somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইসলামে একাধিক বিয়ে

২২ শে আগস্ট, ২০১৪ বিকাল ৪:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সুরা নিসায় স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক বিষয়ে দিক-নির্দেশনা রয়েছে যা পারিবারিক সম্পর্ক জোরদারের অন্যতম মাধ্যম। এই সুরার ১৯ নম্বর আয়াতে স্ত্রী বা নারীদের প্রতি সদাচরণের নির্দেশ দিয়ে বলা হয়েছে:
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ لاَ يَحِلُّ لَكُمْ أَن تَرِثُواْ النِّسَاء كَرْهًا وَلاَ تَعْضُلُوهُنَّ لِتَذْهَبُواْ بِبَعْضِ مَا آتَيْتُمُوهُنَّ إِلاَّ أَن يَأْتِينَ بِفَاحِشَةٍ مُّبَيِّنَةٍ وَعَاشِرُوهُنَّ بِالْمَعْرُوفِ فَإِن كَرِهْتُمُوهُنَّ فَعَسَى أَن تَكْرَهُواْ شَيْئًا وَيَجْعَلَ اللّهُ فِيهِ خَيْرًا كَثِيرًا

১৯)হে ঈমানদারগণ!তোমাদের জন্য জোরপূর্বক নারীদের উত্তরাধিকারী হয়ে বসা মোটেই হালাল নয়৷আর তোমরা যে মোহরানা তাদেরকে দিয়েছো তার কিছু অংশ তাদেরকে কষ্ট দিয়ে আত্মসাৎ করাও তোমাদের জন্য হালাল নয়৷ তবে তারা যদি কোন সুস্পষ্ট চরিত্রহীনতার কাজে লিপ্ত হয় ( তাহলে অবশ্য তোমরা তাদেরকে কষ্ট দেবার অধিকারী হবে) তাদের সাথে সদ্ভাবে জীবন যাপন করো৷ যদি তারা তোমাদের কাছে অপছন্দনীয় হয়,তাহলে হতে পারে একটা জিনিস তোমরা পছন্দ করো না কিন্তু আল্লাহ তার মধ্যে অনেক কল্যাণ রেখেছেন৷

ইসলাম-পূর্ব যুগে আরবে এ কূপ্রথা প্রচলিত ছিল যে, যখনও কেউ মারা যেত তখন যে তার উত্তরাধিকারী হত সে মৃতের বিধবা স্ত্রীর মাথায় কাপড় ফেলে প্রাক্তন স্বামীর দেনমোহরেই তাকে নিজের স্ত্রী করে নিত। অথবা তাকে অন্য পুরুষের সঙ্গে বিয়ে দিয়ে তার দেনমোহর নিজেই ভোগ করত। অথবা তাকে আটকে রাখত। এ অবস্থায় সেই স্ত্রী তার আগের স্বামী হতে যা উপহার হিসেবে পেয়েছিল তা তাকে দিয়ে নিষ্কৃতি লাভ করত অথবা এ বন্দি দশায় মারা যেত এবং সব সম্পদ সেই পুরুষের হস্তগত হত।

ইসলামের আগমনের পরও যখন আবু কায়েস আনসারি মারা যান তখন তার স্ত্রী কাবিসার মাথায় কাপড় ফেলে তার অন্য স্ত্রীর সন্তান মাহ্ য বিন কায়েস তাকে নিজ অধিকারে নিয়ে আসে এবং তাকে নির্যাতন করতে থাকে। এ অবস্থায় কাবিসা মহানবী (সা.)'র কাছে ফরিয়াদ জানালে তিনি তাকে জানান যে, তার বিষয়ে ওহি নাজিল হলে তিনি তাকে জানিয়ে দেবেন। এর পরের দিনই মদীনার বহু নারী যারা একই বিপদে আপতিত হয়েছিলেন তারাও রাসূল (সা.)'র কাছে অভিযোগ নিয়ে হাজির হন। আর এ সময় নাজিল হয় সুরা নিসার এই আয়াত তথা ১৯ নম্বর আয়াত।

