"ওজোনস্তর সুরক্ষাঃ লক্ষ্যে আমরা অবিচল" প্রতিপাদ্য নিয়ে আজ পালিত হচ্ছে আর্ন্তজাতিক ওজোন দিবস
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
আজ ১৬ সেপ্টেম্বর আর্ন্তজাতিক ওজোন দিবস। এবছরের আন্তর্জাতিক ওজোন দিবসের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘ওজোনস্তর সুরক্ষা: লক্ষ্যে আমরা অবিচল’। বায়ুমন্ডলের ওজোনস্তর সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে ভূমন্ডলকে রক্ষা করে। পরিবেশ বিজ্ঞানীদের মতে কার্বন-ডাই অক্সাইড, মিথেন, কোরোফুরোকার্বন (সিএফসি), নাইট্রাস অক্সাইড, কার্বন টেট্রাকোরাইড, সালফার হেক্সাকোরাইড, পার ফোরোকার্বন প্রভৃতি ওজোনস্তর ধ্বংস করে। তবে সিএফসি গ্যাস সরাসরি ওজোনস্তরকে ধ্বংস করে। ওজোনস্তর পৃথিবীকে ছাতার মতো আড়াল করে বহুকাল ধরে রেখেছে। এ ছাতার কারণে সূর্যের অতিবেগুনি ক্ষতিকর রশ্মি পৃথিবীর বুকে আসতে পারে না। ওজোনস্তর তাকে আসতে দেয় না। সে জন্যই পৃথিবীতে আমরা জীব-জগৎ টিকে আছি। সভ্যতা টিকে আছে। প্রাণবৈচিত্র্য রয়েছে।
সূর্যের ক্ষতিকর বেগুনি রশ্মির ৯৯ ভাগ ওজোনস্তর শোষণ করে। মাত্র একভাগ পৃথিবীতে এসে পড়ে। সেই একভাগও বিশ্বের জীব-প্রাণবৈচিত্র্যের জন্য হুমকি। মানুষসহ প্রাণিজগতের জন্য সূর্য থেকে আসা ক্ষতিকর আলট্রাভায়োলেট তথা অতিবেগুনি রশ্মি থেকে রক্ষায় বায়ুমণ্ডলের ওজোন স্তর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অতিবেগুনি রশ্মির ৯৭ থেকে ৯৯ শতাংশই শোষিত হয় এ স্তরে। পৃথিবীর উপরিভাগে ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরত্বে স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার অঞ্চলে ৯০ শতাংশ ওজোন স্তর। ১৯১৩ সালে ফরাসি পদার্থবিদ চার্লস ফ্যাব্রি ও হেনরি বাইসন ওজোন স্তর আবিষ্কার করেন। এ স্তরের বৈশিষ্ট বের করেন ব্রিটিশ আবহবিদ জিএমবি ডবসন। তিনি নিজের তৈরি স্পেকট্রোফটোমিটার বা সরল বর্ণবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে ভূমি থেকেই স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের ওজোন মাপার কৌশল বের করেন। বিজ্ঞানীরা বলছেন, সাধারণত বিষুবরেখার কাছাকাছি ওজোনের পরিমাণ কম, আর মেরু এলাকায় বেশি।বসন্তকালে ওজোন স্তর বেশি পুরু, আবার শরতে কম।উত্তর আর দক্ষিণ গোলার্ধের মাঝামাঝি থেকে উচ্চতর অক্ষাংশে বেশি পরিমাণে ওজোন গ্যাস থাকে। ওজোনের এ তারতম্য আবহাওয়ার পরিবর্তন ও সৌরশক্তির তীব্রতায়। কিন্তু ক্ষতিকর অতিবেগুনি রশ্মি শোষণের জাল ওজোন স্তর দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে।
ওজোন গাঢ় নীল রঙের একটি গ্যাসের নাম। ওজোনের এক অণু অক্সিজেনের তিন পরমাণু নিয়ে গঠিত। অক্সিজেনের অপেক্ষা ওজোন দেড় গুণ ভারী এবং অধিক কার্যকর। পানি ও বাতাস বিশুদ্ধ করতে ওজোনের ব্যবহার রয়েছে। বাতাসে ওজোনের পরিমাণ সহনীয় মাত্রার বেশি হলে জীবকুলের জন্য ক্ষতিকর। এর প্রতিক্রিয়ায় মাথাব্যথা, বুকে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট এবং শেষ পর্যন্ত অজ্ঞান হয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে। সত্তরের দশকে ওজোন স্তর ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার বিষয়টি প্রথম ধরা পড়ে। দেখা যায়, স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে প্রতি দশকে ৪ শতাংশ হারে ওজোন স্তরের পুরুত্ব কমে আসছে। ফলে সৃষ্টি হয় ওজোন