somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভোজ

২৭ শে নভেম্বর, ২০১২ বিকাল ৫:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

‘আর একটু ভাত দেই।’ না করার আগেই এক হাতা সাদা ধবধবে ভাত এসে পড়ল আমার প্লেটে।
‘ঝাল লাগতেছে? ডাল দিয়ে ধুয়ে খান।’ এবার এক চামচ ডাল।
চোখে পানি এসেছে মানেই ঝাল লাগা নয়। চোখের পানির আরও অনেক মানে আছে। এসব তত্বকথায় না গিয়ে খাওয়ায় মন দিলাম।
‘আপু মাংসটা বোধহয় আপনি খেতে পারবেন না। আপনি ডিম নেন।’
‘আমার মা রেঁধে দিয়েছেন। নদীর পাড়েই আমার বাড়ি। আপনারা নিশ্চিন্তে খান। চাপকলের পানি দিয়ে রান্না করি আমরা।’
ওকে ঘিরে বসেছি আমরা ১০ জন। হাত দুটো চলছেই তার। কারও পাতে শাক, কারও ডিম, কারও মাংস, কারও ঝোল-মাংস বাদে শুধু আলু। আর এর মধ্যেই কার পাতের ভাত কমে গেল, কে ঝোল বাদে শুকনা খাচ্ছে সেদিকে কড়া নজর।
পিয়ান নদীর পাশে পাত পেড়ে বসেছি আমরা। ছোট ছোট প্লাস্টিকের টুলে আমরা শহুরে বাবু-বিবিরা। সে বসেছে পাটি নিয়ে, চারপাশে বড় বড় হাঁড়িতে নানা পদ। টকটকে লাল ঝোল, তার নিচে উঁকি দিচ্ছে মাংস,আলু। সস্তা মেলামাইনের প্লেট সে ধরিয়ে দিয়েছে সবার হাতে।
‘আজকে আর ফিরতে হবে না। এখানেই খেয়ে এখানেই ত্যাগ।’ বলল এক বাবু।
‘কিচ্ছু হবেনা ভাইয়া।’ গালভর্তি হাসি তার।
আমরা এসেছি জাফলং বেড়াতে। পিয়ান নদীতে নৌকা চড়া হল। ওপাশে গিয়ে ভারতের দারুন সুন্দর একটা সেতুও দেখা হল। ফটোসেশনও ভালই জমল। ফিরতি পথে নদীর ধারেই দেখি পাটি পেতে একগাদা হাঁড়িকুড়ি নিয়ে বসে আছে সে।
‘ওরা বোধহয় পিকনিক করছে।’
‘আর লোকজন কই?’
সেসময় সে ডাক দিল। ‘ভাত খেয়ে যান ভাইয়া-আপুরা।’
বয়স বিশের কোঠায়। পরনে হাল ফ্যাশনের সস্তা জ্যাকেট, জিন্স। মাথায় টুপি। এই ছেলেটার ডাক শুনেই বসে পড়লাম আমরা, এখানে বেড়ানো শেষে নাজিমগড় রিসোর্টে গিয়ে যাদের দুপুরের খাবার খাওয়ার কথা।
সাতকড়া দিয়ে মাংস, কড়াই-মুরগি কত কিছু খাওয়ার প্ল্যান আমাদের।
সেসব বাদ, স্রেফ সাদা ভাত, অসম্ভব ঝাল ডিমের ঝোল, আলু দিয়ে গরুর মাংস, আর আলু ভর্তা দিয়েই দুপুরের খাবার সারছি আমরা।
ঝালে আহা-উহু করছি। ও ভাবছে আমাদের চোখে পানি এসেছে ঝালের জন্য। বেশ লজ্জা পেয়ে গেছে। ওকে কে বলবে বিয়ের পর থেকে এত যত্ন করে আমাকে আর কেউ খাওয়ায়নি। আগে আম্মা কতবার ডাকত, টিভি দেখছি বা ফেসবুক করছি বলে উঠে যাইনি। আম্মা একাই বসে খেয়ে নিতেন। শাক দিয়ে ভাত মেখে কয়েক লোকমা খাইয়ে দিতেন আমাকে। ‘আম্মা তুমি এত বড় লোকমা কর। আমি কি এত বড় হা করতে পারি!’
রাতে বাসায় ফিরে আমার বন্ধ দরজা ধাক্কাবেই আব্বু। কি বিরক্তি আমার! আমি তো আগেই খেয়ে নিয়েছি।
বিয়ের পর আর কেউ ডাকেনা এভাবে। টেবিলে সাজানোও থাকেনা এত পদ। ভাত কম খেলাম কি বেশি কেউ দেখেনা।
আমরা মাঝে মাঝে খেতে যাই রেস্তোঁরায়। বুফে টেবিল থেকে নিজেই নিয়ে নেই। অথবা দারুন পেশাদার ওয়েটাররা এসে পরিবেশন করে। কোন বাড়তি কথা বলেনা তারা। খুব বড় রেস্তোঁরা হলে শেফ এসে মাপা হাসি দিয়ে জিজ্ঞেস করেন, খাবার কেমন লাগল। আমরাও চাপা হাসি দিয়ে বলি- নাইস, রিয়েলি নাইস।
নদীর পাড়ের এই ছেলেটা দেখতে মোটেও আমার ছোট ভাইয়ের মত নয়। ভাই কোনদিন ভাত খেতে বলেনা। কিছুই বলেনা আসলে। আম্মার থেকে জেনে নেয় কবে আমি বাসায় আসব। আর আমার পড়ার টেবিলে রেখে দেয় ব্যাগভর্তি কিটক্যাট, প্রিনজলস, ক্যাডবেরি। তাও কেন এই ছেলেটার মুখের দিকে তাকিয়ে আমার মনে পড়ছে ভাইটার কথা। আম্মা কোনদিন তরকারিতে এত ঝাল দেননা। হাঁড়ি নিয়ে ডাইনিং টেবিলে রাখা আমার আম্মার পক্ষে অসম্ভব। আলাদা বাটিতে ভাত-তরকারি বেড়ে তবেই তাঁর পরিবেশন। টকটকে লাল এই ঝোল দেখে কেন তা-ও মনে পড়ছে বাড়ির কথা।
আমার আশপাশে বসে আছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তিনজন ক্যাপ্টেন। যা পায় তা-ই খেতে এমনই ট্রেনিং পেয়েছে ওরা। ওদের দিকে তাকাতে পারছিনা আমি। জানি ওদেরও ঝাল লাগেনি। কেন ওদের চোখ আমার মতই ভেজা সেটাও আঁচ করতে পারছি।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে নভেম্বর, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:৩৮
৫টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেঘ ভাসে - বৃষ্টি নামে

লিখেছেন লাইলী আরজুমান খানম লায়লা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩১

সেই ছোট বেলার কথা। চৈত্রের দাবানলে আমাদের বিরাট পুকুর প্রায় শুকিয়ে যায় যায় অবস্থা। আশেপাশের জমিজমা শুকিয়ে ফেটে চৌচির। গরমে আমাদের শীতল কুয়া হঠাৎই অশীতল হয়ে উঠলো। আম, জাম, কাঁঠাল,... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×