'আগুনের পরশমনি' তে শুভ মানে আলী মাহমেদের সাক্ষাৎকার নিয়েছিলাম ২০০৬ এর জুলাইতে। তখনই শুভ সেরাদের সেরা। আমি লিখেছিলাম, সূর্যের সাথে সখ্যাত তাই বিনিদ্র রাত্রিভর; দেহের পাশে মুক্তিযুদ্ধ, কখনও ধর্ম, কখনও রাজনীতি, তবু রাত্রি হয়ে যায় ভোর। একা বসে থাকে শুভ তন্দ্রাহত; আগুনের পরশমনির তাৎপর্য্য অপৃথক থাকে।....সময়টা বড়ই কর্কশ; বিশ্রী করাঁতে কাটছে বোধের সাম্রাজ্য। এর মাঝে শুভ - এক পশলা বৃষ্টির মত আমাদেরকে ভাবায়, ভাবতে বাধ্য করে তার অতুলনীয় লেখনী দিয়ে - একদম ভিজিয়ে দিয়ে। শুভ আসলেই এমন...এবং এটা খুব ভালোভাবেই জানা হলো যখন ঠিক এর দু'বছর পরে ২০০৮ এর জুলাই-এ রাসেল ও আমি একদিন হানা দিলাম শুভর বাড়ি।
শুভর আত্মপ্রতিকৃতি!
ফিরে এসে লিখেছিলাম, "অতিথিরা আউটিংএ আসে। জমিদারীর ক্ষয়িষ্ণু একটা রিশ্তে জেগে ওঠে। হৈহুল্লুর করে আবার ফেরে শহরে। প্রতিবার সে স্টেশনে এসে এই ফিরে যাওয়া মানুষগুলোকে দেখে। এরা যায় এবং তারপরে ভুলে যায়। বুকে কোন দক্ষিণা নাই, উত্তরী নাই - শূণ্যতার মধ্যে কেবল এক মফস্বল শহরের বন্দীত্ব দেখে। অবশ্য সুযোগ-সুবিধা, বাক স্বাধীণতা আর আমাদের উন্মাদনার দুরন্তপনা মফস্বল-গাঁও গেরামে বেমানান। সেখানে সব কিছু একই রকম থাকে। দশ বছর আগে যে বাড়ীটা যেমন দেখেছেন এখনও দেখবেন তেমন। জানালার শার্শিটা সেই একই রকম ভেঙে ঝুলে আছে।
ভোলানাথের মিষ্টির দাম বেড়েছে বটে, কিন্তু সাইজটা সেই প্রমানই রয়ে গেছে। এবড়োথেবড়ো রাস্তা প্রতিবছর অথবা দুই বছরে মেরামত করা হলেও সেটা চটজলদি পূর্বরূপে ফিরে আসে। দাড়ীগুল্ফে সমৃদ্ধ পান-দোকানীর চেহারায় আর কোন পরিবর্তন হয় না যুগের পরে যুগ। তারও পরিবর্তন হয় না। বাড়ীর প্রকোষ্ঠে প্রকোষ্ঠে ফেলে আসা দিনগুলোর জ্যন্ত ছায়াছবি। এই দেশ, এই সংস্কৃতি আর আমাদের শৈশবের মুখরতা। এর মাঝে সে দাড়িয়ে থাকে লায়াবিলিটিস কাঁধে নিয়ে। সেই মুখটা দেখলে আমার বুকটা ধক করে ওঠে। ছেড়ে যেতে কষ্ট হয়, নির্মম লাগে।"
সেদিনটা আসলে অদ্ভুত ছিলো। ঢাকা-বরিশালের বাইরে ভিন্ন কোনো একটা জায়গায় আমার যাওয়া হলো অনেক বছর পরে। শুভর বাড়ীর সামনে দাড়িয়ে মনে হচ্ছিলো খাটি মানুষেরা এমন আড়ালই হয়তো পছন্দ করে।
শুভ যে আন্তরিক হাসিটুকু দিয়ে বিদায় দিলো তার মধ্যেও প্রকৃতির সোঁদাগন্ধ!
আমাদের শুভ ভাই ওরফে আলী মাহমেদ বাংলা ব্লগিং এর প্রথম আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ছিনিয়ে এনেছেন। এছাড়া শুভ ভাই-ই সেই বিরল কৃতিত্বের অধিকারী যিনি ব্লগ থেকে বই প্রকাশের ধারা সূচনা করেছিলেন। বাংলা ব্লগিং এর অগ্রগতির সকল মাইলস্টোনে শুভ ভাই নাম লিখিয়ে এখন বাংলা ব্লগিং এর বৈশ্বিক প্রতিনিধি হয়ে উঠেছেন। তাকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা।