somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলা ব্লগ রাহেলাকে জীবিত রেখেছে

২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৮ রাত ১০:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

২০০৪ সালের ১৯শে আগষ্ট ঢাকার অদূরস্থ সাভারে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের ঘন ঝোপ-ঝাড়ের মাঝে গার্মেন্টসের ১৯ বছর বয়সী একজন শ্রমিকের উপর নির্দয়ভাবে ঝাপিয়ে পড়ে গণধর্ষন ও পাশবিক নির্যাতন করা হয় এবং শেষে তাকে মৃত্যুর মুখে ফেলে রাখা হয়। মেয়েটির নাম রাহেলা লিমা আখতার। সেখানে সে গাছাপালার পুরু পাতারাশির মধ্যে নিরুদ্দেশ তিন দিন পড়ে ছিল। এরপরে নির্যাতকরা সেখানে ফিরে তাকে জীবিত দেখে চেহারায় এসিড মেরে ঝলসে দেয় এবং চুলে আগুণ ধরিয়ে দেয় যেন দেহ খুঁজে পাওয়া গেলেও তার পরিচয় শনাক্ত করা না যায়। অবশ্য সেই দিনই, ২২শে আগস্ট ২০০৪, একজন বাগান পরিচর্যাকারী তার অস্পষ্ট চিৎকার শুনতে পায়, “আমি মৃত নই, দয়া করে আমাকে বাচান”। এভাবে মৃত্যুকে অস্বীকারকারী রাহেলাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ এন্ড হসপিটালে ভর্তি করা হয় যেখানে সে বেঁচে থাকার সংগ্রাম শুরু করে। অবশেষে ২৪শে আগস্ট রাহেলা জীবন যুদ্ধে পরাজিত হয়, তবে মৃত্যুর আগে নির্যাতকদের নাম বলে যেতে পারে।


রাহেলার মৃতদেহ: আলোকচিত্রের কৃতিত্ব ফয়সাল নোই এর

কেউ হয়তো ভেবে থাকবেন যে এহেন ঘটনার ন্যায় বিচার দ্রুতই হয়ে থাকবে। কিন্তু সেরকম হয়নি। প্রথমদিকে প্রধান প্রচারমাধ্যমগুলোতে জোরালো প্রতিবাদ পরিলক্ষিত হলেও একসময়ে তা থেমে যায়। মামলাটি ২০০৬ সালে শুনানীর জন্য উপস্থাপিত হয় এবং তখন প্রকাশ হয়ে পড়ে যে মামলা সংশ্লিষ্ট জরুরী নথিপত্র খোয়া গেছে। ইতোমধ্যে প্রধান আসামী বিদেশে পাড়ি জমিয়েছে এবং অন্যরা মুক্ত হয়ে ঘুরে বেড়াতে থাকে। রাহেলার স্বামী পুনরায় বিবাহ করেছে। প্রায় দুই বৎসর অতিবাহিত হয়। মামলাটি হয়তো মানুষের স্মৃতি থেকে হারিয়ে যেত যদি না কতিপয় নারী অধিকার কর্মী এবং বাংলা ব্লগাররা সোচ্চার হতেন। নেতৃস্থানীয় বাংলা ব্লগ প্লাটফর্ম সামহোয়ারইনের মানবী সর্বপ্রথম রাহেলার মামলাটি গুরুত্ব দিয়ে তুলে ধরে। এর অব্যাবহিতপরেই সমমনস্ক ব্লগার যেমন ফয়সাল নোই, শুভ , পথিক !!!!!! , জিনের বাদশা (আরেকটা বাংলা ব্লগিং প্লাটফর্ম, সচলায়তনের) এবং আরো অনেকে যোগ দেয়, এবং রাহেলার জন্য ন্যায় বিচার এর ধ্বনি উচ্চকিত হয়ে ওঠে। ব্লগ , ফেসবুক গ্রুপ এবং আই-পিটিশন ইত্যাদি সংশ্লিষ্ট করে অনলাইন একটা ক্যাম্পেইন সংগঠিত হতে থাকে। অফলাইনে এ বিষয়ে জনগণের সচেতনতা জাগ্রত করার জন্য প্রতিবাদ বিক্ষোভ এবং মানব বন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

গ্লোবাভয়েসেও আমরা রাহেলার মামলাটিকে জোরালোভাবে উপস্থাপনের চেষ্টা করেছি। বাংলাদেশে নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা প্রসঙ্গে লিখতে গিয়ে রেজওয়ান, এই পোস্টে রাহেলার মামলার বিষয়টি তুলে ধরেছেন। রাইজিং ভয়েসের একটা প্রকল্পের অংশ বাংলাদেশের চমৎকার একটা টিম “নারীজীবন “ও এ বিষয়টি তুলে ধরে

মামলাটিকে সামনে এগিয়ে নিতে আদালতের উপরে চাপ প্রয়োগ করার জন্য বাংলা ব্লগারদের এই চলমান প্রচেষ্টা প্রচার মাধ্যমের নজর কাড়ে এবং ক্রমশ: প্রতিবেদন এবং টিভি রিপোর্ট প্রচার হতে থাকে। শেষপর্যন্ত ২০০৮ এর জানুয়ারী মাসে মামলাটি পুনরায় চালু হয় এবং এপ্রিল মাসে হারিয়ে যাওয়া নথিপত্র আশ্চর্য্যজনকভাবে খুঁজে পাওয়া যায়। ব্লগার, এমএসএম, রাজনৈতিক কর্মী এবং বুদ্ধিজীবিদের অভিনন্দন। তদন্তকারী কর্মকর্তারা পরবর্তীতে দাবী করেছেন যে নথিপত্র ‘সবসময় সেখানে ছিল'। বলার অপেক্ষা রাখে না যে বিচারের জন্য যুদ্ধ এখনও একটা দীর্ঘমেয়াদী সংগ্রাম। গুজব শোনা যাচ্ছে যে এই মামলা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এবং মুখ্য প্রত্যক্ষদর্শীরা অসহযোগিতা শুরু করছে। মিডিয়া প্রতিবেদনে [বাংলাতে] দেখুন প্রমাণ সংক্রান্ত নথিপত্র খুঁজে পাওয়া নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ।



কিন্তু ব্লগাররা ছেড়ে দিচ্ছেন না। মানুষের স্মৃতিতে রাহেলাকে সজীব রাখার প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে, যেন অন্যায়কারীকে আইন ও বিচারের সম্মুখীন করা যায়, যদিও দেরী হয়ে গেছে, কিন্তু রাহেলা লিমা আখতারকে বঞ্চিত করা হয় নাই। সাম্প্রতিক সময়ে এক টিভি সাক্ষাৎকারে সামহোয়ারইনের আরিল্ড ক্লোকারহাঙ এবং বাংলাদেশের একজন সম্মানিত শিক্ষাবিদ ও লেখক প্রফেসর মুহাম্মদ জাফর ইকবাল রাহেলার ন্যায় বিচারের বিষয়টির বারবার উল্লেখ করেন।



বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ এই পোস্ট গ্লোবাল ভয়েসে ইংরেজিতে লিখেছেন অপর্না রায়। মুল লেখাটি দেখতে এখানে ক্লিক করুন। বাংলায় আমি অনুবাদ করেছি। মুল অনুবাদটি দেখুন এখানে
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৮ রাত ১১:০৭
২৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×