কুরআনে সচ্চরিত্রবান বা পবিত্র নারীদের বিয়ে করার উপদেশ দেয়া হয়েছে যাতে নব-গঠিত পরিবার সুস্থ ও স্থায়ী হয়। কুরআন মা, বোন, ফুফু, বোন-ঝি, ভাইঝি- এই শ্রেণীর নারীদের তথা ঘনিষ্ঠ রক্ত-সম্পর্কিত বা মাহরাম নারীদের বিয়ে করা নিষিদ্ধ করেছে। এ ধরনের নারীদের বিয়ে করা পারিবারিক পবিত্রতার লঙ্ঘন।

মহান আল্লাহ নারী ও পুরুষের মধ্যে সৃষ্টি করেছেন পার্থক্য। এই পার্থক্য থাকাটা পরস্পরের চাহিদা পূরণের জন্য জরুরি। আর এই পার্থক্যের অর্থ বৈষম্য নয়। মহান আল্লাহ নারী ও পুরুষকে তাদের পরিপূরক করেই সৃষ্টি করেছেন। ইতিহাস থেকে জানা যায়, উম্মুল মু'মিনিন হযরত উম্মে সালমা (সালামুল্লাহি আলাইহা) তাঁর স্বামী বিশ্বনবী (সা.)-কে প্রশ্ন করেছেন: কেবল পুরুষরাই কেন জিহাদে যেতে বাধ্য, নারীরা কেন জিহাদে যেতে পারবে না? হায়! আমরা যদি পুরুষ হতাম তাহলে পুরুষদের মত জিহাদে যেতাম এবং সমাজে আমরা সম্মান পেতাম। তাঁর এই প্রশ্নের জবাবে নাজিল হয় সুরা নিসার ৩২ নম্বর আয়াত।
وَلاَ تَتَمَنَّوْاْ مَا فَضَّلَ اللّهُ بِهِ بَعْضَكُمْ عَلَى بَعْضٍ لِّلرِّجَالِ نَصِيبٌ مِّمَّا اكْتَسَبُواْ وَلِلنِّسَاء نَصِيبٌ مِّمَّا اكْتَسَبْنَ وَاسْأَلُواْ اللّهَ مِن فَضْلِهِ إِنَّ اللّهَ كَانَ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمًا

৩২) আর যা কিছু আল্লাহ তোমাদের কাউকে অন্যদের মোকাবিলায় বেশী দিয়েছেন তার আকাঙ্ক্ষা করো না৷ যা কিছু পুরুষেরা উপার্জন করেছে তাদের অংশ হবে সেই অনুযায়ী ৷ আর যা কিছু মেয়েরা উপার্জন করেছে তাদের অংশ হবে সেই অনুযায়ী ৷ হাঁ,আল্লাহর কাছে তাঁর ফযল ও মেহেরবানীর জন্য দোয়া করতে থাকো৷ নিশ্চিতভাবেই আল্লাহ সমস্ত জিনিসের জ্ঞান রাখেন ৷

বিয়ের মাধ্যমে নারী ও পুরুষের মধ্যে এক সুদৃঢ় আন্তরিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু তার পরও তাদের মধ্যে কখনও কখনও মতভেদ দেখা দিতে পারে। কখনও কখনও ভুল বোঝাবুঝি বা সমঝোতার অভাব তীব্রতর হয়ে উঠলে তা পরিবারের জন্য বিপজ্জনক পরিবেশ সৃষ্টি করে। আর এ ধরনের পরিস্থিতিতে পবিত্র কুরআন দুই সদস্যের একটি পারিবারিক আদালত গঠন করতে বলে যাতে স্বামী-স্ত্রীর বিরোধের সুরাহা হয় এবং পরিবারটি ভেঙ্গে না যায়। দুই সদস্যের এই আদালতের বিচারক হবেন দুই পক্ষের মধ্যে মধ্যস্থতাকারী। অর্থাৎ একজন হবেন স্ত্রীর পরিবারের পক্ষ হতে ও অন্য একজন হবেন স্বামীর পরিবারের পক্ষ থেকে। তারা উভয় পক্ষের মতামত নিয়ে তথা মত-বিনিময়ের মাধ্যমে সমঝোতার পথ বের করার মত কৌশল বের করবেন বলে আশা করা হয়। সুরা নিসার ৩৫ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ এ সম্পর্কে বলছেন:
وَإِنْ خِفْتُمْ شِقَاقَ بَيْنِهِمَا فَابْعَثُواْ حَكَمًا مِّنْ أَهْلِهِ وَحَكَمًا مِّنْ أَهْلِهَا إِن يُرِيدَا إِصْلاَحًا يُوَفِّقِ اللّهُ بَيْنَهُمَا إِنَّ اللّهَ كَانَ عَلِيمًا خَبِيرًا