গহ্বরের। ওজোন স্তর ক্ষীণ হওয়ার জায়গায় পাওয়া যায় সিএফসি ও ফ্রেয়ন গ্যাস। বিশের দশকে যুক্তরাষ্ট্রে বাজারজাত করা সিএফসি ও প্রেয়ন বিভিন্ন যন্ত্র ও শিল্পে অহরহ ব্যবহৃত হতো। সিএফসি উৎপাদিত হতো রাসায়নিক বিক্রিয়ার সহযোগী উৎপাদক হিসেবে। সত্তরের দশকে প্রমাণ হয়, সিএফসি আবহাওয়ামণ্ডলের নিচের দিকে পৌঁছালে অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাবে ক্লোরিন ত্যাগ করে। এই ক্লোরিন ওজোন স্তরের বড় শত্রু, যা ভূপৃষ্ঠে অক্ষত থাকে শতাব্দীকাল। নাসার গবেষণায় ধরা পড়ে, বায়ুমণ্ডলের অন্যান্য এলাকার তুলনায় অ্যান্টার্কটিকা অঞ্চলে ওজোন স্তরের খুব দ্রুত ক্ষতি হচ্ছে। সেখানে বসন্তকাল ওজোন স্তরের জন্য মারাত্মক। স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের নিচের অংশে প্রায় ৫০ শতাংশ ক্ষতি এ সময়েই ঘটে। এর জন্য দায়ী সিএফসি।
টেকসই ও বাসযোগ্য নিরাপদ পরিবেশ গড়ার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক ওজোন দিবসের গুরুত্ব সমধিক। ওজোনস্তর ক্ষয়রোধে বাংলাদেশ বিশ্ববাসীর সাথে কাজ করে যাচ্ছে। এজন্য বাংলাদেশ ১৯৯০ সালে মন্ট্রিল প্রটোকল স্বাক্ষরসহ প্রটোকলের লন্ডন, কোপেনহেগেন, মন্ট্রিল ও বেইজিং সংশোধনীসমূহ যথাক্রমে ১৯৯৪, ২০০০, ২০০১ ও ২০১০ সালে অনুমোদন করে। ওজোনস্তর সুরক্ষার মাধ্যমে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে একটি নিরাপদ পৃথিবী উপহার দেবার প্রত্যাশা নিয়ে জাতিসংঘের সদস্য দেশ হিসাবে প্রতিবছরের মত এবছরও বাংলাদেশে বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিবসটি পালিত হবে। দিবসটি পালনের মর্মবাণী সবার কাছে সঠিকভাবে পৌঁছলেই ওজোনস্তরের সুরক্ষা করে একটি টেকসই বাসযোগ্য নিরাপদ পৃথিবী গড়া সম্ভব। আগামী প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ পরিবেশ আমাদেরকেই গড়ে তুলতে হবে, যারা আজ এ ধরণীতে বসবাস করছে। এটি সবার নৈতিক দায়িত্ব ও কর্তব্য। তা না হলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এ পৃথিবী ধ্বংস হবে। ফলে জীবন নিয়ে বেঁচে থাকা অসম্ভব হয়ে পড়বে। এ ব্যাপারে প্রয়োজন সবার ঐকমত্য। এটিই হোক আমাদের প্রত্যাশা।
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়
অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন
শিব নারায়ণ দাস নামটাতেই কি আমাদের অ্যালার্জি?
অভিমান কতোটা প্রকট হয় দেখেছিলাম শিবনারায়ণ দাসের কাছে গিয়ে।
.
গত বছরের জুন মাসের শুরুর দিকের কথা। এক সকালে হঠাৎ মনে হলো যদি জাতীয় পতাকার নকশাকার শিবনারায়ণ দাসের সঙ্গে দেখা করা সম্ভব... ...বাকিটুকু পড়ুন
ঘুষের ধর্ম নাই
শহীদুল ইসলাম প্রামানিক
মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।
হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।
পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন
প্রতি মাসে সামু-ব্লগে ভিজিটর কত? মার্চ ২০২৪ Update
মার্চ ২০২৪ সালে আমাদের প্রিয় সামু ব্লগে ভিজিটর সংখ্যা কত ছিল? জানতে হলে চোখ রাখুন-
গত ৬ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভিউ ছিল জানুয়ারি মাসে। ওই মাসে সর্বমোট ভিজিট ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন
ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??
সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন