জন্মদিন বা জন্মতারিখ যা ই হোক, বছরের ৩৬৫ টি দিনের মধ্যে এই একটি দিন অনেক অনেক বিশেষ একটি দিন। আর হবেই বা না কেন, একজন মানুষ পৃথিবীতে আসার আগে থেকে শুরু হয় তার জন্ম হওয়ার দিনের জন্য অপেক্ষা। তারপর পৃথিবীতে আসার পরে থেকেও চলে প্রতিবছর সেই বিশেষ দিনটির জন্য অপেক্ষা। আর এই বিশেষ দিনটিকে ঘিরে ও চলে কত রকম আয়োজন।
এই দিনে একজন মানুষ পৃথিবীতে আসার কারনে যেমন বিশেষ তেমনি প্রতিবছর এই দিনটিই কিন্তু সেই পৃথিবীতে আমাদের শেষ দিনটির দিকে একটু একটু করে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। এদিক দিয়ে বিবেচনা করলে জন্মদিন তো আমার কাছে মোটেও আনন্দের নয়। বরং এই জন্মদিনের দিনে ভাবা উচিত যে আমার জীবন থেকে আরও একটি বছর চলে গেল।
প্রতিবছর নববর্ষের দিনে আমরা বিভিন্ন ধরনের New Year Resolution নেই। আমার তো মনে হয় নিউ ইয়ার এ না হয়ে আমাদের সবার উচিত Birthday Resolution নেয়া। একটি একটি বছর করে জীবন চলে যাচ্ছে তাই প্রতি বছর এ জন্মদিনের দিনে ভাবা উচিত গত বছর ও আগামী বছর নিয়ে।
কি বিশেষ দিন এই জন্মদিন। একজন ৯৯ বছরের বৃদ্ধ ও তার ৯৯ তম জন্মদিন তার নাতী নাতনী দের কে নিয়ে মহা আনন্দে পালন করে, এই পৃথিবীতে সে দীর্ঘ ৯৯ টি বছরের জীবনের পথ চলেছে, যেখানে এই ৯৯ বছরে জীবনের শেষ পর্যায়ে একটি জন্মদিন মানে আরও এক ধাপ অনেক বেশী কাছে এগিয়ে যাওয়া সেই বিশেষ দিনটির কাছে।
এতক্ষণ তো বললাম যার জন্মদিন তার কথা, এবার আসি এই জন্মদিনের দিনে তার আসে পাশের মানুষগুলোর কথায়। কারও জন্মদিন মানেই তো উপহার দেওয়া। যার জন্মদিন সে তো মহা খুশী তে থাকে উপহার পাবে বলে আর যারা উপহার দিবে তারা পরে যায় মহা চিন্তায়, কি উপহার দেওয়া যায় সেই চিন্তা।
উপহার পেলে কে না খুশী হয়। তাই উপহার এমন হওয়া উচিত যেন যাকে উপহার দিব সে যেন উপহার টা পেয়ে খুশী হয় এমন কিছু। তাই কাউকে উপহার দেবার আগে যাকে উপহার দিব তার সম্পর্কে যদি একটু জেনে নেওয়ার চেষ্টা করি কি পেলে তিনি খুশী হবেন তাহলে উপহার টা কি আরও একটু আকর্ষণীয় হবেনা?
আপনি বই পড়তে ভালোবাসেন কিন্তু যার জন্য উপহার দিবেন তিনি সিনেমা দেখতে ভালোবাসেন। আপনি যদি তার জন্য একটি বই নিয়ে যান তিনি হয়তো সেই বইটি পড়লোই না। তাহলে এই উপহারের সার্থকতা টা কোথায় রইল ?
আপনার কলিগের ৫ বছরের বাচ্চার জন্মদিন । আপনি জন্মদিনের উপহারস্বরূপ বাচ্চাটির জন্য একটি সাইকেল নিয়ে গেলেন। কিন্তু গিয়ে দেখলেন বাচ্চা টি পঙ্গু, সে হাটতেই পারেনা। এই অবস্থায় বাচ্চাটি ও তার বাবা মা যেমন কষ্ট পাবে তেমন আপনি নিজে ও পরে যাবেন একটা বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে।
আবার উপহার যে সবসময় বস্তুগত কিছু হতে হবে এমন কিন্তু নয়।
আমার কাছে উপহার মানে খুশী। তাই যে কোন কিছু একজন মানুষকে খুশী করবে সেটিই তো তার জন্য উপহার। হতে পারে সেটি কোন সারপ্রাইজ, কোন গুড নিউজ, তার পছন্দের খাবার রান্না করে খাওয়ানো, পুরনো কোন পছন্দের বা ভালোলাগার স্মৃতি মনে করিয়ে দেওয়া, কিংবা জন্মদিনে তার মন খারাপ থাকলে তাঁকে একটু মজা বা আনন্দ দেওয়ার মত কোন কৌতুক।
তাই জন্মদিন হোক শুভ ও উপহার হোক আনন্দের বা খুশীর।
বিঃ দ্রঃ আজকে আমার খুব প্রিয় একজন মানুষের জন্মদিন। অনেক পরিকল্পনা থাকা সত্ত্বেও তার এবারের জন্মদিনে তাঁকে নিয়ে লেখা একটি ফালতু ছড়া ছাড়া তাঁকে উপহার দিয়ে খুশী করার মত বা আনন্দ দেবার মত আর কিছু খুজে পেলাম না। কোন আবেগি কবিতা হয়তো লিখতে পারতাম যেটি তার ভালো লাগত তবে সেটি না করে একটি ফালতু ছড়া লিখলাম তাঁকে নিয়ে যেটি পড়ে সে মজা পাবে, আনন্দ পাবে। তাই তার জন্মদিনে উপহারস্বরূপ জন্মদিন ও উপহার ভাবনা নিয়ে আমার আজকের লেখা ও একটি ফালতু ছড়া।
জন্মদিন তোমার জন্মদিন
ভেবেছিলাম দিনটি হবে যে রঙিন
চলছে আমাদের ঝগড়া ঝাটি
তাই বলে কি বন্ধ হবে
জন্মদিনের আনন্দ বাটা বাটি
ভেবে পাচ্ছিলাম না কি দিব কি উপহার
হঠাৎ মনে উদয় হল
জন্মদিন উপলক্ষে নিয়ে আসি কিছু ছন্দের সমাহার
এইদিনে তুমি এসেছিলে পৃথিবীতে
তোমার আপনজনরা তোমায় জানিয়েছিল স্বাগতম
কে জানত সে ছোট শিশুটি
বড় হয়ে সবাইকে বানাবে আলুর দম
মুখে তুমি যা ই বলনা কেন
মনেতে রাখো কথা বাকি
অন্যদের সাথে তুমি যত কর অভিনয়
আমাকে তুমি দিতে পারবেনা তো ফাঁকি
জন্মদিনে কাটা হলনা কেক
একা তুমি দূরে আছ সবার
তবু বলি শোন, ভয় পেওনা কভু
আমাদের দোয়া সবসময় সাথে আছে তোমার
জানি লিখেছি এক ফালতু ছড়া
তবুও পড়তে চাই তোমার হাতে ধরা
পাগলী আমি শুধু যে তোমায় ভালোবাসি
ছড়ায় ছড়ায় ছড়িয়ে দিতে চাই
তোমার মুখে হাসি
শুভ জন্মদিন বলে
আপাতত আমি বিদায় নিতে চাই
চলনা ঝগড়া ঝাটি ভুলে আমরা
মিলে মিশে দিন কাটাই
*উপলক্ষ যা ই হোক, তা সার্থক হল কি হলনা জানিনা, তবে আমার পাঠক বন্ধুদের যদি আমার লেখা ভালো লাগে তবেই আমার প্রচেষ্টা সার্থক*
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ২:৪৭