somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চড়ুইয়ের জীবন

০৯ ই অক্টোবর, ২০১২ রাত ১০:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমাকে আমার সংসার থেকে তাড়ানো কতই সহজ। ‘তুই বিদায় হ, এখানে আর চেহারা দেখাবিনা।’ এটুকুই যথেষ্ট।
কোথায় যাব? পানিতে পড়বনা, সে জানে। ঢাকা শহরে আমার বাবার নিজের একটা ফ্ল্যাট আছে। সেখানে অ্যাটাচড বাথ একটা রুম আমার জন্য সারাজীবনই আছে। বিয়ের পর আব্বু এসি লাগিয়ে দিয়েছেন। জামাই এসে মাঝে মাঝে থাকবে।
ফোন পেয়ে নিতে এসেছিলেন বাবা আর ছোট ভাই। ছোট ভাইয়ের বুকে মাথা রেখে অনেক কাঁদলাম, যেরকম কেঁদেছিলাম বিয়ের দিন। আমার শাশুড়ি দাঁড়িয়ে রইলেন ছেলের পাশে, বিয়ের দিনের মতই।
লিফট নষ্ট, সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে অভ্যাসবশত জ্বালাতে যাচ্ছিলাম বাতিগুলো। মাগরিবের আজান পড়েছে।
চলেই এলাম আমার সংসার ছেড়ে। আড়াই বছরে একটু একটু করে সাজানো আমার বাসা।
পর্দাগুলো ঝুলতে থাকল আগের মতই। আড়ং, যাত্রা- ওদের কালেকশন তো কমন। আমার বাসায় চলবেনা। গুলশান ২ এর ছোট্ট একটা দোকান থেকে ফরমায়েশ দিয়ে বানিয়েছিলাম পর্দাগুলো। সাদা-সবুজ বড্ড প্রেডিকটেবল কম্বিনেশস। পাটরঙা কাপড়ের ওপর তাই পাতার স্ক্রিনপ্রিন্ট করিয়েছিলাম। সকালে আলো আসত সবুজ পাতার ফাঁক দিয়ে। সাদা নয়, অনেক নরম একটা রূপ নিয়ে। বিছানা ছাড়ার নয়, আড়মোড়া ভেঙে দুজনকে জড়িয়ে আবার শুয়ে পড়ার মতো আলো। পার পিস এক হাজার টাকা। তিন বছর চাকরির পর এক মাসের ছুটি আর বেতন পেয়েছিলাম, মোটেই গায়ে লাগেনি।
বাথরুমে থাকল আমার কসমেটিকস। বডিশপের শাওয়ার জেল, পিউমিস স্টোন, ফুটস্ক্রাব, ম্যানিকিওর সেট, বায়োডার্মার টোনার সব। সিঙ্গাপুর থেকে কেনা শাওয়ার ক্যাপের পাশে পড়ে থাকল ওর শেভিং সেট, ছোট্ট একটা চেইনওয়ালা ব্যাগের ভেতর ভরা। শেভ করে সিংকের ওপর ফেলে রাখত সবকিছু, এত বিরক্ত লাগত। ব্যাগটাও তাই এনেছিলাম।
কমোডে বসে পেপার পড়ার বিরক্তিকর স্বভাব ওর। পড়া শেষে ফেলে রাখবে ফ্ল্যাশের ওপর। কাল ওটা ওভাবেই থাকবে। বুয়া তো এ বাথরুমে ঢোকেনা।
হাউস অব টারকুইজ, সেভেন্টিনাইন আইডিয়াস, অ্যানথ্রোপলজি- কত কত ওয়েবসাইট দেখে অর্ডার দিয়েছিলাম এই সোফাটার। একদম সাদামাটা, ঝরঝরে চার সিটের সোফা। ওকে বলেছিলাম, আমাদের সোফা আমাদের মতোই স্মার্ট দেখতে। আব্বু বানিয়ে দিয়েছিলাম। কেন আব্বুকে বললাম, এত দেরি হচ্ছে সামান্য সোফা বানাতে, ঈদ চলে গেল- কত কথা এই নিয়ে। বলেছিল টাকা দিয়ে দিবে। তিন মাস পার হয়ে গেছে।
