“মানুষের মন”- আমার কাছে পৃথিবীর সবচেয়ে রহস্যময় জিনিস। একজন মানুষের মনের ভেতরে আসলেই কি আছে তা কোনদিন জানা সম্ভব না। যতটুকু একজন মানুষ প্রকাশ করে আমারা শুধু ততটুকুই জানতে পারি, কিছু কিছু সময় বুঝতে পারি । কিন্তু এর রহস্য পুরোপুরি ভেদ করা কোনদিনই কারও পক্ষে সম্ভব নয়। যাই হোক, এইসব রহস্য নিয়ে কারবার করে আমার পাগল হবার কোন ইচ্ছে আপাতত নেই ।
তবে এই রহস্যময় মন যেনো একটি বাচ্চা । বাচ্চারা যেমন কোন কিছু বুঝতে চায়না, শুনতে চায়না মনও তাই। বাচ্চারা যেমন বাবা মা দিতে পারবে কি পারবেনা কোন কিছু বিবেচনা না করে উল্টা পাল্টা আবদার করে মনও তাই
জীবনের অনেক কিছু করতে বাধা থাকলেও চাইতে কিন্তু কোন বাধা নেই। আপনি যা খুশী তা চাইতে পারেন । যেমন আমি চাই, অনেক রাতে যখন মন খারাপ লাগবে তখন সমুদ্রের খুব কাছে গিয়ে চুপচাপ বসে থাকবো, কখনো আমি চাই ঐশ্বরিয়া রায় হতে কখনো চাই মাদার তেরেসা হতে, আমি চাই চাকরী বাকরি করবোনা, আমি সারাদিন বাসায় ঘুমাবো, খাবো আর বেড়াবো, আর মাস শেষে কেউ আমাকে কোন চাকরী করা না বাবদ বেতন দিয়ে যাবে, আবার কখনো চাই অনেক বড় কেউ হতে, সাক্সেসফুল কেউ হতে, কখনো মন চায় এই শহর, সব কিছু বাদ দিয়ে কয়জন বিশেষ মানুষকে নিয়ে দূরের কোন গ্রামে গিয়ে বসবাস করবো, এরকম কত শত অদ্ভুত আর উদ্ভট চাওয়া আছে মনের। তুই চেয়ে যারে ভাই, চাইতে করেছে কে মানা ?
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সোনার হরিন চেয়েছিলেন। আমিও চাই, তবে সোনার হরিন না। আমি চাই আমার সৃষ্টিকর্তা থেকে শুরু করে এ পৃথিবীতে যার যার সাথে আমার সম্পর্ক সে সম্পর্কের ক্ষেত্রে আদর্শ হতে। হোক সে সম্পর্ক কোন রিকশাওয়ালার সাথে।
হ্যাঁ, রিকশাওয়ালার সাথেও আমার একটা সম্পর্ক আছে। চালক আর যাত্রীর সম্পর্ক। সেই সম্পর্কের ক্ষেত্রেও আমি রিকশাওয়ালার সাথে একটু ভালো ব্যাবহার করে আদর্শ হতে পারি।
আর হা এই চাওয়াটা কিন্তু আমার বাচ্চা মনের চাওয়া না । ইহা সিরিয়াস চাওয়া ।
আদর্শ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে,
কবিতা মনে পরে গেল
আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে
কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে
আমার কবিকে একটা প্রশ্ন করতে ইচ্ছে করে। তিনি কেন ছেলেদের নিয়েই লিখল কেন মেয়ে না? তাঁর মানে কি মেয়েরা সবাই আদর্শ ? নাকি কোন মেয়ের আদর্শ হবার দরকারই নেই ?
সে যাই হোক, সেই প্রসঙ্গ বাদ এখন ।
আমার মন যা খুশী তা চাইতে পারে। কিন্তু সমস্যাটা বাধে সেই চাওয়া পূরণ করতে গেলেই। যেমন সেদিন হঠাৎ আমার মন চাইলো আমি পাখি হব, তারপর আমার ইচ্ছেমত উড়ে উড়ে যেখানে মন চায় চলে যাব । তবে এই ধরনের ইচ্ছে নিয়ে মন কখনো বায়না ধরেনা কারন সে বাচ্চা হলেও এটা ভালো মতই জানে যে পাখি হওয়া সম্ভব নয় ।
আবার মাঝে মাঝে মন এমন কিছু বায়না ধরবে যেগুলো পূরণ করা আপনার নিজের পক্ষে সম্ভব নয় । আপনার সুযোগ নেই সামর্থ্য নেই সেই সব বায়না পূরণ করার । তখন এটা ওটা দিয়ে মনটা কে ভুলিয়ে রাখতে হয় কিন্তু সেই জিনিস যদি আপনার মনের অনেক পছন্দের কিছু হয় তখন একটা চকলেট টাইপ কিছু দিয়ে সাময়িক ভাবে মনটাকে ভুলিয়ে রাখা যায় কিন্তু যখনই চকলেটের স্বাদ চলে যাবে তখন ঠিক আবার সেই বায়নার কথা মনে পড়ে কান্না কাটি শুরু করবে । আবার আপনি তাকে কিছু একটা দিয়ে ভোলাবেন তারপর আবার কিছুক্ষণ পড়ে সে মনে পরলেই কাঁদবে আবার ভোলাবেন আপনি । এভাবে লুকোচুরি খেলতে একসময় মনও বুঝে যাবে যে তা দেওয়ার সামর্থ্য আপনার নেই অথবা মন হয়ে যাবে ক্লান্ত তখন আর নেই কান্নাকাটি । শুধু চুপ হয়ে বসে থাকবে সে
ছোটবেলায় ঘুম থেকে উঠার পর যখন খুব বেশী জিদ আর দুষ্টুমি করতাম তখন আম্মু বলতো ঘুম থেকে কি চাঁদ দেখে উঠছিস ?
