেন। অল্প দু চার কথায় কি করে জীবন্ত চরিত্রদের সৃষ্টি করা যায় বা একটা সমাজকে এরকম সুস্পষ্ট ভাবে তুলে ধরা যায় - বিভূতিভূষণ সেটি অতি সহজে সবাইকে দেখিয়ে দিয়েছেন। কৌতুক রসের এরকম বই বাংলা সাহিত্যে বেশি নেই। কৌতুক রসের তাঁর আরেকটি বিখ্যাত সৃষ্টি 'রানু' সিরিজের গল্পগুলি। কিন্তু বিভূতিভূষণের প্রতিভা ছিল বহুমুখী। ছোটদের জন্য পুজোসংখ্যায় তিনি নিয়মিত লিখেছেন, 'পোনুর চিঠি' ও অন্যান্য নানান গল্প - যা বুড়োরাও পরম উৎসাহে পড়েছে।


বিভূতিভূষণ মুখোপাধ্যায়ের উল্লেখযোগ্য সাহিত্যকর্মঃ ১। বরযাত্রী, ২। রানু সিরিজের গল্প গুলি, ৩। সর্গাদপী গরীয়সী, ৪। দুয়ার হতে অদূরে, ৫। কুশীপ্রাঙ্গনের চিঠি, ৫। একই পথের দুই প্রান্ত্রে, ৬। অযাত্রার জয়যাত্রা, ৭। পনুর চিঠি, ৮। কৈলাশের পাঠরানী, ৯। দুষ্টু লক্ষিদের গল্প, ১০। জীবন তীর্থ (আত্মজীবনী), ১১। কাঞ্চনমূল্য (শরৎস্মৃতি পুরস্কার পান), ১২। এবার প্রিয়ংবদা ইত্যাদি। তাঁর ভ্রমণধর্মী রচনাগুলি, যেমন 'কুশী প্রাঙ্গনের চিঠি', 'দুয়ার হতে অদূরে' বা 'অযাত্রার জয়যাত্রা' অত্যন্ত সুখপাঠ্য। রাণুর প্রথম ভাগ গল্পটি তার রাণুর প্রথম ভাগ গল্পগ্রন্থের অন্তর্গত। একটি ছোট্ট বালিকা আর তার কাকার স্নেহমাখা সম্পর্ক নিয়ে গল্পটি রচিত। পরবর্তীতে বিভূতিভূষণ রাণুকে নিয়ে আরো কয়েকটি গল্প লিখলেও ‘রাণুর প্রথম ভাগ’ গল্পটিই বেশি পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছে। শিশুর মনোজগত পড়তে পারার বিরল ক্ষমতার কারণে বাংলা সাহিত্যে তিনি ‘রাণুর মেজকা’ হিসেবেও পরিচিত।