খালামনি দিতে চেয়েছিল তার ঘরের একটা টি টেবিল। চা গাছ থেকে বানানো। সোফার সঙ্গে যায়না বলে ভ্যান থেকেও ফেরত পাঠিয়ে দিয়েছিলাম।
আজ সকালেই ব্র্যাক চিকেন থেকে আনিয়েছি বোনলেস চিকেন। স্টেক বানাতাম। অথবা সিপ্রিওট স্টাইল চিকেন, শাক আর পনির দিয়ে। অথবা চিকেন স্কিউয়ার। সবগুলো জেমি অলিভারের রেসিপি। ইউটিউব বন্ধ, কবে আবার নতুন রেসিপি পাব।
ফ্রিজেই পড়ে থাকবে। সাদা, শুকনা হয়ে যাবে। ৪২০ টাকা কেজি।
কাল ঘুম ভেঙে বিছানা গোছানো হবেনা। এ ঘরে ওর, ও ঘরে আমার শাশুড়ির। আমার শাশুড়ি কোনদিনই বিছানা গোছান না। তেমনই পড়ে থাকে সারাদিন। ও ঘরে ঢুকতামই না আর।
ডাইনিং টেবিলে থাকল সবুজ কাচের জগ আর গ্লাসগুলো। ঢাকা শহর ঢুঁড়ে পাওয়া যায়নি, আম্মাকে দিয়ে আনিয়েছিলাম গ্রাম থেকে। মাত্র ২০০ টাকায় ছয়টা গ্লাস আর জগ। কেউ বিশ্বাস করেনা, এগুলো এত কষ্ট করে আনিয়েছি। এখন রিসাইকেল গ্লাসেরই ট্রেন্ড, মুখ টিপে বলতাম। অহংকার চাপা থাকতনা। ইটস অ্যাবাউট রাস্টিক ডেকোর।
এই জগের সঙ্গে ক্রুশের ঢাকনা। আড়ংয়ে পছন্দ হয়নি, জয়িতাতে পেয়েছিলাম ঠিক জগের মুখের আকারের গোল, সাদা ঢাকনি।
ইলিশ মাছের ভাজি সার্ভ করার জন্য কিনেছিলাম মাছ শেপের ট্রে। সবাই আড়ং, যাত্রা থেকে বাসন কেনে আজকাল। চারকোনা একটা প্লেট একবার কিনে খুব ভাবে ছিলাম। পরে দেখি ফেসবুকে অন্তত তিনজনের সেই একই প্লেটের ছবি। ও সান্তনা দিয়েছিল, প্লেটটা তো সুন্দর, সবারই তাই ভাল লেগেছে তোমার মতো। আর কিনিনা ওসব থেকে। একটু খুঁজলে মুন্নু, শাইনপুকুরেই কত আনকমন ক্রোকারিজ পাওয়া যায়।
সব থাকল। কেউ আমার সঙ্গে আসতে চাইলনা। ও কোনদিন খবর রাখেনি এসবের। ওরা এখন থেকে ওর সঙ্গেই থাকবে। ওদের কি। আমার বুয়াটা অবশ্য সকালে গোলমাল টের পেয়ে বলে দিয়েছে, আফা আমনি না থাকলে এই বাসায় আর কাম করুম না।
আমার শাশুড়ি দাঁড়িয়ে ছিলেন দরজায় ঠেস দিয়ে। একই ভঙ্গিতে- যখন তাঁর ছেলে বিছানায় ফেলে আমাকে মারছিল। বের হবার সময় আব্বুকে বললেন, বেয়াই চা খেয়ে গেলেন না।



সর্বশেষ এডিট : ১০ ই অক্টোবর, ২০১২ রাত ৩:০৬
৩টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।

লিখেছেন সাইয়িদ রফিকুল হক, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:১৫



ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।
সাইয়িদ রফিকুল হক

বিএনপি ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে দেশে অনুষ্ঠিত “দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে”-এ অংশগ্রহণ করেনি। তারা এই নির্বাচনের বহু আগে থেকেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×