৩৫) আর যদি কোথাও তোমাদের স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক বিগড়ে যাবার আশংকা দেখা দেয় তাহলে পুরুষের আত্মীয়দের মধ্য থেকে একজন সালিশ এবং স্ত্রীর আত্মীয়দের মধ্য থেকে একজন সালিশ নির্ধারণ করে দাও (যিনি তাদের বিষয়ে দেখাশুনা বা তদন্ত করবেন)৷ তারা দুজন সংশোধন করে নিতে চাইলে আল্লাহ তাদের মধ্যে মীমাংসা ও মিলমিশের পরিবেশ সৃষ্টি করে দেবেন ৷ আল্লাহ সবকিছু জানেন,তিনি সর্বজ্ঞ৷

ইসলাম বহু কারণে শর্তসাপেক্ষে একাধিক বিয়ের অনুমতি দিয়েছে। যেমন, সাধারণত যুদ্ধ, রোগ, কঠিন ও ঝুঁকিপূর্ণ কাজ প্রভৃতি কারণে পুরুষরা বেশি হারে মারা যায়। ফলে সমাজে অনেক নারী বিধবা হয়ে পড়ে। আর অবিবাহিত পুরুষরা সাধারণত এইসব বিধবা নারীদের বিয়ে করতে চায় না এবং এইসব বিধবারা কোনো আশ্রয়ও পায় না। ফলে এ ধরনের নারী দৈহিকভাবে বঞ্চিত থাকে অথবা অনৈতিক পন্থার আশ্রয় নেয় যা সামাজিক অনাচার সৃষ্টি করে। তাই ইসলাম পুরুষের বহু বিবাহের অনুমতি দিয়ে বিধবাদের দৈহিক, মানসিক ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে। এ ছাড়াও নারীরা প্রতি মাসে বেশ কয়েকদিন ঋতুর শিকার হন। আবার গর্ভবতী হলে নয় মাসের গর্ভকালীন সময়ে ও দুই বছর পর্যন্ত শিশুকে দুধদানের সময় সঙ্গমের প্রতি নিঃস্পৃহ থাকে। অরুচির বিষয়টি ছাড়াও গর্ভকালীন সময়ে যৌন মিলন নারীর জন্য ক্ষতিকরও হয়ে থাকে। নারীরা স্তন্যদানকালীন সময়েও দুর্বল থাকে। তাই এ সময় যৌন মিলন শিশুর জন্যও ক্ষতিকর। অন্যদিকে পুরুষের যৌন জীবন নারীর চেয়ে দীর্ঘ এবং কখনও কখনও পুরুষরা বৃদ্ধ অবস্থায়ও যৌন ক্ষেত্রে সক্ষম থাকেন। তাই পুরুষকে যাতে অবৈধ পন্থা থেকে দূরে রাখা যায় সে জন্যই ইসলাম তাদেরকে শর্তসাপেক্ষে একাধিক বিয়ের অনুমতি দিয়েছে যা বৈধ ও যৌক্তিক।

এক্ষেত্রে একটি কথা আমাদের সকলের মনে রাখতে হবে। পবিত্র কোরআন পাকের আইন মেনে তবেই বহু বিবাহ করা যাবে। প্রতিবার দ্বিতীয় বিয়ে করার পূর্বে প্রথমা স্ত্রীর নিকট হতে অনুমতি নিতে হবে।

হাদিসের ও নির্দেশ আছে। সেগুলো জানা একান্তই জরুরী, এই লেখাটি পবিত্র কোরআনের আলোকে এটা পড়া প্রত্যেক মুসলমানের জন্য যেমন জরুরী তেমনি ফেতনা থেকে দুরে থাকাটাও বেশ জরুরী।

অবশ্য আবশ্যই আপনাকে স্ত্রীদের প্রতি সমান হক আদায় করিতে হবে এবং অবশ্যই তাকে সর্বদিক হবে সামর্থ হতে হবে। এতে কোন রকম ওজর আপত্তি চলবে। তা না হলে আল্লাহুর দরবাবে জবাব দিতে হবে।
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×