তাঁর জনপ্রিয়তম উপন্যাস 'নীলাঙ্গুরীয়'র নায়ক নায়িকা ছিলেন বিভূতিভূষণের নিজের পিতা মাতা। তিনি নিজেও (শৈলেন) স্থান পেয়েছেন সেই গ্রন্থে। উপন্যাসটির নায়ক শৈলেন একজন সাধারণ মধ্যবিত্ত বাঙালীর সন্তান। সদ্য বি.এ পাশ করেছে - গল্প কবিতা লেখে। হঠাৎ পত্রিকায় একটি চাকরির বিজ্ঞাপন তার দৃষ্টি আকর্ষণ করল। এক ব্যারিষ্টার তাঁর নয় দশ বছর বয়েসের কন্যার জন্য একজন গ্র্যাজুয়েট গৃহশিক্ষক খুঁজছেন। আবেদনকারীকে স্বয়ং এসে সাক্ষাৎ করতে হবে। শৈলেন সেখানে গিয়ে ব্যারিস্টারের দেখা পেল না; যার দেখা পেল - সে ব্যারিস্টারের অষ্টাদশী কন্যা মীরা। বোঝা গেল সেই মোটামুটি বাড়ির কর্ত্রী। পাঠকদের বলতে হবে না যে, মীরা আর শৈলেনের পরস্পরের প্রতি অস্পষ্ট অনুচ্চারিত আকর্ষণই এই উপন্যাসের মূল উপজীব্য। টান টান করে লেখা এই বই শেষ পাতা পর্যন্ত পাঠককে ধরে রাখে। চাইলেও শৈলেনের কাছে মীরা নিজেকে সহজ করে তুলে ধরতে পারে নি আভিজাত্যের গরিমায়; তার আচরণে বারংবার মনিব-ভৃত্যের সম্পর্কটাই যেন প্রকট ভাবে প্রকাশ পেয়েছে। শৈলেন সমাজের উঁচুতলার মীরার এই আকর্ষণকে পরে উল্লেখ করেছে 'ঘৃণামিশ্রিত ভালোবাসা' বলে। অন্যপক্ষে শৈলেনও মনঃস্থির করে উঠতে পারে নি; পারে নি ভালোবাসার দাবী নিয়ে সাহস ভরে মীরার সামনে এসে দাঁড়াতে। ঘটনাচক্রে দুজনের ভালোবাসা যখন দুজনের কাছে সুস্পষ্ট হল, তখন বড় দেরি হয়ে গেছে। মীরার বিয়ে হয়ে গেলেও শৈলেন আর বিয়ে করে নি। বইয়ের শেষে ইঙ্গিত আছে যে, সে আর করবেও না। ভালোবাসা খাঁটি সোনা, আর সেই সুবর্ণটি দেওয়া হয়ে গিয়েছে মীরাকে। বিভূতিভূষণ নিজে অকৃতদার ছিলেন। তরুণ বয়সে উনি একটি কম বয়সী মেয়ের গৃহশিক্ষক ছিলেন বলেও শোনা যায়। 'নীলাঙ্গুরীয়'র ঘটনাবলী এতো মর্মস্পর্শী যে অনেকের মনেই প্রশ্ন জেগেছিল এর মধ্যে বিভূতিভূষণের নিজের জীবন কিছুটা লুকিয়ে আছে কিনা! ১৯৪৩ সালে সে যুগের খ্যাতনামা পরিচালক গুণময় বন্দ্যোপাধায় 'নীলাঙ্গুরীয়' বইটি নিয়ে সিনেমা করেছিলেন। ছবি বিশ্বাস সেজেছিলেন ব্যারিস্টার বাবা। মীরার ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন যমুনা বড়ুয়া, আর শৈলেন হয়েছিলেন ধীরাজ ভট্টাচার্য।


সাহিত্যে উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য বিভূতিভূষণ মুখোপাধ্যায় ১৩৬৪ সালে সুরেশচন্দ্র স্মৃতি পুরুস্কার, ১৯৫৭ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের শরৎস্মৃতি পুরুস্কার, ১৯৭২ সালে রবীন্দ্র পুরুস্কার, ১৯৭৫ সালে ডি এল রায় রীডারশিপ' বক্তা পুরস্কার, ১৯৭৬ সালে জগত্তারিনী পদক, ১৯৮৬ সালে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ডি লিট উপাধি এবং ১৯৮৭ সালে বিশ্বভারতীর 'দেশিকোত্তম' পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়া বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের বহু পুরুস্কার লাভ করেন বিভূতিভূষণ মুখোপাধ্যায়। ১৯৮৭ সালেল ৩০ জুলাই বিহারের দ্বারভাঙ্গায় মৃত্যুবরণ করেন সাহিত্যিক বিভূতিভূষণ মুখোপাধ্যায়। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৮৩ বছর। আজ তাঁর ২৭তম মৃত্যুবার্ষিকী। ভারতীয় সাহিত্যিক বিভূতিভূষণ মুখোপাধ্যায়ের ২৭তম মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি।
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×