somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

লাভ-ক্ষতির খতিয়ান (৫১ দিনের যুদ্ধ গাজা ও ইসরাইল)

২৫ শে অক্টোবর, ২০১৪ দুপুর ২:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সভ্য ও মানবতার ধংসকারী ইসরাইল পৃথিবীর বুকে একটি কলংকিত নাম।
২০১৪ সালের ৮ জুলাই থেকে বিশ্ববাসী ইসরাইলের গাজা আক্রমণ প্রত্যক্ষ করেছে। ২০০৮ সাল থেকে এ নিয়ে তিন বার গাজায় হামলা চালালো দখলদার এ দেশটি। ৩৬০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এ ভূখণ্ডে আনুমানিক ২০ লাখ মানুষের বাস। বলা চলে বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ স্থান হলো গাজা। কিন্তু এই যুদ্ধে গাজা কিংবা ইসরাইলের জন্য কী অর্জিত হয়েছে বা কী ক্ষতি হয়েছে তাদের, চলুন সে বিষয়টা বিশ্লেষণ করা যাক।

এই যুদ্ধে গাজার অধিবাসীদের জন্য কিংবা প্রতিরোধ আন্দোলনের জন্য ইতিবাচক এবং নেতিবাচক সবধরনের প্রাপ্তিই ছিল,একইভাবে ছিল ইসরাইলের জন্যও। ইসরাইল গত ৬ বছরে তিনবার গাজায় হামলা করেছে। প্রথম যুদ্ধটি চালিয়েছিল ২০০৮ সালে। এই যুদ্ধ ২২ দিন পর্যন্ত চলেছিল। দ্বিতীয় যুদ্ধটি সংঘটিত হয়েছিল ২০১২ সালে। আট দিনব্যাপী চলেছিল এই যুদ্ধ। তৃতীয় যুদ্ধটি ইসরাইল চলতি বছরেই চালায় যার রেশ এখনো কাটে নি। এই যুদ্ধটি চলে ৫১ দিন ধরে। এইসব যুদ্ধ অধিকৃত ফিলিস্তিনের জনগণসহ তাদের নেতাদের জন্য মারাত্মক সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এই সমস্যাগুলো এমনভাবে জটলা পাকিয়েছে যে নেতানিয়াহুর মন্ত্রীসভার ওপর এগুলো ব্যাপক চাপ সৃষ্টি করে যার ফলে রাজনৈতিক সংকট আরও মারাত্মক আকার ধারণ করার ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে।

গেল কয়েক বছরে অধিকৃত ফিলিস্তেনে বিভিন্ন রূপে সামাজিক নিরাপত্তাহীনতা দেখা দেয় এবং এই নিরাপত্তাহীনতা ক্রমশ বেড়েই চলেছে। এর অন্যতম কারণ হলো ইহুদিবাদী ইসরাইলের কর্মকর্তাদের যুদ্ধকামি তৎপরতা বৃদ্ধি পাওয়া। গাজার বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক ৫১ দিনের যুদ্ধও ইসরাইলের অভ্যন্তরে সামাজিক নিরাপত্তাহীনতা ব্যাপকভাবে বেড়ে যাবার আরেকটি বড়ো কারণ। ইসরাইলি দৈনিক ‘ইয়াদিউত অহরুনুত’ ৫১ দিনের যুদ্ধের ওপর এক প্রতিবেদনে লিখেছে, অন্তত ১০ হাজার লোক তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে চলে গেছে এবং তাদের শতকরা আশি ভাগই এখন ভয়ে ত্রাসে টানেল থেকে তাদের বাসায় ফিরতে রাজি নয়। এমনকি এই ভীত জনগোষ্ঠি তাদের কর্মকর্তাদের অর্থাৎ তেলআবিব সরকারের কর্তা ব্যক্তিদের কথায় আস্থা কিংবা বিশ্বাস কোনোটাই রাখে না। নিঃসন্দেহে প্রকৃত নিরাপত্তাহীনতার চেয়ে নিরাপত্তাহীনতার অনুভূতি অনেক বেশি খারাপ।

অধিৃকত ভূখণ্ডের জনগণের মাঝে দুটি দল রয়েছে সুস্পষ্টভাবে। একটি দল হলো ইসরাইলি ইহুদি জনগণকে নিয়ে গঠিত। অপর একটি হলো অধিকৃত ভূখণ্ডে বসবাসকারী আরব জনগোষ্ঠি। এই দুই দলের লোকেরাই বিভিন্ন কারণে ৫১ দিনের যুদ্ধের বিরুদ্ধে ছিল। অধিকৃত ভূখণ্ডের আরবরা গাজার আরবদের সমর্থনে এবং ইহুদিবাদী সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধকামীদের সমর্থনে বিক্ষোভ করেছে।অপরদিকে ইহুদি অধিবাসীরাও যুদ্ধের দীর্ঘসূত্রিতা এবং তাদের জীবনের ওপর যুদ্ধের নেতিবাচক প্রভাবের কারণে বিক্ষোভ করেছে। দুই গ্রুপেরই বিক্ষোভের লক্ষ্য অভিন্ন, সেটা হলো অবিলম্বে যুদ্ধ বন্ধ করা। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ইহুদিরাও গাজা যুদ্ধের ঘটনায় ইসরাইলি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছে।

৫১ দিনের যুদ্ধের আরেকটি উল্লেখযোগ্য দিক হলো, ফিলিস্তিনের ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস প্রথমবারের মতো ইসরাইলের বিরুদ্ধে আর-১৩০ ক্ষেপনাস্ত্র ব্যবহার করেছে। এগুলোর ১৩০ কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতে সফলভাবে আঘাত হেনেছে। বেনগুরিয়ন এয়ারপোর্ট, দিমুনা পাওয়ার প্লান্টের আশপাশে, ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর বাসভবনের কাছে এমনকি ইসরাইলি পার্লামেন্ট নেসেটের কাছেও এই ক্ষেপনাস্ত্র আঘাত হেনেছে। একদিকে হামাসের রকেট এবং ক্ষেপনাস্ত্র অপরদিকে ইসরাইলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার অকার্যকারিতা উভয় দিক বিবেচনা করলেই ইসরাইলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার দুর্বলতা সুস্পষ্ট হয়ে যায়।

ফিলিস্তিনী প্রতিরোধ আন্দোলনকারী দলগুলো ইসরাইলের অভ্যন্তরে অন্তত তিন হাজার দুই শ পঁয়তাল্লিশটি ক্ষেপনাস্ত্র ছুঁড়েছে।এর মধ্যে ইসরাইলের গর্ব আয়রন ডোম প্রতিরক্ষা সিস্টেম মাত্র ৫৫৮ টি রকেট ধ্বংস করতে পেরেছে। ৫১ দিনের যুদ্ধে তেলআবিবে নিক্ষেপ করা হয়েছে ১১২টি ক্ষেপনাস্ত্র। আয়রন ডোম মাত্র ৬০টি ধ্বংস করতে পেরেছে। দখলদার ইসরাইল হামাসের ক্ষেপনাস্ত্র ধ্বংস করার জন্য ৭০০ ক্ষেপনাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে যার মূল্য পঁয়ত্রিশ কোটি ডলার। ২০১২ সালে আয়রন ডোমে কার্যকারিতা ছিল শতকরা ত্রিশ ভাগ। ২০১৪ সালের যুদ্ধে এতো বেশি ব্যয় করার পরও আয়রন ডোমের কার্যক্ষমতা ছিল মাত্র ১৫ শতাংশ। আয়রন ডোমের ব্যর্থতা এতো প্রকাশ্য ছিল যে এর উন্নয়নের জন্য তথা ইসরাইলের প্রতিরক্ষা শক্তি বৃদ্ধি করার জন্য স্বয়ং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস ২২ কোটি ডলার ব্যয় করার ঘোষণা দিয়েছে।

অপরদিকে ২০১৪ সালের যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হওয়ায় ইসরাইলের অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে ব্যাপক। আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে ইসরাইল সরকারের ঘাটতি বাজেটের পরিমাণ ছিল ১শ ৩০ কোটি মার্কিন ডলার। সেটা এখন বেড়ে ৮৩০ কোটি হবার সম্ভাবনা রয়েছে। এই যুদ্ধে ইসরাইলের ক্ষতির পরিমাণ বলা হয়েছে ৬০০ কোটি ডলার। ইসরাইলের অর্থনীতির ৭০ শতাংশই আক্রান্ত হয়েছিল এই যুদ্ধে, কেননা পঞ্চাশ লাখ ইসরাইলি হামাসের পাল্টা হামলার আওতায় ছিল। এসব কারণে ইহুদিবাদী ইসরাইল ২০১৫ সালের জেনারেল বাজেটের পরিমাণ দুই শতাংশ কমিয়ে আনতে বাধ্য বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

ইসরাইলে ইহুদিবাদীদের প্রকল্পের প্রধান দুটি লক্ষ্য হলো: ফিলিস্তিনের ভূমি দখল করে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ইহুদিদের ইসরাইলে নিয়ে আসা। গত কয়েক বছরে অন্তত ১০ লাখ ইহুদিকে আর্থিক সুবিধা ও নিরাপত্তার বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি দিয়ে নিয়ে এসেছে তারা। কিন্তু এবারের যুদ্ধে তাদের সেই লক্ষ্য ভেস্তে গেছে। ইহুদিরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগে জার্মানি এবং আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশে ফিরে যেতে শুরু করেছে। আর ইহুদিরা যদি ইসরাইল থেকে চলে যায় তাহলে এই অবৈধ রাষ্ট্রটি গড়ে তোলার কোনো অর্থই থাকলো না। গত দুই দশকে দশ লাখেরও বেশি ইহুদি ইসরাইল ছেড়ে চলে গেছে। এর ফলে ইসরাইলিদের তুলনায় ফিলিস্তিনীদের জনসংখ্যা ব্যাপক বেড়ে যাবে যা ইসরাইলের অস্তিত্বই হুমকির সম্মুখিন হবে।

ইসরাইলের চ্যানেল-টু টেলিভিশন যুদ্ধের ১০ দিন পরে এক জনমত জরিপ চালিয়েছিল। তাতে দেখা গেছে ইসরাইলের শিক্ষিত যুবকরা ইসরাইল ত্যাগ করার বিষয়টি গভীরভাবে পর্যালোচনা করছে। তারা উপযুক্ত পরিবেশ ও সময়ের অপেক্ষায় আছে। ইসরাইলে বসবাসকারীদের শতকরা চল্লিশ ভাগ ইহুদিরই জন্ম হয়েছে বাইরের কোনো দেশ। ইসরাইলে তাদের অবস্থানটা তাই একেবারেই কৃত্রিম। এ কারণেও তাদের ইসরাইল ত্যাগের ঘটনা ত্বরান্বিত হয়েছে। আর ইহুদিরা ইসরাইল ছেড়ে চলে যাবার কারণে সেখানে বসবাসরত আরবদের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে।

ইসরাইলের আরবরা ‘আরব’ হিসেবেই পরিচিত এবং তারা আরবি ভাষায় কথা বলে। অদূর ভবিষ্যতে তাই ইসরাইলের আরব এবং ইহুদিদের মাঝে পরিচয়গত দিক থেকে ফাটল দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ৫১ দিনের যুদ্ধের আরেকট দিক হলো স্থায়ী যুদ্ধ বিরতিটা ছিল ইসরাইলের পক্ষে সুস্পষ্ট ব্যর্থতা।

মুসলমানরা কখনই যুদ্ধ চায় না। তারা সবসময়ই শান্তি চায়। পশ্চিমা দেশগুলো শুধুই এই মুসলমানদের কাদে যুদ্ধের বোঝা চাপাইয়া দিতে চান। আমার বুঝে আসে না, তারা শুধুই তেল ও আরব সম্পদ গুলো চুরির চিন্তায় মত্ত্ব আছে। যেমন বর্তমানে এবোলা ভাইরাস নিয়া তারা বেশী মাতামাতির কারন সেখানের খনি গুলোকে দখল করা আর কিছু্ই না। এটা আমাদের বুঝতে হবে।

তাই এখন থেকে প্রতেক মুসলমান ভাইকে সাবধান করে দিতে চাই আসুন আমরা আসল সত্য কি তা খুজে বের করি। আর বিবাদ নয়, শুধুই শান্তি চাই।
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৪০



'অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ'।
হাহাকার ভরা কথাটা আমার নয়, একজন পথচারীর। পথচারীর দুই হাত ভরতি বাজার। কিন্ত সে ফুটপাত দিয়ে হাটতে পারছে না। মানুষের... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×