somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গুনে ভরা কালমেঘ

২৮ শে জুলাই, ২০১৭ দুপুর ২:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমাদের প্রাণ প্রকৃতি নানা বৈচিত্রে ভরপুর। মানুষ আদিকাল ধরে লতা পাতা আর উদ্ভিদের প্রাণ রস খেয়ে নানা রোগ ব্যাধির উপশম করে আসছে। আমাদের সব কিছুর দেখা মেলেনা কিংবা জানাও হয়না । বনে বাদারে প্রকৃতিগতভাবে জন্মে থাকা একটা দরকারী ভেষজ উদ্ভিদ কালোমেঘ। কালোমেঘ একটি ভেষজ বর্ষজীবী উদ্ভিদ। দেশীয় চিরতা হিসেবে সমধিক পরিচিত ও ‘বিকল্প কুইনাইন’ হিসেবে বহুল ব্যবহৃত কালোমেঘ। ইউনানি, আয়ুর্বেদিক ও হোমিওপ্যাথিক ওষুধ শিল্পের কাঁচামাল হিসেবেও এখন কালোমেঘ ব্যবহার হচ্ছে।চিকিৎসা বিজ্ঞানের মতে, কালোমেঘ জ্বর থেকে শুরু করে অজীর্ণ, যকৃতের গোলযোগসহ অনেক জটিল ও কঠিন রোগের চিকিৎসায় কার্যকারী ভূমিকা রাখে। গড় উচ্চতা ১ মিটার। এর শাখা চতুষ্কোণ এবং পাতা বল্লমাকৃতির হয়ে থাকে। ফুল ক্ষুদ্রাকার। ফুলের রং গোলাপী। অল্প পরিমাণে বিক্ষিপ্ত গুচ্ছে ফুল ফোটে। দেড় থেকে দু সে.মি. লম্বা ফল অনেকটা চিলগোজার মতন দেখতে। শিকড় ব্যতীত কালোমেঘ গাছটির সব অংশই ওষুধের কাজে ব্যবহৃত হয়।



কালোমেঘ অত্যন্ত তেতো আবার পুষ্টিকরও। মানব দেহের রোগপ্রতিরোধী শক্তি বৃদ্ধি করে। জ্বর, কৃমি, আমাশয়, সাধারণ শারীরিক দুর্বলতা এবং বায়ু আধিক্যে কালোমেঘ অত্যন্ত উপকারী।



পরিচয়-
বর্গ: Lamiales
পরিবার: Acanthaceae
গণ: Andrographis
প্রজাতি: A. paniculata (বৈজ্ঞানিক নাম অ্যান্ড্রোগ্রাফিস পানিকুলাটা)
নাম: বাংলাদেশে কালমেঘ/কালপানাস , আসামে- চিরতা, আরবীতে- কুচবুড়া, মারঠিতে- ওলি-কিরোতা, চায়নাতে- চুন জিন লায়ান এবং ইংরেজীতে Green chirayta।

এ ভেষজ উদ্ভিদ স্থানভেদে আলাদা পরিচিতি আছে।
কালোমেঘ ঔষধী গুনাগুন সমৃদ্ধ । শিশুদের যকৃৎ রোগে এবং হজমের সমস্যায় কালমেঘ ফলপ্রদ। কালমেঘের পাতা থেকে তৈরী আলুই পশ্চিম বাংলার ঘরোয়া ঔষুধ যা পেটের অসুখে শিশুদের দেওয়া হয়। টাইফয়েড রোগে এবং জীবানুরোধে কালমেঘ কার্য্করী। কালোমেঘ গাছ বেটে সরষের তেলে চুবিয়ে নিয়ে চুলকানিতে লাগানো হয়। গাছের পাতার রস কোষ্ঠকাঠিন্য ও লিভার রোগের প্রতিষেধক হিসেবে দারুণ উপকারী ।



কালমেঘ গাছের পাতার রস জ্বর, কৃমি, অজীর্ণ, লিভার প্রভৃতি রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। এ গাছের রস রক্ত পরিষ্কারক, পাকস্থলী ও যকৃতের শক্তিবর্ধক ও রেচক হিসেবেও কাজ করে। আবার গাছের পাতা সিদ্ধ করে ক্ষতস্থানে লাগিয়ে দিলে ঘা-পাঁচড়া জাতীয় রোগ দূর হয় ।



বাংলাদেশের কালমেঘের পরিচয-
মরিচ পাতার সদৃশ কালোমেঘ পাতার অগ্রভাগ ও বোঁটার দিকে ক্রমশ সরু এবং বর্ণ গাঢ় সবুজ। আবহাওয়াগত আনুকূল্যে বাংলাদেশের সর্বত্র কালোমেঘ জন্মে। বর্ষার শেষে পত্রকলা থেকে লম্বা পুষ্পদ- বের হয় এবং এ পুষ্পদন্ডে হালকা সাদার মাঝে বেগুনি ফোঁটাযুক্ত ১ সেন্টিমিটার লম্বা ফুলগুলো সাজানো থাকে। পরে লম্বালম্বিভাবে ২ অংশে ৪-৫টি করে মোট ৮-১০টি বীজ থাকে। কালোমেঘ গাছ ১২ থেকে ১৫ ইঞ্চি লম্বা হয়। এ গাছের পাতা, কান্ড ও বীজ ৩টিই ওষুধ তৈরির কাজে ব্যবহার করা হয়। পাকা বীজের রঙ হালকা খয়েরি।



বর্ষার পর থেকে শীতকাল পর্যন্ত ফুল ও ফল হয়। সাধারণত জুন-জুলাই মাস চারা লাগানোর উপযুক্ত সময়। তবে পরিপক্ব বীজ মাটিতে পড়ে আপনাআপনি কালোমেঘ গাছ জন্মে থাকে। তুলনামূলকভাবে এটি ছায়াযুক্ত জায়গায় বেশি জন্মায় বলে অন্য গাছের নিচে এবং সাথী ফসল হিসেবেও এর চাষ করা যায়। সামান্য মাটি খুঁড়ে বীজ বপন করলে ফলন বাড়ে। কালোমেঘ অঞ্চলভেদে কল্পনাথ হিসেবেও পরিচিত। অনেকে অত্যধিক তেতো স্বাদের এ গাছ শুকিয়ে চিরতা বলে বিক্রি করে থাকে। প্রকৃতপক্ষে আমাদের দেশে চিরতা জন্মে না।

চিরতার মতো তিতা স্বাদের কালোমেঘের পুরো গাছটিই ঔষধি গুণে ভরপুর। বিদেশে কুইনাইনের বিকল্প হিসেবে কালোমেঘের ব্যাপক ব্যবহার হচ্ছে। আমাদের দেশে স্মরণাতীতকাল থেকেই লোকজ চিকিৎসা ক্ষেত্রে কালোমেঘ অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং গ্রাম্য কবিরাজ, হাকিম ও হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকরা বিভিন্ন রোগ চিকিৎসায় এটি অনেক ব্যবহার করে থাকেন।

কালোমেঘের কোনো রকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া না থাকায় রোগ প্রতিরোধে এর প্রয়োগ সর্বজনবিদিত। অনেকেই কালোমেঘকে কালের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ এক কার্যকর ভেযজ ওষুধ বলে থাকেন।

কালোমেঘ বাংলাদেশ, ভারতের আসাম ও হিমাচল প্রদেশ জন্মে থাকে । আর্দ্র এবং অন্ধকারময় স্থান ভাল বৃদ্ধি হয়। তবে অল্প আলোকে বেশি চাষ হয়। বাংলাদেশে । কোনো ধরনের পরিচর্যা না থাকায় এসব ভেষজ উদ্ভিদ দ্রুত হারিয়ে যাচ্ছে।

আসুন আমরা এই সকল গাছের পরিচর্যা করি, স্বাভাবিক ভাবে আমাদের পরিবার পরিজনের চিকিৎসা করি ও সুস্থ্য থাকি।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে জুলাই, ২০১৭ দুপুর ২:৫৯
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:১৩

ফেসবুকে বাঙালিদের মধ্যে ইদানিং নতুন এক ফতোয়া চালু হয়েছে, এবং তা হচ্ছে "দাওয়াতের নিয়্যত ছাড়া কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।"
সমস্যা হচ্ছে বাঙালি ফতোয়া শুনেই লাফাতে শুরু করে, এবং কোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×