হা, মন ও মাঝে মাঝে যেন চাঁদ দেখে ঘুম থেকে উঠে। তখন খুব বেশী জিদ করবে যে এটা চাই ওটা চাই এবং চাইই চাই। তখন আর কোন চকলেট দিয়ে তাকে ভুলিয়ে রাখা যায়না । চকলেটে কাজ না হলে তখন একটা চর মেরে তাকে আবার ঘুম পাড়িয়ে রাখতে পারেন ।
ছোট বেলায় খেলার সময় যখন বাটা বাটি হত তখন যারা একেবারে বাচ্চা তাদেরকে নিয়ম অনুযায়ী খেলায় অন্তর্ভুক্ত করা হতো না কিন্তু তারা খেলায় থাকতো ঠিকই । তাদেরকে বলা হতো তোমরা দুধভাত। তারাও খুশী আর যারা খেলবে তারাও খুশী। কিছু মানুষের মন এমন দুধ ভাত তাদেরকে যা দিয়ে বোঝানো হয় তাই বুঝবে ও খুশী থাকবে ঠাণ্ডা থাকবে ।
মনের আরও একটি মজার ব্যাপার হচ্ছে মনে মনে যখন মন চায় যেখানে মন চায় চলে যেতে পারি । যেমন আমি মাঝে মাঝে মনে মনে দু একটি জায়গায় চলে যাই। বেশী যাই মাঝরাতে, সেন্টমারটিনে । একা একা অন্ধকারের মাঝে দাড়িয়ে দাড়িয়ে সমুদ্র দেখি আর দেখি চাঁদ ।
কোথাও আমার হারিয়ে যাবার নেই মানা মনে মনে
মেলে দিলেম গানের সুরের এই ডানা মনে মনে !
হা কোথাও হারিয়ে যাবার নেই মানা, কিন্তু তা অবশ্যই মনে মনে । বাস্তব পুরোই উল্টো ।
তবে মনে মনে কিন্তু বেশিক্ষণ হারিয়ে গিয়ে থাকা যায়না । কিছু সময় পরে ঠিক বাস্তবে ফিরে আসতে হয় । আর তখনই শুরু হয় অবুঝ আর বাচ্চা মনের কান্নাকাটি আর বায়না । এই যেমন লেখাটি লিখতে গিয়ে আমি হারিয়ে গিয়েছিলাম বাচ্চা মনের এক জগতে কিন্তু লেখাটি পোস্ট করার পর যখন উল্টা পাল্টা মন্তব্য আসবে তখন আমি ফিরে আসবো বাস্তবে আরে কি করেছি কি ?
এই বাচ্চা মনের বাচপানা থেকে অনেকে দেখি ব্লগে ফান পোস্ট দেয় ভালোই লাগে মাঝে মাঝে আড্ডা দিতে মজা করতে কি লাভ অত সিরিয়াস ভাব নিয়ে থেকে । আমি এখন পর্যন্ত কোন ফান পোস্ট দিতে পারিনি । মাঝে মাঝে মন চায় কিন্তু ভয় লাগে যদি কেউ বলে এসব কি আজে বাজে লেখা ? যদিও এটাও কোন ভালো লেখা না
গত কয়দিন ধরে কি যেন হয়েছে। না কিছু লিখতে ভালো লাগে, না পড়তে ও মন্তব্য করতে সারাদিন শুধু অনলাইন হয়ে বসে থাকি আর দেখি ।গতকাল সবার ড্রাফ্ট লেখাগুলো নিয়ে সমস্যা হচ্ছিল। মন্ডল ভাই জিজ্ঞেস করলো আমার ড্রাফ্ট এর কি অবস্থা । আমি বললাম ভাইয়া আমার তো ড্রাফ্ট এ কোন লেখা নেই । আসলেই তো নেই । ব্লগের ড্রাফট না হয় পাওয়া গেল পরে ।
কিন্তু আমার খাতায় এবং মনের ড্রাফটে যে অনেক লেখা আছে। এইসব বাচপানা করে করে এখন সেগুলো হারিয়ে না গেলে হয় ।
আজ মন চাইলো কোন লেখা পোস্ট করি কিন্তু ভালো কোন লেখা লিখতে যে কষ্ট টা করতে হয় তাও করতে ইচ্ছে করছিল না । আবার লেখা ভালো না হলেও তখন ভালো লাগবেনা ।
কি করি এই বাচ্চা মনটাকে নিয়ে, লিখে ফেললাম কিছু একটা, মনের বাচপানা কে প্রশ্রয় দিয়ে বাচপানা টাইপ একটি লেখা । মন বায়না ধরেছিল তাকে নিয়ে কিছু লিখবার । অন্যসব বায়না না হয় না পারলাম পূরণ করতে কিন্তু এই ছোট্ট বায়নাটাতো পারিই পূরণ করতে। জানি কি সব উল্টা পাল্টা লিখলাম দয়া করে এটিকে কথার ফুলঝুরির বাচ্চা মনের বাচপানা মনে করে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন । আফটার অল “দিল তো বাচ্চা হে জি”
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে নভেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১:০৭