নাম কি জিজ্ঞেস করলে উত্তর দিলেন, প্রফেসর ডঃ ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ সোবহান চৌধুরী; যার প্রথম চারটি শব্দের কোনটিই নাম নয়। লাখো লাখো এমন পেশাজীবি রয়েছেন। কিন্তু নামের আগে এগুলো যোগ করে বলার বাতিকগ্রস্থতা বাঙালির এত চূড়ান্তরকমের বালখিল্যতা যে তার আসল নামটাই খুঁজে বের করা দুস্কর হয়ে পড়ে। ভদ্রলোককে কি নামে ডাকবো! "প্রফেসর", "ডক্টর", "ইঞ্জিনিয়ার", "মোহাম্মদ" নাকি "চৌধুরী"! তার ইউনিক আইডেন্টিটি তৈরী হতে পারে কেবল সোবহান নামে, বাকীগুলো তার পেশা, ধর্ম ও পরিবারের পরিচায়ক। ।
এই বালখিল্য প্রদর্শনীর প্রধান কারণ হচ্ছে "ওয়ার্ক ডিসক্রিমিনেশন"। বাঙালি উচ্চশিক্ষিত হলে একটা শ্রেণীর প্রতিনিধিত্বশীল হয়ে উঠতো বলে বিএসসি, এমএসি লাগিয়ে নামটাকে ঢেকে ফেলতো মুখোশে। এরপরে তার পেশার সাথে সম্পৃক্ত টাইটেল ডাক্তার, এডভোকেট, ইঞ্জিনিয়ার, প্রফেসর, কর্নেল, মেজর লাগিয়ে আভিজাত্য বাড়ানো হতো। দিনের চব্বিশ ঘন্টা সে যাপন করে একজন পেশাজীবির মত। ব্যক্তিগত বলতে সব পরিচয় অদৃশ্য হয়ে যায়। প্রফেশনাল এটিচ্যুড হচ্ছে ব্যক্তিগত ও প্রফেশনের মাঝের পার্থক্যকে পৃথকভাবে যাপন করা। সমাজে কাজের বৈষম্য তৈরীর প্রধান কারণ হিশেবে এই পার্থক্য অনুধাবন না করাকে দায়ী করা যায়।
ফলতঃ সমাজ ব্যবস্থায় বিভিন্ন পেশাজীবির মানুষের দায়িত্ব ও কন্ট্রিবিউশন স্বীকৃত হয় না। যারা নিজের নাম প্রকাশের সময় তার পেশার পরিচয়ও বিবৃত করে, তারা মূলত তার প্রফেশনাল জুরিডিকশনের বাইরে সে পেশার সুবিধা নিতে আগ্রহী। সার্ভিস সেক্টর ও পারিবারিক পরিমন্ডলে ইকুয়ালিটির চর্চা না থাকাতে তিনি প্রায়োরিটি প্রাপ্ত হন।
ওয়ার্ক ডিসক্রিমিনেশনের ফলে সমাজের প্রান্তিক পেশাজীবিরা কোনঠাসা হয়ে পড়েন - যদিও কাজের নিরিখে তাদের অবদান কোনভাবেই অনুল্লেখ্য নয়। মধ্যবিত্ত বাঙালির এই টাইটেল আরোপিত অস্বাভাবিক নাম প্রদর্শনী আমজনতার কৃপাপ্রাপ্তির অভিপ্রায়ে এবং পরিবর্তিতে শোষণের হাতিয়ার হিশেবে প্রমানিত হয়ে এসেছে।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা মার্চ, ২০০৮ সকাল ৯:১৫